somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী আন্দোলন কর্মী যখন হেফাজতের হেফাজতকারি

২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুটি সকাল খুব যন্ত্রণাদায়ক ছিল। এবং আর অসংখ্য সকাল আমার জন্য অপেক্ষা করছে যন্ত্রণা নিয়ে। ব্যক্তিগত জীবনে হঠাৎ এমন ঝড় আসল যে এর সমাপ্তি কখন হবে জানি না,বা আদৌ হবে কিনা অনিশ্চিত।
যা হোক, যত যন্ত্রণায় থাকি না কেন, যতই নিজের হাহাকারের জন্য অন্য হাহাকার শুনতে অনাগ্রহী হই না কেন, তবু কানে কিছু চলে আসে, চোখে কিছু পড়ে যায়, যা এড়িয়ে যেতে পারি না, বিবেক কিছুটা নড়ে উঠে। লিখব না লিখব না করেও হাত চলে যায় কীবোর্ডে।
একজন বিশেষ মানুষের খোঁজ খবর জানার জন্যই ফেসবুকে ঢু মারা, কিন্তু চোখে পড়ল একজন আপুর একটি লিঙ্ক। ওপেন করে পড়েই মেজাজ চরম তুঙ্গে পৌঁছে গেলো। কিছুক্ষণ পরেই আবার দমে গেলাম। আহত বোধ করলাম একজন নারীনেত্রীর মুখে এমন কথাও শোভা পায়। একজন শিক্ষিত! নারী আন্দোলনের নেত্রী যদি সজ্ঞানে হেফাজতের দাবি সমর্থন করে তবে সাধারণ নারীসমাজ যারা নারীনেত্রীদের আন্দোলনের উপর অনেক কিছুই আশা করে থাকেন, সমানে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজেন , অধিকার আদায়ের জন্য তাদেরকেই ভরসা মনে করেন তারা কোথায় যাবে?

ফরিদা আখতার। নারী আন্দোলন কর্মী। “পরিবর্তন” নামে একটি অনলাইন পত্রিকায় একটি আলোচনা মূলক বা বিশ্লেষণ মূলক বা সাফাই মূলক কলাম লিখেছেন। যেখানে তিনি শুরু করেছেন হেফাজতের ৬ এপ্রিলের শান্তিপূর্ণ! সমাবেশের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে।



“ হেফাজতে ইসলাম এপ্রিলের ৬ তারিখে ঢাকা শহরে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে প্রশাসনের সঙ্গে ওয়াদা অনুযায়ী ঠিক ঠিক পাঁচটার সময় শেষ করে ফিরে গেছেন। ঢাকা শহরের মানুষ শাপলা চত্বরে এতো আলেম ওলামাদের একসাথে কখনো দেখে নি, তারা বিস্মিত। কত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন তা নিয়ে সঠিকভাবে কোন পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও সংখ্যাটা তাক লাগিয়ে দেয়ার মতোই ছিল। হেফাজতের এই লং মার্চ যেন না হতে পারে তার জন্য সরকার নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল; ঢাকাগামী সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ করার পরও এতো মানুষ কি করে ঢাকায় এলো তা বিস্ময়ের ব্যাপার বটে”
কিন্তু আমি বিস্মিত হচ্ছি এটা দেখে যে ফরিদা আক্তার কি জানেন না সমাবেশে যারা এসেছিল তাদের অর্ধেকের বেশি মানুষ জানেই না ব্লগ কি, বা ব্লগে কি লেখা ছিল। সমাবেশের অনেকেই জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এই সব প্রশ্ন, তারা কেউ এর উত্তর দিতে পারে নি। “ হুজুর বলেছে ব্লগে আল্লাহ রসূল নিয়ে লিখছে তাই আমরা এখানে এসেছি”
কি লিখেছে সে বিষয়ে অজ্ঞ। অন্যের নাচের তালে নেচে নেচে যারা সমাবেশে যোগ দিয়েছে তাদের সংখ্যা অধিক বা অত্যাধিক হলেই যে এটা যৌক্তিক সমাবেশ হয়ে যাবে এ আমার জানা ছিল না।
সমাবেশের দিন হেফাজতের কর্মীরা শাহরিয়ার কবিরের উপর হামলা চালিয়েছিল, সমাবেশ শেষে বিকেলে তারা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের উপর হামলা চালিয়েছিল। সবই বাদ দিলাম। শাহরিয়ার কবির নাস্তিক! গণজাগরণ মঞ্চ নাস্তিক ! তাদের উপর হামলা চালানো হেফাজতের নৈতিক দায়িত্ব!!! কিন্তু একজন নারী সাংবাদিকের উপর যে নিকৃষ্ট হামলা হল সেটাও বোধহয় জনাবা ফরিদা আক্তার আমলে আনার মত মনে করেন নি। দেশের সব সংবাদমাধ্যম নারী পুরুষ সহ সকল সংবাদকর্মী, সুশীল সমাজ (আসল সুশীল সমাজ) প্রগতিশীল (আসল প্রগতিশীল) শিক্ষিত সমাজ যেখানে প্রতিবাদে ফেটে পড়ল, সেখানে ফরিদা আক্তার হেফাজতকে হেফাজত করছেন। শুধু একটি লাইন দিয়ে তিনি আলোচনা শেষ করে দিলেন,


