" স্লামালেকুম, ক্যামন আছ দোস্ত?"
- এই তো ভালো, তোমার খবর কি?
"আরে সালাম দিলে উত্তর দিতে হয়, জানো না?"
- তুমি আবার সালাম দিলে কখন?
" আরে প্রথমেই তো সালাম দিলাম"
- কই? তুমি তো স্লামালেকুম না কি জানি কি বললে!
"আরে ঐ হলো ঐটাই সালাম"
- তাহোলে ওলাইকুম, ঠিক আছে?
"আরে নাহ্ বলতে হয় ওয়ালাই কুম আস্সালাম"
- ও ও ও তা তুমি কি আস্সালামু আলাউকুম বলেছো যে আমি ওয়ালাই কুম আস্সালাম বলে উত্তর দিব?
"আরে আমি যাই দিই তুমি ঠিক উত্তরটা দিবা, বুঝলে?"
- ও ও আচ্ছা।
[এটা হচ্ছে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ার প্রথম কথা। সন্ধ্যায় অফিস শেষ করে বাসায় যাওয়ার পথে পার্কের পাশ দিয়ে হাটার সময় তার সাথে দেখা...আমার দেশের দোস্ত]
-দোস্ত তুমি কি পান খাচ্ছ?
"হ্যা, এইটা সুন্নত"
-ও ও ও
"জানো না?"
-নাহ্ .....।
"তা দোস্ত কি নামাজ পড়? নাকি এই কাফের দেশে আস্যা সব ভুলছো.."
-না মানে মাঝে মাঝে পড়ি, নিয়মিত পড়া হয় না..
"(পিচ- দোস্ত আমার পানের পিক ফেলল)- না দোস্ত নামাজ নিয়মিত পড়.।বুঝলে নামাজ ছাড়া গতি নাই.... (আরবিতে কি জানি বললো আর আমি আবার আরবি জানি না )"
-তা ঠিক্.। তা দোস্ত তুমি এখানে কিভাবে আর কেন?
"আরে আমি তো সভাপতি (বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের ধর্মীয় উপদলের নাম বললো), আমি তো দলের খরচে আসছি"
-ও ও, তা দোস্ত দেশের হাল চাল কি কও তো.মাঝে মাঝে কি সব শুনি...।
"আরে ঐ সব কথায় কান দিও না , ওগুলো (বিশেষ রাজনৈতিক দলের নাম) বেজন্মা, হারামজাদা, কাফের গুলার কথা.।দেশে সব ঠিক আছে....।"
-ও .. যাক তোমার কথায় শান্তি পেলাম..
"হ্যা সব ঠিক... দেশ ইসলামী ব্যাবস্থায় চলতেছে.."
-ও ও.. (আযান দিচ্ছে) দোস্ত চলো আজকে একসাথে নামায পড়ি ...
"চলো আমিও তাই কই"
------নামায শেষে - ---
"দোস্ত চলো তোমার বাসায় যাই.তুমি নাকি বিয়ে করছ্ , ভাবীরে তো দেখাইলা না"
-দোস্ত চলো তার আগে চলো কোন ক্যাফেতে গিয়ে কিছু খাই....
"চলো কিন্তু আমি তো দলের খরচে আসছি তাই কিন্তু কোন টাকা পয়সা নাই.।তা তুমি বিল দিবা কিন্তু"
-হ্যা অবশ্যই ....
"দোস্ত ভাবী কেমন? মানে কেমনে কি কও দেখি......"
-এই আরকি.।তা দোস্ত কিছু জিনিস জানার ছিল, তুমি তো আবার আলহাজ্জ হযরত মাওলানা ইত্যাদি হইছো তা যদি জানাতে ভালো হতো---..।
"ঠিক আছে দোস্ত কও দেখি"
-দোস্ত এই যে বললে পান খাওয়া সুন্নত. নবীজি (সঃ) কি পান খেতেন?
