somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প#সংসার-লেখা#নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৭ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকে আমার প্রাক্তন স্বামীর বর্তমান স্ত্রীর ঘরে প্রথম কন্যা সন্তান হয়েছে।সে কোলে সন্তান নিয়ে হাসিমুখে ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করেছে। পাশের বিছানায় বর্তমান স্ত্রীর হাতে সেলাইন। বাম পাশে মুখ করে শুয়ে আছে তাই তাঁর চেহারাটা বোঝা যাচ্ছে না ।
ভীষণ সুখি দাম্পত্যের দৃশ্য।কি অপার মানবিক সৌন্দর্য। যেকোন মানুষের মন শীতল সুখে ভরে উঠবে। সবাই নতুন সন্তান আগমনে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।আমিও তাঁর ছবিটির দিকে তাকিয়ে অভিনন্দন দিলাম।
"অভিনন্দন তৃতীয় কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক ড. রাশিকুর রহমান"
তারপর নিজের মনের অজান্তেই ঝাপসা চোখে জল নিয়ে হেসে উঠলাম।
আমার প্রাক্তন স্বামী ড. রাশিক তৃতীয় সন্তান কোলে নেওয়া ছবি ছাড়াও আরও একটি ছবি ও পোস্ট করেছে৷ সে ছবিটায় আমাদের দুই মেয়ে সোনালি ও রুপালি । সে দুই পাশে দুই মেয়েকে জড়িয়ে আদুরে ভঙ্গিমায় ছবিটা তুলেছে। আর সে ছবিটা কোরিয়ায় থাকাকালীন আমিই তুলে দিয়েছিলাম। আমি আমার ফেক আইডি দিয়ে দেখলাম সে আগের সমস্ত স্মৃতি ছবি মুছে ফেলেছে কিংবা অনলি মি করে রেখেছে। নতুন সন্তানের নাম রেখেছে গোধুলি।
তাঁর প্রাণ খোলা হাসি দেখে মনেহচ্ছে তৃতীয় বার কন্যা সন্তানের বাবা হওয়ায় তিনি বেশ খুশি।
আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। মনোযোগ দিলাম নিজের কাজে। লোক দেখানো পিতৃত্ব দেখাতে সোনালি আর রুপালির ছবি ব্যবহার করতেও ভুলেনি।
আজকে সোমবার। আমার ল্যাবে বেশ ব্যস্ততা। সকালেই সুপারভাইজারের সাথে জরুরি মিটিং ছিল। এরপর কিছু ল্যাব ওয়ার্ক করেছি৷ এখন ল্যাপটপের সামনে আর্টিকেল লিখতে বসেছি৷ নিজের উপর অনেক ধকল যাচ্ছে।
আমি খুব মনোযোগ দিয়েই ল্যাবে কাজ করছিলাম।মগে কফি ঢেলেছি। মাত্র চুমুক দিব সে সময় মেসেঞ্জারে কিছু ছবির স্কিনশট। আমার প্রাক্তন স্বামীর গর্বিত কন্যা সন্তানের বাবা হওয়ার ছবি।
আমার কিছু কাছের মানুষেরা পাঠিয়েছে। আসলে হঠাৎ এমন খবরে সবাই বিস্মিত। কারন রাশিকের সাথে আমার ডিভোর্স হয়েছে কয়েক বছর হল। তেমন কেউ জানেনা। ডিভোর্সটা আমিই দিয়েছিলাম৷ রাশিক হয়তো লজ্জায় কাউকে জানায়নি। নতুন বিয়ের ছবি কিংবা পাল্টে যাওয়া জীবনের গল্পটা প্রকাশ করেনি৷ তাই হঠাৎ তৃতীয় সন্তান সহ ছবি দেখে সমাজে নানা কৌতুহল তৈরি হয়েছে।
ড. রাশিক একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। অনেক পরিচিতি আছে। সবাই তাকে অনেক অমায়িক, ভদ্র ও ভাল মানুষ হিসেবে জানে৷ অথচ
তাঁর স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছে৷ যার সাথে সাত বছর প্রেম আর দশ বছর সংসার করেছে৷ সতের বছরের দীর্ঘ সংসার ভ্রমণে এমন কী ঘটল যে তাঁর প্রেমিকা প্রিয়তম স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
