somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত গল্পঃ বাস

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এমন বৃষ্টির রাতে কেবল জেলেরাই বাইরে বেরুতে পারে। পেশাদার জেলেরা। মাতাল বৃষ্টির ফোঁটায় সম্ভবত কোন নেশা আছে। শুধুমাত্র মাছরাই তার কদর জানে। নইলে এমন উন্মত্ত হয়ে ছোটাছুটি করে কেন?

রাহাত মাছ বা জেলে কোনটাই নয়। তবু তাকে বাইরে বেরুতে হবে। আজ তার জীবনের সবচেয়ে সংকটময় রাত। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বারান্দায় শুয়ে আছে তার মা। হঠাৎ স্ট্রোক করে শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে গেছে। মায়ের কথা মনে হতে একদলা কষ্ট পাক খেয়ে আটকে থাকে রাহাতের গলার কাছে। বড় ভাইয়ের সংসারে অপাঙতেয় মা কোন রকম ফাইফরমাশ খেটে টিকে আছেন। হালের বৃদ্ধ ষাঁড়কে যেমন ঝটপট কসাইয়ের কাছে গছিয়ে দিতে হয় তেমনি অসুস্থ মাকে গছানো হয়েছে হাসপাতালের ঘিঞ্জি করিডোরে। নিজের অসহায়ত্বে চোখে পানি চলে আসে রাহাতের। তার মেসে কোন ছাতা নেই। রাস্তায় বেরুতেই বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটায় সে সিক্ত হয়। চিবুক গড়িয়ে নামা নোনা দুঃখ নিমেষে মিলিয়ে যায় রাস্তার থকথকে কাঁদায়। রাহাত দ্রুত পা চালায়। তাড়াতাড়ি, খুব তাড়াতাড়ি তাকে মা’র কাছে যেতে হবে।

রামপুরা বাজার থেকে ঢাকা মেডিকেলে যাতায়াতের ব্যবস্থা মোটেই ভালো নয়। সরাসরি বাস নেই। ঢাকা শহরের অর্ধেক রিকশাওয়ালা সম্ভবত মান্ডা এলাকায় বাস করে। বাকি অর্ধেক বাস করে রামপুরা সংলগ্ন মধুবাগে। এজন্য রিকশা পেতে সমস্যা হয় না। কিন্তু এই বৃষ্টির রাতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। রিকশাওয়ালারা সম্ভবত গ্যারেজে ঘুমাচ্ছে। রাতজাগারা সিগারেটে সুখটান দিয়ে ফেলে আসা বউকে স্মরণ করছে। রাহাত দৌড়ে মেইন রোডে আসার সাথে একযোগে রাস্তার সব কটা বাতি নিভে গেল। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। দুঃখে হাসি পেল তার।
রাস্তার অন্য পাশে একটা টিমটিমে কূপির শিখা জ্বলে উঠলো। সেদিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো সে।
কাছে গিয়ে দেখতে পেল শিখাটা আসলে মোমবাতির। মাথায় ভালো করে মাফলার জড়িয়ে এক বুড়ো সিগারেটের পসরা সাজিয়ে বসেছে। অন্যান্য দিনে তার কাস্টমারের অভাব হয় না। রাতজাগা রিকশা ও সিএনজি চালকরা তার খদ্দের। ঝুলন্ত বনরুটির প্যাকেট গলে বহুকষ্টে বুড়োর সাথে চোখাচোখি হলো রাহাতের। তাকে দেখে বুড়োর তেমন ভাবান্তর হলো না। তার সমস্ত মনোযোগ কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকা একটা লাল কুকুরের দিকে। মাঝে মাঝে শীর্ণ হাত বাড়িয়ে বুড়ো কুকুরটাকে আদর করছে। নিভিয়ে রাখা কেরোসিনের স্টোভে একটা চায়ের কেতলি রাখা।

