somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যয়ের একটি কালজয়ী উপন্যাস 'কবি''। তৎকালীন নিম্নবর্গের মানুষের জীবনের পটভূমি নিয়ে এই উপন্যাস এগিয়েছে। শুরুটা হয় একটা আশ্চর্য সংবাদের ভিত্তিতে। ডোম বংশের ছেলে নিতাইয়ের হঠাৎ কবি হওয়া নিয়ে।

সেসময়ে কবিয়াল বলে এক ধরণের গোষ্ঠী ছিল।বর্তমানে আমাদের বাউল শিল্পীদের মত। আরেক গোষ্ঠী ছিল "ঝুমুরের দল" বর্তমানের যাত্রপালার মত ঘুরিয়া ঘুরিয়া বিভিন্ন মেলায় গান পরিবেশন ও দেহ ব্যবসা করত। গ্রামের সাধারণ জনতা রাতের গভীরতার সাথে সাথে কবিয়ালদের গালাগালি আর মেয়েদের অর্ধ-উলঙ্গ নাচের সাথে মিলিয়া যাইত।
এর ফাঁকে আবার পেছনে তাবু খাটিয়ে চলত দেহ ব্যবসা। তারাশঙ্করের বর্ণনায় সেই ক্ষণস্থায়ী যৌনপল্লী।
"সে যেন একটা বিরাট মধুচক্রে অবিরাম গুঞ্জন উঠিতেছে।"

কবি একটি সামাজিক নিম্নবর্গের উপন্যাস। এখানে তাদের রুচিবোধ, দিনযাপন থেকে শুরু করে ভাষার ব্যবহার খুব যত্নসহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।

নিতাই চরণের কবি হওয়া নিয়ে উপন্যাসের যাত্রা। শেষ পর্যন্ত আমরা তার দুদর্শাগ্রস্ত প্রত্যাবর্তন দেখতে পাবো। নিতাইয়ের জীবনের উত্থানের সাথে তার ভেতরকার পরিবর্তন আবার পতনমুখ হবার সাথে তার বোধোদয়ের দিয়ে লোকায়ত দর্শনের সাথে পরিচয় ঘটবে। আদ্যোপান্ত একটি ভালো মানুষ নিতাইয়ের জীবন দর্শনের পালাবদল যেন তৎকালীন ওই সব সমাজের চিত্র ধারণ করে। তৎকালীন বাঙ্গলার নিম্নবর্গের মেয়েদের যৌনতার খানিকটা বিবরণ দেখা যায় এ উপন্যাসে।

কবি উপন্যাসের সব থেকে সুন্দরতম বচনঃ-
এই খেদ আমার মনে মনে।
ভালোবেসে মিটল না এ আশ—কুলাল না এ জীবনে।
হায়, জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?



উপমাঃ-
প্রথম দিকে কবির মন কেড়ে নেয়া মেয়েটিকে অপূর্ব উপমায় ফুটিয়ে তুলতে মোটেও কার্পণ্য করেনি লেখক
"মেয়েটির রঙ্গ কালো, কিন্তু দীঘল দেহভঙ্গিতে ভুঁইচাপার সবুজ সরল ডাটার মত একটি অপরূপ শ্রী।"

কবির কোন কথায় যখন সে আহত হত তখন তার রূপের যে অনিন্দ্য উপস্থাপন করেছেন, তা অনবদ্য।
"বর্ষার রসপরিপুষ্ট ঘনশ্যাম পত্রশ্রীর মত তাহার সে মুখখানি মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে পরিবর্ত্তিত হেমন্ত শেষের পাতার মত পান্ডুর হইয়া আসিল।"

বিচ্ছেদের সময়ে কবির মনের মানুষের প্রস্থানও যে কতটা বেদনাময় ও সুন্দর হতে পারে তা লেখকে যথার্থই ফুটিয়ে তুলেছেন।
"জোৎস্নার রহস্যময় শুভ্রতার মধ্যে দ্রুত চলন্ত কাশফুলটি যেন মিশিয়া মিলাইয়া গেল।"

দ্বিতীয় ধাপে এসে আমরা নিতাইয়ের আর একজন মনের মানুষের সন্ধ্যান পাবো। তার সম্পর্কে তারাশঙ্করের বর্ণনা আমাকে বিহ্বলিত করেছে।
★ মেয়েটা শুধু মুখ ভরিয়া হাসেনা, সর্বাঙ্গ ভরিয়া হাসে।
★ সঙ্গে সঙ্গে সিক্তবাসের স্বচ্ছতার আড়ালের তাহার সু পরিস্ফুট সর্বাঙ্গও হাসিয়া উঠিল।
★মধ্যরাত্রির নিস্তরঙ্গ স্তব্ধ জোৎস্নার মধ্যেও একটা ভয় আছে। সে ভয় সে করিল না।

এই মেয়েটির নাম ছিল বসন্ত তাকে বসন নামে ডাকত সবাই। বসনের মৃত্যুতে মূলত কবি উপন্যাসের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসে। এর পরে কবি তার গ্রামের দিকে যাত্রা করেন এবং তার প্রথম মনের মানুষ ঠাকুরঝির মৃত্যু সংবাদে হতবিহ্বল হয়ে যান। যার জন্য কবি লিখেছিলেন "কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?" কবি জীবনের বাস্তবতায় নিতাই চরণের নীচ বংশের কারণে অনন্য কবিয়ালদের থেকে তার পার্থক্য স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।

কবি উপন্যাস সবার পড়া উচিত। এটি গ্রামীণ মানুষের জীবনের একটি প্রতিচ্ছবি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৬:৩১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×