ভাষার আধিপত্যে আমরা আমাদের পরিচিত নামগুলোকে ইংরেজিতে নতুন ভাবে জানছি। এটা জাতিগত ভাবে কি নিজস্ব সংস্কৃতি বা ভাষার ক্ষেত্রে আমাদের সংকীর্ণতা প্রকাশ করছে? নাকি আন্তর্জাতিক করণের নাম দিয়ে প্রপাগান্ডা প্রচার হচ্ছে?
চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Daboia russelii) ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিষধর সাপ এবং উপমহাদেশের প্রধান চারটি বিষধর সাপের একটি।
আমাদের গনমাধ্যম আমাদেরই অঞ্চলের একটি সাপকে কেন ইংরেজি নামে প্রচার করে, এটার কারণ কি হতে পারে বুঝে আসেনা। গ্রামীণ একজন কৃষক বা সাধারণ মানুষ কি এই রাসেল ভাইপারকে চন্দ্রবোড়ার থেকে সহজে চিনতে পারবে নাকি সংশয়ে পরিচিত সাপটিকেও বিদেশী সাপ বলে গন্য করবে। আমাদের এই সমস্যা এখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। আমাদের দোকানগুলোর নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম, স্থানগুলোর নাম, বইয়ের নাম, কবিতা,গল্প,উপন্যাসের নামও পর্যায়ক্রমে ইংরেজিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
ভাষা যেভাবে আমাদের সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলছে তার দার্শনিক,ঐতিহাসিক বা তাত্ত্বিক বিচারে না গিয়ে আমরা বরং খালি চোখের পরিবর্তনগুলো যদি দেখি তাহলে দেখবোঃ- ঢাকা শহরে কোন একটি বাড়ির নাম যদি আপনি বাংলায় রাখেন সেক্ষেত্রে দেখবেন সেখানে দেশীয় ফুলের গাছ , সামনে খানিকটা জায়গা, বাড়ির নকশায় দেশীয় সংস্কৃতির ছাপ থাকে। একটা দোকানের নাম যখন বাংলায় রাখা হয় সেখানে নামের সাথে সাথে দোকানের সজ্জা ও পরিবেশের ও একটা পার্থক্য থাকে।
কিন্তু বর্তমানে আমাদের দোকান, প্রতিষ্ঠানের নামগুলো আরবী এবং ইংরেজির মিশ্রণে নতুন এক ধরণের বিপর্যয়ের সৃষ্টি করছে যেটা আমাদের অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রকৃতির প্রতি বিরুপ মনোভাব তৈরি করছে। আগে আমাদের প্রত্যেক বাড়িতে সেটা একজন প্রান্তিক কৃষকের ভাঙ্গা ঘরেও পুরোনো কোন মাসিক পত্রিকা এবং একটা দেয়াল ঘড়ি এবং কাপড়ে নকশা করা কটন বার্ডের অথবা সেলাই করা কিছু একটা ফুলের বা অন্য কিছুর দেখা মিলতো। ক্রমান্বয়ে সেটা এখন হারিয়ে যাওয়া একটা সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে। মানুষ এখন পরিচিত কিছু ফুলগাছ ছাড়া অন্য সুন্দর ফুলগুলো চিনেনা এবং আবাদও করেনা। কত ধরণের গাছ ছিল সেগুলো মানুষ না লাগিয়ে বিদেশী গাছগুলো আবাদ করছে। এই সমস্ত কিছু মনে হয় আমাদের ভাষার ব্যবহারের দূর্বলতার কারণে। আমরা এখন বিদেশী নামক রোগে ভয়ংকর ভাবে আটকে গেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ১২:২৬