১। যে জাতের যাঃ ছোট বেলায় মক্তবে আম ছিপাড়া পড়তাম। অনেকেই পড়তেন। সবার কিছু স্মৃতি থাকে সেই সময়কার মক্তবে পড়ার। আমারও কিছু স্মৃতি আছে মক্তবে আম ছিপাড়া পড়ার। তার কিছুটা মধুর কিছুটা তিক্ততা আর কিছুটা মজার! মধুর তিক্ততার কথা না হয় নাই বললাম। মজার ঘটনাটা বলিঃ
আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে সুর করে পড়তাম আলিফ যবর আ, বা যবর বা তা যবর তা, -----------------------যা যবর জা,
আমাদের সহপাঠি এক বেয়াড়া ছাত্র সবার সাথে সুর লাগিয়ে বলতো আলিফ যবর আ, বা যবর বা তা যবর তা, ----------যে জাতের যা !!
আজ মনে হয় সত্যি যে জাতের যা , সে জাতেরই রয়ে যাবে ! তাকে পরিবর্তণ করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। লালন ঠিকই বলেছিলেন জাত গেল জাত গেল বলে একি আজব কারখানা। আজ থেকে দেড়শতাধিক বছর আগের অত্যন্ত সাধারণ একজন মানুষ হয়েও কি গভীর সত্য অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। দুঃখ হয়, এত কিছুর পরও মানুষ প্রজাতির সমগ্র-বোধের বিন্দুমাত্রও কি তাতে পরিবর্তন হয়েছে? তারা সৃষ্টি কর্তার অফুরন্ত নেয়ামত ভোগ করেও তার শুকরিয়া দূরে থাক তার অবদানকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখায়।
২। সহজাত প্রবৃত্তিঃ সহজাত প্রবৃত্তি হল কোন জীবের আচরণের একটি অংশ। স্নায়বিক প্রক্রিয়াসম্পন্ন প্রাণীরা সহজাত প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মায়। এটি জন্মগতভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত, অর্জিত নয়। বুদ্ধি এবং জ্ঞান এক বা সমার্থক নয়। বুদ্ধি হচ্ছে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আর জ্ঞান হচ্ছে বুদ্ধি দ্বারা অর্জিত গুণাবলী। মহান আল্লাহ মানুষের মন ও মগজে বুদ্ধি দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। যাতে মানুষ বুদ্ধির সাহায্যে সঠিক শিক্ষা লাভ করতে পারে। আল্লাহর একত্ব, তার উৎস ও মৌলিকত্বকে ধারণ করে বহুমুখী জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আর সেই অর্জিত জ্ঞান দিয়ে মানুষের ইহ ও পারলৌকিক উপকার সাধন করতে পারে, কল্যাণ করতে পারে মানুষ ও মানবতার। বুদ্ধিজীবি আর জ্ঞানজীবি এক কথা নয়। যারা জ্ঞান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তারা জ্ঞানজীবি, বুদ্ধিজীবি নয়।
৩। মুর্খদের সাথে তর্ক করা বোকামীঃ একজন সাহাবি বলেছিলেন, মূর্খের সাথে কখনো তর্ক করিও না কারন সে তোমাকে তার লেভেলে এনে তোমাকে হারিয়ে দিবে। তাই যখনই কারো সাথে যুক্তিতর্ক করার সময় দেখবেন সে বারবার কথার প্রসংগ পাল্টাচ্ছে আর আপনাকে অপমান করার চেষ্টা করছে তখনই ধরে নিবেন মূর্খ আপনার সামনে। মুর্খদের অযোক্তিক প্রশ্নের উত্তম জবাব হল চুপ থাকা যদিও সে মনে করে আপনি তার কাছে হেরে গেছেন। এটাই তার আত্মতৃপ্তি। হযরত হাসান বসরী রাঃ বলেনঃ তুমি তাদের মতো হয়ো না, যারা আলেম ও দার্শনিকদের মতো জ্ঞান রাখে; কিন্তু মুলত আমলে মুর্খদের সমান।
৪। অগভীর জলে সফরী ফরফরায়তেঃ অর্থাৎ যার বিদ্যা বুদ্ধি কম সে নিজেকে পণ্ডিত জাহির করার জন্য বেশী বকে। সে শোনে কম বলে বেশী। একবার এক সভায় এমনই এক লোক তার বিদ্যা জাহির করার জন্য বিভিন্ন দেশের দর্শনীয় স্থান সমূহের নাম বলে সেখানে গিয়েছে বলে দাবী করতে লাগলো। তার কথা শুনে একজন বললো জিওগ্রাফি সম্পর্কেতো আপনার বেশ অভিজ্ঞতা। লোকটি বললো ও জিগ্রাফি ! ওখানেও তো আমি ১ সপ্তাহের মতো ছিলাম !!
