somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসম প্রেম। ৩য় পর্ব ( ভালবাসার গল্প, ব্লগ পড়ে যারা ক্লান্ত তাদের জন্য।)

২৭ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আগের পর্ব পড়তে Click This Link




ঃ মাসুদ অনেক ভাল ছেলে। সেও তোমাকে অনেক পছন্দ করে। ও দ্বিধায় আছে। সেটাই স্বাভাবিক। আমার হাতে মৃদ্যু চাপ দিয়ে বলে, তোমরা হেরে যেওনা। ভালবাসায় মনের শক্তিটাই বড়। সাহস করে যুদ্ধটা চালিয়ে যেও। তাহলে বাকি জীবনে বুকে বিরহের অনল নিয়ে কাটাতে হবে না।
সায়মার চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সে দ্রুত ওড়না দিয়ে চোখ মুছে নেয়।
আমার খুব ভাল লাগে ওর কথাগুলো। হঠাৎ করেই বিকেলটাকে খুব ভাল লাগতে শুরু করে। সূর্যর লাল আলোতে ঝকমক করতে লাগলো যেন চারপাশের পৃথিবী। সেই বিকেলটাকে কখনো ভুলবো না আমি।

যাত্রাবাড়ি, যাত্রাবাড়ি! চলে আসেন কে নামবেন। বাসের সুপারভাইজারের চিৎকারে অতিথ হতে বাস্তবে ফিরে আসি। মাসুদকে ডাকলাম। ও চোখ খুলে তাকালো। আমি ওর চোখের দিকে তাকাতেই ও লাজুক কণ্ঠে বললো,কি আশ্চর্য আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কখন? আমি হেসে বললাম ভ্যাগিস আমি আপনার পাশে ছিলাম নাহলে পকেটমার আপনার পকেট কাটতো। আর কোথায় যে নামাতো!
ও হেসে বলে এই জন্যই এখন থেকে যেখানে যাবো তোমাকে নিয়ে যাবো।
ব্যাগ নিয়ে আমরা নেমে পড়লাম।
কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। চারপাশে নানা বর্ণের ব্যস্ত মানুষগুলো ছুটে চলছে। ঢাকার শহরে এর আগেও আমি বেশ কয়েকবার এসেছিলাম। তবে আজকের ঢাকাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। ভাঙাচোরা ফুটপাত আর ধুলোয় ভরা শহরটাকে কেন জানিনা আজ খুব সুখি একটি শহর বলে মনে হচ্ছে। শব্দ দুষণ আর বাতাসে ভেসে বেড়ানো শিষাকেও আজ বেশ লাগছে। কেন এমন হচ্ছে?
মাসুদ আমার হাত ধরে আছে বলেই কি এমন লাগছে!
আমি ওর দিকে তাকালাম। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। চোখে কাঁচাঘুম ভেঙে যাওয়ার ক্লান্তি। হুটহাট করে চলে যাওয়া গাড়ির ফাক ফোকর ডিঙ্গিয়ে ও আমাকে যাত্রাবাড়ির রাস্তার পূর্ব দিকের বাস কাউন্টারের সামনে নিয়ে এল। তারপর টিকেট কেটে আমরা বোরাক বাসে উঠলাম।
মাসুদ জানালো এই বাস মাত্র ত্রিশ পয়ত্রিশ মিনিট পরে গিয়ে থামবে মেঘনা ঘাট। সেখান থেকে দুই মিনিটের হাটা পথ পেরুলেই আমাদের বাসা।
বাস শনির আখড়া পেরুলো। তারপর কাঁচপুর ব্রিজ। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখতে ছিলাম দু’পাশের সবুজ গ্রাম। শহর থেকে যতদুরে আসতে ছিলাম ততই মনে হচ্ছিল আমার গ্রামের কথা। জানিনা কবে আবার যেতে পারবো! মনটা বিষণœ হয়ে উঠতে ছিল, এমন সময় মাসুদ আমার কাধে হাত রাখলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, কি ভাবছো পাখি!
আমি হাসলাম ওর পাখি ডাক শুনে। বললাম, কিছুনাতো!
মাসুদ বলে, আর মাত্র ত্রিশ মিনিট, তারপর আমরা বাসায় চলে যাব। এত বড় জার্নি তোমার খারাপ লাগছে নাতো?
নাহ্ সব কিছু কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।
আমার একটি মাত্র রুমের বাসা দেখে সেই স্বপ্ন হোচট খাবেনা তো? আমার দিকে তাকিয়ে থাকে মাসুদ।
আমি গভীর আত্মবিশ্বাসের সাথে বলি, ভালবাসা দিয়ে ঐ বাসাটাকেই স্বর্গ বানিয়ে ফেলবো আমরা।
মাসুদ আমার কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে, কবি কিন্তু বলেছে যে অভাব যখন দরজায় এসে দাড়ায় ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।
আমি হাসি মুখে বলি, কবির ভবিতষৎ বানী সাধারণের জন্য প্রযোয্য, আমরাতো অসাধারণ! তাইনা?