"হ্যা দোস্ত তুমি জানো না? আরে এই জন্যই তো আমি পান খাই, খয়ের জর্দা (আরোও কিছু নাম) দিয়ে"
- দোস্ত আমি আবার ইদানিং সামান্য হাদিস পড়ছি.।তা আমি হয়তো বা অত দূর যাই নি তাই এখনো পাইনি.. তা দোস্ত কোন হাদিস গ্রন্থের কত নাম্বার হাদিসে আছে কও দেখি বাসায় যেয়ে দেখব--....।
"দোস্ত তুমি তো ভারতের ঐ জাকির নায়েকের মত কথা কচ্ছ.।আরে ও একটা ভন্ড, মুনাফেক, ওর কোন কথা মানবা না"
- না দোস্ত আমি জাস্ট জানতে চাচ্ছি.....। তুমি বলো ---
"দোস্ত আমার তো হাদিস এইভাবে মনে নেয় তবে উস্তাদরা এই কথাই বলেছিল"
--ও ও, আচ্ছা দোস্ত, তুমি যে বললা, তুমি স্লামালেকুম বললেও আমাকে পরো উত্তর দিতে হবে, কারনটা কি আর ঐ স্লামালেকুম শব্দটা কি সঠিক?....।
"হ্যা তোমাকে সঠিক উত্তর দিতে হবে আর আমরা যারা আল্লাহর পেয়ারের বান্দা তাদের জন্য ছাড় আছে কিন্তু তোমরা টুপি পড় না, পাঞ্জাবী পায়জামা পড়না তাদের জন্য পুরো উত্তরটা দিতে হবে, বুঝছো?"
- ও ও ও, তা পাঞ্জাবী পায়জামা আর টুপি পড়লেই কি আল্লাহর পেয়ারের বান্দা হওয়া যায়?.................
"হ্যা সাথে নামাজ পড়তে হবে, আচ্ছা দোস্ত বাদ দেও আমার একটা কথা কও তো, দেশে ব্যাঙ্কে আমার কিছু টাকা আছে কিন্তু বেনামে ঐ টাকাটা নিজের নামে করে নেব ক্যামনে?"
- (আমি আবার এখানকার ফেডারেল ব্যাঙ্কে আছি) দোস্ত তা তো বুঝলাম কিন্তু তুমি এত টাকা পাইলে কই?
"আরে কিছু সরকারি অনুদান...........(অ-নে-ক কথা)...........।"
- দোস্ত , তাই বলে এতিমের টাকা !
"আরে ব্যাটা সবাই নিলে দোষ নাই আমি নিলে কিসের দোষ? তা ছাড়া আমাদের উপর কেউ কথা বলার নাই, বললে একদম শ্যষ করে দিমু না"
- ও, তা আল্লাহ'কে কি বলে জবাব দিবা?
"আরে ব্যাটা শেষ কালে একটা হজ্জ কমুনে"
- তুমি তো হজ্জ করছ, এই যে আলহাজ্জ লাগাও.....।
"আরে ব্যাটা ঐটা শুনতে জববর লাগে তাই..."
-ও, তা দোস্ত তুমি বেনামে টাকা রাখতে গেলা ক্যা? কত কামাইছো?
"ঢাকায় পাচ ছয়টা বাড়ী করছি, কয়েকটা গার্মেন্টস্ আছে আর ব্যাঙ্কে সামান্য কয়েক কোটি...... টাকা পয়সার খুব কষ্টে আছি দোস্ত"
-ও, (মনে মনে বললাম - তাইলে তো আমি ভিক্ষা করতেছি), তা ঠিক খুব কষ্টে আছ....
বিল নিয়ে এলো আমি বিল দিলাম কথা বলতে বলতে নানা কথায় প্রচন্ড রাগ হয়ে গেল, ভাবছিলাম এর সাথে রাগ করব না কারন অতীতে এর সাথেই আমার নানা কারনে বাঁধত, এ নানা অপকর্ম করত আর ধরা পড়লে ধর্মের নানা লেবাস গায় দিত.....
-> বল্লাম দোস্ত, তুমি কি পান খাওয়া বাদ দিতে পারনা? এত দুর্গন্ধ সহ্য করা যায়?
"কই গন্ধ, আরে এতো সুবাস, আর পান খাওয়া বাদ দেওয়ার কথা বলবা না এই কারণে আমি আমার মেঝ বৌ রে তালাক দিছি পর্যন্ত" [চারটা বিয়ে করছে]
- ও, তাইলে তো দোস্ত এইটা তোমার নেশার মত হইছে কি কও?
"পানের নেশায় কিছু হয়না আর নবীজি তো পান খেতেন"
- দোস্ত সব নেশার জিনিস হারাম্ না?আর তুমি পান তো নেশার পর্যায়ে নিয়ে গেছ?
