somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উদ্দেশ্যহীনতা

২৭ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকদিন ধরে চিন্তা করছি নিরুদ্দেশ ভাবে কোথাও হাঁটবো। কোন গন্তব্য ছাড়া কোথাও যাবো। আজ পর্যন্ত যখনই বাসা থেকে বের হয়েছি কোন না কোন কাজে বের হয়েছি। অথবা জানতাম কোথায় যাবো। বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হয়েছি। কিন্তু আজ কোন কাজে বা কোন নির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়ার জন্য বের হবো না। বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটবো , হেঁটে হেঁটে ঠিক করবো কোথায় যাওয়া যায়। “কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” উপন্যাসে হাসান যেমন বিকেলে বের হয়ে হেঁটে হেঁটে মানুষ দেখে আমিও তেমনি মানুষ দেখবো। কিছু না শুধুই মানুষ।

বের হলাম সন্ধ্যার কিছু আগে। এবং নিয়মমাফিক মাকে বলে যেতে হয়েছে কোথায় যাচ্ছি , কয়টার মধ্যে ফিরবো। আন্দাজে একটা জায়গার নাম বলে দিলাম। কিন্তু সময়টা ঠিক মতো বলতে হলো। না হলে ১০০ টা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, অথবা টেনসেন করবে।

বের হলাম, বাসার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ঠিক করলাম কোথায় যাওয়া যায়। মাথায় আসলো শিল্পকলা। অনেকদিন যাই না। হাঁটতে থাকলাম। কিছুদূর হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। বাসে উঠলাম । বাসের জন্যও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। শুক্রুবারেও এতো জ্যাম! আজকেও মেয়েরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে! ধুর! মেজাজটাই গেলো খারাপ হয়ে। অবশেষে বাস পেলাম। এমনই বাস যে যখন থামে এমন ভাবে পুরো বাস ভাইব্রেট করে যে শরীরের প্রতিটা অঙ্গ শিরা উপশিরা কাঁপতে থাকে, রক্ত কাঁপতে কাঁপতে যেন ফুটতে থাকে। রাগে ইচ্ছে করলো বাসে আগুন ধরিয়ে দেই। কিন্তু আগুন ধরালেও বাসের ভাইব্রেটে আগুনও থর থর করে কাঁপতে থাকবে। দৃশ্যটা মনে করার চেষ্টা করলাম, বাসে আগুন, কিন্তু আগুন বাসের সাথে সাথে কাঁপছে। আগুনকে অগ্নি মনে হচ্ছে না, শান্ত কোমল নরম শীতল মনে হচ্ছে। যেন আগুন বাসটাকে পোড়াচ্ছে না, আগুন বাসের একটা সৌন্দর্য। একটা আলাদা অলংকার।

নেমেই পড়লাম বৃষ্টির অত্যাচারে। সারাদিন রোদে উজ্জ্বল আর যখনই আমি বের হলাম তখনই বৃষ্টি। খেয়াল করে দেখলাম এই বর্ষায় যখনই আমি ঘর থেকে বের হয়েছি বৃষ্টির অত্যাচারে পড়েছি। বের হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বৃষ্টি নেই, বের হলাম ওমনি শুরু হলো বৃষ্টি। এর মানে কি? আমি এখন আর বৃষ্টি পছন্দ করি না বলে কি বৃষ্টি আমার সামনে বার বার উপস্থিত হচ্ছে? আমাকে বৃষ্টি তার স্পর্শ দিয়ে কি জানান দিচ্ছে যে এক সময় আমি একে খুব পছন্দ করতাম? এর স্পর্শ অঙ্গে মাখতে চাইতাম?

শুধু বৃষ্টি কেন, প্রকৃতির কোন চোখ ধাঁধানো , হৃদয় কাঁপানো সৌন্দর্য আমাকে আর আকর্ষণ করে না। কোন নিখাদ সবুজ, কোন জলন্ত লাল সূর্য, কোন আকাশছোঁয়া পাহাড়, কোন পানিতে ঝলমল দীঘি, কোন নিশীথের নিঝুম ঝিঁঝিঁ ডাক, কোন হিমের কুয়াশা, কোন নির্জন জ্যোৎস্না, কোন নদীর তীব্র স্রোত , কোন হাহাকারে পরিপূর্ণ অরণ্য অথবা অনন্ত বৃষ্টি... কিছুই আমাকে আর মুগ্ধ করে না। আমাকে টানে না। আমাকে ভাবিত করে তোলে না। আমাকে বিস্মিত করে না। আমি আর চোখ বন্ধ করে এই সৌন্দর্য নিঃশ্বাসের সাথে উপলব্ধি করি না। ভেতরে প্রবেশ হয় না প্রকৃতির কোন অপরূপতা।

