somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিনয়

২১ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার অভিনয় ক্ষমতা দেখে আমি নিজেই বিস্মিত হই। আমাকে তো অস্কার দেওয়া উচিত! সুতীব্র যন্ত্রণাগুলোকে মাঝে মাঝে এমন চমৎকার ভাবে গিলে ফেলতে পারি ভেবে আমি হতবাক হই। এবং আরও অবাক হই যখনই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করি তখনই হোঁচট খাই।
হাঁসি খুশি ভাবে অফিস থেকে ফিরলাম। অনবরত বৃষ্টির মধ্যে কাক ভেজা হতে ভালোই লাগলো। কাজের ফাঁকে এক সহকর্মী জানালো তাঁর পরিচিত এক কিশোর একটা মেয়ের জন্য আত্মহত্যা করেছে। শুনে আমি বললাম, ‘দুর্বল ছিল সে। আর আবেগ ছিল বেশি’। শুনে তিনি জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ, কাজটা ঠিক হয় নি, কিন্তু ভালোবাসা এমনই জিনিশ যাকে পাবেন না তাঁর জন্য কিন্তু জীবনটা পুরোপুরি ঝাঁজরা হয়ে যায়’। শুনে আমি তাকালাম নিজের দিকে। তবুও মনটা ভালো রেখে বাসায় ফিরলাম। সুখের অনুভূতিতে আরো ভাসলাম যখন তাঁর কণ্ঠ শুনতে পেলাম। উত্তেজনায় কাঁপতে থাকলাম। অনেক দিন পর তাঁর সাথে দীর্ঘ আলাপ। আলাপ শেষে বজ্রপাত হলো আমার উপর। আষাঢ়ে বৃষ্টিতে বজ্রপাত হলো না। কিন্তু এ অদেখা বজ্রপাত হাজারটা বজ্রপাতের চেয়ে ভয়ংকর। তাঁর কাছ থেকে এমন আঘাত আগেও পেয়েছি। আগেও নির্মম ভাবে ভেঙে চুড়ে গিয়েছি। কিন্তু আজ যেন মনে হচ্ছে ভেতরে কিছু একটা জমাট বেঁধে গেছে। কিছু একটা ভারি জিনিশ দিয়ে কিছু একটাকে চাপা দিয়ে রাখছি। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। সব সময় এমন কুৎসিত, প্রবল,ভয়ংকর, চরম তীব্র আঘাতের সাথে সাথে ভেঙে মাটিতে গুড়িয়ে পড়ি। বাহ্যিক ভাবে আচার আচরনে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ফুটে উঠে আমি বিষণ্ণ, আমি স্তব্ধিত, আমি বিমর্ষ, আমি বিধ্বস্ত। কিন্তু আজ বুঝা গেলো না কেন? আমি কথা শেষ করে চা বানালাম, আম্মুকে দিলাম, নিজেও খেলাম। কিন্তু ভেতরে কিসের যেন ভার অনুভব করলাম। রুমে এসে চুপ চাপ বসে থাকলাম।কিছু চিন্তা করার শক্তিও যেন পেলাম না। শুধু ভেতরে কিছু একটার ভার অনুভব করতে থাকলাম। সন্ধ্যায় আপু সুদূর লন্ডন থেকে ফোন করলো। অনিচ্ছা নিয়ে কথা বললাম। অহেতুক কথা দিয়ে খোশগল্পে মেতে থাকলাম কিছুক্ষণ। নিজের ঠোঁটের চমৎকার হাঁসির শব্দ কানকে বধির করলো। কিন্তু ভেতরে কিসের যেন ভার অনুভব করতে থাকলাম। আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও আম্মুর সাথে আপু ভাইয়া নিয়ে কথা বললাম। কিন্তু ভেতরে কিসের যেন ভার অনুভব করলাম। ক্ষুধার ছিটেফোঁটা না থাকা সত্ত্বেও আম্মুর সাথে ঝগড়া করলাম, ‘কি রান্না করেছো এসব, মাংশ ছাড়া খাবো না’।
অভিনয়ের সাময়িক পর্ব শেষ হলো । এবার নিঃসঙ্গতার পালা। রাত কালো গভীর। স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। ভেতরের ভারটাকে সাথে করে। ভারটা আরো ভারী হয়ে উঠছে। অন্ধকার ঘরে আমি এখন সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ, সম্পূর্ণ নির্বিকার, সম্পূর্ণ নিশ্চল। ভেতরের ভারটা ঠেলে বের হতে চাচ্ছে। ক্রমশ এক তীব্র আর্তনাদ আমাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে মুক্ত হতে চাচ্ছে। প্রচণ্ড এক চিৎকার আমার গলা পর্যন্ত উঠে আসছে। কিন্তু না, এই ভারকে আমি কিছুতেই বের হতে দিবো না। আগেও দিয়েছি। কিচ্ছু হয় নি। শুধু মাটিতে লুটিয়ে পড়া ছাড়া কিছুই হয় নি। আজ আমি মাটিতে লুটবো না। এ যে হবে তাতো আগে থেকেই জানা। তখনই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যত কিছু হোক আমি ভালোবাসবোই। তবে এর বিনিময়ে যত আঘাত আসবে, যত অত্যাচার আসবে আমি সহ্য করবো। আমি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবো। আমি অভিনয় করবো। আমি হাসবো, আমি কথার বাক্যে মুখরিত থাকবো, আমি খুব, খুবই স্বাভাবিক ভাবেই পৃথিবীকে, তাঁকে এবং নিজেকে জানাবো, আমি সব সহ্য করতে পারি। আমি সব যন্ত্রণা খুব স্বাভাবিক ভাবে হজম করে তাঁকে ভালোবেসে যেতে পারি। আমি ধীরে ধীরে এই ভারটাকে আরো ভারী করবো। কতটা ভার আমি সহ্য করতে পারি আমি জানতে চাই। কতটা কষ্ট যন্ত্রণা আঘাত নিষ্ঠুরতা অত্যাচার তুমি করতে পারো আমি দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই আমি আমার ভালোবাসার জন্য আর কতো দূর যেতে পারি। আমি কথা দিয়েছি তাঁকে, সর্বোপরি কথা দিয়েছি নিজেকে। যা কিছু হোক না কেন আমি ভালোবাসবোই।
আমি উঠে দাঁড়াই। মুঠোফোনে তাঁকে বার্তা পাঠাই। অভিনন্দন জানাই। বিছানায় যাই। আমার সাথে সাথে আমার ভারটাও বিছানায় যায়। অন্ধকারে আমি আমার ছায়াকে দেখতে পাই না , কিন্তু ভারটাকে অনুভব করতে থাকি। আমি ভারটাকে ঘুম পারাতে চাই, কিন্তু ভারটা আমাকে জাগিয়ে রাখে। চিন্তাহীন ভাবে আমি জেগে থাকি ভারটাকে সঙ্গ করে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×