somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই মেলা নিয়ে মেলা কথা !

০১ লা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাবুনতো কেমন হয় ?!!
আপনি বই মেলায় ঢুকলেন আর ঠিক মাঝখানে দেখলেন একটা গরু বাঁধা ! হ্যা, ঠিক এই কাজটিই করে দেখিয়েছিলেন মুহম্মদ জয়েনউদ্দীন বিশ্বাস (১৯১৮-১৯৮৬) !


বলছিলাম জনপ্রিয় কথাশিল্পী সরদার জয়েনউদ্দীনের কথা ! নারায়ণগঞ্জে ১৯৭০ সালে, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহযোগিতায় একটি গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তত্কালীন প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল হাই, শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও সরদার ফজলুল করিম। সেখানেই তিনি এই মজার কাণ্ড করেছিলেন। বিভিন্ন বইয়ের পসরা তো ছিলোই, প্রচুর উত্সুক দর্শকও এসেছিল, বইয়ের বেচাকেনাও মন্দ ছিল না; কিন্তু তাদের জন্য ছিল একটি রঙ্গতামাশাময় ইঙ্গিতধর্মী বিষয়ও। মেলার ভেতরে একটি গরু বেঁধে রেখে তার গায়ে লিখে রাখা হয়েছিল ‘আমি বই পড়ি না’।
সরদার জয়েনউদ্দীনের জন্ম পাবনা জেলার কামারহাটি গ্রামে । খলিলপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৩৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে আইএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৪১ সালে কর্মজীবন শুরু করেন সেনাবাহিনীর হাবিলদার ক্লার্ক হিসেবে কিন্তু ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর আর ফেরত যাননি সৈনিক জীবনে । ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগে যোগদানের মধ্য দিয়ে তিনি ঢাকায় কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদে বিজ্ঞাপন বিভাগে ম্যানেজার পদে নিযুক্ত হন। এরপর একে একে দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলা একাডেমির প্রকাশনা ও বিক্রয় শাখাসহ নানা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ পদে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ নয়ান ঢুলি প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে এবং এর মাধ্যমেই তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর অন্যান্য গল্পগ্রন্থ হচ্ছে বীর কণ্ঠীর বিয়ে (১৯৫৫), খরস্রোত (১৯৫৫), বেলা ব্যানার্জীর প্রেম (১৯৬৮) ও অষ্টপ্রহর (১৯৭৩)। উপন্যাসের মধ্যে নীল রং রক্ত (১৯৫৬), পান্নামতি (১৯৬৪), আদিগন্ত (১৯৬৫), অনেক সূর্যের আশা (১৯৬৬), বেগম শেফালী মির্জা (১৯৬৮) ও বিধ্বস্ত রোদের ঢেউ (১৯৭৫) প্রধান। তিনি উল্টো রাজার দেশ ও অবাক অভিযান নামে দুটি শিশুতোষ গ্রন্থও রচনা করেন।
তার রচনায় গণমানুষের কল্যাণ ও মুক্তিচিন্তার পাশাপাশি সমকালীন সমাজ ও রাজনীতিবিষয়ক ঘটনাবলিও প্রাধান্য পেয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৭) এবং কথাসাহিত্যে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৭) লাভ করেন। ১৯৮৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।



