somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Lady in black: শেষ পর্ব

১৩ ই মার্চ, ২০১১ ভোর ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

"তুমি খুব ভাল একটা মেয়ে, তোমার মত বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তুমি ভালো থেকো। সবসময়"

ডেক্স ঝাড়তে গিয়ে অনেকদিন আগের চিঠিটা আবার চোক্ষুগোচর হল। মলিন হয়ে গেছে পাতাটা, কিছুটা বিবর্ণও। অফসেট পেইজে মেইলটার প্রিন্ট নেয়া হয়েছিলো। কেন নেয়া হয়েছিল বাবলি আজ আর মনে করতে পারছে না। কেন যেন আজকে খুব করে সেই দিনটা মনে করতে ইচ্ছা করছে।
অতসী পাশের ডেক্স থেকে উকি মারে। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে আপা লাঞ্চে যাবেন না। একটু হেসে জবাব দেন, "সেই তালেই তো থাকিস রে, চল যাই"

ক্যান্টিন এরিয়াটা বেশ ছোট্ট, তাও ২ভাগে ভাগ করা। এদিকটায় যথেষ্ট পরিমানে অযত্ন করা হয়। ওইদিকে কি হয় কে জানে, কোনদিন যাবার প্রয়োজন পরে নি। সত্যি বলতে কি সৌভাগ্য হয় নি। আজকের আইটেম জাটকা মাছের পাতলা ঝোল আর পুইশাক। অতসীর মু্খটা এতটুকু হয়ে গেল।" আপা দেখেন এতটুকু মাছ তাও ২টুকরা করা, খাব কি?"

"আচ্ছা তুই কি আমাকে শেষদিনেও একটু শান্তি দিবি না? কালকেই তো চলে যাব তারপর তুই এত অভিযোগ কার কাছে করবি বল তো?" "দেখো তো মেয়ে!! মুখ কালো করিস না বিকালে তুই আর আমি স্টারে বিরিয়ানি খাব নে"

আজকে অফিসের শেষদিন। ভাবতেই বুকটা ফাঁকা হয়ে যায়। ছ্যাত করে কোথাও লাগে কেন লাগে তাও বুঝে। সব কিছুর আশ্রয় ছিল এ কাজ। ছোট বেলা থেকে একা একাই তো বড় হল বলতে গেলে, বোনেরা যার যার মত সংসার গুছিয়ে ফেলল। একদম পিঠাপিঠি ছোট বোনটার এক ছেলের সাথে বেশ ভাব ছিল। বাবলির মুখের দিকে তাকিয়েই বোধহয় সেটাকে প্রেম বলতে পারছিল না। খুব গাইগুই করছিল মেঝপা তোকে রেখে বিয়ে করবা না। তারপরও করল। সেদিন খুব ছ্যাত ছ্যাত করছিল বুকটা, এজন্য নয় যে ওর বিয়ে করা হল না। এ জন্য যে রাতে যখন সব কাজও শেষ হয়ে যাবে তখন ফাকা স্থানটা ভরার কিছু রইলো না।

বিয়ের পর বোনটা খুব আসতো। সাজগোজ করে। এক গা গয়না হয়তো থাকত না, তবে মুখে খুব তৃপ্তি থাকত। বর ওকে খুব আদরে রাখত, যেন কোলের বেড়ালটা। আবদার একটাও মাটিতে পরতে পারতা না। বাবলির তখনও খুব জ্বলত, ভীষণ জ্বলত। সেটা ছ্যাত ছ্যাত করে জ্বলা না। দাউ দাউ করে জ্বলত। কেন সে একটা বিড়ালের মত জীবন পেল না? কেন হাসিমুখ তার পাশে বসে ছবি তুলল না? কেন মা বুঝল না বাকি বোনদের মত সেও একটা মেয়ে? কেন বোনেরা বুঝল না সে দায় নিতে নিতে ক্লান্ত?
অনেক চেষ্টা করত কাঁদতে কিন্তু কান্না পেতে না, কিছুতেই না কিছুতেই না। তখন সে কাজে মুখ ঢুবিয়ে দিত। খুব তো শিক্ষিত না তবে এই অদম্য স্বভাবের কারণের ঢাকায় পোষ্টিং পেয়ে গেল। মা ভিটা ছড়তে রাজি না। উলটা শাপশাপান্ত করে এক শেষ করল তাকে একা ফেলে যাবার জন্য। সেদিনও অনেক কাদার চেষ্টা করল। বাবার কবরের কাছে গিয়ে। কিন্তু কেন যেন কারও কাছে অভিযোগ অভিমান কোনটাই আসল না। মানুষ কাঁদে কারণ সে দৃষ্টি আকর্ষন করতে চায়, সে বলতে চায় আমি কষ্ট পেয়েছি দেখ। যখন কেউ সেটা দেখে না তখন কান্নাও বুঝে যায় তার উপস্থিতি অর্থহীন। কেঁদে সময় নষ্ট না করে তখন নিজেই নিজের জন্য আশ্রয় তৈরি করে।

