somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বসন্ত নিয়ে আমাদের কবিগুরু ও নজরুল

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঋতুরাজ বসন্ত যেন বাসন্তী সাজে। প্রকৃতি সেই সাজে প্রেমোন্মূখ, মনেতে ফাগুন এলো তখন রঙিন রঙ ছড়িয়ে। অনেকক্ষণ থেকে ভাবছি বসন্ত নিয়ে কিছু লিখতে হবে, হঠাৎ কবিগুরুর একটি গান লোপা দি'র কন্ঠে ভেসে আসলো-

" ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান,
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান।
আমার আপন হারা প্রাণ
আমার বাধন ছেঁড়া প্রাণ
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান,
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান।"

কবিগুরু বসন্ত কবিতায় কবিতায় বসন্তের আগমন সম্পর্কে বলেছেন-

"অযুত বৎসর আগে হে বসন্ত,
প্রথম ফাল্গুনে মত্ত কুতূহলী,
প্রথম যেদিন খুলি নন্দনের
দক্ষিণ-দুয়ার মর্তে এলে চলি। "

বসন্তকে কাছে পেয়ে কবিগুরু তার "আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে" কবিতায় লিখেছেন-

"আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুন্ঠিত কুন্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীতমুখরিত গগনে
তব গন্ধ করঙ্গিয়া তুলিয়ো।"

রবীন্দ্রনাথ তার গানে বসন্তের ফুল ও পাখির বর্ণনাও দিয়েছেন-

"আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে, কত পাখি গায়"


বসন্তের বিদায়ে কবিগুরু চুপ করে থাকেন নি প্রশ্ন করেছেন বসন্ত কে -

"কেন রে এতই যাবার ত্বরা–
বসন্ত , তোর হয়েছে কি ভোর গানের ভরা "


কবিগুরু ছাড়া যেমন বসন্ত অসম্পূর্ণ তেমনি প্রেমের কবি নজরুলও বসন্তকে তুলে এনেছেন কবিতা ও গানে ।  নজরুলের কবিতা "এলো বনান্তে পাগল বসন্ত" এর কথা না বললেই না -


"এলো বনান্তে পাগল বসন্ত।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে,
চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।
বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর পরজ বসন্তের সুর,
পান্ডু-কপোলে জাগে রং নব অনুরাগে
রাঙা হল ধূসর দিগন্ত।।"

রবী ঠাকুরের ১৪০০ সাল কবিতার প্রতি উত্তরে নজরুল ১৪০০ সাল নামেই একটি কবিতায় লিখেছিলেন-

'আজি নব বসন্তের প্রভাত বেলায়
গান হয়ে মাতিয়াছ আমাদের যৌবন মেলায়’


একই কবিতায় আরও লিখেছিলেন -
(১)
'সহসা খুলিয়া গেল দ্বার
আজিকার বসন্ত প্রভাতখানি
দাঁড়াল করিয়া নমস্কার’

(২)
 ‘শতবর্ষ আগেকার
তোমারি বাসন্তিকা দ্যুতি
আজি নব নবীনেরে জানায় আকুতি’

কবি নজরুল শুধু ফুল, ফাগুন আর পাখিদের মধ্যে বসন্ত এনেই ক্ষান্ত হন নি।  বসন্তের করুণ বিদায়ও জানিয়েছেন-

'বৈকালী সুরে গাও চৈতালী গান
বসন্ত হয় অবসান
নহ্বতে বাজে সকরুণ মূলতান’

বিরহের কবি নজরুল বসন্তেও বিরহ এনেছেন কবিতার মাঝে-

'অনন্ত বিরহ ব্যথায় ক্ষণিকের
মিলন হেথায়
ফিরে নাহি আসে
যাহা চায় নিমেষের
মধুতর তান।’

বসন্ত বিলাপে কবি আরো বলেছেন-

‘বাঁশিতে বাজায় সে বিধুর
পরজ বসন্তের সুর
পাণ্ডু কপোলে জাগে রঙ নব অনুরাগে
রাঙা হ’ল ধূসর দিগন্ত।’


শুধু কবিতায় থেমে থাকেন নি প্রিয় কবি নজরুল।  নজরুলের গানে বসন্ত বার বার উঠে এসেছে -

(১)
‘ফুল রেণু মাখা দক্ষিণা বায়
বাতাস করিছে বন-বালায়’


(২)
‘বসন্ত এলো এলো এলোরে
পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে
মুহু মুহু কুহু কুহু তানে
মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে
ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে’


(৩)
"আসিবে তুমি জানি প্রিয়
আনন্দে বনে বসন্ত এলো
ভুবন হল সরসা, প্রিয়-দরশা, মনোহর।"

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের কাছে বসন্ত বিদ্রোহের প্রতিমূর্তি, প্রেরণাদাত্রী।তার ভাষায়-'এলো খুনমাখা তৃণ নিয়ে খুনেরা ফাগুন’। প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে আমরা বসন্তের মাঝে হারিয়ে যেতে চাই, জীবনকে প্রকৃতির রং, রূপ ও গন্ধে মাতিয়ে নিতে চাই। বসন্ত রং এ পৃথিবীকে ভালোবাসতে চাই,  সুন্দর পৃথিবী চাই। সকলকে বসন্তের শুভেচ্ছা জানাই। কবি গুরুর গান দিয়েই বসন্তের কাছে প্রত্যাশা দিয়ে শেষ করলাম--


'রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে--
তোমার আপন রাগে,
তোমার গোপন রাগে,
তোমার তরুণ হাসির অরুণ রাগে
অশ্রুজলের করুণ রাগে॥

রঙ যেন মোর মর্মে লাগে,
আমার সকল কর্মে লাগে,
সন্ধ্যাদীপের আগায় লাগে,
গভীর রাতের জাগায় লাগে॥


যাবার আগে যাও গো আমায় জাগিয়ে দিয়ে,
রক্তে তোমার চরণ-দোলা লাগিয়ে দিয়ে।
আঁধার নিশার বক্ষে যেমন তারা জাগে,
পাষাণগুহার কক্ষে নিঝর-ধারা জাগে,
মেঘের বুকে যেমন মেঘের মন্দ্র জাগে,
বিশ্ব-নাচের কেন্দ্রে যেমন ছন্দ জাগে,
তেমনি আমায় দোল দিয়ে যাও
যাবার পথে আগিয়ে দিয়ে,
কাঁদন-বাঁধন ভাগিয়ে দিয়ে॥"



৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×