অধিবর্ষ হওয়ার কারণে এইবার ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনের তার মানে আমরা আরও একদিন বেশি পাচ্ছি প্রাণের অমর একুশে বই মেলার ! যেইটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য খুশির বিষয় ! :)
কিন্তু বই মেলা কবে থেকে, কিভাবে শুরু সেইটা আমরা কতজন জানি ?
বই হচ্ছে জ্ঞানের ধারক এবং বাহক । পূর্বে বই মেলা বলতে বই বেচাকেনার আয়োজনকেই বুঝাতো । বর্তমানে বই মেলা কিন্তু আর বই বেচাকেনায় সীমাবদ্ধ নেই ! পরিণত হয়েছে সার্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবে । শুরুর দিকে কিন্তু এই রকম ছিলো না । গাছের পাতা, বাঁকল, পশু-প্রাণীর চামড়া বা হাড়, কাপড় ইত্যাদিতেই লেখার কাজ সম্পন্ন করা হত । ফলে বই সবার জন্য সহজ লভ্য ছিলো না । মুদ্রণ যন্ত্র বা ছাপাখানা আবিষ্কারের ফলে গতি পায় বইয়ের ইতিহাস । ছাপা বই বা মুদ্রিত বই এর সময়কাল থেকেই বই মেলার শুরু ।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের বই মেলাকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন এবং বড় বই মেলা হিসেবে গণ্য করা হয় । তবে ইউরোপের অন্যান্য অংশের যেমন লন্ডন, গ্রিস, প্যারিস প্রভৃতির বই মেলাও দীর্ঘকাল আগের । বই মেলার আয়োজন এবং বইয়ের প্রচার ও প্রসারে খুব একটা পিছিয়ে ছিলো না ভারত, চীন, মিসরসহ এশিয়ার দেশ গুলোও । ভারতবর্ষে বইয়ের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় মূলত ইংরেজ মিশনারিদের প্রচেষ্টায় । তখনকার সময়ে বই পড়াকে অভিজাত শ্রেণীর কাজ বলে গণ্য করা হত । সে যাই হোক তাদের প্রচেষ্টা কিন্তু ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো । বর্তমানে সারা পৃথিবীতে অসংখ্য বই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে । তারমধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ।
কলকাতা, দিল্লি, ফ্রাঙ্কফুর্ট, লন্ডন, টোকিও, ম্যানিলা, প্যারিস, সিডনি প্রভৃতি স্থানের বই মেলার তুলনায় বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা একটু আলাদা । মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদ দের স্মরণে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে আয়োজিত পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘকাল স্থায়ী এই মেলা বাঙালীর প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে ।
১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমীর উদ্বোধন করা হয় । বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার চিন্তা প্রথম এসেছিলো ডক্টর মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর কাছ থেকে, ১৯৪৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে । বিষয়টি নিয়ে দৈনিক আজাদ পত্রিকা ১৯৫২ সালের ২৯শে এপ্রিল সম্পাদকীয় প্রকাশ করে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে ১৯৫৪ সালে প্রস্তাব পাশ করে ।



এখন তো বই মেলার অধিকাংশ জুড়ে কেবল বড়দের বই শোভা পায় ! কিন্তু আমাদের দেশের প্রথম বই মেলার শুরুটা হয়েছিলো শিশু গ্রন্থমেলার মাধ্যমে ঐ সরদার জয়েনউদ্দীনের হাত ধরেই। ইউনেস্কোর একটা প্রকল্পের অংশ হিসেবে শিশুদের গ্রন্থমালা নিয়ে কাজ করেছিলেন তিনি । ১৯৬৫ সালে তিনিই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ( তৎকালীন পাবলিক লাইব্রেরী ) নিচতলায় শিশু গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন । ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে ছোট পরিসরে বাংলা একাডেমীতে প্রথম বই মেলার আয়োজন ও করেন তিনিই । ভারতের বিখ্যাত লেখক মুলক্রাজ আনন্দ, অন্নদাশঙ্কর রায় প্রমুখ এসেছিলেন ওই মেলায় । তবে ১৯৭২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা সহ আরও কয়েক জন চটের উপরে বই নিয়ে বিক্রির জন্য বসেন । মূলত সেই থেকেই ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বইমেলার আয়োজনের চিন্তার সূত্রপাত । যা আনুষ্ঠানিক পরিণতি লাভ করে ১৯৮৪ সাল থেকে । প্রথমবার মাত্র ৩০ টি প্রকাশনা অংশ নেয় বই মেলায় । আর এখন তো প্রায় চার শতাধিক প্রকাশনা অংশ নিচ্ছে । পরিসরও অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে, বাংলা একাডেমী সহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও যুক্ত হয়েছে । বই বেচাকেনার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের দের আড্ডা এবং নানা আয়োজনে মুখরিত থাকে বই মেলা প্রাঙ্গণ ।



কৃতজ্ঞতা : কালের কণ্ঠ, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, এবং নতুন সময় ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×