somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক হাসি খুশি সুখি রিক্সাওয়ালার সাক্ষাৎকার।

০১ লা নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসা থেকে বের হয়েই গেইটের সামনে এসে দেখি অনেক খালি রিক্সাওয়ালা তীর্থের কাকের মত দাঁড়িয়ে আছে, সবার দৃষ্টি আমার উপর, চোখগুলো চক চক করছে। তাদের এ দৃষ্টির ভাষা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। বিশেষ করে নগর জীবনে যারা প্রায়ই চলাফেরার জন্য এই রিক্সার উপর নির্ভরশীল। জোয়ান আর তাগড়া দেখে (যেন দ্রুত টানতে পারে) এক রিক্সা'য়ালাকে বললাম,
- মালিবাগ রেলগেট যাবা?
- যামু, ২০ টাকা!
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মূল ভাড়া দশ টাকা। বললাম, - তোমারটায় যামু না!
- মামা ১৫ টাকা দিয়েন, আসেন। আমি হাঁটা শুরু করলাম আরও যারা আছে ওদের দিকে। এবার সে বলে, ঠিকাছে মামা ১২ টাকা দেন। আমি বলি ১০ টাকা দিমু। সে রাজি হয়ে যায়। বলল, উঠেন!

রিক্সা চলা শুরুর পর বলে,
- তারপরও ক্ষ্যাপ ছাড়ুম না।
- ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা কইলে ক্ষ্যাপ মারবা কেমনে? (আমি বলি।)

মুখে বিশাল একটা হাসি দিয়া সে টানা শুরু করে।

কিছুক্ষণ পর সে বলে, মামা আজকে কি বার?
- বৃহস্পতিবার।
-হুমম, তারমানে কালকা শুক্র, পরশু শনিবার, এরপরদিন রবি?
-হ!
-আজকে কত তারিখ?
- ২৯ তারিখ।
- তারমানে রবিবার ১ তারিখ? (এটা বলেই সে হাসা শুরু করে।)
- হ্যাঁ। রবিবার ১ তারিখ, এইটা নিয়া এত খুশি কেন? কিছু হইবো নাকি? (আমার কাছে কেন জানি তাকে ইন্টারেস্টিং মনে হয়, এজন্য গেজানো শুরু করি।)

- ১ তারিখ বাসা ভাড়া দিতে হইবো মামা! (এই বলে সে আবারো হাসা শুরু করে, মনে হয় যেন বাসা ভাড়া দেওয়া খুব মজার কাজ!!!)
- বাসা ভাড়া দেওয়া কি খুব মজার কাজ? ভাড়ার কথা বইলাই তুমি যেইভাবে হাসতাছো...! (সে প্রাণ খুলে হেসে যায়!)

- বাসা কই তোমার?
-রামপুরা।
-ভাড়া কত দাও?
- ৩০০০ টাকা!
ভাড়া শুনে আমি একটু অবাক হই! :-*
- কি বল, কয়জন থাকো তোমরা, ভাড়া এত বেশি কেন?
- ২ জন মামা!
- তুমি আর মামী থাকো, নাকি??? (লজ্জা মাখানো হাসিতে সে সম্মতি জানায়)! :#>
- বাসায় কি গ্যাস, কারেন্ট, পানি সব আছে?
- হ মামা, সবই আছে, এজন্যইতো ভাড়া বেশী।
- হুমম... তাহলে ঠিক আছে।

এবার সে তার নিজের কিছু কাহিনী বলে যায়,
- আগে তো মামা নিজের গাড়ি (রিক্সা) ছিল, সব ভাড়া দিতাম, আমি চালাইতাম না। সবগুলা চুরি হয়ে গেছে। এজন্যই নিজে চালাই এখন। (তার মুখে হাসি লেগেই আছে, এত বড় শোক সংবাদ জানানোর পরও তার মুখে কোন বিষাদের চিন্হ পেলাম না।)
- এখন চালাইতেছ এইটা কার গাড়ি?
- গ্যারেজের, অন্য লোকের।
- জমা কত দাও সারাদিন চালাইলে?
- ৮০ টাকা।
- হুমম, ডেইলি ক্ষ্যাপ মারো কত?
- এই মনে করেন ২০০ বা ৩০০ টাকা। কখনও এর চেয়ে সামান্য বেশীও হয়।
- তাহলে তো ২ জনের চইলা যায়!
- হ, চইলা যায়। তয় এখন মাসের শেষতো, লোকজন বেড়ায় কম, রিক্সায় উঠতে চায় না। সবাই বাসে উঠার চেষ্টা করে। মতিঝিলে সব রিক্সা খালি পইরা আছে। এইজন্যই এইদিকে চইলা আইলাম।
- হুমম। গ্রাম থেকেও তো অনেক লোক এখন শহরে আসতাছে, কাজের জন্য। সবাই তো রিক্সাই চালায়।
- হ!
- তোমার বাড়ি কই?
- শেরপুর।
- হুমম... আমি অবশ্য ময়মনসিংহের ফুলপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গেছিলাম। এরপরই তো শেরপুর। (সে সম্মতি জানায়)। শেরপুরে তো সব আবাদী জমি, মাইলের পর মাইল ফসলের ক্ষ্যাত। ঐখানে কাজ করতে পারো না? ঢাকায় থাকো কেন?
- ঐ কাম করতে ভাল লাগে না। রিক্সা চালায় মজা। তবে শেরপুর শহরে চালাইলেও ভাল ইনকাম করা যায়। ডেইলি ২০০ টাকা আসে।
- বাহ, তাহলে ঢাকায় পইড়া আছ কেন? ঐখানে তো খরচ আরও কম। চইলা যাও সেখানে!
- বউয়ে যাইতে চায় না। কয়, বাড়িতে থাকমু বুড়া বয়সে, এখন গিয়া কি করমু?
- বাহ! তোমার বউয়ের তো দেখি অনেক শখ! চাকরি বাকরি কিছু করে, নাকি বাসাই পইড়া থাকে সারাদিন?
- না মামা, বাসায়ই থাকে, কিছূ করে না।
- তাহলে কাজে লাগায় দাও, গার্মেন্টসএ অথবা রান্না বান্না কিছু পারলে কারও ঘরেও কাজ করতে পারে, ঝামেলা কম।
- হ, সেইটা তো বলছি, কিন্তু হের এক কথা, "বিয়া করছি আরামে বইসা বইসা খাওনের জন্য, চাকরি করুম কেন??"
- খাইছে! মামীরে তো দেখি বেশ আরামেই রাখছো।
- হ! বিয়ার আগে এইসব কইলে তো এত তাড়াতাড়ি করতাম না। আরও পরে করতাম।
- হুমম.... নিজেই পছন্দ করছো, না? পিরিতের বিয়া?
সে লাজুক হাসি দিয়া বলে - হ!

পৌঁছার পর ভাড়া দেওয়ার সময় শেষ কথা বলি,

- তো, পছন্দ করলা কেন মামীরে, বেশী সুন্দর নাকি?
- মাশাল্লাহ, ভালই! :!> :D

ঝকঝকে দাঁতে বিশার একটা হাসি দেয় সে। একেবারে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি যাকে বলে। ঠোটের দুই প্রান্ত তার দু'কানের লতি স্পর্শ করেছে যেন...!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৭
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×