“বাপজান, চা খাইবেন?” কুমিল্লার আঞ্চলিক টানে বলে উঠলো বুড়ো। রাহাতের চায়ের দিকে মন নেই। তার মন জুড়ে আছে মা। না জানি কেমন আছে মা! খুব কষ্ট নিয়ে শুয়ে আছে। হয়তো অপেক্ষা করছে কখন ছোট ছেলে এসে তার পাশে বসবে। তার জন্য একটা বেডের ব্যবস্থা করবে।

“না চাচা। চা খাবো না”।

“আমনে দেখতাছি ভিজ্যা চুপসাইয়া গেছেন”। রাহাতের শরীরের দিকে ইঙ্গিত করে বললো বুড়ো।
“এক কাপ গরম চা খান। শরীরে বল আইবো”।

নিভে থাকা চুলার গরম চা! মনে মনে হাসলো রাহাত। বুড়োর সেন্স অব হিউমার মন্দ নয়।

বুড়োর দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো। থট রিডিং জানে এমন ভঙ্গিতে বললো “মাত্র চুলা নিভাইছি। এক্ষণ গরম আছে আগুনের লাহান। মুখ পুইড়া যাইবো”।

ইতিউতি চেয়ে কোন তৃতীয় মানুষের সন্ধান পেলো না রাহাত। রাস্তার চেনা অবয়ব ঝাপসা তেলচিত্রের মতো ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। পিচঢালা রাস্তায় জল জমেছে। উপচে পড়া ডাস্টবিন থেকে রাজ্যের ময়লা ভেসে যাচ্ছে। নিঃশব্দ বিজলীর বিষণ্ণ আলোয় একটা মৃত বিড়াল ভেসে যেতে দেখলো রাহাত। অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত কোন যানবাহন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

“দেন একটা চা। লিকার বেশি। চিনি কম”।

মুচকি হেসে বুড়ো চা বানাতে লেগে পড়লো। ধোঁয়া ওঠা লিকারে চামচ ডুবিয়ে আস্তে আস্তে নাড়াতে লাগলো।

“বাপজান কোথাও যাইবেন নি”? রাহাতের উদভ্রান্ত অপেক্ষা বুড়োর চোখ এড়িয়ে যায়নি।

“হ চাচা। ঢাকা মেডিকেল। এখন কীভাবে যাবো, বৃষ্টি কখন থামবে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না”।

“এতো রাইতে কিছু পাওয়া শক্ত। তার উপর মরার বৃষ্টি নামছে। দেখেন। যা আইবো উইঠা যাইয়েন”। রাহাতের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে বুড়ো।

রাহাত দেখে দুই কাপ চা বানিয়েছে বুড়ো। অন্য কাপটি তার নিজের জন্য। সেটাতে বনরুটি ভিজিয়ে সে এগিয়ে দেয় শুয়ে থাকা কুকুরটির দিকে।

“খুব ভালো চা হইছে চাচা”। কাপে চুমুক দিয়ে বুড়োর প্রশংসা করে রাহাত। একটু যেন ভালো লাগছে তার। মনে সাহস ফিরে আসছে। মা’র কিছু হবে না। সে কিছু হতে দেবে না। আগের মতো সুস্থ হয়ে মা ফিরে আসবে।

চায়ের কাপে শেষ চুমুক দেয়ার আগেই স্রষ্টা যেন তার আকুতি শুনতে পেল। দূর থেকে জ্বলন্ত হেডলাইট দেখে আশ্বস্ত হলো রাহাত। বাস আসছে। কোথাকার বাস, কোথায় যাবে কিছু জানা নেই। তবুও বাস তো! হয়তো কাকরাইল মোড় পর্যন্ত যেতে পারলেও একটা কিছুর ব্যবস্থা হবে। রাহাত তাড়াতাড়ি বিল মিটিয়ে ফেলতে উদ্যত হলে বুড়ো তাকে নিরস্ত করে।

