somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“শাহী কাজী মাটন”, “মুক্তিযোদ্ধা খিচুড়ী” এবং কুহু ম্যাডামের রান্না ঘর

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলি সাংঘাতিক রকমের সৃজনশীল। তারা যখন যেটাকে নিয়ে পড়ে একেবারে খবর করে ছেড়ে দেয়। এই দেশে অনেকদিন পর্যন্ত টিভি চ্যানেল ছিল একটি। সবেধন বিটিভি। আমাদের তাবত সৃজনশীলতা ও শিল্পচর্চা ছিল তাকে ঘিরেই। এরপর এলো প্রাইভেট চ্যানেল। বঙ্গদেশের বিপুল সৃজনশীলতা অবরুদ্ধ আবেগের মত, হঠাত জোয়ারের মত ফুলে ফেপে উঠলো। আমরা বোকা বাক্সে নানান রকম অনুষ্ঠান উৎপাদিত হতে দেখলাম। দেখতেই থাকলাম।

এর মধ্যে রান্নার অনুষ্ঠান বলে এক ধরনের অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হতে শুরু করলো। একটি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ছিল সত্যিই মান সম্পন্ন। সেটা জনপ্রিয় হলো। চ্যানেলের ভাষায় ‘পাবলিক খাইসে’। এরপর এক চ্যানেলের দেখাদেখি আরেক চ্যানেল, তারপর সব চ্যানেল। প্রত্যেকেরই রান্না করা চাই। আমি সুযোগ পেলেই অনুষ্ঠানগুলো দেখি। অদ্ভুত সব রান্না হয়। সৃজনশীলতার চূড়ান্ত। যার সাথে যার মিলবার নয় তাকেও মিলিয়ে দেওয়া হয়।

এক ভদ্র মহিলা, যিনি মূলত ওবেসিটিতে আক্রান্ত, তিনিও তাদের পারিবারিক টিভি চ্যানেলে রান্নার অনুষ্ঠান খুলে বসলেন। তিনি টিভিতে খাবারে সংযমী হওয়ার পরামর্শমূলক কোন অনুষ্ঠানের এংকর হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে টিভিতে নানান রকম মজাদার রান্নার রেসিপি নিয়ে আসতে লাগলেন। আমরা নতুন নতুন পদের রান্না দেখতে পেলাম, তারও ওবেসিটি বাড়তেই থাকলো।

ধরে নিলাম তার নাম কুহু। কুহু ফেরদৌসী।

কুহু ম্যাডামের সৃজনশীলতা মারাত্মক। তিনি মাঝে মাঝেই দেশ-বিদেশে গিয়ে রান্না করেন। রোজার সময় সৌদি আরব গিয়ে রান্না করেন। তিনি যে সত্যি সত্যি সৌদি আরবে গিয়েছেন সেটা বোঝানোর জন্য খেজুর গাছের নিচে উন্মুক্ত মরুভূমিতে বোরকা আবৃত হয়ে আলোক চুলায় রান্না করতে থাকেন। সাথে আরেক সহকারী বোরকা। তিনি সম্ভবত স্থানীয় প্রতিনিধি। (পাশে একটা উট বাধা থাকলে ষোল কলা পূর্ণ হতো। সম্ভবত উট ম্যানেজ হয়নি।) সৌদি আরবের সবাই খোলা মরুভূমিতে রান্না করেন কিনা কে জানে।

কুহু ম্যাডামের বিশেষ দিবসের রান্না গুলিও হয় সেই রকম। দিবসের সাথে মিলিয়ে। একবার তিনি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে রেসিপি নিয়ে আসলেন “শাহী কা্জী মাটন”। কাজী নজরুল ইসলাম নাকি এটা খেতে পছন্দ করতেন। স্বাক্ষী মেনে হাজির হয়েছেন স্বয়ং কবির নাতনী খিলখিল কাজী। তারপর অতিথি খেয়ে তার প্রশংসাও করলেন। এই খিলখিল ম্যাডামের যখন জন্ম হয় হিসাব মতে কবির তখন বাহ্যজ্ঞাণ থাকবার কথা নয়। কারণ বিদ্রোহী কবি পিকস ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছিলেন তার জন্মের বহু আগেই। তিনি কবির এই রেসিপি পেলেন কোথায় কে জানে।

বছর দুয়েক আগে কুহু ম্যাডাম ২৬ মার্চে স্বাধীনতা দিবসে তাদের পারিবারিক চ্যানেলের পর্দায় এক নতুন রেসিপি নিয়ে আসলেন। রেসিপির নাম “মুক্তিযোদ্ধা খিচুড়ী”। এরকম রেসিপিও যে হতে পারে সেটা না দেখলে আমার বিশ্বাসই হতোনা। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের যোদ্ধারা নাকি এইরকম সব্জী দেওয়া পাতলা খিচুড়ী খেতেন। তাই এর নাম “মুক্তিযোদ্ধা খিচুড়ী”। কুহু ম্যাডাম ধরেই নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা ওটা শখ করে খেতেন।

কুহু ম্যাডাম ফ্যাশান হাউজের মালিক হলে নিশ্চয়ই মুক্তিযোদ্ধা লুংগী,মুক্তিযোদ্ধা ফতুয়া প্রভৃতি বাজারে নামাতেন। সেসব পরে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লুংগী ড্যান্স দিতাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা অন্য কোথাও। টিভি চ্যানেল কি লাইভ দেখাত?

পুনশ্চঃ আমি ভয়েই এবছর স্বাধীনতা দিবসে কুহু ম্যাডামের টিভি চ্যানেলে ঢুঁ দেইনি। একবার ভেবেছিলাম দেখি কি করে। পরক্ষণে ভাবলাম থাক, আবার কি না কি দেখি। যদি লোড নিতে না পারি?
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×