আমি ড. তাসনিম তমা। একজন অনুজীব বিজ্ঞানী। আমি এবং আমার স্বামী ড. রাশিকুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুজীব বিজ্ঞানে সহপাঠী ছিলাম। কি দূর্দান্ত প্রেমের গল্প আমাদের।
রাশিক প্রথম হলে আমি হতাম দ্বিতীয়। সব কিছুতেই যে সৃষ্টিকর্তা রাশিকের পাশেই আমাকে রেখে দিতো।
কতো জায়গায় রিসার্চের কাজে এক সাথে ঘুরে বেড়িয়েছি। রাশিক সুযোগ পেলেই আমার হাতটা ধরে ফেলতো। কিছুতেই হাত ছাড়তে চাইতো না। লুকিয়ে লুকিয়ে সুযোগ বুঝে আমার হাত ধরতে পারাটা ছিল ওর রাজ্য জয় করার মতো। আমার হাতটা ধরেই একটা শান্তির মিষ্টি হাসি দিতো। কালো মানুষ। ধবধবে সাদা দাঁতের হাসি সবার চোখে পড়তো।
কালো হলেও রাশিক বেশ সুদর্শন, বাকপটু আর ভাল রেজাল্টের কারনে ভীষণ জনপ্রিয় ছিল।আমি ধবধবে ফর্সা না হলেও যথেষ্ট উজ্জল আমার গায়ের রঙ। মেধাবী হিসেবেও নাম ডাক ছিল।
পারফেক্ট জুটি হিসেবে পুরো সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে সবাই আমাদের চিনতো।
মাস্টার্সের পর রাশিক ডিপার্টমেন্টে জয়েন করল। আর আমি একটি প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ে।।
খুব দ্রুত আমরা পারিবারিক ভাবে বিয়েও করে ফেললাম। বছর ঘুরতেই আমাদের ঘরে প্রথম কন্যা সোনালি এলো। এরপর দেড় বছর পর এলো রুপালি।
সুখেই চলছিল আমাদের ছোট সাজানো সংসার।
রাশিক ঘরের বড় ছেলে। ওর ছোট দুই বোন ও এক ভাই আছে। আমাদের সংসার, চাকরি আর জীবন গুছিয়ে নেওয়ার ব্যস্ততা বেড়ে গেলো। সোনালি ও রুপালি ও বেড়ে উঠতে লাগল। সেই সাথে রাশিকের ভাই বোনেরাও পরিপক্ক হতে শুরু করল। আমার বড় ননদের বিয়ে হল। ছোট ননদ ও দেবরের দুই বিশ্ব বিদ্যালয়ে সুযোগ হল। রাশিকের স্কুল শিক্ষক বাবা অবসরে গেলো।
সংসারের সমস্ত দায়িত্ব এলো রাশিকের উপর।
কিন্তু ধীরে ধীরে কোন এক ফাঁকে আমাদের দাম্পত্যের ছন্দ হারাতে শুরু করল।
আমার বড় ননদের বিয়ে হলেও বাবার বাড়িতে বিভিন্ন ওযুহাতে থাকতো। আর আমাদের দাম্পত্যে কলহ তৈরি করাই যার একমাত্র দায়িত্ব হয়ে গেলো।
আমি সারাদিন বাইরে চাকরি করি। সংসারে ও সন্তানের কোন মনোযোগ নেই।এমনকি আমার বেতনের পুরোটা কেন সংসারে দেই না।
এমন হাজারো ছোট খাটো বিষয় গুলো বৃহৎ রূপ নিতে শুরু করল।বড় ননদ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার দোষ বের করতো। আর আমার শাশুড়ি, ছোট দেবর ও ননদ তাদের সাথে সহযোগিতা করে যেতো।
এতো গুলো মানুষ যে আমার সংসারে সেটা সবাই ভুলে গেছে। বিষয়টা এমন যে আমিই ওদের সংসারে অতিরিক্ত চাকরিজীবী বোঝা নারী।
দিন যেতে থাকে আমি সবার চক্ষুশূলে পরিনত হতে থাকি।
আমি শুধু নীরবে মানিয়ে নিয়ে সংসারটা এগিয়ে নেওয়ার ব্রতে ছিলাম। দিনের পর দিন নির্যাতিত হওয়া আমার ভেতরের মানুষটাও পাল্টে যেতে লাগল।
আমি ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারতাম না। স্মৃতি লোপ পেতে থাকল। আমার মেয়ে দুটোর চেহারা চোখের পিসিতে লেপ্টে থাকতো। গভীর বিষন্নতায় আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম।
তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পালিয়ে থেকেও যদি বাঁচতে পারি। রাশিকের ও আমার ক্যারিয়ারের কথা ভেবে পিএইচডি করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কোরিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে একই প্রফেসরের অধিনে আমাদের পিএইচডির সুযোগ হয়ে গেলো।
সাড়ে তিন বছরের একটা সুযোগ হল সংসার বাঁচাতে আরেক সংসার থেকে পালিয়ে যাওয়া।।
কোরিয়ার দিন গুলো ভাল মন্দে খারাপ ছিল না। আমাদের দুই সোনালি ও রুপালি নতুন দেশে বেশ মানিয়ে নিল।
আমি আর রাশিক যেন সাড়ে তিন বছরের জন্য আবার সেই প্রেমময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেলাম।
তবে প্রায়ই আমাদের সম্পর্কটায় ঝড় বৃষ্টি হয়ে যেত কোন নির্দিষট কারন ছাড়া।
বাংলাদেশ থেকে যখন রাশিকের মা ও ভাই বোনেরা ফোনে কথা বলতো। ঠিক সেদিন থেকেই পরবর্তী এক সপ্তাহ রাশিক আমার সাথে তেমন কোন কথা বলতো না। একই ল্যাবে আমরা কাজ করতাম। জরুরি রিসার্চের বাইরে একটি কথা ও রাশিক বলতো না। রাশিক যেন নিজস্ব সংসার জীবন থেকে ছিটকে যেতো।
আমি অসহায়ের মতো নিখোঁজ হওয়া রাশিককে জীবনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করতে থাকি।
এমন হাজারও উন্থান পতনের সাংসারিক গল্প নিয়ে আমাদের দু'জনের পিএইচডির সময় শেষ হয়ে এলো।
রাশিক সঠিক সময়ে থিসিস জমা দিতে পারলেও আমার দেরি হয়ে গেলো।
নাহ। আমার মেধা কিংবা পরিশ্রমে কোন ঘাটতি ছিল না। শুধু মনের আকাশটা সব সময় মেঘাচ্ছন্ন থাকতো। বৃষ্টি হওয়ার ভয় আর সংকোচে আমার জীবন যেতো। আমি রিসার্চে মনোযোগ দিতে পারতাম না।
ছোট ছোট দু'টো মেয়ের লালন পালন করা , স্বামীর মন বুঝে চলা,অন্যদিকে রাশিক তার স্কলারশিপের পুরো টাকা দেশে পরিবারের খরচের জন্য পাঠাতো। আর আমারটা দিয়ে আমাদের কোরিয়ার সংসার চলতো।
সব হিসাব নিকাশ মেনে নিয়েও আমি সুখী সংসার করে যেতে চাইলাম। কখনও আমি টাকা দিতে না চাইলে রাশিক কথা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে শাস্তি দিতো।
আমিও ঘরের বড় মেয়ে।আমার ও ছোট দুই ভাই বোন আছে। আমার বাবাও একজন অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী।তাদের প্রতি সামান্য কিছু দায়িত্ব পালন তো দূরের কথা। আমার স্কলারশিপের পুরো টাকায় বিদেশের মাটিতে দু'টো সন্তান নিয়ে টিকে থাকা ভীষণ হিমশিম খেতে হতো।
বাংলাদেশি কিংবা কোরিয়ার কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতেও চিন্তা করতাম। কারন সংসারের খরচের পর হাতে কিছুই থাকতো না। নিজের কিংবা সন্তানদের জন্য ভাল মন্দ সৌখিন কোন কেনাকাটা করার। মনটা সব সময় হীনমন্যতায় ভুগতো।
রাশিকের পিএইচডির পর আমরা বাংলাদেশে ফিরে এলাম। আমি কিছুদিন পর বাকি ছয় মাসে রিসার্চের বাকি কাজ করব। তারপরে ডিগ্রী নিয়ে ফিরব।
দেশে ফেরার পর আবার সেই আগের চিত্র। অল্প কিছু দিনেই কেমন খুব দ্রুত যেন সম্পর্কের দেয়াল ভাঙতে শুরু করল।
