somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মহত্যা

০৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দশ তলার এই এপার্টমেন্ট থেকে লাফিয়ে পড়লে কেমন লাগবে? থেঁতলে যাবো? ব্যথা কেমন পাবো? ব্যথার অনুমান করতে পারলাম না। তবে এই অনুমান করতে পারলাম একটা সাময়িক যন্ত্রণা আমাকে একটা তীব্র প্রচণ্ড স্থায়ী যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিবে।
আমি কি চিরস্থায়ী মুক্তির উদ্দ্যেশে পা বাড়াবো...............???

টানা এক সপ্তাহ ঘুমের কোন সমস্যা হয় নি। খুবই শান্তিতে ১২ টা থেকে ১২-৩০ এর মধ্যেই ঘুমের জন্য চোখ মেলে রাখতে পারতাম না। আনন্দিত অনুভব করলাম অবশেষে ২বছর পর ঘুম আমার কাছে ধরা দিলো। কিন্তু না হল না, ঘুম আমার কাছে কারাবন্দী হয়ে বেশি দিন থাকল না। পারলাম না আমার একসময়ের অতি প্রিয় ঘুমকে ধরে রাখতে। যেমন কোন কিছুই বা কাউকেই আমি ধরে রাখতে পারি না। ঘুম নামক একটা জিনিশ যে আছে, তা জানান দেওয়ার জন্য কয়েকদিনের জন্য এসেছিলো।
সময় এখন মনে হয় ৩ টা। প্রতি রাতে এই সময় একটা বাচ্চা খুবই কুৎসিত ভাবে কেঁদে উঠে। ইচ্ছে করে গলাটা টিপে ধরি। আর এই সময় শুরু হয় আরও বিকট চিৎকার। “সেহেরীর সময় হয়ে গেছে, মুছলমান ভাই বোনেরা উঠে পড়েন” পৃথিবীর এমন কোন গালি নাই যা দিতে ইচ্ছে করে না।
২ ঘণ্টা ধরে বিছানায় গড়াচ্ছি। একটু যদি তন্দ্রাও আসতো!

বারান্দায় গিয়ে বসলাম। আন্ধকার ছিল আশেপাশে। আস্তে আস্তে প্রায় সব জানালায় আলোর আনাগোনা দেখা দিলো। চাঁদের আলোটা ম্রিয়মাণ হয়ে গেলো। যেন খুবই বিষণ্ণ ভাবে জেগে আছে, অহেতুক ভাবে আলো দিতে চাচ্ছে। কিন্তু কারো সেই আলোর প্রয়োজন নেই। আমার ও দেখতে ইচ্ছে করলো না। বিরক্ত লাগে সব কিছু, বিরক্ত লাগে প্রকৃতির সব বিস্ময়কর সৃষ্টি। যেমন বিরক্ত লাগে আমার এই বিস্ময়কর জীবন। অহেতুক বেঁচে থাকা, অহেতুক নিঃশ্বাস নেওয়া, অহেতুক সকাল থেকে রাত গড়ানো।

হঠাৎ মনে হলো আমি বেঁচে থাকার একটা কারণ খুজচ্ছি। বেঁচে থাকার জন্য কি একটা কারণ প্রয়োজন? খুব ভালো ভাবে বুঝে গেছি আমার বেঁচে থাকাটা সম্পূর্ণ ভাবে অত্যন্ত শোচনীয় পর্যায়ের নিরর্থক। আমি যদি আজ রাতে মরে যাই কি হবে তাতে? পৃথিবীর কোথাও কি কোন পরিবর্তন হবে? কোথায় কি কোন কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে? হাহাকার জেগে উঠবে কোথায়? শূন্যতা বোধ করবে কেউ আমার জন্য? কেউ কি আমার অভাব বোধ করবে? কেউ কি মনে করবে আমি ছিলাম একসময়?

না কেউ করবে না। হয়তো আমার বাবা মা কাঁদবে আমার জন্য কিছু দিন, তারপর আবার সব স্বাভাবিক। ঠিকই সকালে সূর্য উঠবে, মানুষ নিজ নিজ কাজে সীমাহীন ভাবে ব্যস্ত থাকবে, রাতে চাঁদ উঠবে, ক্লান্ত ভাবে তার ম্রিয়মাণ দুর্দান্ত সাদাটে শীতল আলো ছড়াবে। তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়বে।

