somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে দেশে ১৮ শতাংশ পুরুষ ধর্ষিত হয় নারীর হাতে

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পুরুষতান্ত্রিক সমাজ একটা মিথ। আমাদের ভুল ধারণা যে আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করি। এক সময় এটা ছিল, খুব বেশিভাবেই ছিল। মেয়েরা তখন অত্যন্ত নির্যাতিতা হতেন, এখনও হন না, একথা আমি বলছি না। তবে এখন আর খুব বেশি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নেই। এই ধারনাটা বহু দিন ধরে চলে আসছে। আমাদের বোধ হয় এবার এটা বদলানোর সময় এসেছে। দেখবেন, অনেক বাড়িতে ঠাকুমা অথবা মা কিংবা স্ত্রীর বাড়ির নানা নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি ঢুকে পড়েছে। আমি কিন্তু, অর্থনৈতিক জায়গা থেকে বলছি না। বরং বলছি, সামাজিক অবস্থানগত দিক থেকে। লক্ষ্য করবেন, ছেলে মেয়ে কোন স্কুলে বা টিউশনে পড়বে, মা না শাশুড়ি কাকে বেশি দামি শাড়ি দেওয়া হবে- এসব সিদ্ধান্ত মোটামুটি এখন পরিবারের মহিলারাই নিয়ে থাকেন। আর, পুরুষরা ঠিক করেন ফারাক্কাকে কত কিউসেক জল দেওয়া হবে বা আনবিক বোমা ফাটানোর রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল, এগুলি। এর থেকেই বোঝা যায়, পরিবার এবং বৃহত্তর পরিবার অর্থাৎ সমাজের দরকারি সিদ্ধান্তগুলি মহিলারাই নিয়ে থাকেন। অর্থাৎ পুরুষরা বহু ক্ষেত্রেই আর সংসারের ‘ডিসিশন মেকার’ নয়।বলেছেন ভারতীয় পুরুষাধিকার কর্মী নন্দিনী ভট্টাচার্য।


ভারতে ১৮ শতাংশ পুরুষ ধর্ষিত হয়, নারীরা তাদের যৌন হেনস্তাও করে। কিন্তু পুরুষ সে কথা বাইরে বলতে পারে না। দেশের আইন প্রায় পুরোটাই মেয়েদের পক্ষে। পুরুষ তাই নিরুপায়। এ সমাজ আর সেভাবে আজ পুরুষতান্ত্রিক নয়, বরং মেয়েদের হাতেই চলে যাচ্ছে অনেক ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতাই পচন ধরাচ্ছে, ভুগছেন পুরুষরা। তার মতে ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস মেয়েরাই বেশি করে, ছেলেরা নয়’ তিনি আরো বলেন পুরুষরা সাধারণত পরিবারের মধ্যেই ধর্ষিত হয়। তাছাড়া পাড়ার কাকিমা, পিসি, দিদিরা করে থাকেন। ধরণের ঘটনার একটা বড় অংশের শিকার হয় বয়ঃসন্ধির ছেলেরা। তারা যখন বাড়িতে এসে মা-বাবাকে এসব বলে, তাঁরা বলেন, “এসব বলতে নেই। উনি তোমাকে ভালবাসেন”। যদিও মেয়েরা এমন অভিযোগ করলে এখন বাবা-মায়েরা গুরুত্ব দিয়ে সে কথা শুনে ব্যবস্থা নেয়। একথা অনস্বীকার্য যে ভারতে নারীর জন্য ৪৯টি আইন অথচ নারীদের নির্যাতন থেকে পুরুষের সুরক্ষার জন্য কোন আইন নেই। তার গবেষণা -ভারতে প্রতি বছর ম্যাট্রিমনিয়াল ডিসপুটে ৯৮ হাজার পুরুষ আত্মহত্যা করেন। সেখানে নারীর সংখ্যা ৩১ হাজার। আর নারীদের আত্মহত্যার কারণ পণ। মাথায় রাখবেন, পণ দেওয়া ও নেওয়া দুটিই কিন্তু অপরাধ। ক’জন মেয়ের বাবা দোষী সাব্যস্ত হয় এ জন্য? তাছাড়া মনে রাখবেন, পণের পিছনেও মেয়েদের বিশাল ভূমিকা-‘দিদিকে দিয়েছ, আমাকে কেন দেবে না?’- এই তো অধিকাংশের মানসিকতা। জানবেন, ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসে’র ব্যাপারটাও মেয়েরা সব থেকে বেশি করে। ছেলেরা থানায় যায় না তাই। মেয়েরা যেই না মোটা রোজগারের বর পেয়ে যায়, ওমনি প্রেমিককে ছেড়ে চলে যায়। আর তার আগে দু’জনের মধ্যে সব রকম সম্পর্কই তৈরি হয়। এর বাইরে আরও আছে…’মা’- মানেই একটা মিথ। জানেন কি, মায়েরা সন্তানকে ওষুধ খাইয়ে হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখে যাতে বাবার থেকে আরও বেশি করে টাকা আদায় করতে পারে, ফ্ল্যাট লিখিয়ে নিতে পারে। গান গেয়ে উপরে উঠতে, সিনেমায় অভিনয় করতে, চাকরিতে উন্নতি করতে মেয়েরা যা করতে পারে তাতে আবারও বলছি, মেয়ে হিসাবে ঘেন্না করে আমার।


