somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুবর্ণরেখার জলে বেসে যাওয়া কিছু প্রশ্ন

২৭ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গতকাল মিয়া পাড়ায় উগ্র হিন্দুরা হামলা করেছে। শিশু কিশোরী বৃদ্ধা কাউকে ছাড়েনি ওরা। ভয়াবহ ধর্ষণ আর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ওরা। এমনটি ঘটতে পারে আভাস পেয়েছিল মিয়া পাড়ার মুসলমানেরা। তাই তারা পালাক্রমে রাতে পাহারা দিত। মেয়েরা সবসময় সাথে রাখত মরিচের গুড়া, কাঁচ মিশ্রিত বালির পুটলি। কিন্তু ওরা এসেছিল ভয়ানক এক জলোচ্ছাসের রূপ নিয়ে। সবকিছু যেন তছনছ করে দিয়ে গেছে। পৃথিবীর সভ্যতার অগ্রগতিকে একেবারে মিশিয়ে দিয়েছে মাটির সাথে। কী এমন হল যে মালো পাড়া আর মিয়া পাড়ার হাজার বছরের সম্প্রীতির সম্পর্ক এক ঝটকায় বদলে গেল? নব্য যুবক আবির বিষয়টি খুব একটা বুঝে উঠতে পারেনি। মালো পাড়ার পরান ছিল তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সকাল হলে শুরু হত তাদের এক সাথে পথ চলা। মালো পাড়া আর মিয়া পাড়া থেকে ওরা এসে একসাথে রাজারামপুরের প্রধান রাস্তায় উঠত। অতপর স্কুল চুরি, আম চুরি, সাঁতার কাটা, ফুটবল খেলাÑ সব চলত একসাথে। সেই বন্ধু কী করে একদিনের ব্যবধানে ভয়ানক শত্রুতে পরিণত হল? এসবের হিসেব মিলাতে পারে না আবিরের সরল মন।
আজ আবির রামদা হাতে মিয়া পাড়ার মিছিলের সাথে মালো পাড়ায় এসেছে। আঁধার রাতে অসংখ্য মশালের আলো কাঁপছে, ওরা হিংসার লালচে উত্তাপ নিয়ে দৌঁড়ে চলেছে সামনে, মালো পাড়ার দিকে। ওখানে অসংখ্য হিন্দু পরিবারের বাস। হই হই, রই রই। কেন যাচ্ছে তারা জানে, কিন্তু পরিণামে কী পাবে তারা? তা তারা জানে না। আঁধারে কাউকে চেনার উপায় নেই। শুধু দৌঁড়াচ্ছে তো দৌঁড়াচ্ছে। আজ সবাই মানুষ শিকারী। তাদের হাতের অস্ত্রগুলো লাল মানবীয় রঙে অমানবিকভাবে রঞ্জিত হচ্ছে। মালো পাড়ার হিন্দুদের আক্রমণে আবির তার মা বাবা, একমাত্র আদরের বোনকে হারিয়েছে। কেন মারল তারা? ওরা তো ক’দিনের মধ্যে এ দেশ ত্যাগ করে নতুন দেশ পাকিস্তানে চলে যেতে। কেন তাকে ওরা আপন হারা করে দিল? আজ তার হাতের রক্তাক্ত রামদা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছে। তার রামদা আজ বেশ কয়েকবার রক্তাক্ত হয়েছে। কিন্তু কতবার তার হিসেব রাখার প্রয়োজনীয়তা সে অনুভব করেনি। মশালের নিচে মানুষের ছায়াগুলোকে ঠিক রূপকথার দৈত্যদের মত মনে হচ্ছে। আমাদের নায়ক দিকবিদিক ছুটতে থাকে ক্ষুধার্ত সিংহের তম। ছুটতে ছুটতে হঠাৎ কখন যে সে সুবর্ণ নদীর তীরে এসে পড়েছে খেয়ালই করেনি। নদীর তীর একেবারে শান্ত। জনমানুষের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। দূরের লোকালয় থেকে মানুষের কান্না আর আগুনের নৃত্য এখান থেকেও দেখা যাচ্ছে। আকাশ থমথমে। মাঝে মাঝে বিজলির আলোয় আকাশ চৌচির হয়ে যাচ্ছে। নদীর জল হঠাৎ হঠাৎ রুপালি আলোয় ভরে উঠছে। আমাদের নায়ক লক্ষ করল দূরে নদীর ধারে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাতের অস্পষ্ট আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মেয়েটির শ্বাস ফুলে ফুলে উঠছে ভীষণ জোরে। যেন ওর নদীর বুকে জোয়ার ভাটা চলছে। কী অপরূপ সে দৃশ্য! খোলাচুলগুলো মেয়েটির ঝড়ো হাওয়ায় উড়ছিল মেঘের মত। মেয়েটির চোখ দেখা যাচ্ছিল না কিন্তু বোঝাযাচ্ছিল মেয়েটি একদৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কোনো অজানা আকর্ষণে মেয়েটির দিকে এগিয়ে যায়। মেয়েটি এবার চঞ্চল হয়ে ওঠে। নায়কের শরীরে এক ভাললাগার ফালগু হাওয়া বয়ে যায়। সমস্ত রাগ ক্ষোভ প্রতিহিংসা এক নিমেষে যেন হারিয়ে যায়। হঠাৎ আকাশ জুড়ে আলোর ছটা ঝলমল করে উঠে মেয়েটিকে সম্পূর্ণ মূর্ত করে তোলে। কী অপরূপ সে নারীর মোহময় রূপ। একটি মাত্র ঝলক সেই ঝলকেই নায়কের মন সুন্দরের আনন্দে ডুব সাঁতার দিয়ে ওঠে। বৃষ্টি নামে অঝোরে ঝির ঝির ছন্দে। ময়ূর এবার নেচে উঠবে ময়ূরীকে মুগ্ধ করায়। প্রকৃতির এই তো নিয়ম। কিন্তু চোখের পলকে একটি ঘটনা ঘটে যায়, মেয়েটি ঝাঁপ দেয় সুবর্ণ নদীর বুকে। বর্ষার জলের প্রবল স্রোত মেয়েটিকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে দূর কোনো দেশে। কোনো অলক্ষ্যে। আমাদের নায়কের হাত থেকে রামদাটা খসে পড়ে। সে হাটুর উপর ভর করে বসে মাটির উপরে। বৃষ্টির জলের ছটা তার চোখ ভিজিয়ে দিচ্ছিল।




৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×