somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিমনেরা ‘মানব’ না...!!

০৮ ই জুন, ২০১১ সকাল ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জন্মপরবর্তী সময়কাল থেকে ধীরগতিতে বৃদ্ধকালের দিকে ছুটে চলতে থাকা একজন স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মানুষ খুব সহজেই উপলব্ধি করতে পারে সে ঋণী। জন্মসূত্রে ঋণী মায়ের কাছে, বাবার কাছেও ঋণী ভরণ-পোষণ সূত্রে। সাক্ষরতা ঋণ নিয়ে শিক্ষাঋণে ঋণী মাস্টার মশাইয়ের কাছেও। হয়তো বা আকস্মিক কোনো নৌকাডুবি থেকে উদ্ধার করে শৈশবে নতুন জীবন ঋণ দিয়েছেন কোনো এক মহান মাঝি, তাই আজীবনের জন্য ঋণী তার কাছেও। সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশমাতার কাছে নিজেকে চির ঋণী মনে করেন। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক ব্যাংক লোন নিয়ে ঋণগ্রহীতার খাতায়ও হয়তো বা নিজের নাম একাধিকবার দেখে থাকবেন কেউ কেউ।
এত ঋণে জর্জরিত চিরঋণী যে কেউ নিজেকে পাওনাদার ভাবতে ভয়ই পায়। তারপরও ভেবে আনন্দিত হওয়ার মতোই সংবাদ হলো, জন্মসূত্রে তারা সবাই পাওনাদারও বটে। অনেক না পাওয়ার মাঝেও আছে কিছু পাওয়ার অধিকার। মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, ভোটাধিকার বা উত্তরাধিকারসহ নানা স্বাধিকারের পাওনাদার পরিচয় বহন করার অধিকারও আছে তাদের। যারা জীবনে ১৮টি বছর পার করে ভোটাধিকার অর্জন শেষে বাবার মুখের দিকে করুণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে উত্তরাধিকার লাভের আশায়। নানা ফুড প্রোডাক্টস, বড় বড় হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ আর গার্মেন্ট কারখানার দিকে তাকিয়ে ধরে নেয় মৌলিক অধিকারের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা আর চিকিত্সাব্যবস্থা নিশ্চিত। তাদের মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানের জন্যও আছেন নানা কমিশনের সদা তত্পর কর্মকর্তারা। অর্থাত্ অধিকার নামক সব পাওনা আদায়ের পথ যথেষ্টই সুগম। তারপরও লিমন বা অন্য নামের কাউকে কাউকে অধিকার না পাওয়ার বেদনা প্রকাশ করতে দেখা যায় হরহামেশাই। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ করেন কারণে অকারণে।
সময়সচেতন যে কারও কাছে এই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার অনেক কারণ উঠে আসতে পারে। যার প্রধান কারণটি পরিচয় নিয়ে। অভিযোগকারী লিমনেরা এ দেশের কোনো রাঘব বোয়াল না। পেশায় তারা ইটখোলার শ্রমিক, ছাত্র বা অসহায় বাবার কন্যা মাত্র। বাবা-মায়ের দেয়া নাম লিমন, বকর বা ফেলানী ডাকা হয় তাদের। তারা জানে না তাদের নিজ দেহের অঙ্গ সংরক্ষণ করার যে অধিকার, তা মানবাধিকারের কাতারে পড়ে না। মানবাধিকার বলতে একজন মানব হিসেবে তারা নিজেদের অধিকারকেই বুঝত। যদিও তাদের জানা থাকা উচিত—দেখতে মানব হলেও সবাই মানব নয়। বরং লিমন হিসেবে তাদের অধিকারকে লিমনাধিকার বা অন্যান্য নামেই ভালো মানায়। এই লিমনাধিকার বলতে তার সারির আপামর জনতার অধিকারকেও বোঝায়। ভিন্নার্থে তাকে বকরাধিকার (ঢাবি) বা ফেলানী অধিকারও বলা যেতে পারে।
যারা পাঁচ বছরান্তে একবার বিরাট উত্সাহে ১৮ বছরের সাধনায় অর্জিত ভোটাধিকার প্রয়োগ করে একটি বিশেষ জাতির ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে। সময়ে সময়ে তাদের শরীরে গুলি করে বা লাঠিপেটা করে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা হাতের নিশানা পরীক্ষা করে থাকে। মৃত্যুর পর তাদের কাউকে কাউকে কাঁটাতারে ঝুলে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেকেই সরকারি দলের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিদায় নেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারা ঘটনার শিকার বা বিচ্ছিন্ন ঘটনায় হাত, পা, মাথা এমনকি জীবন হারালেও কারও কিছু করার থাকে না।
যে দেশের কাজের কাজীর বড় অভাব। করণীয় নানান কাজে কর্মীর জোগাড় দুষ্কর। সেখানে অভাগা লিমনদের জন্য কিছু করার থাকাটাই যেন অস্বাভাবিক। তাই মন্ত্রী মহোদয়কে ধন্যবাদ খুব সহজেই স্বীকার করার জন্য যে এ দেশের লিমনাধিকার ও অন্যদের তথা সাধারণ জনগণের জন্য সরকারের কিছু করার নেই বা থাকে না।

পুনশ্চ : তাই অচেতন নাগরিক সমাজের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপামর জনতার মাঝে যারা এখনও লিমন পরিচয় বহন করেন, ব্যক্তি স্বার্থেই নাম পরিবর্তন আবশ্যক। লিমনেরা সবাই নাম পাল্টিয়ে মানবের কাতারে দাঁড়াতে না পারলে হরণ হয়ে যাওয়া অধিকারের জন্য দায় নেয়ার কেউ নেই। কারণ লিমনেরা ‘মানব’ না...!! লিমনসহ অন্যান্য সবার অধিকার মানবাধিকার নয়, বরং লিমনাধিকার ও অন্যান্য... হিসেবেই বিবেচিত হবে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×