somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাবির গুঁইসাপ বিপন্নপ্রায়

১৮ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জাবি: অপরিকল্পিতভাবে ঝোপঝাড় পরিষ্কার ও বৃক্ষ নিধনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুঁইসাপ বিপন্ন হওয়ার পথে।

ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় বিপন্ন হতে বসেছে প্রাণী বৈচিত্র্য। ক্যাম্পাসের গুঁইসাপ রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। জাবি ক্যাম্পাসের অধিকাংশ জায়গা জুড়ে লেক ও ঝোপঝাড়। এসব ঝোপঝাড়ে বাস করে গুঁইসাপ, সাপ, বেজিসহ নানা প্রাণী।

ঝোপঝাড় থাকায় এতদিন বেশ অবাধ বিচরণ ছিল গুঁইসাপের। বছর তিনেক আগেও ক্যাম্পাসের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় প্রায়ই গুঁইসাপ দেখা যেত। বর্তমানে এর সংখ্যা কমতে কমতে এমন পর্যায়ে এসেছে যে, যেসব স্থানে সব সময় গুঁইসাপ দেখা যেত, সেখানেও আর গুঁইসাপ দেখা যায় না। অবশ্য এর জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যক্রমকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চুরি ছিনতাই ঠেকানো ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির অজুহাতে মহাসড়কের পাশে প্রায় বারো একর জমির জঙ্গল পরিষ্কার করে হলুদ চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়। এছাড়া সেসময় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানের গাছ কেটে বিক্রিও করা হয়। এ নিয়ে মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালালেও রক্ষা করা যায়নি বহু বছরের পুরোনো গাছগুলোকে।

পরবর্তীতে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্যাম্পাসের লেকগুলো পুনর্খনন কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের পেছনের লেক, রসায়ন ভবনের পাশের লেক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনের লেকের মাটি খনন করে আশপাশের জঙ্গলে ফেলা হয়। ফলে সেসব স্থানের গুঁইসাপের আবাসস্থলগুলো নষ্ট হয়।

শুষ্ক মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঝোপঝাড় পরিষ্কারের নামে আগুন দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিষ্কার করার ফলে গুঁইসাপসহ অন্য বন্যপ্রাণী আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে। একই সঙ্গে নষ্ট করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

এছাড়া আগে ক্যাম্পাসের ভেতরে কয়েকটি স্থানে ময়লা ফেলার কারণে গুঁইসাপগুলো ময়লা খাওয়ার জন্য সেসব স্থানের আশপাশে থাকত। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ময়লা কেন্দ্রীয়ভাবে দূরে ডাম্পিং করার ফলে গুঁইসাপসহ অন্যান্য বণ্যপ্রাণী খাবার পাচ্ছে না। ফলে তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদের পাশের ড্রেনে, ক্যাফেটেরিয়ার পাশে, অডিটোরিয়াম ও ক্যাফেটেরিয়ার মধ্যবর্তী সড়ক, মুক্তমঞ্চ, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলসহ কয়েকটি স্থানে সব সময় গুঁইসাপ দেখা গেলেও আবাসভূমি ধ্বংস, খাদ্য সংকটের কারণে সেসব স্থানে আর গুঁইসাপ দেখা যায় না।

সোনা গুঁই, কালো গুঁই ও রামগাদি বা বড় গুঁই এই তিন প্রজাতির গুঁই বাংলাদেশে পাওয়া যায়। যার প্রতিটি প্রজাতি প্রায় বিপন্ন। এক সময় কালো গুঁইসাপ দেশের সর্বত্র দেখা যেত। সোনা গুঁই পাহাড়ি এলাকায় আর রামগাদি গুঁই মিঠাপানি ও লোনাপানির সঙ্গম এলাকা, নদীর মোহনা, সুন্দরবন, প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন থেকে শুরু করে সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যেত। কিন্তু সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন গুঁইসাপের সবকটি প্রজাতি আজ প্রায় বিপন্ন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গুঁইসাপটি বিচরণ করে তার ইংরেজি নাম Grdy lizard বা Bengal Monitor. বৈজ্ঞানিক নাম Varanus bergalensis. এ প্রজাতির গুঁইসাপ অত্যন্ত সাহসী। জল ও স্থল উভয়স্থানে চলতেই সমান পারদর্শী। গাছে চড়তে পারদর্শী এ প্রজাতির গুঁইসাপ পানির তলায় ডুব দিয়ে দীর্ঘ সময় থাকতে পারে। এর প্রিয় আশ্রয়স্থলগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘন ঝোপ-জঙ্গল, জঙ্গলের ভেতর মাটির গর্ত ও ইটের ফাঁক-ফোকড়।

