প্রকাশকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেই, ‘ম্যাজিক মুনশি’ বইটি কিনে পড়িনি জন্য। পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে পড়লাম। বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয়নি, কিন্তু আমার বইয়ের যে চাহিদা সবসময় তা কিনে পুরন করতে গেলে যে দেউলিয়া হব না তার কোনই নিশ্চয়তা নেই। বই ডাউনলোড নিয়ে দুই মাস আগে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। একদিন আমার রুমমেট সোৎসাহে ঘোষনা করল তাদের ভার্সিটির অনলাইন ল্যাবে তুখোড় ডাউনলোড স্পিড, আর অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাউনলোড করা যায়, আমার কিছু প্রয়োজন হলে যেন বলি। লিংকের লম্বা একটা লিস্ট ধরিয়ে দিলাম(সবই উপন্যাসের)। দুইদিনের মাথায় মাথায় আমি গুপ্তধন হাতে পেলাম। লিস্টের প্রায় সবগুলোই সে নিয়ে এসেছে। দুর্ভাগ্য আমার নাকি কার কে জানে, তিনটি বাদে সবগুলোরই ছিল খন্ড এবং বুদ্ধিমানের মত সে সবগুলোরই প্রথম খন্ড ডাউনলোড করেছে। বাকি ছিল যে তিনটি তার একটি আবার করাপ্টেড, কি আর করার। কয়েকদিন আগে ‘মীরার গ্রামের বাড়ি’ বইটি ডাউনলোড করলাম। বইটি যিনি আপলোড করেছেন তিনি মনে হয় হুমায়ুন আহমেদ’র চাইতেও রহস্য পছন্দ করেন, বইয়ের শেষের কিছু অংশ বাদ দিয়ে আপলোড করেছেন(কেউ যদি বইটা পড়ে থাকেন, তাহলে দয়া করে জানাবেন শেষ পর্যন্ত কে মারা যায়)।
হুমা্যূন আহমেদ’র সাম্প্রতিক লেখায় তার ভক্তদের অনেককেই বিরক্ত হতে দেখেছি। আমিও সেই দলে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু বই পড়েই আবার ধারনাটা পাল্টেছে। ‘বাদশাহ নামদার’, ‘ম্যাজিক মুনশি’ তার মধ্যে দুইটি। আমার মত মামুলি পাঠক আলোচনা, সমালোচনা কোনটাতেই যাবে না এটাই স্বাভাবিক, ‘ম্যাজিক মুনশি’ বইটি যারা পড়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়া জানতেই এই পোস্ট।
আমার কাছে বইটি যথেষ্টই তথ্যবহুল মনে হয়েছে(যারা দোষ ত্রুটি খোঁজার জন্য পড়বেন তাদের কাছে জ্ঞান কপচানো কথা বার্তা মনে হতে পারে)। বাস্তবে তিনি ক্ষুদ্র মানুষদের কথা দিয়ে আহত করার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা বিরক্ত লেগেছে। ক্ষমতাবানদেরও কি তিনি এভাবে হেলা করেন? অবশ্য কিছু জায়গায়ও মজাও লেগেছে। যেমন এক সাংবাদিকের সংগে কথার নমুনা-
“- লঞ্চে আপনার বিশাল ইন্টারভ্যু নেব। আমাকে দু’ঘন্টা সময় দেবেন।
-আমি তো সাংবাদিক নিয়ে চলাফেরা করি না। তুমি আমাদের সঙ্গে যেতে পারবে না।
- তাহলে এখানেই ইন্টারভ্যু সেরে ফেলি? মিনি ইন্টারভ্যু।
- আমি বললাম, তুমি দু’টা প্রশ্ন করবে। এর বেশি না।
- ঈদের ফ্যাশন নিয়ে দু’টা প্রশ্ন করি?
-করো।
-প্রথম প্রশ্ন, ঈদের দিন ভোরে আপনি কী পরবেন?
-ঈদের দিন তো তোমাদের পত্রিকা বের হয় না, কাজেই ঠিক করেছি টাইম ম্যাগাজিন পড়ব। দ্বিতীয় প্রশ্ন কী?
-আমি জানতে চাচ্ছিলাম নামাজের সময় আপনি কী পরবেন?
