somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক নাবালকের মাতবর হয়ে ওঠার গল্প !!

০২ রা মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক নাবালকের মাতবর হয়ে ওঠার গল্প !!
নূর মোহাম্মদ নূরু

বহুদিন আগে এক গ্রামে বাস করতেন এক ডাকসাইটে মাতবর। আশে পাশের দু চার দশ গ্রামে ছিলো তার শুনাম আর মতবরির খ্যাতি। যে কোন সমস্যায় গ্রাম্য সালিসিতে সঠিক ও ন্যায় বিচার করতে তার সমকক্ষ আর কেউ ছিলোনা বলে দূর দুরান্ত হতে সালিসি সভায় তার ডাক পড়ত। এক পুত্রের জনক এই মাতবর সালিসী করে যা আয় করতেন তাতেই স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে সুখেই দিনাতিপাত করতেন।

কালের পরিক্রমায় একদিন পরিবার ও গ্রামের আবাল বৃদ্ধ জনতাকে শোক সাগরে ভাসিয়ে পরপারের যাত্রী হলেন আমার আজকের গল্পের সেই মাতব্বর! "সময় ও স্রোত কারো জন্য অলেক্ষা করেনা"। দিন চলে যায় তার নিজ গতিতে। কারো জন্যি থেমে থাকেনা তার পথ চলা। এক সময় মাতুব্বরের মৃত্য শোক থিতু হয়ে আসে। শোক কাটিয়ে উঠে তার পরিবার ও গ্রামবাসী। আগেই বলা হয়েছে মাতব্বরের সংসারে সদস্য ছিলো মাত্র তিনজন এবং তার আয় দিয়েই সংসারের ভরণ পোষণ চলতো। মাতুব্বরের মৃত্যুর পেরে জমানো যা ছিলো তা শেষ হবার পরে অভাব কষ্ট দেখা দিলো সংসারে। সন্তানের মলিন মুখ দেখে মা আড়ালে চোখের পানি মোছে।

সন্তানও মায়ের কষ্ট বুঝতে পারে কিন্তু কিইবা করতে পারে সে! এমন নিদারুন সংকটে বিধাতা বুঝি মুখ তুলে চাইলেন এই অসহায় পরিবারের দিকে। আমি যে সময়ের কথা বলছি সে সময় রাজার ছেলে রাজা, পঞ্চায়েতের ছেলে পঞ্চায়েত আর মাতুব্বর হওয়ার রেওয়াজ ছিলো। একদিন মাতুব্বরের ডাক পড়লো এক দূর প্রামে শালিসী করার জন্য। কিন্তু ছেলেতো তখনো সালিসী করার মতো যোগ্যতা লাভ করে পারে নাই। কিন্তু উপায় নাই! রেওয়াজ অনুযায়ী তাকে মাতুব্বরী করতেই হবে। তা ছাড়া সংসারের অভাব অঘটনের , মায়ের চোখের পানি তাকে সিদ্ধান্ত দিতে বাধ্য করলো মতবরী করতে যেতে। যে সময়ের কথা বলছি সে সময় যাতায়াত ব্যবস্থা এত উন্নত ছিলোনা। পায়ে হেটে বা নৌকায় করে দূর দূরান্তে যেতে হতো। সময় মতো নৌকা যোগাড় করতে না পারায় খুব সকালে বাবার রেখে যাওয়া মাতবরি লাঠি ও চাদর নিয়ে বের হলো খোকা বাবু মাতবরী করতে

এত সময় সব ঠিক ঠাকই চলছিলো। কিন্তু বিপত্তি বাধলো যখন প্রাকৃতি তাকে ডাক দিলো তার ডাকে সাড়া দিতে! প্রাকৃতির ডাক এতই কঠিন যার ডাকে কেবল সাধারণ মানুষ নয় রাজা বাদশারাও পালন করতে বাধ্য। নব্য মাতবর খীকা বাবুও পরাস্ত হলেন প্রাকৃতির ডাককে অবজ্ঞা করতে। তিনি সাথের চাদরটিকে কোমড়ে পেঁচিয়ে পাশের জংগলে প্রাকৃতি কাজ সমাধান করলেন। সমস্যা হলো জংগলে পানি পেলেন না নিজেকে শু চী করার জন্য। বাবার চাদর কোমড়ে আর লাঠি হাতে রিনি চললেন পানির সন্ধানে। কিন্তু পানির কাছে যেতে যেতে তার অবস্থা লেজে গোবরে! অবশেষে নদীর কিনারে আসলেন নিজেকে পরিস্কার করার জন্য। কিন্তু বিধিবাম। অনেক চেষ্টা করেও বালক তার পশ্চাৎদেশ খুঁজে পেলোনা বা নাগাল পেলো না। কোমরে বাবার চাদর জড়ানোর কারণে যে তার এমন লেজে গোবরে অবস্থা তা তার বোধগম্য হলোনা। অনেক চেষ্টার পরেও যখন সে নিজের পশ্চাৎদেশর ময়লা পরিস্কার করতে সক্ষম হলোনা তখন সে কিঞ্চিত ভয় পেয়ে খেদের সাথে বললো "এক দিনের মাতুব্বরি পেয়ই পাছা তুমি দূরে সরে গেলা নাকি আমার হাত ছোট হয়ে গেলো"। আমি যদি আরো মাতুব্ব্রি করতে যাই তা হলে হয়তো আরো কোন অঘটন ঘটতে পাতে। তাই আজ থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর কোন দিন মাতুব্বরি করতে যাবনা। তাতে যদি না খেয়ে মরতে হয় তাও সই।
মোরালঃ যার কাজ তারই সাজে, অন্যের শুধু লাঠি বাজে।
সূত্রঃ মোরালের নীতি বাক্য অনুসারে লিখিত।

প্রকাশকালঃ ঢাকা-রবিবার, ২ মে ২০২২ ইং
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×