somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পড়ার অনীহা !!! :O

০১ লা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বই হচ্ছে জ্ঞানের বাহন যা আপনাকে চালিত করে জ্ঞানের পথে । আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয় শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে । বই হচ্ছে একটি সভ্যতার দর্পণ । বইয়ের মাধমে আমরা পরিচিত হই নতুন নতুন চিন্তা জগতের সাথে ।অনীহা হচ্ছে কোন কিছু করতে আগ্রহের অভাব ।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলে ও সত্য যে, আমাদের এই প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার প্রতি প্রবল একটা অনীহা তৈরি হচ্ছে । বই পড়ার অভ্যাসটা দিন দিন কমেই যাচ্ছে । যার প্রভাব পরতেছে আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের উপর ।এখন প্রশ্ন হচ্ছে বই পড়ার প্রতি অনীহা কেন জন্মায় ? এর পেছনে অনেকগুলো প্রভাবক কাজ করে ।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারন গুলো হচ্ছে ঃ প্রথমত - ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আমাদের শিক্ষার্থীদের মনে একটা ভীতি ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে । বই পড়া অত্যন্ত আনন্দের এই ধারণাই তাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে না । স্কুলের গৎবাঁধা সিলেবাস , সংক্ষিপ্ত থেকে সংক্ষিপ্ততর সাজেশন্স, কেবলমাত্র ভালো গ্রেড পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের বইয়ের প্রতি অনীহা তৈরি করে দিচ্ছে । তারা পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পড়ার কথা চিন্তা ও করতে পারতেছে না । দ্বিতীয়ত - অনেক সময় আর্থ - সামাজিক অবস্থার কারনে ও বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে না । তৃতীয়ত - বই পড়া মূলত একটা অভ্যাসের ব্যাপার । ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাসটা গড়ে তুলতে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলে ও সত্য যে, আমাদের সমাজের অধিকাংশ বাবা-মা নিজেরাই বই পড়েন না , সেক্ষেত্রে তাদের সন্তানের উপর ও এই প্রভাবটা পরে । যদি বাবা-মায়ের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাসটা থাকে তাহলে পরবর্তীতে তাদের সন্তানের মধ্যেও এই অভ্যাসটা গড়ে উঠে । চতুর্থত - এখন আমাদের জীবন অনেকটাই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে । সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে অধিক সময় ব্যয় করার ফলে প্রজন্ম বই পড়ার দিকে ধাবিত হতে পারতেছে না । পঞ্চমত - ইন্টারনেটের কল্যাণে অফুরন্ত তথ্য ভাণ্ডার আমাদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে পরেছে । কম সময়ে অল্প পরিশ্রমে প্রয়োজনীয় তথ্য আমরা পেয়ে যাচ্ছি । ফলে আর কেউ বই ঘেঁটে বিস্তারিত তথ্য জানতে আগ্রহি হচ্ছে না ।


