পরিশ্রম ছাড়া সফলতার আশা করা বোকামি। যারা অল্প পরিশ্রমেই বড় কিছু পেতে চায় তারা তা পূর্ণাঙ্গরূপে পায়না। আমাদের জীবন পরিচালনার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি রয়েছে। সেই নিয়মের বাইরে আমরা যেতে পারি না। সেই নিয়মের মূল কথাই হল 'যেমন কর্ম, তেমন ফল।' অর্থাৎ আমরা যেমন কাজ করব, সেরকমই প্রতিফল পাব। এই নিয়মের বাইরে কেউই বেরোতে পারে না। কর্ম না করে কেউই বাঁচতে পারে না। তবে কোনো কর্মের ফল সুখদায়ক আবার কোনোটি দুঃখদায়ক। জগতে কেউ সুখী কেউবা দুঃখী। কর্মফল হচ্ছে বান্দার হাতের কামাই। কেননা, যেমন কর্ম তেমন ফল। পবিত্র কোরআনে যথার্থই বলা হয়েছে, ‘যে সৎকর্ম করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দকর্ম করলে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের প্রতি কোনো জুলুম করেন না।’ (সূরা হা-মিম সিজদা, আয়াত: ৪৬) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছেঃ ‘মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। সুতরাং যে ক্ষমা করে ও আপস করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে। নিশ্চয়ই তিনি অত্যাচারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৪০) প্রাচীন নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী এক ডজন কর্ম বিধানে আমাদের জীবন বাঁধা। তাই মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য মোট ১২টি কর্ম বিধা্নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এবার জেনে নেয়া যাক কী এই কর্ম বিধান এবং আমাদের জীবনে কেমন তাদের প্রভাবঃ
১। এই মহাবিশ্বে আমরা যা দেব, তাই আমাদের কাছে ফিরে আসবে। অর্থাৎ আমাদের ভালো কাজের ফল যেমন আমরা ভোগ করব, তেমনই খারাপ কাজের ফল ভোগের জন্যও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। যেমন মানুষ উন্নয়নের হাতছানিতে পরিবেশকে দূষিত করেছে, তেমনই বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে সেই দূষণের প্রতিফল মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে।
২। জীবনে কিছুই নিজে থেকে ঘটে না। আমাদের তাকে ঘটাতে হয়। অর্থাৎ কোনও কিছু পেতে চাইলে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে, উদ্যোগ নিতে হবে। জীবনে উদ্যোগী না হলে ভালো কর্মফলের আশা করা বৃথা।
৩। জীবনে বিনয় ও নম্রতার শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। উদ্ধত ও অবিনয়ীদের পতন অবশ্যম্ভাবী। এমনকি জীবন হোক বা সমাজ, কোনও নিয়মের পরিবর্তন চাইলে, প্রথমে তা মেনে নেওয়া প্রয়োজন। তাকে জানা প্রয়োজন। তবেই বদল আনা সম্ভব।
৪। জীবনে পরিবর্তন চাইলে আগে নিজেকে পরিবর্তিত করতে হবে। অনেক সময় আমরা ভাবি, কেন আমাদের জীবনে ভালো কিছু ঘটছে না। তখন নিজিকে প্রশ্ন করো, ভালো কিছুর জন্য তুমি নিজে সম্পূর্ণ প্রস্তুত কিনা। নিজেকে ভালো কর, আশেপাশের সবকিছুই ভালো লাগবে।
৫।. আমাদের জীবনে যাই ঘটুক না কেন, তার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। জীবনে ভালো কিছু ঘটলেও যেমন তার দায়িত্ব আমাদের, তেমন খারাপ কিছুর দায়িত্বও সম্পূর্ণ ভাবে আমাদেরই নিতে হবে। জীবন পরিচালনার জন্য মানুষ যাই করুক না কেনো তা যদি আল্লাহ ও রসূলের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী হয় তবে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে। ফলে পৃথিবীতে তারা সুখে শান্তিতে বাস করবে।
৬। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত্ - সবই এক সুতোয় গাঁথা। অতীত জীবনে যা ঘটেছে তার প্রভাব বর্তমান ও ভবিষ্যত্ জীবন এড়াতে পারে না।
৭। জীবনে যে কোনও কাজে সাফল্য পেতে হলে মনঃসংযোগ অত্যন্ত জরুরি। একসঙ্গে একাধিক বিষয়ে ফোকাস করলে, কোনও কাজই ঠিকমতো হয় না। তাই যে কাজই কারিনা কেনব, তা সম্পূর্ণ মন দিয়ে করতে হবে।
৮। অন্যের খেয়াল রাখা জীবনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা শিক্ষা। শুধু নিজের জন্য না বেঁচে জীবনের কিছুটা অংশ অন্যের কাজে লাগানো খুব জরুরি। আমাদের চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মের সঙ্গে আমাদের ব্যবহারের সামঞ্জস্য থাকতে হবে।
৯। জীবনে সামনের দিকে তাকিয়ে চলতে হয়। যা ঘটে গিয়েছে, তা ঘটে গিয়েছে। পুরনো কথা ভুলে সামনের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যান। নতুন করে শুরু করুন।
১০। অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া খুব প্রয়োজীয় বিষয়। জীবনে ভুল হতেই পারে। কিন্তু সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলতে হয়। যাতে একই ভুল বারবার না ঘটে।
১১। ধৈর্যের শিক্ষা জীবনে বড় শিক্ষা। কথাতে আছে, 'যে সয়, সে রয়।' ধৈর্য্য ধরে থাকলেই অনেক সময় কাঙ্খিত ফল সামনে আসে।
১২। আমরা জীবনে যে কাজই করিনা কেন, তা পূর্ণ মনোবল/এনার্জি সহকারে করতে হবে। তবেই সেই কাজের সম্পূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে।
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সৎ কাজ করার ও অসৎ কাজ পরিহার করার আহ্বান করেছেন। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ বিষয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হজরত লোকমান হাকিম তার ছেলেকে দেওয়া উপদেশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, 'হে বৎস, নামাজ কায়েম কর, সৎ কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ। অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কর না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ কর না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।' (৩১ সূরা : লোকমান, আয়াত : ১৭)। পবিত্র কোরআনে আরও এরশাদ হচ্ছে, 'কেউ যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে উৎকৃষ্টতর প্রতিদান পাবে এবং সেদিন গুরুতর অস্থিরতা থেকে নিরাপদ থাকবে। এবং যে মন্দ কাজ নিয়ে আসবে, তাকে অগ্নিতে অধঃমুখে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা যা করছিলে তারই প্রতিফল তোমরা পাবে। (সূরা : আল-নামল, আয়াত : ৮৯-৯০)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি সৎ কাজ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম ফেসবুক-১ ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:১৩