“তাড়াহুড়া কইরেন না, বাপজান। আপনারে রাইখা যাইবো না। এইখানে ঠিক দাঁড়াইবো”। হাই তুলতে তুলতে বলে বুড়ো। টাকাটা লুঙ্গির কোঁচড়ে গুঁজে নেয়। কেরোসিনের স্টোভটা সে জ্বালিয়েছে আবার। নীল-কমলা আগুনের আভায় রাহাতের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এমন সময় ব্রেক কষে বাসটা।

বাসের গায়ে কিছু লেখা নেই। ঢাকা শহরের লোকাল বাসগুলো সাধারণত নম্বর দিয়ে পরিচিত। তীব্র বৃষ্টিতে উইন্ডশিল্ডে লেখা নম্বর পড়া যাচ্ছে না। বাসটার দরজা খুলে যায়। অপেক্ষমান হেলপার অলস ভঙ্গিতে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“মামা শাহবাগ যাইবো”? রাহাত প্রায় চিৎকার করে তার উদ্দেশ্যে।

“যাইবো আসেন। নীলক্ষেত, শাহবাগ, চানখাঁর পুল সবখানে যাইবো”। নিরাসক্ত গলায় জবাব দেয় হেলপার।

রাহাত দৌড়ে বাসটায় উঠতে যাবে এমন সময় তাকে পাশ কাটিয়ে উঠে পড়ে বুড়োর লাল কুকুরটা। হেলপার কিছু বলে না। এই প্রথম কোন কুকুরকে স্বেচ্ছায় গাড়িতে উঠতে দেখলো রাহাত। অবশ্য তার এখন বিস্মিত হওয়ার সময় নেই। তাকে জলদি মায়ের কাছে পৌঁছাতে হবে।

বাসে উঠে রাহাত দ্বিতীয় সারিতে জানালার পাশের সিট বেছে নিলো। পেছনে তাকিয়ে দেখলো কুকুরটা সর্বশেষ সারির চেয়ারে দিব্যি কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। বাসে মানুষ তেমন নেই। সবাই এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছে। ড্রাইভারের পেছনের সিটে বসে ঘুমে টলছে লুঙ্গি পরা একটা লোক। মহিলাদের বসার লম্বামতো জায়গাটায় চোখ বড় বড় করে বসে আছে তৃতীয় লিঙ্গের তিনজন মানুষ। তাদের উগ্র সাজপোশাক হা করে গিলছে কয়েকজন যাত্রী। অদ্ভুত ব্যাপার হলো বাসের কারো কুকুরটাকে নিয়ে আপত্তি নেই। সবাই নিজের মতো বসে আছে। দীর্ঘযাত্রার পর ক্লান্ত বাসযাত্রীরা যেমন থাকে।

মাখনের মতো মসৃণ গতিতে এগিয়ে চলছে বাস। রাহাতের মনে হলো রাস্তার পানি বাসটার চাকা স্পর্শ করছে না। নর্দমার উপচে পড়া জলের উপর দিয়ে যানটা যেন স্রেফ ভেসে বেড়াচ্ছে। খানিকটা পথ যাওয়ার পর রাহাত ভেবেছিল কন্ডাকটর এইবার ভাড়া আদায় করতে চেপে ধরবে। লোকাল বাসের কন্ডাকটরদের চিরায়ত যেটা স্বভাব। ধাক্কাধাক্কি করে যেই না বাসে ওঠা অমনি হাজির। “মামা, ভাড়াটা দেন।” আরে বাবা! বাসে যখন উঠেছি ভাড়া তো দেবোই। ওঠা-নামার রাস্তা তো একটাই। ভাড়া না দিয়ে পালানোর কোন পথ আছে কী? রাহাত কন্ডাকটরের দিকে তাকায়। ইঞ্জিন কাভারের ওপর বসে ছেলেটা ঠিক তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই বাসের একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো ড্রাইভার, কন্ডাকটর ও হেলপার তিনজনই বয়সে কিশোর। ১৮ বছরের নিচে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স পায় না। এই ছেলে কী করে গাড়ি চালাচ্ছে কে জানে! চোখাচোখি হওয়ার পরও কন্ডাকটর চোখ সরিয়ে নিচ্ছে না। বাসের হলুদ টিমটিমে আলোয় তার দৃষ্টির শীতলতা রাহাতের চোখ এড়ালো না।