আপনি কেন বই পড়বেন ?? বিশ্বাস করুন বই পড়ার অভ্যাসটা কোন বদঅভ্যাস না। বই মানুষের মস্তিষ্ককে বদলে দেয়। বইয়ের ঘটনাগুলো পাঠকের চেতনায়ও ঘটতে থাকে। বই মানুষের কল্পনা শক্তিকে জাগ্রত করে। মনের ভেতর একটি জগত তৈরি করে দেয়। এক গবেষণায় প্রমাণিত যে এটা অটোম্যাটিকালিই ঘটে। মানুষের মন কোন কিছুর ভিজুয়াল বর্ণনা থেকে অতি দ্রুত সেই বস্তুর ছবি তৈরি করে নেয়। কেউ যখন কোন বাক্য পড়ে তখন তার ভিজুয়াল automatically তৈরি হয়ে যায়। আরেকটা মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের ব্রেইন কিন্তু অভিজ্ঞতা পড়া এবং ঘটার মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। পড়া আর অভিজ্ঞতা হওয়া ব্রেইনের একই অংশকে উদ্দীপিত করে। ঠিক এই কারনেই গল্প বা উপন্যাস মানুষের অনুভূতিতে বেশি প্রবেশ করতে পারে। এই কাজটি স্যার হুমায়ুন আহমেদ করে দেখিয়েছেন। যেমন খুব বেশি সাহিত্য পড়লে ব্রেইন বহু ধরণের জটিলতার সমাধান সহজে করতে পারে।শুধু আনন্দের জন্য পড়লে ব্রেইনের বিভিন্ন অংশের রক্তপ্রবাহ বাড়ে। কোন উপন্যাস ভালভাবে পড়া এবং এর সাহিত্য মূল্য চিন্তা করা ব্রেইনের জন্য একটি ভাল অনুশীলন। যারা অধিক পরিমাণে বিদেশী ভাষা পড়ে তাদের ব্রেইনের বৃদ্ধি সেরিব্রাল কর্টেক্স এবং হিপোক্যাম্পাস এই দুই অংশে বেশী ঘটে। এই বৃদ্ধি নির্ভর করে যত বেশী চেষ্টা এবং অনুশীলন করা হয় তার উপর। গল্পের গঠন ব্রেইনকে সিকোয়েন্স অনুযায়ী ভাবতে সাহায্য করে এবং মনোযোগ বাড়ায়। প্রতিটা গল্পের শুরু মধ্য অংশ এবং শেষ আছে। এই structure এর কারণে ব্রেইন সিকোয়েন্স অনুযায়ী ভাবতে বাধ্য হয়। এবং কারয- কারণের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। একটা important ব্যাপার হচ্ছে মস্তিষ্কের অ্যাটেনশান স্পানগুলো বাড়ে ফলে মনোযোগের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। পড়ার অভ্যাস আমাদের ব্রেইনের সাদা অংশের আয়তন বাড়িয়ে দেয় ফলে ব্রেইনের উন্নতি ঘটে। গভীরে পাঠ সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেয় যারা মগ্ন হয়ে পড়াশোনা করে তারা বাস্তব জীবনে অধিক সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

এবার আসুন একটু দেখে নেই বই পড়া নিয়ে মনিষীরা কি বলেছেন ??? দেকার্ত বলেন -“ বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষগুলোর সাথে কথা বলা।”
স্পিনোজা বলেন -“ ভালো খাদ্য বস্তু মানুষের পেটকে পরিতৃপ্ত করে কিন্তু ভালো বই আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।”
নরমান মেলর বলেন – “ আমি চাই যে বই পাঠ্যরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়।”
ফ্রাসোয়া সাগ বলেন – “ আমি প্রতিদিন নতুন একটা বই পড়ি আর আমার নতুন একটা চোখের জন্ম হয়। ”
প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন – “ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।”
যথার্থ শিক্ষিত হতে হলে মনের প্রসারতা দরকার যা কেবলমাত্র বই পাঠের অভ্যাসের মাধ্যমেই সম্ভব। একজন সুশিক্ষিত মানুষ সকল নীচুতা, স্পর্শকাতরতা এবং হিংসা বিদ্বেষের উধে । সে নিজের জীবনের মধু নিজে আস্বাদন করতে পারে।বই ই মানুষের সার্বক্ষণিক এবং শ্রেষ্ঠবন্ধু।
ওমর খৈয়াম বলেছেন – “ রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে, কিন্তু একখানা বই অনন্ত যৌবনা যদি তেমন বই হয়।”
প্রত্যেক ধর্মেই জ্ঞান অর্জনের প্রতি বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে। সৈয়দ মুজতবা আলী একটা কথা বলেছিলেন যে, “বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।” আমি জানি না বর্তমান ইন্টারনেট বা pdf বইয়ের যুগে থাকলে তিনি কি বলতেন?

টেক্সটবুক সম্পর্কে একটা খুব প্রচলিত জোকস আছে, - “ Textbook is written by brilliant, read by fools & obeyed by stupids!!” আচ্ছা তার মানে আপনি কি পাঠ্যবই পড়বেন না? আপনাকে অবশ্যই পাঠ্যবই ও পড়তে হবে। কারণ বর্তমান সময়ে ভাল একটা জব, ভাল একটা বউ কিংবা জামাই পেতে হলেও আপনাকে কিন্তু ভাল একটা রেজাল্ট করতে হবে ! :P

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:৩৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×