somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিঃ শুধুই সরকারের দোষ?

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টিসিবির ট্রাক এলো।
সবার দৌড় শুরু, লক্ষ্য কে কার আগে গিয়ে কিনবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। সবাই অধৈর্য, পাছে যদি নিজে কেনার আগে পণ্য শেষ হয়ে যায়।
আমি নিশ্চিত এই দৃশ্য দেখে সবার খারাপ লাগে। মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস দেখে সবাই মর্মাহত।
কিন্তু সবকিছুর দাম হু হু করে এতো বাড়ছে কেন? একবাক্যে সবাই এজন্য সরকারকে দায়ী করে।
আসলেই কি এটা শুধু সরকারের দায়? হতেও পারে, যে সরকার এতো শক্তিশালী, যে এখন ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোকে পাত্তা না দিয়ে চলতে পারে, সেই সরকার দ্রব্যমুল্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না কেন।

যে কোন রাষ্ট্র তার ভেতরে বসবাসরত সব জনগণের সকল সুখ অসুখ নিয়ে ভাববে, বর্তমানে সভ্য জগতের মানুষ মাত্রই রাষ্ট্রের কাছে এটা আশা করে থাকে। আমরা বাংলাদেশীরা এই জিনিসটা আর একটু বেশিই আশা করে থাকি। কাজেই এদেশে সকল সমস্যার কারণে জনগণ সরকারকে গালাগাল দিয়ে মনের ঝাল মিটায়।
কিন্তু জনগণের কি কোন দায় নেই?

মাত্র পঁচিশ বছর আগে, আমাদের শৈশবকালে দেখতাম গ্রামের প্রতিটি মানুষ কোন না কোনভাবে উৎপাদনের সাথে জড়িত ছিল। যার জমি আছে সে জমিতে ধান সহ অনেক ফসল ফলাতো। প্রতিটি লোকের বাড়ির সাথে লাগোয়া পুকুর ভরে থাকতো হরেক রকম দেশি মাছ। আর পুকুর পাড়ে লাউ, শিম, ঝিঙেসহ অনেক রকম সবজি চাষ হতো।
আমাদের নিজেদের কথাটাই বলি। আমার বাবা চাচারা ছিলেন শিক্ষিত লোক। উনারা মাঝারি সাইজের কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ করে বিপুল মাছ উৎপাদন করতেন। পুকুরের পাড়ে আমার বাবা সযতনে টমেটো চারা লাগিয়েছিলেন, শিম গাছ লাগিয়েছিলেন। পুকুরের এক কোণ জুড়ে থাকতো লাউ গাছের মাচা।
বাড়িতে মা চাচিরা দেশি হাঁস মুরগি চাষ করতেন। আমরা ছেলে মেয়েরা বাবা মাকে তাদের কাজে সম্ভব হলে হেল্প করতাম।
চাইলেই নিজের চাষ করা ফল, শাক সবজি, মাছ, মুরগী খাওয়া যায়; বাজারে বাজারে এসব জিনিসের জন্য ঘুরতে হতো না।
বর্তমানে বাবা চাচাদের ছেলে মেয়েরা কেউই গ্রামের বাড়িতে থাকে না। কেউ ঢাকা, কেউ চট্টগ্রাম। সবাই চাকরিজীবী। কেউই এখন আর খাদ্য উৎপাদন এর সাথে জড়িত নই।
এটা বললাম আমার নিজের পরিবারের কথা। আমাদের গ্রামে প্রায় সব পরিবারেই এরকম সম্পদ ছিল। কারো বেশি ছিল, কারো কাছে কিছু কম ছিল- পার্থক্য এটাই। যাদের কাছে জমি ছিল না তাদের নিজেদের বাড়ির আঙিনায় অন্তত একটি শিম গাছ হলেও লাগিয়ে রাখতো। সেই শিমগাছের শিম দিয়েও অনেকগুলো দিন একটি পরিবারের তরকারির প্রয়োজন মিটতো। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন যন্ত্র থেকে সবাই দূরে সরে গেছে। অনেকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী হয়ে গেছেন, তারা প্রচুর রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। তারা চান না তাদের বাবা মা কিংবা ভাই বোন কৃষি কাজের মত 'কষ্টকর' কাজে যেন না জড়ায়। তাদের ছেলেমেয়ে যেন শুধু পড়ালেখা করে। ফলে উনাদের পরিবারগুলো গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছেন।


আগে আমরা সবাই মিলে মাটির কাছাকাছি থেকে উৎপাদনে অংশ নিতাম। এখন সবাই হাত পা ধুয়ে শহরের বহুতল ভবনে উঠে বসে আছি। আগে সকলে শাক সবজি চাষ করতাম। এখন সকলে মিলে টাকার চাষ করছি। আগে সবাই চেষ্টা করতো বেশি বেশি ফসল ফলানোর। এখন সকল চেষ্টা শুধু বেশি বেশি টাকা কামানোর। এখন সবার হাতে প্রচুর টাকা হয়ে গেছে। অর্থনীতি বিষয়ে যার ন্যূনতম ধারণা আছে তিনিও বলতে পারবেন এমন পরিস্থিতিতে কি ঘটতে পারে।
সমাজের সবার হাতে টাকা আছে। সবাই এখন কিনে খেতে চায়। কিন্তু সেই তুলনায় উৎপাদন তো হচ্ছে না। এর ফলে দিনদিন টাকার বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কমছে।
এই সমস্যা হুট করে তৈরি হয়নি। হুট করে এটা সমাধান করাও সম্ভব নয়।
এখানেই সরকারের দায় চলে আসে। বড় বড় মেগা প্রজেক্টের স্বপ্নে বিভোর না থেকে গ্রামের ক্ষুদ্র অর্থনীতি থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত যদি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগিয়ে যেত, তাহলে এই সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া ব্যপার ছিল না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০১
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×