মিডিয়া কর্মীদের উপর আক্রমণ নিন্দনীয়। আবার এমন ঘটনা শুধু হেফাজতের সমাবেশেই নয়, অতি আধুনিকদের গানের কনসার্টেও হতে দেখেছি আমরা। যেখানে শুধুই পুরুষ, সেখানে একা নারীর ওপর আক্রমণ কোন ধর্মীয় কারণে নয়, পুরুষতান্ত্রিক কারণেই হয়”।[/sb
যদি আপনি এতই বুঝেন এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কারণে ঘটেছে তবে একে আপনি সমর্থন করেন কিভাবে? কিভাবে বলছেন এটা একটি ধর্মীয় কারণে বা ধর্ম বাঁচানোর আন্দোলন ছিল? আর আধুনিক গানের কনসার্টে নিশ্চয়ই কখনো বলা হয় না এটা ধার্মিক আন্দোলন? সেখানে কেউ ধর্মের দোহাই দিয়ে আক্রমণ করে না। নোংরা মানুষিকতার জন্যই পুরুষরা নারীদের উপর আক্রমণ চালায়। হেফাজতের সমাবেশে এটি আরও নিন্দনীয় কারণ তারা ধর্মের মুখোশ পড়ে এসেছিলো।
এমন লজ্জাজনক ঘৃণ্য ঘটনা ঘটানোর পরও যে একে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বলা যায় তা এই তথাকথিত নারী আন্দোলনের কর্মী ফরিদা আক্তারের কাছে নতুন করে জানতে হচ্ছে।

ফরিদা আক্তার আক্ষেপ করে বললেন সমাবেশ শেষ হওয়ার পরও কেন মুফতিদের চ্যানেলের পর চ্যানেলে দৌড়াতে হচ্ছে তাদের ১৩দফা ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য। তিনি হেফাজতের ১৩ দফাকে এতই সোজা সরল মনে করেছেন যে এর জন্য কোন সমালোচনা আশা করেন নি।



“চ্যানেলগুলোর পক্ষ থেকে তাদের ডাকা হচ্ছে শুধু ১৩ দফা বোঝার বা বোঝানোর জন্য ভাবলে ভুল হবে। বরং অধিকাংশ সময় ডাকা হচ্ছে তাঁদের একটু হেনস্থা বা বেকায়দায় ফেলার জন্যে। তাঁরা যে চিন্তা-চেতনায় সমাজের পশ্চাৎপদ মানুষ এটা যে কোনোভাবে প্রমাণ করা অনেক গণমাধ্যমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন আলেমকে ঘায়েল করার জন্য থাকছেন তিন চারজন বুদ্ধিজীবী, নারী নেত্রী এবং রাজনীতিবিদ”

