এত ঋণে জর্জরিত চিরঋণী যে কেউ নিজেকে পাওনাদার ভাবতে ভয়ই পায়। তারপরও ভেবে আনন্দিত হওয়ার মতোই সংবাদ হলো, জন্মসূত্রে তারা সবাই পাওনাদারও বটে। অনেক না পাওয়ার মাঝেও আছে কিছু পাওয়ার অধিকার। মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, ভোটাধিকার বা উত্তরাধিকারসহ নানা স্বাধিকারের পাওনাদার পরিচয় বহন করার অধিকারও আছে তাদের। যারা জীবনে ১৮টি বছর পার করে ভোটাধিকার অর্জন শেষে বাবার মুখের দিকে করুণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে উত্তরাধিকার লাভের আশায়। নানা ফুড প্রোডাক্টস, বড় বড় হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ আর গার্মেন্ট কারখানার দিকে তাকিয়ে ধরে নেয় মৌলিক অধিকারের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা আর চিকিত্সাব্যবস্থা নিশ্চিত। তাদের মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানের জন্যও আছেন নানা কমিশনের সদা তত্পর কর্মকর্তারা। অর্থাত্ অধিকার নামক সব পাওনা আদায়ের পথ যথেষ্টই সুগম। তারপরও লিমন বা অন্য নামের কাউকে কাউকে অধিকার না পাওয়ার বেদনা প্রকাশ করতে দেখা যায় হরহামেশাই। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ করেন কারণে অকারণে।
সময়সচেতন যে কারও কাছে এই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার অনেক কারণ উঠে আসতে পারে। যার প্রধান কারণটি পরিচয় নিয়ে। অভিযোগকারী লিমনেরা এ দেশের কোনো রাঘব বোয়াল না। পেশায় তারা ইটখোলার শ্রমিক, ছাত্র বা অসহায় বাবার কন্যা মাত্র। বাবা-মায়ের দেয়া নাম লিমন, বকর বা ফেলানী ডাকা হয় তাদের। তারা জানে না তাদের নিজ দেহের অঙ্গ সংরক্ষণ করার যে অধিকার, তা মানবাধিকারের কাতারে পড়ে না। মানবাধিকার বলতে একজন মানব হিসেবে তারা নিজেদের অধিকারকেই বুঝত। যদিও তাদের জানা থাকা উচিত—দেখতে মানব হলেও সবাই মানব নয়। বরং লিমন হিসেবে তাদের অধিকারকে লিমনাধিকার বা অন্যান্য নামেই ভালো মানায়। এই লিমনাধিকার বলতে তার সারির আপামর জনতার অধিকারকেও বোঝায়। ভিন্নার্থে তাকে বকরাধিকার (ঢাবি) বা ফেলানী অধিকারও বলা যেতে পারে।
যারা পাঁচ বছরান্তে একবার বিরাট উত্সাহে ১৮ বছরের সাধনায় অর্জিত ভোটাধিকার প্রয়োগ করে একটি বিশেষ জাতির ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে।
যে দেশের কাজের কাজীর বড় অভাব। করণীয় নানান কাজে কর্মীর জোগাড় দুষ্কর। সেখানে অভাগা লিমনদের জন্য কিছু করার থাকাটাই যেন অস্বাভাবিক। তাই মন্ত্রী মহোদয়কে ধন্যবাদ খুব সহজেই স্বীকার করার জন্য যে এ দেশের লিমনাধিকার ও অন্যদের তথা সাধারণ জনগণের জন্য সরকারের কিছু করার নেই বা থাকে না।
পুনশ্চ : তাই অচেতন নাগরিক সমাজের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপামর জনতার মাঝে যারা এখনও লিমন পরিচয় বহন করেন, ব্যক্তি স্বার্থেই নাম পরিবর্তন আবশ্যক। লিমনেরা সবাই নাম পাল্টিয়ে মানবের কাতারে দাঁড়াতে না পারলে হরণ হয়ে যাওয়া অধিকারের জন্য দায় নেয়ার কেউ নেই। কারণ লিমনেরা ‘মানব’ না...!! লিমনসহ অন্যান্য সবার অধিকার মানবাধিকার নয়, বরং লিমনাধিকার ও অন্যান্য... হিসেবেই বিবেচিত হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