এই তো সেদিনই গিয়েছিলাম, যেখানে রাস্তার দুদিকে সারি সারি গাছ। গাছের পিছনে ছোট ছোট খাল। পানিতে ঝলমল করছে। শীতল নির্মল স্নিগ্ধ বাতাস আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। আমি অনুভূতিহীন ভাবে রাস্তার পিচের উপর তাকিয়ে ছিলাম। যেন আশেপাশে কোন মরা শ্মশান। যেখানে দেখার কিছু নেই।

অবশেষে পৌঁছলাম শিল্পকলা। ভিতরে ঢুকতেই একজন ডেকে উঠল নাম ধরে। বুঝতে পারলাম ভেতরে ঢুকা ভালো হয় নি। পরিচিত কেউ না কেউ থাকবেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কথা বলতে হলো। সাথে যোগ হলো আমার এক কলেজ বন্ধু। কথা চলতে থাকল, আড্ডা জমতে থাকল। কিন্তু আমি যে উদ্দেশ্যে বের হয়ে একা হতে চাইলাম তা আর পারলাম না। একা হওয়ার জন্য শিল্পকলা অত্যন্ত বাজে।

তারা যেখানে যাচ্ছে আমিও সেখানে যাচ্ছি, তাঁদের কথার কিছু কিছু কানে যাচ্ছে তো কিছু যাচ্ছে না। আমি মানুষ দেখতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু লক্ষ্য করলাম কোন মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছি না। বরং রাস্তার বিশাল আকৃতির বিলবোর্ড আমাকে আকর্ষণ করলো বেশি। একেকটা বিলবোর্ডের দিকে তাকিয়ে একেকরকম অনুভূতি হলো। অধিকাংশ বিলবোর্ডকে চরম পর্যায়ের আবর্জনা মনে হলো। মলস্তূপকে রঙ আর প্রযুক্তি দিয়ে সাজিয়ে সুন্দর করে টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে। বিরক্ত লাগলো, মানুষ দেখতে পারছি না কেন? বের হলাম কিসের জন্য আর হচ্ছে টা কি! একপাল তথাকথিত সভ্য ছেলে মেয়ের পাল্লায় পড়ে উদ্দেশ্যহীনতা হয়ে গেলো উদ্দেশ্যপ্রবণ। যারা রোজা রাখে ধর্মের আজাব থেকে মুক্তির জন্য! যদিও বছরের বাকি দিন আজাবের চরম পর্যায়ে থাকে। অথবা যারা মুখে বলে ধর্ম মানি না কিন্তু এক মাসের প্রতিটা দিন ইফতার করবে মহা সমারোহে। সমাজতন্ত্রের বুলি আওড়ায়ে বলবে এক প্লেটে সবাই ইফতার করা উচিত। সবার হাতের কচলানি ,মাখামাখি আর ডলাডলিতে খাবারগুলো হয়ে উঠে নিকৃষ্ট রকম অরুচিকর অখাদ্য। একজন এসে হাজির হলো যাকে কখনও হিজাব পড়তে দেখি নি। বলল “রোজার মাস তো তাই”। বি টি ভি কথা মনে পড়লো।

নিজের মনে কিছু ভাবতে চেষ্টা করলাম। চোখ আটকালো কিছু দুষ্টুমি দেখে। একে অপরকে ঠেলছে, গুতাচ্ছে , মারছে, শাসাচ্ছে। কিছুটা হিংসা বোধ করলাম কি? আমার প্রিয় বন্ধুদের সাথে দেখা হয় না আজ কতদিন? কতদিন একসাথে চুটিয়ে আড্ডা দেই না? আমি কি দূরে সরে গেলাম তাঁদের থেকে নাকি তারা দূরে সরে গেলো? তাঁরা তো অনেকবারই আমাকে ডেকেছে। আমিই তো সাড়া দেই নি। সাড়া না পেতে পাতে ক্লান্ত হয়ে এখন আর হয়তো ডাকে না। নাকি সময় এতোই নির্মম নিষ্ঠুর রূপ নিলো যে দূরত্ব কখন তৈরি হলো বুঝতে পারলাম না। নাকি এক সময় দূরত্ব তৈরি হয়ই? যত কাছের বন্ধু হোক না কেন।

