স্বপ্ন দেখতে সবাই ভালোবাসে | আমিও এর ব্যতিক্রম নয় | কখনও চোখ বন্ধ করে দেখি, কখনও খুলে | চোখ বন্ধ রেখে যে স্বপ্ন দেখি তার বিষয় বস্তু আতি সাধারন | একটা ঘর, একটা দক্ষিণা জালানা, একটা খোলা বারান্দা, শুধু ‘তুমি’- নামক একটা স্বত্তাকে ঘিরে আবর্তিত | কখনও জনসমূদ্রে হেঁটে হেঁটে স্বপ্ন দেখার রসদ জোগাড় করি, সাঁই করে ছুটে চলা মার্সিডিস কিংবা বি এম ডব্লিউ দেখে আমারও স্বপ্ন জাগে, তোমাকে নিয়ে পৃথিবীটা চক্কর দেওয়ার | আঁড়চোখে তাকানো হীরের দামী সেটটার তোমার আকাঙ্খা, আমার নজর এড়ায়নি | তাইতো স্বপ্ন দেখি একটা হীরের খনির মালিক হওযার |
কখনও স্বপ্ন দেখতে দেখতেই স্বপ্নের ভিতর আর একটা স্বপ্নে ভ্রমন করি | স্বপ্নের মাঝেই অনুভব করতে পারি ‘ধুরু এ-তো এক স্বপ্ন! জেগে উঠলেই শেষ|’ ঠিকই জেগে উঠে হতাশায় ডুব দেই | রাতের আকাশে চাঁদটা দেখলে স্বপ্ন জাগে চাঁদে যাবার | শনেছি চাঁদে প্লটের অগ্রিম বুকিং নেয়া হচ্ছে | সেখানে তোমার নামে একটা প্লট কিনে স্বপ্ন চাষ করব | একজন চাষীর বউ হতে তোমার লজ্জা করবে না তো ? তোমার বাবার আবার তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন | একটা ভালো ছেলের সাথে তোমাকে বিয়ে দেবেন | উনার চোখে তো আমি অতি সাধারন, তাইতো তোমার বাবার স্বপ্ন পূরনে আমার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয় |
আমার শৈশব কেটেছে পূর্বপুরুষদের দানে পাওয়া জমিতে | দাদা,নানা, চাচাদের সাথে কৃষিকাজে | মাথায় গামলা, আর হাতে পানির বদনা নিয়ে জমিতে দুপুরে খাবার নিয়ে যেতে, দিঘী থেকে কলশি করে পানি নিয়ে মরিচক্ষেতে সেচ দিতে কিংবা ভোরে কুয়াশার চাঁদরে জড়িয়ে গমের ক্ষেত পাহাড়া দিতে আমার খুব কষ্ট হত | তাইতো স্বপ্ন দেখতাম একদিন অনেক বড় একটা কিছু হব | বড় হতে হতে কখন যে আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছি তা বুঝতেও পারিনি | স্বপ্ন বিক্রি করা শুরু করেছিলাম | আমার স্বপ্ন দিয়ে ভীনদেশি মানুষ সভ্যতা গড়ে, বিনিময়ে আমি পাই একমুঠো অর্থ আর একবুক হতাশা |
অর্থের বিনিময়ে হতাশা আর ভালো লাগে না, তাই স্বপ্ন বিক্রি করা ছেড়ে দিয়েছি, ফিরেছি আবার নিজের শিকড়ে | এখন শ্রম বিক্রি করি, আমার দেশে স্বপ্ন দেখতে যে মানা | তবু অভ্যাস বদলে না | স্বপ্ন দেখি একদিন আমার দেশেও এমন কেউ হবে যে আমার স্বপ্ন কেনার ক্ষমতা রাখবে | যে স্বপ্নের বাস্তবায়নের সুফল পাবো আমি আমার দেশের মানুষ | আশা রাখি সেদিন অর্থের বিনিময়ে নয় নুতন স্বপ্নের বিনিময়ে স্বপ্ন বিক্রি করব |

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