আমার শাশুড়ির ধারনা আমি স্কলারশিপ পেয়েছি। আমার কাছে অনেক টাকা জমা আছে। ছোট ননদের বিয়ের জন্য আমার টাকা দিতে হবে।
প্রতিদিন সকাল শুরু হতো ঝগড়া দিয়ে।এরমধ্যে আমাকে কোরিয়া যেতে হবে। রাশিক নতুন বায়না করল কোরিয়া যেতে হবে না। ছেলের মা হতে হবে। দু'টো মেয়ের পর তাঁর একটা ছেলে চাই। একজন উচ্চ শিক্ষিত পিএইচডিধারী বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সেরা ছাত্র, সেরা শিক্ষকের মুখে মধ্যযুগীয় নারী দমন পিড়নের বাক্য শুনে আমি কেমন হতবাক হয়ে গেলাম।
নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলো। মুখের কটুবাক্য এক সময়ে গায়ে হাত তোলায় পরিনত হল। কোরিয়ার বাকি ছয় মাস রিসার্চ করে পিএইচডি শেষ করার ডেড লাইনটা ও শেষ হয়ে গেলো।
আমার ভেতরের তিলে তিলে মরে যাওয়া মানুষটা হঠাৎ একদিন প্রতিবাদী হয়ে উঠল।
ভাবলাম পৃথিবীতে দম নিয়ে বেঁচে থাকাটা সবার আগে জরুরি। আমার দু-চোখ পৃথিবী দেখলেই আপন অনুভূতি নিয়ে চিন্তা করব।
তারপর একদিন নীরবে আমার বিন্দু বিন্দু করে সাজানো সংসার, প্রিয়তম প্রাক্তন প্রেমিক, সংসারের প্রিয় স্বামী, আর সহস্র স্মৃতি ফেলে শুধু সন্তান দু'টো সহ জীবন নিয়ে পালিয়ে এলাম।
আমার আর কোরিয়া যাওয়া হল না। বাবার বাসায় মেয়ে দু'টো নিয়ে প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ের চাকরিটার উপর ভরসা করে নতুন জীবন শুরু হল।
আমার মেয়ে দু'টোই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। ওরা আমাকে বলে "মা তুমি আবার ল্যাবে যাও। মা তুমি সেরা বিজ্ঞানী হও।"
ছোট ছোট মেয়ে দু'টোর স্বপ্ন পূরণে আমি আবার লড়াই শুরু করলাম। আগের করা কিছু রিসার্চ কে অবলম্বন করে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রফেসরদের সাথে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করলাম।
আমার ফুলব্রাইট স্কলারশিপে নতুন করে পিএইচডির সুযোগ হল। বৃদ্ধা মায়ের কাছে মেয়ে দু'টোকে রেখে আমেরিকার চাপেল হিলে একাই পাড়ি জমালাম। ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনায় আমার নতুন জীবন শুরু হল।
গত বছর আমার পিএইচডি শেষ হয়েছে। দেশে আর না ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম।
পোস্ট ডক্টরেট শুরু করলাম। আমার মেয়ে দুটো অনিশ্চয়তা, ভয়, যুদ্ধ দেখতে দেখতে এতো ছোট বয়সেও মানিয়ে নেওয়া শিখে গিয়েছে।
আগামী সপ্তাহে বিশেষ বিমানে আমার মা বাবা সহ ওরা আসছে আমেরিকা আমার কাছে। গত কতো গুলো বছর আমার কলিজার টুকরো সন্তান দু'টোকে স্পর্শ করতে পারিনি। আমার বুকে নিয়ে ওদের স্পন্দন ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। চোখের জল নদী হতে হতে সমুদ্রে মিশে গেছে। আমি আর এর উৎস খুঁজে পাইনা।
রাশিকের ভালোবাসা আর পাল্টে যাওয়া আমাকেও পাল্টে দিল। কখনও জীবনে পরম আপনজন ও অচেনা হয়। ঘটনা পরম্পরায় অনেক অপ্রত্যাশিত দূর্ঘটনাও ঘটে। অসহায় মানুষ কেবল নিয়তিকে দোষারোপ করে। কোন ভাবেই জীবনের রহস্যময় জলোচ্ছ্বাসের প্রকৃত কারণ খুঁজে পায় না।