"আরে না পানের নেশায় কিছু হয় না আর দোস্ত শুনছি নাকি ব্রান্দি না কি একটা আছে খাইলে নাকি সেইরাম ব্য্যাপার শ্যাপার আমারে ঐটা একটা কিন্যা দাও আমি টাকা দিতাছি"
-ব্রান্ডি, তুমি ঐ মাল খাইবা কেন ঐডা তো মদ হারাম.।আমি এত বছরেও একফোটা খাই নাই আর তুমি আস্যাই..?
"নেতা নেত্রীদের খাওয়া দেখিছি আর শুনছি কিনা তাই আর আমারে তো আবার নেতা যাওয়ার সময় নিয়ে যাইতে কইছে"
- দোস্ত এইডা তুমি দেখ আমি পারমু না, এই কামে আমি নাই..........আর মদ খাওয়া, খাওয়ানো, নেওয়া সবই তো হারাম....
"হ্ ঐ আর কি, বাদ দেও দোস্ত চলো তোমার বাসায় যাই............ভাবীর সাথে দেখা করে একটু গল্প করিগে পরে আমি কাওরে দিয়্যা কিন্যা নিমুনে"
(রাগ আরোও বাড়তে লাগল, ভাবলাম মিথ্যা বলি বাসায় নেই, ওর বাবার বাড়ী ক্যলিফোর্নিয়ায় বলে দিই ওখানে গেছে, কিন্তু এখন আর মিথ্যা বলি না অবশ্য বলার আর দরকারও হয় না.স্কুলের রেজন্টের জন্য শেষ মিথ্যা বলেছিলাম আর এপর্যন্ত মিথ্যা বলা লাগে নি তাই বলতেও ইচ্ছা হচ্ছিল্ না), যতই প্রসঙ্গটা পরিবর্তন করতে চাচ্ছিলাম ততই বার বার বলছিল শেষে রাগটা বিস্ফোরিত হলো...।
- শোন শালা, তুই পানের নেশায় কিছু হয়না বলে পান খাচ্ছিস, আবার বানোয়াট পান খাওয়ার হাদিস ঝাড়ছিস,সালামের নতুন নিয়ম বানাচ্ছিস, এতিমের জন্য যে টাকা অনুদান আসে তাও মেরে বাড়ী, গাড়ী, গার্মেন্টস বানাচ্ছিস, অন্যের স্ত্রীকে দেখার জন্য জোরাজুরি করছিস, আবার তোদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাকে শ্যাষ করে দিমু না বলে ঝাড়ি দিচ্ছিস, মিথ্যা ধর্মিয় পদবী ব্যাবহার করে সার্থ উদ্ধার করছিস, জাকির নায়েকের নামে গালি দিচ্ছিস, ব্যাটা তুই ওর সম্পর্কে কথা বলার আগে কি একবার ও ভাবছিস, তুই নিজে কি করছিস, তার সম্পর্কে কথা বলার যোগ্যতা আছে তোর, টাকা নেই বলে ক্যাফেতে বিল দিতে বললি আবার বলতেছিস যে ব্রান্ডি কিনবি তাও শখ করে খাবি, হারামজাদা আর কত? আর কত দিন ধরে সাধারন মানুষের বোকা বানায়ে চলবি? ইসলাম কি জানিস, তোদের মত মানুষের কারণের আজ অন্যান্যরা ইসলামের নামে অপবাদ দেয়, তারা জানে না তোরা মুসলমান না তোরা ইসলামের, মুহাম্মদ(সঃ) আল্লাহ'র শত্রু .... খবরদার নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দিবি না.।শালা খাবি হারাম,এতিমের টাকা মেরে দিবি,ঘুষ-সুদ খাবি, অত্যাচার করবি,নেশা করবি আবার নিজেদের মত করে হাদিস বানাবি ,মিথ্যা বলবি সারা জীবন পাপ করে শ্যাষ কালে হজ্জ কমুনে বলেই হয়, ব্যাটা হজ্জের নিয়ম জানিস?এক মুসলমান হয়ে অন্য মুসলমানকে কাফের বলিস, ব্যাটা তোদের থেকে ইসলাম তো ইসলাম আমার মনে হয় তোরা আল্লাহ্'র নামকে পর্যন্ত শয়তানের কাছে বিক্রি করবি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন), শোন হারামজাদা তুই ইসলামের শত্রু, নবির শত্রু, আল্লাহ'র শত্রু- খবর্দার নিজেকে মুসলমান বলবি না-------ভাগ হারামজাদা।
এই ছিল আমার আর আমার প্রাক্তন বন্ধুর সাক্ষাকার .....।