বিভিন্ন পঁচা আবর্জনা, মৃত প্রাণী, মাছ, ব্যাঙ, ইঁদুর, পাখি, হাঁস, কাঁকড়া, সাপের ডিম ইত্যাদি তাদের প্রিয় খাবার। এছাড়া লম্বা জিভ দিয়ে বিভিন্ন পোকামাকড়ও খায়। একসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০টি ডিম পাড়ে এবং আট থেকে দশ মাস পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এ প্রজাতির গুঁইসাপ যে এলাকায় থাকে সেখানে কোনো ধরনের বিষাক্ত সাপ থাকতে পারে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উপকারী এই প্রাণীটির। বছর তিনেক আগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবাধে বিচরণ করত এ প্রাণী। ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও কোনো সময় তাদের মারপিট বা বিরক্ত করে না। ফলে হলের ভেতর, চায়ের দোকানের পাশে ও সড়কের ধার দিয়ে নিয়মিত চলাচল করত প্রাণীটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক গাছপালা ও তৎসংলগ্ন ঝোপঝাড় এসব বন্যপ্রাণীর জন্য অভয়াশ্রম। ক্যাম্পাসের উন্নয়ন করাটা যেমন জরুরি, তেমনি পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করাও জরুরি। উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত ভাবে ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার না করে জরুরি পরিকল্পিতভাবে এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে ক্যাম্পাসের উন্নয়ন। এক্ষেত্রে পরিবেশবিদদের দিয়ে কমিটি গঠন করে এ কমিটির প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ঝোপ-জঙ্গল ও গাছ কাটলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান নয়ন বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জীববৈচিত্র্যের অনন্য সংযোজন হল গুঁইসাপ। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য যা অন্য ক্যাম্পাসে দেখা যায় না। ক্যাম্পাসে একসময় প্রচুর গুঁইসাপ চোখে পড়তো। এরা মাছ, ব্যাঙ, পোকা-মাকড় ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে, যার ফলে এটি মানুষের জন্য বিপদজনক নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রাণীটি ক্যাম্পাসে বিলুপ্তির পথে। ক্যাম্পাসে নির্বিচারে ঝোপঝাড় এবং জঙ্গল সাফ করায় এরা যেমন এদের আবাসস্থল হারাচ্ছে একইভাবে এদের অন্যতম প্রধান খাদ্য ব্যাঙ, পোকামাকড়ও হারিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন গুঁইসাপ সংরক্ষণে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বরং একে বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গুঁইসাপ রক্ষাসহ ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্য অটুট রাখতে এখনই প্রশাসনের সজাগ হওয়া উচিৎ।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, “বাংলাদেশে গুঁইসাপের ৩টি প্রজাতি আছে। তার মধ্যে কমন যে প্রজাতিটি ‘বেঙ্গল মনিটর’ সেটা আমাদের ক্যাম্পাসে আছে। এই গুঁইসাপ ক্যাম্পাসের সাপের ডিম খেয়ে সাপের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ময়লা আবর্জনা খেয়ে ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার রাখে।”

ক্যাম্পাসের ঝোপ-জঙ্গল কেটে ফেলার কারণে গুঁই সাপসহ অন্যান্য বণ্যপ্রাণী পর্যাপ্ত লুকানোর জায়গা পাচ্ছে না। ফলে তারা যেখানে লুকানোর জায়গা পাচ্ছে সেখানে চলে যাচ্ছে। এছাড়া আগে ক্যাম্পাসের সব ময়লা-আবর্জনা কেন্দ্রীয়ভাবে দূরে ডাম্পিং করার জন্য গুঁইসাপসহ অন্যান্য বণ্যপ্রাণীও খাবার পাচ্ছে না। বর্তমানে ক্যাম্পাসে বণ্যপ্রাণীর পর্যাপ্ত খাবার সংকট ও লুকানোর জায়গা অভাবে দিন দিন এদের সংখ্যা কমে আসছে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১
Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×