একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রশ্নে সব ধরনের বিতর্ক-বিভ্রান্তি নিরসনের পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান এটর্নি মঈন চৌধুরী বলেছেন, দেশ-বিদেশে সবাই বিচারের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা বাংলাদেশ, যেখানে যাদের সঙ্গে কথা বলছি- সবাই বিচার চাইছেন। আমি নিজেও বিচার চাই। তবে বিচারের আইনি প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে এখনও বিতর্ক-বিভ্রান্তি রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নাকি মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার চলছে তা নিয়ে নানা মত। একেক জন একেক কথা বলছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কিংবা সংশ্লিষ্ট নন এমন ব্যক্তিও কথা বলছেন। এতে বিভ্রান্তি বাড়ছে। তার মতে, এখনই সব বিতর্কের অবসান জরুরি। তা না হলে ঢাকায় বিচার শেষ হওয়ার পর সংক্ষুব্ধরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) চ্যালেঞ্জ করতে পারে। ভারত পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে ১৯৯৯ সালে (স্বাক্ষর করে) আইসিসিভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ওই আদালত কোন মূল্যায়ন বা পরামর্শ দিলে বাংলাদেশ তা মানতে বাধ্য।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রইব্যুনাল ও চলমান মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়েও তার পড়াশোনা রয়েছে। পোশাদারিত্বের পাশাপাশি তিনি কাজ করছেন বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে।
ডেমোক্রেট দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মঈন চৌধুরী এক সপ্তাহের জন্য ঢাকা সফরে আসেন গত ১৬ই মার্চ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্তরণ জরুরি। সামপ্রতিক সময়ে যে অস্থিরতা চলছে তা নিরসনে সরকার ও বিরোধী দল উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যারা বাইরে থাকি তারা এখানে কোন লাশ দেখতে চাই না। জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা হলে দেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখানে অনেক বিদেশী রয়েছে। শুধু আমেরিকানই রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। বিদেশীরা হরতাল-ভাঙচুর পছন্দ করেন না। তারা আতঙ্কিত হন। তাদের উদ্বেগ বাড়লে বিনিয়োগ কমে। দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়ে। মঈন চৌধুরী বলেন, প্রবাসীরাও বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। নিউ ইয়র্কে বিমানের টিকিট কেটে দলে দলে তা বাতিল করছেন প্রবাসীরা। ফ্লাইটও বাতিল হচ্ছে। ঢাকায় আসার পর অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সবার মধ্যে এক আতঙ্ক- কাল কি হবে? বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা রাজনীতির “দুটি বড় অধ্যায়” উল্লেখ করে তিনি বলেন, দু’টি বিষয়ের সুরাহা না হলে অস্থিরতা কমবে না। বিষয় দু’টির সমাধান প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, বিচারকে বিচারের ধারায় চলতে দিতে হবে। এটি হয়তো এখানেই শেষ হবে না। যাদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে তারা যদি মনে করে যথাযথ মান বজায় রেখে বিচার হয়নি তাহলে তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাবে। তাদের সেই সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে এ সংক্রান্ত আইনে সই করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে স্পষ্ট বলা আছে- কোন দেশে যদি মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার হয় তাহলে সরকার ইচ্ছা করলে কাউকে বাদ দিতে পারবে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের সবাইকে নিয়েই বিচারটি করতে হবে। কোন ভিকটিম যদি প্রমাণ করতে পারে সরকার আত্মীয় কিংবা স্বজন বলে কাউকে বাদ দিয়ে বিচার করেছে, তাহলে পুরো প্রক্রিয়াই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে! সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতে তা চ্যালেঞ্জ হলে এবং আদালত কোন ধরনের পর্যবেক্ষণ দিলে বাংলাদেশকে তা মানতে হবে। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিষয়টি সংজ্ঞাগতভাবে আলাদা উল্লেখ করে মার্কিন এটর্নি বলেন, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে ইউনিফর্ম যুক্ত। এ বিচারে আগে পোশাকধারীদের, পরে তাদের সহযোগীদের বিচার করতে হয়। আমাদের এখানে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে সব গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ শব্দটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন জড়িয়ে আছে। একাত্তরে আমাদের ডিপ্লোমেটিক এফোর্ট ঠিক থাকলে এখানে পাকিস্তানি সেনা যারা যুদ্ধাপরাধ অর্থাৎ খুন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, জোর পূর্বক গর্ভধারণসহ ঘৃণ্য অপরাধ করেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হতো।
মঈন চৌধুরী বলেন, সরকারের আইনি সহযোগিতায় জন্য যারা নিযুক্ত তাদের বিষয়গুলো আরও ভাল করে বোঝা উচিত। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বয়স অপরাধ সংঘটনকালে ১৮ কিংবা তার বেশি হলেই আন্তর্জাতিক আইনটি প্রযোজ্য হবে। মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের ১৯৭৩ সালে প্রণীত মূল আইনে বাদী-বিবাদী উভয়ের আপিলের সমান সুযোগ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার কেন এটি পরিবর্তন করেছে, আবার শাহবাগ আন্দোলনের পর তা ফিরিয়ে এনেছে তা স্পষ্ট নয়। সরকারের পক্ষে এ বিষয়ে কোন মুখপাত্র না থাকা এবং সুস্পষ্ট বক্তব্য না পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোন ওয়েবসাইট না থাকা এবং এ সংক্রান্ত আপডেট তথ্য পাওয়ায় কোন সুযোগ না রাখায় হতাশ এ প্রবাসী আইনজীবী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্কের অবসান জরুরি- মঈন চৌধুরী

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