আমি চরম পর্যায়ের আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না একজন নারী নেত্রী কিভাবে বলতে পারেন যে মুফতিদের হেনস্তা করার জন্যই চ্যানেলে ডাকা হচ্ছে। যে হেফাজত বাংলাদেশের সার্বিক সমাজব্যবস্থার রূপরেখাই নির্মূল করার জন্য আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে, যে হেফাজত বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকেই অস্বীকার করছে তারই সাফাই গাচ্ছেন তিনি! স্বাধীন বাংলাদেশের ভীত – অসাম্প্রদায়িকতা , নারী পুরুষের সমতা, সমাজতান্ত্রিকতা, জাতীয়তাবাদ উপ্রে ফেলে বাংলাদেশকে তালেবান আফগানিস্তান পাকিস্তান করতে চাচ্ছে যারা, তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে বলে জনাবা ফরিদা দুঃখ প্রকাশ করলেন!!!! আমার দেশের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করা হবে আর আমি তাদের প্রশ্নও করতে পারব না!!??

হেফাজতের দাবিকে ফরিদা আকতার মধ্যযুগের দাবি বলতেও নারাজ।



হেফাজত নারীদের মধ্যযুগে ঠেলে দিচ্ছে বলে হায় হায় শুরু হয়ে গেছে অনেকের মধ্যে, বিশেষ করে যাঁরা নিজেদের ‘প্রগতিশীল’ মনে করেন, তাঁরা দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন”। কতিপয় ব্লগারের মহানবী (সঃ)কে নিয়ে ভয়াবহ কটূক্তি করেছে। তাদের এই নাস্তিকতার বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম সক্রিয় হয়ে ওঠে”


যদি নাস্তিকদের বিরুদ্ধেই মাঠে নেমে থাকেন তবে ফরহাদ মাজহার কি? তিনি কি আল্লায় বিশ্বাসী ছিলেন? নাকি যে ই হেফাজতকে সমর্থন করবে তাকেই আস্তিক ঘোষণা করা হবে। কে আস্তিক কে নাস্তিক এটা হেফাজত নির্ধারণ করবে। তাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে কার কি পরিচয়।
এবং আরও হাস্যকর বক্তব্য দিলেন ফরিদা আক্তার


“আমি যতদূর জানি, হেফাজতে ইসলাম জামায়াতে ইসলামীর বিপক্ষে”

হেফাজতের সাথে জামায়াতের ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই এ হয়তো পাবনার পাগলও বিশ্বাস করবে না। চেতনাহীন বিবেকহীনরা বিশ্বাস করবে। ফরিদা আক্তার কোন কাতারে পরবে তা আর ব্যাখ্যা করা দরকার দেখি না। মিডিয়ার কল্যাণে আমরা আমাদের দু চোখ দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেলাম সমাবেশে জামাতের কর্মীর সহযোগিতা, চট্টগ্রামে আন্দরকিল্লা মসজিদে বিক্ষোভ সমাবেশে অনেক কর্মীকে দেখা গেছে সাইদির ছবি গলায় ঝুলিয়ে ফাঁসি না মানার দাবি। হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই জামাতের নেতা। সাক্ষ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি অবলীলায় অস্বীকার করতে পারে যে জামায়াতে ইসলামের সাথে হেফাজতের সম্পর্ক এবং তাও যদি কোন নারী আন্দোলনের কর্মীর মুখ থেকে শুনা যায় তবে তাকে কি উপমা বা রূপক বা বিশেষণ দিয়ে আখ্যায়িত করা যায় তা আমার জানা নেই।
ফরিদা আক্তারের আরও বক্তব্য,


“শাহবাগের ৬ দফা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না, কারণ ধরে নেয়া হয়েছে এই সব দাবী নিয়ে কোন বিতর্ক নাই। সরকারের মেনে নেয়ার ব্যাপার মাত্র। যা সরকার একের পর এক তাদের জন্য করে যাচ্ছে”