-নামাজের সময় তো নামাজই পড়ব। আর কী পড়ব? দু’টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি, এখন বিদায় হও।“
ম্যাজিকের সহজ কিছু কৌশল বইয়ে দেওয়া আছে। একসময় ম্যাজিক শেখার শখ ছিল খুব। জীবনের প্রথম ম্যাজিকটা ৪০ টাকায় শিখে ধাক্কা খেয়েছিলাম। ম্যাজিকটা ছিল একটা কার্ডের উপর ম্যাচের কাঠি(যেকোন পাতলা কাঠি হলেও চলে) রেখে, কাঠিটাকে শূণ্যে ভাসানো। ম্যাজিসিয়ানের ম্যাজিক ভান্ডারের মধ্যে কমদামে এটাই আকর্ষনীয় মনে হয়েছিল, তাই শিখে নিলাম এবং আশাভংগ হল। ম্যাজিককে সবসময় মনে হত অন্যভুবনের জিনিস, এতবড় ধোঁকাবাজি এর মধ্যে ভাবিনি আগে। সেই ম্যাজিক অবশ্য কাউকেউ দেখাইনি, কারন কৌশলটা ভাল লাগেনি। ম্যাজিকের কার্ডটা এক ছোট ভাইকে দিয়েছিলাম। পরে অবশ্য পিসি সরকারের বই দেখে কিছু ম্যাজিকের কৌশল শিখেছি( আঙ্গুল ঘষে ধোঁয়া বের করা, কাগজে কিছু লিখে সেই কাগজ পোড়ানো ছাই দিয়ে হাতের মধ্যে ছাই ঘষে সেই লেখা ফুটিয়ে তোলা, হাতে আগুন জ্বালানো)।
নিজের শেখা ম্যাজিকের কথা বলতে গিয়ে শুধু আগুনের ম্যাজিকের কথা কেন বললাম বুঝলাম না। পানি নিয়েও অনেক মজার ম্যাজিক শিখেছিলাম। তবে কি এই যে, আগুনের ম্যাজিক আমাকে মুগ্ধ করেছে বেশি?
‘ম্যাজিক মুনশি’ বইয়ে ব্লাক ম্যাজিক এর উপর বিস্তর আলোচনা রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো চক্র। ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং তার বন্ধুরা চক্রের মাধ্যমে প্রেত নামিয়েছেন এই বর্ণনা বইয়ে আছে। একটি বিশেষ চক্রের পদ্ধতিও বইয়ে দেওয়া আছে।
প্রস্তুতিঃ
১) নয়জন সমবয়সী মানুষ একত্রিত হবেন।
২) পাঁচজন ছেলে এবং চারজন মেয়ে।
৩) সবাইকে স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে। শরীরে সুগন্ধি দেবেন। গলায় মিষ্টি গন্ধের ফুলের ( বেলী, গন্ধরাজ, কামিনী) মালা পরবেন।
৪) পরিষ্কার করা একটি ঘরে সবাই একত্রিত হবেন। কর্মকান্ড শুরু হবে মধ্যরাতের পর যখন চারদিক নীরব হয় আসবে।
৫) ঘরের চার মাথায় চারটা মোমবাতি জ্বালাবেন।
৬) দরজা জানালা বন্ধ করে দিতে হবে যাতে বাতাসে মোম্বাতি নিভে না যায়।
৭) ঘরের বাইরে উৎসুক কোনো দর্শক থাকতে পারবে না।
৮) মহিলা সদস্যরা চুড়ি পরবেন না।
৯) সবাই থাকবেন খালি পায়ে।
১০) ভরাপেটে চক্র করা যাবে না। সামান্য খাদ্য গ্রহন করা যেতে পারে। ফলমুল দুধ। এর বেশি কিছু না।
পদ্ধতিঃ
১) একজন ছেলে একজন মেয়ে- এইভাবে সবাই গোল হয়ে দাঁড়াবেন।
২) সবাই পাশের জনের হাত ধরে চক্র বানাবেন। চক্র কোনো অবস্থাতেই ভংগ করা যাবে না, অর্থাৎ হাত ছাড়া যাবে না।
৩) এখন নাচের ভঙ্গিতে সবাই কেন্দ্রের দিকে আসবেন এবং আগের জায়গায় ফিরে যাবেন। এরকম চলতে থাকবে যতক্ষন না সবাই খানিকটা ক্লান্ত এবং অবসন্ন। পনের বা কুড়ি মিনিট। এই সময় কেউ কোনো কথা বলবেন না। ফিসফিস করেও না।
৪) এখন মূল অংশ। চক্র বড় করে ঘুরতে শুরু করবেন। ‘chanting’(জিকির) শুরু হবে। ক্ষীণ কিন্তু স্পষ্ট স্বরে বলতে হবে, আয় আয় আয়। যখন ছেলেরা বলবে তখন মেয়েরা চুপ করে থাকবে। যখন মেয়েরা বলবে তখন ছেলেরা চুপ করে থাকবে। ঘূর্ণনপ্রক্রিয়া(নাচের ভঙ্গিতে) চলতেই থাকবে। এইসময় একটা দুটা মোমবাতি বা সবকটি মোমবাতি নিভে যেতে পারে, আবার নাও নিভতে পারে।
চক্র সফল হলে চক্রের মাঝখানে অলৌকিক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে। তাকে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দেবে।
বইয়ে বেশ কয়েকবার বলে দেওয়া হয়েছে কেউ যেন এই অপচেষ্টা না করে। আমার করার ইচ্ছা। সমস্যা হচ্ছে আমার ক্লাসমেটই সাতজন আর তাদের মধ্যে একটাই মেয়ে। কেউ কি আছেন আগ্রহী? থাকলে আমাকে জানাবেন।
পড়তে আগ্রহী যে কেউ এখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১১ বিকাল ৪:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