“কী মামা, ভাড়া লইবা না?” খানিকটা অস্বস্তি থেকেই বললো রাহাত। উদ্দেশ্য ছেলেটাকে একটু লজ্জা দেয়া।

কন্ডাকটর ভাড়া নেয়ার কোন উৎসাহ দেখালো না। এমন কী রাহাতের চোখ থেকে দৃষ্টিও সরালো না। পাথরের মূর্তির মতো বসে রইলো। যেচে ভাড়া দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় রাহাত খানিকটা অপ্রস্তুত হলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সমস্ত বাসের যাত্রী তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাহাত লজ্জা পেল। এরচেয়ে বাইরে তাকানোই ভালো।

বাসটা এতক্ষণে মালিবাগ মোড় ক্রস করার কথা। জানালার পাশে বসেও বাইরের কিছু ঠাউরে উঠতে পারলো না রাহাত। রাস্তার সমস্ত বাতি যেন এক মস্ত ফুঁয়ে কেউ নিভিয়ে দিয়েছে। বাতাসের ঝেড়ো শব্দ পুরনো রেকর্ডের মতো একঘেয়ে সুরে বেজে যাচ্ছে। বাসের জানালার কাঁচ আটকানো। শুধুমাত্র দরজার সামান্য ফোঁকর দিয়ে হাওয়ার সূক্ষ্ণ প্রবাহ পুরো বাসে শীতলতা বয়ে আনছে। রাহাত জানালা খুলে বাইরে তাকানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

“জানালা খুইলেন না”। কেমন যেন কঠোর শোনায় ড্রাইভারের কন্ঠ। রাহাত জানালা খোলার উদ্যোগ নিতেই সে গাড়ি থামিয়েছে।

“কেন?” বেশ বিরক্ত হয় রাহাত।

“নিয়ম নাই”। কন্ঠের কঠোরতা বজায় রাখে ড্রাইভার।

“অ্যাই, জানালা খুললে তুই না ভিজে যাবি। ঠান্ডা লাগবে। বৃষ্টিতে ভিজে শুধু শুধু জ্বর বাধাতে ইচ্ছে করছে তোর?” প্রথমবারের মতো মহিলাদের সিট থেকে কথা বলে ওঠে তৃতীয় লিঙ্গের একজন।

“হ্যাঁ। আর চলন্ত বাসে ড্রাইভারের সাথে কথা বলতে হয় না। বাসের দেয়ালে লেখা দেখিসনি?” পাশ থেকে ফোড়ন কাটে আরেকজন। তিনজন মিলে হাসিতে লুটিয়ে পড়ে।

রাহাত ভীষণ লজ্জিত হয়। সবকিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। মায়ের কথা মনে পড়ে তার। না জানি এই বৃষ্টির রাতে কেমন কষ্টে আছে মা। হয়তো তার জন্য অপেক্ষা করছে। যেন সে এলেই মা ভালো হয়ে যাবে।

বাসটা আবার চলতে শুরু করে। নরম মাখনে ধারালো ছুরি যেভাবে প্রবেশ করে ঠিক তেমনি মসৃণভাবে। রাহাত বসে বসে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কোন কথা সে বলবে না। ভাড়া দেয়ার চেষ্টা করবে না। এমনকি বাইরে পর্যন্ত তাকাবে না। তাকে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে হবে।

