
তিনি আমার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছেন।একটু পর বললেন তুই ওশান না?
এবার ওনার দিকে ভালোমতো তাকালাম।এতক্ষন ঠিকমতো খেয়াল করা হয়নি।পরনে মলিন সাদা পাঞ্জাবী,মাথায় টুপি,হাল্কা হয়ে আসা সাদা সাদা দাড়ি ভরা মুখ।চেনা চেনা লাগছে খুব।মনে করতে পারছি না।খুব খারাপ একটা ব্যাপার।
বললাম হ্যা আপনি?
তোর স্যার!
মনে হলো গালে কেউ ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো।নিজের স্যার কে চিনতে পারলাম না!বেশীদিন আগে না। ৩ /৪ বছর আগেও স্যারের কাছে পড়তাম।৪ বছরে একটা মানুষের চেহারা এতোটা পরিবর্তন হতে পারে!যতই পরিবর্তন হোক না কেনো তাকে চেনাটাতো আমার কর্তব্য ছিলো।নিজেকে অনেক বড় আসামী মনে হচ্ছে।মাথা নিচু করে আছি চুপচাপ।স্যারের লজ্জায় মরে যাওয়া উচিত তার প্রিয় ছাত্র তাকে চিনতে পারেনি!উনার মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছিনা।
আমি সেই ছাত্র যাকে নিয়ে স্যার অনেক গর্ব করতেন।যেই কয়েকজন স্যারের কাছে পড়তে আসতো সবাইকে প্রায় সময় বলতেন ওশানকে দেখ!ওর মতো হইতে পারবি তোরা।গাধার দল সব!
আজকে চিনতে পারবনা জানলে সেইদিন হয়তো এইভাবে কিছুই বলতেন না।এত আশাও করতেন না।
খুব খারাপ লাগলো।লজ্জায় কিছুই বলতে পারলাম না।বাসায় চলে আসলাম।সেদিন কিছু বলা উচিত ছিলো।পা ধরে মাফ চাওয়া উচিত ছিলো।আমি কিছুই করি নি।এসব ৬ বছর আগের কথা।
স্কুল গেলো,কলেজ গেলো,এক সময় রংপুর ছাড়লাম।এর পর প্রতিবার বন্ধে বাড়ি যাই আর ভাবি স্যারের সাথে দেখা করা উচিত।ভিতরে ভিতরে অপরাধ বোধ কাজ করে।সব হয় কিন্তু দেখা করাটা হয়না স্যারের সাথে।এটা সেটা করতে করতে বন্ধ শেষ হয়ে যায়।খুলনা যাওয়ার সময় ভাবি পরের বার দেখা করবোই।ওই পর্যন্তই।
গত সামার ভ্যাকেশনে বাসায় আসলাম।১২ ঘন্টার জার্নি।বাসায় পৌছে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না।ঘুম ভাঙ্গলো মসজিদের মাইকিং এর শব্দে।
...একটি শোক সংবাদ।মুলাটোল নিবাসী আলহাজ্জ........ গতকাল নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারনে ইন্তেকাল করিয়াছেন।ইন্নালিল্লাহি....রাজিউন।
স্যারের কাছে আর ক্ষমা চাওয়া হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




