somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইট

০৩ রা মে, ২০১১ রাত ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওসামা বিন লাদেন নিহত হয়েছেন। কিন্তু ওসামা বিন লাদেন এর মৃত্যু’র খবরে’র চেয়ে আমার জানালা’র পাশে মৃত আম গাছ কাটার শব্দটা কানে লাগছে বেশি। গাছটা’র অবশ্য আজকেই মারা যায় নাই। আসলে ঠিক কখন মারা গেল সেটাও ঠিক জানি না। গত গ্রীস্মে’র রোদেও এর গাছে আম ছিলো। ক’বছর ধরেই এই অসম্ভব জড়াজড়ি করে ওঠা আশেপাশে’র বাড়িগুলো মাঝে পরে তাকে কেমন বিহ্বল দেখাতো। এরকম পরিস্হিতি সে আগে কখনো পরে নাই। বাড়ি’র এক কোনাতে বড় হলেও হাত পা ছড়াবার মোটামুটি জায়গা ছিলো তার আশেপাশে। আকাশে তো কোন সীমানা নাই। তাই আজকাল যেমন বাড়ি গুলোতে বুদ্ধি করে দোতালা’র পর থেকে ঘরের বারান্দা গুলো রাস্তার উপর টেনে দেয়া হয়, সেইরকম সেও তার ডালপালা ছড়িয়ে ছিলো আমাদের বাসার সীমানা দেয়ালে’র উপর দিয়ে পাশে’র ঐদিকে আঙিনায়। আর এই দিকে একে বারে আমাদের একতলা বাড়ি’র ছাদের উপর পর্যন্ত । তখন অবশ্য বাড়ির দেয়ালেরপাশে ছিলো পুকুর। তাই তার এই অবৈধ বেড়ে ওঠা নিয়ে পুকুরে’র মাছরা, আলো বন্ঞিত ঘাসরা তেমন প্রশ্ন তোলে নি। বরং এলাকার ছোট ছোট ছিঁচ্‌কে চোরদের এক মৌন সমর্থনতো ছিলোই। তবু আম গাছ বলতে যে বিশাল আমগাছে’র ছবি চোখে ভেসে আসে সেইরকম সে কখনোই হয়ে উঠতে পারে নাই। পাশাপাশি তিনটা গাছ গায়ে গা লেগে বড় হওয়াতে দূর হতে বেশপাতা ছড়ানো হয়তো লাগতো, কিন্তু আসলে আমার মতই শুকনা শাকনা ছিলো গাছ গুলো।

তখন ছিলো গোয়েন্দা গিরি আর তদন্তে’র জন্য হেডকোয়ার্টার এর যুগ আমার। কিন্তু কিশোর পাশা’র মতো ইয়ার্ডের নিচে তো আমার কোন গোপন আস্তানা ছিলো না। ঘরে’র মধ্যে আউট বই পড়াও সব সময় নিরাপদ না। তাই ছাদ দিয়ে গিয়ে গাছে’র মধ্যে ঢুকে দুপুর কে বিকাল বানিয়ে ফেলতাম। গাছটার একেবারে মাঝখানটা বসা’র জন্য কিভাবে জানি একটা বাই ডিফল্ট আসনটাইপ ছিলো। [কিছুক্ষণ বসে থাকলে অবশ্য আপনা আপনি পশ্চাতদেশ ব্যথা হয়ে যেত]। তিন গোয়েন্দার কত রহস্যে’র সমাধান আমার এই আমগাছের ভিতর হয়েছে তা এখন আর মনে করতে পারি না। মাঝে মাঝে বর্শি’র মাথায় নিষ্ঠুর ভাবে ফরিং এর দেহ লাগিয়ে গাছে পা দুলিয়ে আরো নিষ্ঠুর ভাবে মাছও ধরতাম। সেই মাছগুলো আসলে খাওয়া যেত না। ‘রাগাটাকি’ নামের মাছ। সেগুলো ধরে ধরে একলিটার এর পানি’র বোতলে ভরে রাখতাম। বেচারারা তাদের মুখ থেকে বর্শি খোলার ধকল সহ্য করতে না পেরে একদিনে’র মাথায়ই মরে যেতো! খুব বেশি আগে’র তো কথা না। আট-নয় বছর? এখন মনে হয় এখানে এইরকম কি কিছু হয়ে ছিলো কখনো!

আস্তে আস্তে আমি বড় হতে শুরু করলাম আর গাছগুলো যেন আমার তুলনায় ছোট হয়ে যেতে লাগলো। যেমন হাউজিং জ্যামে আকাশ ছোট হতে লাগলো। পাশে’র পুকুর ভরাট করে বাড়ি হতে লাগলো। গাছটাকে কেটে ফেলা না হলেও বেয়াদব ভাবে ছড়িয়ে পড়া ডাল গুলো ছেটে দিয়ে বেড়ে উঠলো দেয়াল। প্রথমে এক তলা, তারপর দুই তলা। পাশ ঘেষে উঠলো আরেকটা বাড়ি যেটা আসলে সাত তলা হলেও আমাদের বাড়ি’র ছাদ থেকে ওটার ছাদ দেখতে হলে প্রায় উন আশি ডিগ্রী অ্যাঙেলে তাকাতে হয়। তাই আমরা ওইটার নাম দিলাম চব্বিশ তলা! দুই বাড়ির’র মাঝে পরে আমার দক্ষিনে’র জানালায় আকাশ হয়ে গেল একটা লম্বা আয়তক্ষেত্রে’র মতো!


ডালপালাহীন ভাবে শুধু শরীরটা নিয়ে দু’দিকের দেয়ালে’র সাথে গা বাঁচিয়ে থাকতে থাকতে আমার ভীষন বিষন্ন গাছগুলো কখন মরে গেলো টেরই পেলাম না! হয়তো তাদের শিকড়ও গিয়ে ঠেকেছিলো আমাদের বাড়ি’র পাঁচতলা ফাউন্ডেশনে’র গভীর কংক্রিটে।


ঠুক! ঠুক!! ঠুকক্!!!



মে ০২, ২০১১. দুপুর ০১.১১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×