এমনটা হলে কি হতো যে আমি শিল্পকলায় এসে দেখছি আমার বন্ধুরা সবাই আছে। কি হতো যদি এদের সাথে দেখা না হয়ে ওদের সাথে দেখা হতো? কোথাও কিছুতে কি পার্থক্য হতো? এখন আমি যেমন আছি বা আমার সময় এখন যেমন আছে বা এখন যেমন ভাবনাচিন্তাহীন হয়ে আছি তখনই কি তেমন হতো না? কি লাভ হতো? অথবা কি ক্ষতি হতো? ওদের সাথে দেখা না হয়ে এদের সাথে দেখা হয়ে কি কোন ক্ষতি হয়েছে? কিছুই হয় নি। কিছুই হতো না। সব এখনকার মতো শান্ত বিরক্তকর ভাবনাহীন কল্পনাহীন অনুভূতিহীন হতো। কোথায় কিছুতে এক চুল পরিমান পরিবর্তন হতো না। সবই নিরর্থক। সময়টা যেখানে নিরর্থক সেখানে বন্ধুরা কি বা করতে পারবে।

কিছুটা অবাক হলাম যখন বুঝতে পারলাম হিংসাটা শুধু আমার জন্য না। আমার সেই মানুষটিও এমন তীব্র ভাবে আড্ডা দেয়, এমন হাস্যরসাত্মক ভাবে সে কারো সাথে চুটিয়ে মেতে থাকে। সে সবই পারে। ভালো কিভাবে থাকতে হয় তা তাঁর অক্ষরে অক্ষরে জানা। খারাপ থাকা সে শিখে নি। বা তাঁর মতো মানুষরা খারাপ থাকতে জানে না। তাঁর মতো মানুষ অন্য কাউকে খারাপ রাখে। নিজেরা থাকে চরম পুলকের আনন্দে। তাঁর মতো মানুষরা কখনও চিন্তা করে না অন্যরা কেমন আছে।

আমার এই একটা অনুভূতি আমার অন্য সব অনুভূতিকে খুব মর্মান্তিক ভাবে গলা টিপে হত্যা করেছে। আমার অস্তিত্ব জুড়ে শুধু তাঁকে অনুভব করা ছাড়া আর কোন অনুভূতি অবশিষ্ট নেই। না আমি মানুষ দেখতে পারি না অনুভব করতে পারি , না প্রকৃতি দেখতে পারি না অনুভব করতে পারি । না আমি কোন আড্ডায় মেতে থাকতে পারি না বন্ধুদের আহ্বানে সাড়া দিতে পারি।

আর পারছি না এই অহেতুক আড্ডায় বসে থাকতে। উঠে পড়লাম। গন্তব্য বাসা। সেখানেই আমার জন্য নিবিড় একাকীত্ব অপেক্ষা করছে। যেখানে আমি আমাকে ছাড়া আর কোন কিছুর প্রতি বা কারো প্রতি বিরক্ত হই না। যেখানে আমি ঈর্ষা অনুভব করি না। যেখানে আমার প্রিয় বই গুলো অন্তত আছে , যাদের মাঝে ডুবে থাকলে আমি সাময়িক ভাবে নিজেকে অনুভব করতে পারি। যেখানে আমি নিজের সাথে বা আমার চরম প্রবল তীব্র প্রচণ্ড এবং নির্মম ভালোবাসার সাথে যুদ্ধ করতে মানুষিক ভাবে তৈরি হতে থাকি।

আবার হাঁটা শুরু হয়, আবারও বৃষ্টির অত্যাচারে পড়ি। ইফতারের আর বেশি সময় বাকি নেই তাই রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। একটা দুটা বাস আর সি এন জি ছাড়া মানুষ চোখে পড়লো না তেমন। রাস্তার পিচের উপর প্রবল বেগে নেমে আসা বৃষ্টির ফোঁটা দেখতে থাকলাম..।.।.।।...........
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×