সরকার আমাদের কতটুকু সমর্থন দিচ্ছে তাও নিশ্চয়ই কাউকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। হেফাজতকে খুশি রাখার জন্য কয়েকজন ব্লগারের উপর সরকারের যে অযৌক্তিক হেনস্থা চলছে তা আমরা সবাই দেখছি। শুধু মাত্র ব্লগে লেখার জন্য ওই চারজন ব্লগারকে যেভাবে চোর ডাকাত সন্ত্রাসী ধর্ষক খুনের আসামির মত মিডিয়ার সামনে আনা হল তা কোন সভ্য দেশে নজিরবিহীন। এরা কাউকে খুন করে নি, খুনের হুমকি দেয় নি, কাউকে ধর্ষণ করে নি, কোন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল না। এদের অপরাধ এরা লিখত। স্বাধীন দেশে তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে কলম বা কীবোর্ড চালানো জামিন অযোগ্য অপরাধ হতে পারে তা বাংলাদেশেই মনে হয় শুধু সম্ভব।

ফরিদা আক্তার শুধু হেফাজতের নারীদের নিয়ে যে দাবি উত্থাপন করেছে তারই বিশ্লেষণ করেছেন। হেফাজতের ৪ নং দাবি ছিল, “.ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা”

এর ব্যাখ্যা দিলেন ফরিদা আক্তার এভাবে “


আমার মনে হয় এই অংশটি হেফাজত বা কোন ইসলামী দলের কাছ থেকে না এসে যদি কোন রাজনৈতিক দল, কিংবা নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আসতো,আমরা একে স্বাগতই জানাতাম হয়ত।পুঁজি তান্ত্রিক ও পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনেক নারী এই ধরণের সমস্যার শিকার হচ্ছেন, যা নারীকে পণ্য আকারে হাজির করছে। কেউ কেউ হয়তো স্বেচ্ছায় এমন পথ বেছে নিয়েছেন, কিন্তু তাদের কারণে অধিকাংশ নারীর ওপর অপবাদ আসছে।এর সাথে নারীদের ঘর থেকে বের হবার বা না হবার কোন সম্পর্ক নেই”
নারী পণ্য হয়ে উঠেছে,বা কেউ যদি স্বেচ্ছায় এসব করে থাকে তবে তার জন্য অন্য নারীদের অপবাদ সহ্য করতে হয়। হেফাজতের কোন দাবিতে এটা উল্লেখ নেই যে যারা নিজেদের স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পণ্য করেছে তাদের জন্যই এই দাবি। সার্বিক নারী সমাজকেই ইঙ্গিত করে দাবিটি করা হয়েছে। বিভিন্ন টক শো তে বিভিন্ন মুফতিরা বলে বেড়িয়েছেন যেভাবে নারীরা গার্মেন্টস, অফিস আদালতে কাজ করে, রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করে বেপর্দা হয়ে তাতে নারীদের সম্মান থাকে না, পুরুষ তাদের দেখে উত্তেজিত হয়ে পরে, তাতেই নারী সমাজ বিভিন্ন হয়রানি, ধর্ষণের মত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারী যদি বেপর্দা হয়ে না চলে তবেই নারী ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
ইনিয়ে বিনিয়ে ফরিদা আক্তার হেফাজতের এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। এই বক্তব্যকে সমর্থন করা মানেই হচ্ছে নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে নারীরই কারণে। নারী বোরখা পরছে না বলেই পুরুষ তাদের দেখে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। যুক্তি, বিবেক, সততা, সংযম, ন্যায় অন্যায়, ঠিক বেঠিক এই শব্দ এবং এর অর্থও, কার্যকারিতা, প্রয়োগ, ব্যবহার, লালন পালন শুধুই কি নারীর জন্য প্রযোজ্য? পুরুষ সমাজ এর আওতামুক্ত? পুরুষের জন্য শুধু কামনা লালসা শব্দগুলো প্রযোজ্য। এই লালসা মিটানোর জন্য প্রয়োজনে সে পশুও হতে প্রস্তুত। এবং দায় নারীর উপর বর্তে। যদি এই হয় তবে একজন শিশু, একজন স্কুলে পড়ুয়া বাচ্চা, এবং সর্বোপরি একজন বোরখা পরিহিতাও যখন ধর্ষণের শিকার হয়, দায় কার উপর বর্তে? হেফাজত এবং ফরিদা আক্তারের ভাষ্য মতে এর দায় নারীর উপর বর্তে।
বিক্ষিপ্ত মনে আমি আরও আহত হলাম একজন নারী আন্দোলনের কর্মী হেফাজতের এই দাবিকে সমালোচনা না করে সাদরে গ্রহণ করেছেন।
এবং তিনি যে দ্বৈত সত্তার অধিকারী, তার কিছুটা প্রভাব পরেছে তার অন্য বক্তব্য,


