২০০১ সাল। হাইস্কুলে পড়ি, শেষের দিকে। আমাদের জেলায় একটা শিশু-কিশোর সংগঠন ছিলো। নাম, ফুলকুড়ি আসর। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ভালো লাগতো। নাম দিয়ে দিলাম, ফুলকুড়ি আসরে। কিছুদিন না যেতেই একটা আসরের পরিচালকও হলাম। মেয়েদের নিয়ে প্রোগ্রাম করাতে বাঁধা ছিলো। ভাবতাম, মেয়েদের নিয়ে সাংস্কৃতিক দল বয়ে নেওয়াটা আসলেই কষ্টের, তাই বুঝি এমন সিদ্ধান্ত। একদিন জেলা অফিসে বসে, একটা মিটিং হচ্ছিলো। সেখানে শিবিরের কিছু লোক দেখে বিরক্ত হলাম। এরা স্কুলে আমাদের দলে নেবার জন্য বসে থাকতো। বিভিন্ন বই দিতো। আমরা নিয়ে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় ফেলে আসতাম। এইসব লোকে আমার এলার্জী চিরকালের। মেজাজ আরো খারাপ হলো, যখন দেখলাম এরা আমার অপেক্ষা করছে। আমাকে জানালো, তোমাকে কিছু গোপন কথা বলার জন্য ডাকা হয়েছে। ফুলকুড়ি হলো শিবিরের একটি অংগসংগঠন। তুমি এখন থেকে শিবিরের অফিসে নিয়মিত যাবে। প্রোগ্রামে যোগ দিবে। তুমি কর্মী হিসেবে আছো। তোমাকে সাথী হতে হবে কিছুদিনের মধ্যে। আমি অবাক হয়ে গেলাম, যেই দল্টাকে ঘৃনা করি। সেই দলের ডিফল্ট কর্মী হিসেবে আছি! মিটিং থেকে রেগে গিয়ে বের হয়ে গেলাম।
আমার এলাকায় ফুলকুড়ির ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিলো। ওইদিনের পর থেকে অনেক ঝামেলা করেছি। ফুলকুড়িকে স্থির করে দিয়েছি। ওরা অনেক রেগে গিয়েছিলো। আমি নাকি বখে গেছি। নষ্ট হয়ে গেছি।
এরপর ঢাকায় এসে কমার্স কলেজে ভর্তি হলাম। কোথায় কি? এলাকায় মাঝে মাঝে যাই। শিবিরের পুলাপান পাইলেই ঝাড়ি দেই। এভাবেই জীবন চলছিলো।
হঠাৎ ব্লগিং করার খায়েশ জাগলো (সুখে থাকতে ভুতে কিলায়)। ব্লগে আসলাম। উদ্দেশ্য সাহিত্য চর্চা করা। অনেকের লেখা পড়া। নিজে লেখা। এখানেও এসে দেখি নোংরা রাজনীতি। চরম গালাগাল দিয়ে পোষ্টের কমেন্ট বক্স ফুল!
শিবিরের প্রতি আজন্ম এলার্জী আছে। তাই এখানে এসে শিবিরের পোষ্ট দেখলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় (যদিও সামুতে, আসেন শিবির করি টাইপ পোষ্ট অনেক আছে)। যেখানে মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সোচ্চার, এখানে কিছু ছাগু তাদের বাপের জন্য আর্তনাদ করে।
ব্লগে ছাগুফাইটিং দারুন লাগতো। ছাগুরা পোষ্ট দিতে না দিতেই গদাম শুরু হয়ে যেতো। ছাগুদের আর্তনাদে ব্লগের পেইজ কেঁদে ফেলতো। আগের ছাগুফাইটারদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। আর এখন কিছু নব্য ছাগু ফাইটারের জন্ম হয়েছে। যারা বিভিন্ন পোষ্টে গিয়ে নিজেদের ফাইটার দাবী করে সার্টিফিকেট নিয়ে আসে। আর তলে তলে ছাগুদের সাথে বসে হাসিনা-খালেদার মতো এক টেবিলে খায়। আর বলে অমুক আমাকে নব্য ছাগু ফাইটার হিসেবে বাহবা দিয়েছে। আর পুরাতন কিছু ছাগুফাইটারের পার্ফর্মেন্স লো ক্লাস হয়ে গেছে। রাত বারোটার পর এদের চুলকানী শুরু হয়। এরা অন্যদের ট্যাগ দিয়ে বেড়ায়। যার সাথে একটু ক্যাচাল লাগে, তাকে ট্যাগ দিয়ে দেয়। অন্য ব্লগারদের মা-বোন নিয়ে কুরুচিপুর্ন গালি দেয়। এরা ছাগুফাইটিং এর নামে নিজের ব্যাক্তিগত ঝগড়ার প্রতিশোধ নিচ্ছে। এরা ব্লগের মুক্তিযোদ্ধাদেরও দুইদিনপর ছাগু বলে ফেলবে। এদেরও ছাগুদের মতো গদাম দিয়ে বের করে দেওয়া উচিৎ। নইলে অচিরেই ছাগুফাইটিং হাস্যরসে পূর্ন হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০০