তাই তার মতে পুরুষ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজে গণআন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। তবে দুঃখের বিষয় পুরুষরা নারী দিবস পালন করেন, অথচ পুরুষ দিবসটা কবে, সেটাই জানেন না। নারীবাদী পুরুষরাই সব থেকে বড় বাধা তাদের সামনে। কারণ, এই ধরনের পুরুষরা তাদের আন্দোলনকে অপ্রাসঙ্গিক হিসাবে তুলে ধরতে চায়। আর তাঁরা পুরুষ হয়ে পুরুষাধিকারের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাদের কাজটা কঠিন হয়ে যায়। তবু ত্রা সেসব নিয়েই লড়ছে, এগোচ্ছেও। নারীবাদী মহিলাদের নিয়ে তাদের কোনও সমস্যা নেই। বাংলার বহু নামকরা নারীবাদী নারী তাদের সমর্থন করেন, যেমন শাশ্বতী ঘোষ। দেশে আইন কানুনের সমস্যা থাকায় অনেক অপরাধী মেয়েকেও শাস্তি দিতে পারিনি। যদি পারতাম, একটু মনটা হালকা হত। এই সব মেয়েরা যে কীভাবে অন্যের জীবন নষ্ট করেছে ভাবতে পারবেন না। জানবেন, আমরা নারী, আমরা সব পারি… সুত্রঃ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস


এতো গেল ভারতের কথা। আবার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু দেশে নারী নির্যাতন দমন আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন দমন আইন নেই। এ কারণে প্রায় সময়ই পরিবারের পুরুষ সদস্যরা নারীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। চক্ষুলজ্জা আর পরিবারের কথা চিন্তা করে দিনের পর দিন বউয়ের এসব নির্যাতন-নিপীড়ন আর হুমকি-ধমকি নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। পুরুষ অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন বলছে, সমাজে অনেক পুরুষই স্ত্রীর যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদেন। লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে চোখ মোছেন; কিন্তু দেখার কেউ নেই। বলারও উপায় নেই। তাই বিভিন্নমহল থেকে পুরুষ নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নেরও জোর দাবি জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশ পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশনের শেখ খায়রুল আলম বলেন, পুরুষের নীরব কান্না শোনার জন্য পুরুষবিষয়ক মন্ত্রণালয় নেই। এমনকি কোনো অধিদপ্তর বা পরিদপ্তরও নেই। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই আমরা অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের পক্ষে কোনো আইন নেই। অনেকটা অবাধ এবং ইমডেমনিটি পাওয়ার মতো। পুরুষদের আইনি অধিকার ও পুরুষের মানবাধিকার রক্ষায় এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম লিখিত ১৪ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
১. অপহরণঃ বিবাহের উদ্দেশ্যে বা প্রেম গঠিত কারণে ছেলে-মেয়ে উভয়ে পালিয়ে গেলে শুধুমাত্র ছেলে ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা হয়। এই কৃতকর্মের জন্য শুধুমাত্র ছেলের শাস্তি বিধান হওয়াটা অযৌক্তিক বিধায় তা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
[বিবাহের উদ্দেশ্যে বা প্রেমঘঠিত কারণে কোনো ছেলে বা মেয়ে স্বেচ্ছায় পালিয়ে গেলে উক্ত ঘটনাকে অপহরণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করা।
২. পারিবারিক সহিংসতাঃ (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ এ সংযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে শিশু ও নারীর পাশাপাশি পুরুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ’ বলা যাবে না এবং এই ক্ষেত্রে যদি শাস্তি হয় তাহলে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য শাস্তির বিধান থাকতে হবে।
৪. নারী ধর্ষণ ও শিশু ধর্ষণ আলাদা সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করে পুরুষ ধর্ষণের সংজ্ঞা তৈরি করে লিঙ্গনিরপেক্ষ ধর্ষণ আইন তৈরী করতে হবে।
৫. পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা, সভ্য সমাজ ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত আইন এবং পুরষদের মানবাধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশীয় আইনে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে সৃষ্ট তথাকথিত বৈবাহিক ধর্ষণের ধারণার অনুপ্রবেশ না ঘটানো।
৬. মিথ্যা ধর্ষণ মামলা প্রমাণিত হলে মামলাকারীর বিরোদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান থাকতে হবে। (ধর্ষকের সমমান শাস্তির বিধান করতে হবে)।
৭. যৌতুক সংক্রান্ত মামলায় সমন বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর পূর্বে তদন্ত প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক করা।
৮. পুরুষের লিঙ্গ কর্তন বা অন্য কোনও উপায়ে কোনও পুরুষকে পুরুষত্বহীন করার শাস্তি মৃত্যুদন্ড করতে হবে।
৯. বহুবিবাহ প্রতারণারোধে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ডিজিটাল করা।
১০. পুরুষের মানবাধিকার রক্ষা ও পুরুষ নির্যাতন রোধে আইন চাই।
১১. বহুবিবাহ প্রতারণা রোদে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ডিজিটাল করা।
১২. কাবিন বানিজ্যরোধে সাধ্যের অতিরিক্ত কাবিন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, বিধান থাকতে হবে।
১৩. ব্যভিচারের ৪৯৭ ধারা কে সংশোধন করে পরকীয়ায় আসক্ত নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান শাস্তির বিধান থাকতে হবে।
১৪. পুরুষ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থাকতে হবে।
আসলে নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। এক পক্ষকে বাদ দিয়ে আরেক পক্ষের পূর্ণতা পায় না। নারীর সুরক্ষায় নারী অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে পুরুষের কথাও। নারী অধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে যেন পুরুষের অধিকারকে হেয় করা না হয়, তাকে হেনস্তা কিংবা বঞ্চিত করা না হয়। সেটা হলে একদিন তা সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করবে।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৪৮
১৮টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×