৫। অপাত্রে উপদেশ দেওয়া বৃথাঃ হিন্দু ধর্মে কোন অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্য করতে পাঠা বলির প্রচলন আছে। ঠাকুর পাঠাকে সারা রাত মন্ত্রবনী পাঠ করে পাঠাকে পবিত্র করতে চাইলেও পাঠা এক কান ঝাড়া দিয়ে তার জবাব দেয়। প্রবাদ আছে ঠাকুরের মন্ত্রপাঠ আর পাঠার কান ঝাড়া। এমনি চোরের কাছে ধর্মের কাহিনী বলা আর উলুবনে মুক্তা ছড়ানো একই কথা। চোর কোন মূল্যবান দ্রব্যাদি দেখলে যেমন লোভ সামলাতে পারেনা, তেমনি মূর্খদের কাছে উপদেশ বানী কপচলেও তা আমলে নিবেনা।
৬। ভূতুম পেঁচাঃ পেঁচার কথা উঠলেই মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় পড়া সুকুমার রায়ের ছড়াটি
প্যাঁচা কয় প্যাঁচানি,
খাসা তোর চ্যাঁচানি !
শুনে শুনে আনমন
নাচে মোর প্রাণমন !
লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা নিঃসঙ্গ নিশাচর পাখি পেঁচা। এর ইংরেজী নাম Brown Fish Owl (Bubo zeylnensis) এরা লম্বায় ৫৬ সে.মি., বড় কানওয়ালা লালচে-পাটকিলে পেঁচা। লম্বা লম্বা কালো টানে পিঠ ভর্তি, তলা সাদাটে-লালচে, তার উপর ঢেউ ছিট। ঘাড়ে ও গলায় সাদা ছোপ। চোখ উজ্জ্বল সোনালি-হলুদ, চঞ্চু মলিন ধূসর। পালকহীন পা ও আঙুল ধোঁয়াটে হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। খাদ্য মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, ইঁদুর, পাখি ও সরীসৃপ। সাধারণত জোড়ায় থাকে। সন্ধ্যের দিকে মুখে 'বুম বুম' ডাকে। অনেক দেশ এবং ধর্মে পেঁচাকে একটি অশুভ পাখি হিসেবে দেখা হয়। মধ্যযুগে ইউরোপে পেঁচাকে একটি অশুভ পাখি হিসেবে দেখা হতো। তাই এই পাখি দেখার সাথে সাথে পুড়িয়ে মারার প্রথা ছিল। পেঁচাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ভয় কাজ করার অন্যতম কারণ হলো এই পাখির দেখা খুব সহজে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে দিনের আলোতে পেঁচার দেখা পাওয়া এককথায় অসম্ভব। নিশাচর পাখি পেঁচা অনেকটা নিঃসঙ্গও বটে। খুব একটা লোকসমুক্ষে তাদের বিচরণ নেই। নির্জন পরিবেশে থাকতেই পেঁচা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। গাছের উঁচু মগডাল, ঘনপাতার আড়াল, পরিত্যক্ত বাড়ি, গাছের কোটর, অপেক্ষাকৃত অন্ধকার স্থানে পেঁচা বসবাস করে। মূলত লোকচক্ষুর আড়ালে নিজেকে গুটিরে রাখার জন্যেই পেঁচার এই ব্যবস্থা।
কৈফিয়তঃ অদ্যকার এই খাপছাড়া লেখাটি কারো উদ্দেশ্য করে লেখা নয়।
তার পরেও যদি কাকতালীয়ভাবেকারো চরিত্রের সাথে মিলে যায় তা হলে তা সর্ম্পূর্ণভাবে অনভিপ্রেত।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম ফেসবুক-১ ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:১০