সিরিয়াল কিলারের কথা আমরা সবাই শুনেছি, যারা বেছে বেছে একশ্রেণীর মানুষকে আক্রান্ত করেন। ঠিক যেমন জ্যাক দি রিপার বলে একজন সিরিয়াল কিলার ছিলেন যিনি বেছে বেছে যৌনকর্মীদের খুন করতেন। তারপরেও অনেক সিরিয়াল কিলারের কথা শোনা গেছে। এদের কারোর খুন করা ছিল নেশা,কারোর ছিলো পেশা, আবার কেউ ছিলেন মানসিক রোগী। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন যারা এই কাজ করেন তারা প্রত্যেকেই মানসিক রোগী। এখনও অবধি যে সকল সিরিয়াল কিলারদের নাম উঠে এসেছে, তারা প্রত্যেকেই প্রাপ্তবয়স্ক। তবে এমন একজন সিরিয়ালকিলার ও আছেন, যার বয়স মোটে ৭ বছর। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ সিরিয়াল কিলার' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ভারতের ৭ বছর বয়সী বালক অমরজিৎ সাদা। বিহারের মুশাহার গ্রামের বাসিন্দা সে। ২০০৬ সালে অমরজিৎ যখন প্রথম ৬ বছরের চাচাতো একটি বোনকে খুন করে তখন তার বয়স ছিলো ৭ বছর। এরপর পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সে আরো ২ টো খুন করে। ধারণা করা হয়, নিজের আট মাস বয়সী বোনকেও খুন করেছে সে। অর্থাৎ ৮ বছরের মধ্যেই সে তিন জনকে খুন করে ফেলেছিল। প্রত্যেকটা খুন করার পরেই সে অস্বাভাবিক ভাবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়তো। তার পরিবারের লোকেরা এই সকল বিষয় জানা সত্ত্বেও পারিবারিক বিষয় বলে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন। অমরজিতের চাচার মতে, পরিবারের কিছু সদস্য এই অপরাধের কথা জানতেন; তবে তারা একে বিবেচনা করতেন 'পারিবারিক বিষয়' হিসেবে। ২০০৭ সালে অমরজিৎ তৃতীয় একটি শিশুকে হত্যা করার আগ পর্যন্ত সব কিছু এভাবেই চলছিল।
তার শেষ হত্যার শিকার ছয় মাসের শিশুকন্যা খুশবু। ২০০৭ সালে অমরজিৎ ছয় মাসের শিশু খুশবুকে নৃশংসভাবে খুন করে। এটি ছিল তার তৃতীয় খুন। ছয় মাসের সেই শিশুটির নাম ছিলো খুশবু। অমরজিতের প্রতিবেশি খুশবুর মা পুলিশকে জানান, মেয়েকে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে কাজে গিয়েছিলেন তিনি। ফিরে আসে এসে আর খুশবুকে খুঁজে পাননি। এর কয়েক ঘণ্টা পর অমরজিৎ স্বীকার করে, সে শিশুটিকে খুন করেছে। এরপর সে গ্রামবাসীদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়, যেখানে খুশবুকে পুতে রেখেছিল। এ ঘটনায় পুলিশ অমরজিৎকে ধরে নিয়ে যায়। অমরজিৎ বলে, সে সেই শিশুটিকে গলা টিপে মারার পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় ইট দিয়েও আঘাত করেছে। তারপর সেই শিশুটিকে সে নিজে হাতে কবর দিয়েছে। খুশবুর মা খুশবুর এরকম নৃশংস মৃত্যুর কথা শুনে গ্রামবাসীকে খবর দেয়, তারপর গ্রামবাসীরা অমরজিৎ কে নিয়ে কবরস্থানে যায়। পুলিশ ও এসে অমরজিৎ কে গ্রেপ্তার করে। শুধু খুশবু নয়, তিন মাস আগে নিজের বোন এবং আরও আগে চাচাতো বোনকেও সে খুন করেছে। পুলিশ সূত্রে জানাযায় সবগুলো হত্যাকাণ্ড প্রায় একইভাবে করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, পুলিশি হেফাজতে অমরজিৎ অনেক হেসেছে, তবে তেমন একটা কথা বলেনি। পুলিশ যখন অমরজিৎকে প্রশ্ন করছিল তখন অমরজিৎ অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। প্রশ্নের উত্তরে সে কোন উত্তর দেয়নি শুধু পাগলের মত হাসছিলো আর একটু পরপরই বিস্কুট খেতে চাইছিলো।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে, সে সময় একজন মনোবিজ্ঞানী বলেছিলেন,অমরজিৎ অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে মজা পায়। এমন মানসিক রোগে আক্রান্তরা শুধু অন্যকে কষ্টই দিতে জানে। কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার এর কারনে তারা এই সকল কাজ করে। এই রোগে আক্রান্তরা অপরকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়। ভারতীয় আইন অনুযায়ী, একজন শিশুকে কারাগারে পাঠানো নিয়ম নেই। কারাগারের পরিবর্তে বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত তাদের শিশু নিবাসে রাখা হয়। বয়স কম থাকায় ও মানসিক রোগের সালে সে মুক্তি পায়। তিনটে খুনের কারণে তার অনেক বেশি সাজা হওয়া উচিত ছিল কিন্তু তার মানসিক রোগের কথা ভেবে এবং বয়স অল্প থাকার কারণে তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিচারক তাকে মুক্তি দেন। কারণে বিচারক তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাননি। তাই ১১ বছর পর ২০১৬ সালে ১৮ বছর বয়সে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এছাড়াও টানা ৩ বছর সে মনোরোগবিদের কাছে কাউন্সিলিং গ্রহণ করে। বর্তমানে অমরজিতের বয়স ২২ বছর তবে গোপন রাখা হয়েছে তার বাসস্থানের ঠিকানা। নিজের নাম বদলে এখন সে সমরজিৎ করেছে। বর্তমানে কোথায় আছে সমরজিৎ, তার খোঁজ জানে না কেউ।
সূত্র: দ্য সান (ইউকে)
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম ফেসবুক-১ ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:১৮