রাশিক অবশ্য সন্তানদের ফিরে পেতে কেস করেছিল। সন্তানদের মায়ের প্রতি ভালোবাসার জোর বেশি থাকায় কেসে হেরে যায়। কিন্তু তারপর কোন দিনও সে একই শহরে থেকেও আমাদের মেয়েদের সোনালি ও রুপালি কে একবারও দেখার প্রয়োজনবোধ করেনি। কারন তাঁর দু’চোখে তখন ছেলের বাবা হওয়া স্বপ্ন।
পিতৃহীন হয়ে আমার মেয়েরা নানীর কোলে বড় হয়। ড. রাশিক নতুন একজনকে বিয়ে করে। সে হয়তো আমার মতো সংসারে অমনোযোগী, উচ্চাকাংখী, ছেলে সন্তান জন্ম না দেওয়ার মতো অযোগ্য না। হয়তো তাঁর নতুন সঙ্গীর সাথে সংসার জীবন ভালোই কেটেছে।
আমিতো এখন সকল ঝড় কাটিয়ে বেশ আছি। পৃথিবীতে এখন করোনাকাল চলছে। অদৃশ্য ভাইরাস এর সাথে যুদ্ধ। আমাদের বড় রিসার্চ টিম ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে, জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত।আমিও দুঃখকে আর শত্রুকে জীবনের পরম সত্য মেনে নিয়েছি।
আমেরিকার আবহাওয়া ও পাল্টে যেতে শুরু করেছে।
বাতাসে উত্তাপ কমে যাচ্ছে।দুমাস পর গভীর শীতলতা যেন এই দেশের মানুষের দেহমনকে ছুঁয়ে যাবে।
আমি আমার মা বাবা আর দুই মেয়েকে নিয়ে শুভ্র সফেদ তুষারে মাখামাখি করব।
চিৎকার করে বলব ছেলের মা হতে না পারলেও বেঁচে থাকা যায়।আত্ম সম্মানের জন্য প্রিয়তম প্রেমিককেও ভুলে থাকা যায়।
আমি বোধহয় একটু আবেগপ্রবণ হয়ে গেছি। রাশিকের কোলে তৃতীয় মেয়ে! ছেলের মা না হতে চাওয়ার কারনে আমার সমস্ত সততা, শিক্ষা আর ভালোবাসা কে অস্বীকার করেছিল। কি অদ্ভুত পৃথিবী!
দু'জন মানুষ দুই দেশে বেশ তো চলছে। ড. রাশিক ফেসবুক আর ল্যাপটপের ফোল্ডারে রাখা অতীত জীবনের সব মুছে ফেলে নতুন সঙ্গীকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু আমার মস্তিস্কের স্মৃতির ফোল্ডারটা ইচ্ছে করলেই মুছে ফেলা যায় না। ভালোবাসা নামক গভীর অনুভূতি তাঁকে চিরন্তন করে রেখেছে।
আজ সকল স্বপ্ন পূরণের সকল আক্ষেপ হয়তো শেষ। জীবনের সকল ব্রতে আমি জয়ী।
কিন্তু ভেঙে যাওয়া আপন বিশ্বাসের জগতটা আগলে ধরার মানুষটা নেই। বার বার ভালোবাসা আমায় ফিরিয়ে দেয়। নতুন করে কাউকে বিশ্বাস করার সাহস কে গুড়িয়ে দেয় ।
যে গভীর ভাবে ভালোবাসে সে হয়তো কষ্ট পায়, হেরে যায় কিন্তু হেরে যেতে যেতে ও একদিন অদম্য সাহস নিয়ে জয়ী হয়ে যায়।
পৃথিবীতে কয়জন প্রকৃত হৃদয় উৎসর্গ করতে পারে। সামনের পথ গুলোতে আমার প্রিয়তম প্রাক্তন প্রেমিক স্বামীটি হয়তো হঠাৎ করে আমার হাতটা ধরবে না।
আমাকে কেউ বেঁচে থাকার অদম্য লড়াইয়ের গল্প শুনাবে না। কিন্তু আমি তো আমাদের মেয়েদের ছোট ছোট হাত গুলো ধরে এগিয়ে যাব। তাদের শুনাবো আমার শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা আর লড়াইয়ের গল্পটি।
গল্প#সংসার
লেখা#নুরুন নাহার লিলিয়ান
Nurun Nahar Lilian
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৪৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×