আগুন পুড়িয়ে পড়িয়ে অনেক শক্ত করে ফেলেছিল। অনেক বেশিই বাস্তববাদী। তাই নিষ্ঠুর শহরটাও তত প্রভাব ফেলতে পারল না। মা কোনদিনও আসেন নি, তোবে কোনদিন পাঠানো টাকাও ফেরত দেন নি। উলটা উৎসবে পার্বণে কিছু বেশি দাবী করতেন। বেচারার দাবী করার জায়গাও ওই একটাই ছিল।

বাসে ফিরতে ফিরতে আনমনে এই কথাগুলি ভেবে একটু যেন হাসিই পেল। বুড়ো হবার বিলাসিতা নেই গো সখী তোমার। যতদিন বেঁচে আছো নিজেকে বয়ে নিতে হবে। কানের কাছে "আপা" বলে ডাকে চমকে উঠল বাবলি। "অতসী!!! মরতেও দিবি না?"

মেয়েটার প্রতি বড় মায়া জন্মে গেছে বাবলির। কখনও কখনও ওর মধ্য নিজের ছায়া দেখতে পায় বলেই কি না কে জানে! পার্থকে তো ভীষণ ভালবাসত অতসী। হয়তো এখনও বাসে।বিয়ে করবে শোনা যাচ্ছিল, পার্থই কেন যেন চলে গেল। কে জানে পুরুষের কখন কিসের অভাব হয়! আর তা কিসে মিটে যায়! পুজার খেলাও ফুরায় দেবীকেও বিসর্জন দিতে তখন বাধে না।

"অ্যাই!!! এটা তোর রাস্তা? এই বাসে কি করিস?" কপট রাগ দেখায় বাবলি। অতসী ঠোট ফুলিয়ে জবাব দেয়, "আমার আজকে হোস্টেলে যেতে মন চাচ্ছে না। আমি তোমার কাছে থাকব।" বাবলি বিরক্ত হবার ভান করে কিন্তু নেতিবাচক কিছু না শুনে অতসী আনন্দে আটখানা হয়ে যায়।

ভীষন গরমে বাবলি ঘামছে। অতসী ঠকঠক করে কাঁপছে। ওর ব্যাগটা খুলে পার্থর হাতে টাকার ব্যান্ডিল ২টো তুলে দিল, ২লাখ টাকা। অতসীর সারা জীবনের সঞ্চয়।
পার্থ কৃতজ্ঞতার সাথে বলল, "আমি তোমার সাথে যা করেছি তার জন্য আমি ক্ষমা চাই অতসী, মাঝের দিন গুলির জন্য আমি মাফ চাচ্ছি। আবার সব আগের মত হয়ে যাবে। আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে কোন অভিযোগের সুযোগ দিব না" অতসী খুব দৃঢ় গলায় বলল "না"। হাসপাতালের করিডোরের প্রতিটা মানুশের কানে একবার তার প্রতিধ্বনি হল, খুব অনিশ্চিত গলায় বলল অতসী বাবলিকে বলল, "চল যাই।" যেন সে বুঝতে পারছে না সে কোথায় যাবে, তবে তার যেতে হবে। বাবলি পরম মমতায় অতসীকে জড়িয়ে ধরল, যেমন একদিন লেডি তাকে ধরেছিল। আতসী বাবলির মত অর্থহীন প্রশ্ন করল না। সে জেনে গেছে তার এ জীবনে lady in red হওয়া হবে না। সে আরেকজন lady in black

[সমাপ্ত]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১১ ভোর ৫:২৪
১৫টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×