“তবে মনে রাখতে হবে, এ কথা কেউ হলফ করে এখনও বলতে পারবে না যে নারীর পোশাক পরিবর্তন হলে আপনা থেকেই ধর্ষণ বা যৌন হয়রানী বন্ধ হয়ে যাবে। এই বিষয়টির সাথে পুরুষদের মন মানসিকতা ও নারীর প্রতি ব্যক্তি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি জড়িত।এটা যতদিন সামাজিক আন্দোলন করে নৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে পরিবর্তন না করা যাবে ততদিন এই দুরাবস্থা চলতে থাকবে। তাছাড়া শালীনতা শুধু মেয়েদের বিষয় হতে পারে না। একই সঙ্গে পুরুষদের শালীন ও সংস্কৃতিবান হতে হবে। কিন্তু সেই দাবি হেফাজতে ইসলাম করে নি”

উপরের মন্তব্য এবং এই মন্তব্য দুটোই পরস্পর বিরোধী। যদি আপনি এই বক্তব্য সজ্ঞানে দিয়ে থাকেন তবে উপরের বক্তব্য সজ্ঞানে দেন নি। যদি নিচের মন্তব্য আপনি সমর্থন করেন তবে আপনি একে হেফাজতের দাবি বলতে পারেন না। হেফাজত সার্বিক ভাবে নারী সমাজকে কটাক্ষ করে এই দাবি তুলেছে। সরাসরি বলেছে নারীদের জন্যই পুরুষ বিপদ গামী হচ্ছে। ১৩ দফার কোথাও উল্লেখ নেই পুরুষকেও সীমারেখার মধ্যে থাকতে হবে। তীব্র, চরম, প্রচণ্ড, কঠোরতম অলঙ্ঘনীয় সীমা রেখা হেফাজত শুধুমাত্র নারীর জন্যই অঙ্কন করেছে।

এছাড়া হেফাজত নারীনীতির সমালোচনা করেছে। নারী নীতি পরিবর্তনের কথা বলেছে। তাদের মতে, নারীনীতি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।
নারী আন্দোলনের কর্মী হয়ে সরাসরি নারী নীতির বিপক্ষে কথা বললে হয়তো লোক লজ্জার মুখে পরতে হবে বলেই তিনি সরাসরি এই ক্ষেত্রে হেফাজতকে সমর্থন করেন নি। উল্লেখ্য



হেফাজতে ইসলাম তাঁদের ১৩ দফায় এতো কথা বলেন নি, তাঁরা শুধু বলেছে নারী নীতি ইসলামবিরোধী। আমরা পত্র-পত্রিকায় আলেম সমাজের পক্ষ থেকে যে সমালোচনা দেখছি, হেফাজতে ইসলামও কি একই মতের কিনা তা আমরা জানি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে বলবো তাঁদের আপত্তি যেখানে সেটা নারী উন্নয়ন নীতিতে খুব জোরালোভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি। কিন্তু নারী উন্নয়ন নীতির বিরোধিতা যেভাবে করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম নারীদের সকল প্রকার উন্নয়নের বিরুদ্ধে, যা তাঁরা নন বলেই ইতিমধ্যে বিভিন্ন আলোচনায় তারা পরিষ্কার করেছেন”



অসংখ্য আলোচনা সমালোচনা, স্বয়ং হেফাজতের মুফতিদের মুখ থেকে বের হয়ে আসা নারী উন্নয়ন বিরোধী কথা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার হওয়ার পরও ফরিদা আক্তার বলছেন


“হেফাজতে ইসলাম নারীদের সকল প্রকার উন্নয়নের বিরুদ্ধে, যা তাঁরা নন বলেই ইতিমধ্যে বিভিন্ন আলোচনায় তারা পরিষ্কার করেছেন”