একটানা অনেকক্ষণ বাসটা চলছে। রাস্তায় অন্য কোন যানবাহন চোখে পড়ছে না। অস্বস্তিতে রাহাতের বুকটা খচখচ করছে। হোক বৃষ্টি! তবুও এমনটা হওয়ার কথা নয়। ঢাকা শহর কখনো ঘুমায় না। রাতদুপুরে বৃষ্টি হলে ঢাকার রাস্তায় গিজগিজ করা সমস্ত যানবাহন একসাথে উধাও হয়ে যাবে তাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার মনে হচ্ছে এতক্ষণে বাসটার শাহবাগে পৌঁছানো উচিত। সময় দেখার জন্য পকেটের মোবাইল ফোন বের করতে উদ্যত হয় সে।

পকেটে হাত দিতেই বুকটা ধ্বক করে ওঠে তার। ফোনটা নেই। সম্ভবত মেসে ফেলে এসেছে। কাজের সময় কেন এমন হয়? সবকিছু একসাথে ভুল হতে থাকে। ক্ষোভে রাহাতের দলাপাকানো কষ্টগুলোর প্যাঁচ আরো জটিল হয়।

বাম পকেটে হাত দিতেই তার ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে আসে। আছে, হাতঘড়িটা আছে। তাড়াতাড়ি সেটা বের করে বাম হাতে পরে রাহাত। রেডিয়ামের প্রলেপ দেয়া কাঁটায় চোখ বোলাতেই তার শিরদাঁড়ায় একটা শীতল স্রোত বয়ে যায়। আড়াইটা! বুকের ধুকপুকানি সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। মনে হচ্ছে যেকোন সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। মনে আছে মেস থেকে বেরুনোর সময় সে দেয়াল ঘড়িতে দেখেছিলো আড়াইটা বাজে। আতঙ্কে রাহাতের গা গুলিয়ে আসে। এ কী করে সম্ভব?

“ড্রাইভার, বাস থামাও”। বিকৃত শোনায় রাহাতের কন্ঠ। “আমি নামবো”।

যেন কিচ্ছু শোনেনি এমন ভঙ্গিতে ড্রাইভার বাস চালিয়ে যেতে থাকে। তার যেন শ্রবণক্ষমতা নেই। নেই থামার কোন তাড়া। কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান গ্রহের মতো তাকে ছুটে চলতে হবে। অনৈচ্ছিক পেশীর মতো নিয়ত স্পন্দিত হতে হবে।

রাহাতের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। অনেকটা তেড়ে যায় দরজার দিকে। হেলপারকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হেঁচকা টানে দরজা খোলার চেষ্টা করে। দরজা খুলছে না। সে দরজায় ক্রমাগত লাথি মারতে থাকে। সাথে সাথে চলে চিৎকার। “এই দরজা খোল। খোল দরজা”। উপায় না দেখে সে জানালা ভেঙে বেরুনোর সিদ্ধান্ত নেয়। জানালার কাঁচ যেন ইস্পাতের তৈরি। রাহাত তাতে ঘুসি মারলে হাতে ব্যাথা পায়। অন্যদিকে এমন উন্মত্ততায় ভয় পায় তৃতীয় লিঙ্গের একজন। তাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেয় আরেকজন।

“তুই শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস, সব ঠিক হয়ে যাবে”। রাহাতকে উদ্দেশ্য করে বলে তাদের একজন।

দরজার ফোঁকর দিয়ে বাইরে তাকাতেই রাহাতের দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সেই বুড়োটা! শীর্ণ হাত বাড়িয়ে তার লাল কুকুরটাকে আদর করছে। কেরোসিনের স্টোভে জ্বলছে আগুনের শিখা। তার উপর রাখা চায়ের কেতলি। সাথে সাথে বাসের ভেতর তাকায় রাহাত। লাল কুকুরটা উবু হয়ে বসে তাকে দেখছে। পুরো পৃথিবীটা দুলে ওঠে তার সামনে। জ্ঞান হারানোর আগে বাসের বদ্ধ বাতাসে ঢেউ তোলে তার প্রচন্ড চিৎকার।

লাল কুকুরটা ছাড়া আর কেউ তাতে চমকালো না।


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৩
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×