শুক্রবার দুপুরবেলা আমার ঘরে শুয়ে বিশ্রাম করছিলাম। খোলা জানালা দিয়ে মসজিদের জুমার খোতবার আওয়াজ ভেসে আসছিল। ওয়াজের কোন এক প্রসঙ্গে হুজুর বললেন, মানুষের কাছে কখন কিভাবে হেদায়েত চলে যাবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সকালে খোলা তলোয়ার নিয়ে হযরতকে (মহানবী (সঃ)কে) মারতে বের হলেন। সেই উমর দুপুর বেলা হযরতের পায়ে পড়ে ইসলাম কবুল করে ফেললেন।
কথাটা আমার কাছে নতুন নয়, এই কাহিনী আগেও শুনেছি। কিন্তু তবুও সেদিন হুজুরের ওয়াজ শুনে আমার মনে অন্যরকম একটা ভাবনা এলো।
আমার কাছে এটা ভাবতে খুবই অবাক লাগে, কখন মানুষের বিশ্বাস ও চিন্তা চেতনার মোড় ঘুরে যায়/যাবে তা মানুষ নিজেও জানে না। আজ যে লোকটিকে আমার কাছে খুবই বিশ্বস্ত মনে হচ্ছে, কাল তাকেই মনে হতে পারে ঠগির সর্দার। যাকে আজ আমার কাছে ঘৃণ্য মনে হচ্ছে হয়তো সেই লোকটাকেই বেছে নিতে হবে সারাজীবনের জন্য। যে গানটিকে আজ আমার কাছে অতীব সুরেলা লাগছে, হয়তো আরেকদিন এই গানের কলিগুলোকে আমার মনে হতে পারে পাগলের প্রলাপ। যে গান পথে ঘাটে প্রত্যহ শুনছি, যেই গান দূরে কোথাও বাজলেও আমার কাছে বড় বিরক্ত লাগে, সেই গান হয়তো কোন এক সময় আমার কাছে সুধা অমৃতের মত ভালো লেগে যাবে।
কিভাবে যে মানুষের বিশ্বাসের ভরকেন্দ্র পাল্টে যায়, ভাবতেই অবাক লাগে। এই পাল্টে যাওয়া যদিও অহরহ ঘটে না, তবে যখন ঘটে তখন আমাদের অবাক করে দেয়। এমনও হতে পারে এই ব্লগের ব্লগার উদাসী স্বপ্ন বলে ফেলতে পারেন, ‘ধুর, এতদিন যা বলেছি যা করেছি সবই ভুল। ইসলাম একমাত্র খাঁটি ধর্ম।’ হয়তো তা হবে না, হয়তো বরং নতুন নকিব বলে বসতে পারেন, ‘ধুর, এতদিন শুধুশুধু মক্কা মদিনায় ঘুরেছি, এসব করে আমার কোন লাভই নেই।’ আবার চাঁদগাজী বলে বসতে পারেন, ‘আমার কমান্ডার মেজর জিয়া ছিলেন এই দেশের একমাত্র প্যাট্রিয়ট,আর সব ভুয়া, সব স্বার্থপর।’ (এগুলো নিছক উদাহরণ। কেউ অন্য মিন করবেন না প্লিজ।)
আমার বাবা মা বিয়ের আগে থেকেই একে অন্যকে চিনতেন। মায়ের কাছে একদিন জানতে চেয়েছিলাম, ‘আচ্ছা মা, তোমার আর বাবার দেখা হয়েছিল কিভাবে?’
মা বলেন, ‘খুব স্বাভাবিকভাবে হয়েছিল।’
-‘খুব স্বাভাবিকভাবে মানে কিভাবে?’
-‘মানে ড্রামাটিক কোন ব্যপার ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে শত শত ছেলে মেয়ের দেখা হয়, পরিচয় হয়, সেভাবেই আমাদের দেখা হয়েছিল। একে অন্যের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল সেভাবেই। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পরেই ধীরে ধীরে সবকিছু অস্বাভাবিক হয়ে গেলো।’
কি অমোঘ সত্য! প্রথমে স্বাভাবিক, পরে সব অস্বাভাবিক। মানবের মন, সবকিছুই এখানে সম্ভব।
আমার ব্লগকে আমি একটি ডিজিটাল ডায়েরী হিসেবে গ্রহণ করেছি। এখানে আমি আমার মনে কথাগুলো লিখতে থাকবো। সেই কথাগুলো অন্যদের কাছে ভালো লাগতেও পারে, আবার নাও লাগতে পারে। আমি চাইলে সবার কাছে ভালো লাগে এরকম লেখা পোস্ট করতে পারি, এতে আমার জনপ্রিয়তা বাড়বে। কিন্তু এভাবে সবাইকে কেয়ার করে লিখতে থাকলে নিজের মনের কথামালা লিখতে দ্বিধা বোধ হবে। লেখার আগে বসে বসে ভাববো, এই টপিকে লেখা উচিৎ হবে? এই টপিকে লিখলে সবাই পছন্দ করবে? তখন আমার মনের অব্যক্ত কথামালা অব্যক্তই থেকে যাবে। আমি এখন থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাষায় লিখে যাবো। আমার বিশ্বাস এবং চিন্তা চেতনার সাথে হয়তো অনেকের মিল থাকবে না। হয়তো দুয়েক জনে অপছন্দ করতে পারেন, তবুও লিখে যাবো।
আরও একটা কথা, এখন থেকে কোন কোন লেখা আমি প্রথম পাতায় দেবো না, শুধু আমার ব্লগের পাতায় শেয়ার করবো। কারণ আমি ব্লগকে সত্যিই আমার ভার্চুয়াল ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করছি। যাঁদের কাছে আমার লেখা ভালো লাগে, তাঁরা প্লিজ আমার ব্লগের পাতায় নিয়মিত চোখ রাখুন। সবাইকে অচেনা হৃদির ডিজিটাল ডায়েরিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি। আমার ব্লগে আপনার মূল্যবান মন্তব্য দিতে কখনো ভুল করবেন না প্লিজ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