ভণ্ডদের সমর্থন করতে গিয়ে ফরিদা আক্তার যে নিজেই ভণ্ড হয়ে যাচ্ছেন হয়তো তিনি জানেন না। অথবা জেনে বুঝেই করছেন।
পরিশেষে, কিছুদিন আগে খুব জোরালো প্রতিবাদ হয়েছিল ফেসবুক ব্লগে আবুল হাসনাত হাইয়ের “টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি” গল্পের জন্য। এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হলেও তরুণ সমাজ এখন ক্ষিপ্ত। কিন্তু বিস্ময়ের সীমারেখা অতিক্রম করলাম যখন একজন নারী আন্দোলনের কর্মী বলেন


“ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কিছু বিষয় হেফাজতে ইসলাম তুলে এনেছে, যা আমি এখানে উল্লেখ করলাম না। এ অভিযোগ সত্যি কিনা প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে কিছুটাও যদি সত্যি হয় তাহলে এমন প্রতিক্রিয়া আমরা ঠেকাতে পারবো না”


‘আমি এখানে উল্লেখ্য করলাম না বা এ অভিযোগ সত্য কিনা” বলতে উনি কি বুঝতে চেয়েছেন যে, যা রটে তা কিছু হলেও বটে। পুরোপুরি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে গণজাগরণ মঞ্চকে নোংরা ভাবে উপস্থাপন করার জন্যই যে এমন কুৎসিত নোংরা অরুচিকর গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা ফরিদা আক্তারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে বিবেকহীন কু-শিক্ষিত মস্তিষ্কহীন ভণ্ড ধর্ম ব্যবসায়ীদের অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য।
একজন নারী আন্দোলনের কর্মী হয়েও তিনি কখনও শাহবাগে গিয়েছেন কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যদি একদিনও শাহবাগে যেতেন তবে এ নিয়ে সন্দেহ করার কোন কারণ খুঁজে পেতেন না। যদি একদিনও শাহবাগে যেতেন তবে দেখতে পেতেন সেখানে মানুষ কতটা নিরাপদ ছিল, লাখো অপরিচিত মানুষ কীভাবে আত্মীয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলো একটি উদ্দেশ্য সফল করার জন্য।
ফেব্রুয়ারি মাসে যে জায়গায় জ্বলন্ত আন্দোলনের অগ্নিশিখা দেখেছে বাঙালি সে জায়গাটি ছিল নারীর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। একজনও নারী খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি অভিযোগ করতে পারেন তার সম্মানের কোনরকম হানি হয়েছে শাহবাগে। সেখানে গিয়েছিলো একজন তরুণী, একজন মা, একজন কর্মজীবী, একজন বীরাঙ্গনা, একজন শহীদের জননী, গিয়েছিলো লাখো মানুষ যাদের একটাই দাবি , আমার দেশকে যারা স্বীকার করে নি, আমার দেশের ৩০ লাখ শহীদকে যারা হত্যা করেছিলো, ২ লাখ নারীকে যারা ধর্ষণ করেছিলো, আমার দেশ আমার মাকে শিকড় থেকে যারা উপ্রে ফেলতে চেয়েছিল তাদের সর্বচ্চো শাস্তি । লাখো মানুষের প্রানের দাবি নিয়ে যারা এসেছিলো শাহবাগে তাদের নিয়ে এমন নিকৃষ্ট মন্তব্যকে যারা সমর্থন করে তারা মানুষ নয়, তাদের মাথার খুলিতে মগজের পরিবর্তে অন্য কিছু আছে।

হুজুর মানেই যেমন জামায়াত শিবির হেফাজত নয়, তেমনি তথাকথিত নারী আন্দোলনের কর্মী বা নারী নেত্রী মানেই নারীর সহযোগী নয়, নারীর মঙ্গল প্রত্যাশী নয়। ক্ষেত্র বিশেষে নারীর পরম শত্রু।

নিচে ফরিদা আকতারের লিঙ্কটি যুক্ত করে দেওয়া হল
Click This Link
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×