তাহলে একটু না থেকে দেখি না। হাস্যকর... না থাকলে যদি দেখা যেতো ... কিন্তু এ তো হবার নয়। একবার না থাকা মানে আর কখনো না থাকা। কিছুই জানবো না বুঝবো না দেখবো না শুনবো না। কিন্তু এখন যে দেখছি জানছি বুঝছি তাতে কি হচ্ছে। এই যে দিনের পর দিন একই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি তাতো কখনও শেষ হবার নয়। একটা নিঃসঙ্গ শোচনীয় কুৎসিত বীভৎস আজীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির চেয়ে যে ভয়াবহ জীবনটাকে বয়ে বেড়াচ্ছি তাতে আমি ছাড়া আর তো কেউ জ্বলছে না। কেউ তো যন্ত্রণার আগুনে দগ্ধ হচ্ছে না। বয়স আমার কতো হবে, ২৩ বা ২৪। কিন্তু মানুষিক ভাবে তো মনে হচ্ছে আমি ৮০ পেরিয়ে গেছি। যেখানে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কিছু নেই। যেখানে অতীত মনে করা ছাড়া আর কিছুই নেই। যেখানে সময় কাটানো মানে কিছু অপূর্ব চমৎকার অতুলনীয় এবং পচে গলে যাওয়া কিছু দুর্বিষহ স্মৃতি মন্থন করা। এমনই এক সময়ে পৌঁছলাম যেখানে বেঁচে থাকা সম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। যেখানে মনে হচ্ছে “অনেক তো বাঁচলাম, অনেক তো সহ্য করলাম, অনেক তো ভেঙে চুড়ে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছি, আর কতো” প্রতিনিয়ত আঘাত সহ্য করা ছাড়া তো এই জীবনে কিছুই অবিশিষ্ট নেই।

আমার জন্ম কি হয়েছিলো শুধু সহ্য করে যাওয়ার জন্য? এতই কি দুর্বল হয়ে জন্মেছিলাম যে কোন আঘাতের প্রতিউত্তর দিতে পারি নি? প্রতিটি আঘাতের একমাত্র সমাধান ছিল কি শুধুই সহ্য করে যাওয়া? একটা ছুরির আঘাতের পর নিজেকে তৈরি করা আরেকটা চাপাতির আঘাতের জন্য।

পাশের বাসায় কেউ যেন খুব মিষ্টি গলায় গান গাচ্ছে। কিছুটা চমকে উঠলাম এমন সময় কেউ গান গাচ্ছে। সুন্দর মিষ্টি গলা। কিন্তু শুধু আওয়াজই শুনছি, যে গাচ্ছে তাঁকে দেখতে পাচ্ছি না। হিংসা বোধ করলাম। কিছুটা রাগে কেঁপে উঠলাম। এই সুর যার গলা থেকে বের হচ্ছে তাঁকে খুব সুখী মনে হচ্ছে। আমার গলা দিয়ে তো এমন সুখ বের হয় না। পৃথিবীর সবাই কি সুখী আমি ছাড়া ? সবাই কি রাতে খুব শান্তিতে ঘুমায়? কেউ কি নির্ঘুম থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে না? আমার আসে পাশে এতো মানুষের বসবাস তাঁরা সবাই কি সুখী? সবাই নির্ভাবনায় দিন অতিবাহিত করে? নিশ্চিন্তে ঘুমায়? হয়তো , হয়তো না।

পাশের বাসার এই সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী যিনি তিনি কি জানেন কেমন লাগে যখন কাউকে তীব্র ভাবে ভালোবেসে বিনিময়ে ছিটেফোঁটা ভালো ব্যবহারও না পাওয়া? তিনি কি জানেন কেমন লাগে দিনের পর দিন প্রিয়তম মানুষের মুখ থেকে শুনা তাঁর নতুন নতুন প্রেমের কথা? কেমন লাগে যখন খুব নিষ্ঠুর ভাবে প্রিয়তম মুখের উপর বলে দেয় “তুমি বাঁচো মর , আমার কিছু যায় আসে না” কেমন লাগে যখন প্রিয়তম বলে “ বিছানায় সে খুব চমৎকার”।

সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী এই মানুষটা কি জানেন কেমন লাগে যখন চোখের সামনে প্রিয়তমকে কারো সাথে বিছানায় দেখি???

সেই প্রিয়তম, যার জন্য পৃথিবীর সব চেয়ে করুণ নিষ্ঠুর নিকৃষ্ট বীভৎস অত্যাচার সহ্য করেছি। সেই প্রিয়তম , যে কারো সাথে বিছানা থেকে উঠে ফোন করে আমাকে বলে “কেমন আছো, আজকে কার সাথে ডেটিং করছো” । আর আমি হেসে জবাব দেই “ তুমি ছাড়া আমি কারো সাথে কিছুই করি না, এই আমি, মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমার থাকবো”

বাচ্চার চিৎকার থেমে গেলো। সুরেলা কণ্ঠও থেমে গেলো। আমি বারান্দার রেলিঙে উঠে দাঁড়ালাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:৫৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×