০২.
মেঘনাঘাট গিয়ে বাস থামলো। বাস থেকে নেমে চার পাশে তাকালাম। ভাল লাগল। এলাকার নাম নিউ টাউন। মেঘনা নদীর পাড়ে বালু দিয়ে ভরাট করে এই শহর তৈরী করা হয়েছে। চারপাশের সবি নতুন। ছোট ছোট গাছ লাগানো। মার্কেট এর সব ভবন গুলোই নতুন। আমরা পশ্চিম দিকের রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। কিছুদুর আসতেই মাসুদ একটি পাঁচতলা ভবনের সামনে দাড়িয়ে বললো, এটাই বাসা।
ঘরে একটি রুম আর বড় বারান্দা এর্টাচ বাথরুম। আসবাব-পত্র বলতে একটা সিংগেল চৌকি, প্লাসটিকের র‌্যাক, কেরোসিনের চুলা, ১৪ ইঞ্চি একটি টিভি আর ক্যাসেট প্লেয়ার দেখলাম। সাদা-মাটা সেই কক্ষটাকেই আমার কাছে মনে হল স্বর্গ।
আমি যখন চারপাশ ঘুরে দেখতেছিলাম ও তখন ভারী বিব্রত হয়ে চৌকির উপরে বসে ছিল। ও হয়ত ভাবতে ছিল যে একটি ধনী পরিবার থেকে এসে আমি এমন সাধারণ একটা ঘর মানিয়ে নিতে পারবো কিনা?
আমি ওর গলা ধরে গেয়ে উঠি ... চন্দন পালঙ্কে শুয়ে কি হবে ? জীবনে তোমায় যদি পেলাম না...!
তোমাকে পেয়েছি আর কিছু চাইনা আমার।

০৩.
শুকনো বিস্কুট খেয়ে দুপুর পার করছি। বিকেলে বাজার করার জন্য তাই বের হলাম দু’জনে। হাড়ি পাতিল কিনলাম। কাঁচা বাজারে সেই প্রথম গেলাম। অদ্ভূদ লাগতে ছিল। মাসুদকে দেখলাম ভাল করে দর-দাম পযন্ত করতে শেখেনি ছেলেটি। ওর বোকা বোকা চেহারা দেখে চালাক দোকানীরা ঠিকই বেশি দাম নিয়ে যাচ্ছিল। আমি ওর কানের কাছে পিস ফিস করে বললাম, কি করছো! তোমাকে সবাই কেমন ঠকাচ্ছে! ভাল করে দরদাম করতেও শিখোনি, হাদারাম একটা!
আমার দিকে ও তাকিয়ে এমন ভাব দেখালো যে আমি প্রাইমারি স্কুলে পড়–য়া কোন বালিকা। মাসুদ হাসতে হাসতে বললো, তুমি কি জীবনে কোন দিন কাঁচা বাজার করেছো?
-না। কিন্তু জানতে ইচ্ছে করছে, তুমি কি করেছো কিনা?
প্লাটা প্রশ্ন ছুড়ে দেই আমি।
হাসি থামিয়ে ও বলে, আমি পুরুষ মানুষ। পুরুষ মানুষের ন্যাচারাল গুন হল তারা ভাল কাঁচা বাজার করতে পারে।
ও অহংকারী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়।
আমি ওর হাতে থাকা কপিটা ধরে বলি, এই ফুল কপিটার ফুল গুলো খেয়াল করেছো? কপির ফুল ফুটে গেছে মানে কপিটা বয়স্ক,আর যে শিম তুমি কিনলে দেখ ওর ভেতরের বিচি কত শক্ত!
বেচারা অবাক চোখে তাকালো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে কৃত্তিম অহঙকারী কণ্ঠে বললাম, মেয়েরাও ন্যাচারাল ভাবে ভাল তরকারী চিনতে পারে!
এাসুদ এবার দোকানীর উপর চটলো। আমি মুখ টিপে হাসতে লাগলাম।
রিকসায় উঠতে গিয়ে খুব ক্লান্তি লাগতে ছিল। জামা ভিজে গেছে। সা-েলে কাদা লেগেছে। কিন্তু কাঁচা বাজার করতে যে এত আনন্দ তা আমার জানা ছিলনা।
হঠাৎ করেই খেয়াল হল আওে আমি যে রাধতেই শিখিনি এখনও। লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছিলাম। মাসুদ কে কেমনে বলি এসব।
মাসুদ হঠাৎ করেই আমাকে বলে তুমি যে রাধতে জানোনা এই তথ্য আমাকে দিয়েছে তোমার ছোট বোন। আমি লাজুক চোখে ওর দিকে তাকাই। ও হেসে বলে সম্যসা নেই ,আমি ভাল রাধুনী। তোমাকে রান্না করা শেখাবো।
আমি ওর কাধে মাথা রেখে বলি, তোমার চেয়ে ভাল স্বামী পৃথিবীতে আর একটাও নেই।
০৪.
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×