somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুমের স্বর্গরাজ্যে

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ট্রেকিং পছন্দ করেন?? হাটতে পারেন ভালো??
কিংবা নেটওয়ার্কের একবারে বাইরে গিয়ে অন্যরকম একটা জীবনের স্বাদ পেতে চান?? তাহলে চলে যেতে পারেন এই জায়গাগুলোতে। হ্য আমি নাফাকুম,ভেলাকুম,আমিয়াকুম,সাতভাই কুম,রেমাক্রির কথাই বলছি। আজকের গল্প তাদের নিয়েই।

আগেই বলে রাখি এরকম ট্র্যকিং এ অনেক রিস্ক থাকে। তা ভিডিও এবং নিচের লেখা খেয়াল করলেই বুঝবেন। তাই বুকে যদি সাহস না থাকে,হার্ট যদি দুর্বল হয় তাহলে না যাওয়াই শ্রেয়।

যেভাবে যাওয়া যায়ঃ
প্রথমেই আপনাকে যে কোন উপায়ে থানচি যেতে হবে। থানচি আপনি দুইভাবে যেতে পারেন।
১. ঢাকা থেকে বান্দরবান । সেখান থেকে জীপ গারি/ চাঁদের গাড়ি অথবা বাসে করেও থানচি যেতে পারেন। জীপ গাড়িতে ৭ জন বসতে পারবেন ভাড়া ৩৫০০/৪০০০। চাঁদের গাড়িতে ১২/১৩ জন ভাড়া ৫০০০/৬০০ ( দুটোই শুধু যাওয়ার জন্য এই ভাড়া ) সময় লাগবে ২ থেকে ২.৫ ঘন্টা। আসার জন্য আপনি আরো কমে আসতে পারবেন। বাসে ভাড়া ২০০ জন প্রতি তবে সময় একটু বেশি লাগবে ( ৫ ঘন্টার ওপরে )

২. ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামি বাসে চকরিয়া। সেখান থেকে বাসে আলিকদম ভাড়া ৮০। আলিকদম থেকে থানচি বাইকে জন প্রতি ভাড়া ৩০০।

আমার কাছে ২ নম্বর অপসনটাই ভালো মনে হয়েছে। যেভাবেই যাননা কেন থানচি ১ টার মধ্যেই পৌছানোর চেস্টা করবেন। কেন তা একটু পরেই বুঝবেন। আর ৪ টার পরে থানচি যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়না। থানচি পৌছানোর পর দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন থানচি ব্রিজের নিচে একটা হোটেল আছে সেখান থেকে। মুরগী, ডাল ভাত ১০০ টাকা নিবে। তারপর গাইড আপনাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সহ আপনাদের নিয়ে থানায় গিয়ে অনুমতি নিয়ে আসবেন। তারপর আসল খেলা শুরু। গাইডের আগে থেকেই ঠিক করে থাকা নৌকায় চেপে বসবেন থানচি ঘাটে। এক নৌকায় ৫ জন। কিছুদূর গেলেই বুঝবেন আপনি অন্যরকম একটা দুনিয়ায় প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আপনি প্রার্থনা করতে থাকবেন এই নৌভ্রমণ যেন শেষ না হয়। এতটাই সুন্দর সাংগু নদীর পথ। ৩০ মিনিট পর আপনাকে নামায় দেয়া হবে পদ্মঝিড়ি নামের একটি জায়গায়। সেখান থেকেই আপনার পায়ে হাটার যুদ্ধ শুরু। ঝিরিপথে হাটা শুরু হলেও কিছুক্ষণ পরেই পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে,নামতে হবে। পাহাড়ের ধার ধরে হাটতে হবে। আমরা মাঝপথে কয়েকবার থামছি ছোট ছোট নাস্তার দোকানগুলোতে। তারা বসেই আছে আমাদের জন্য। তাদের বিক্রি খুব একটা বেশি না কিন্তু তাদের এটা করতে ভালোলাগে। কলা মাত্র১০টাকাহালি
মাঝপথে পরবে হরিচন্দ্র পাড়া। সেখানে আমরা চা খেয়ে নেই। দীর্ঘ ৫ ঘন্টা হাটার পর আমরা আমাদের গন্তব্য থুসিপাড়ায় পৌছোতে সক্ষম হই। সেখানে গাইড আগে থেকেই বলে রাখার কারনে তারা আমাদের জন্য মুরগির মাংস এবং ভাত তৈরি করে রাখে। পর্যটকদের থাকার জন্য মাচাং রয়েছে। বড় একটি ঘর( ছবিতে দেখতে পাবেন) । ঘরের ভিতরে যথেষ্ট পরিমানে কম্বল আছে তবুও এই সময়ে গেলে ঠান্ডা খেতেই হবে ভোরবেলা। আমরা খেয়েই ঘুমিয়ে পরলাম কারণ অনেক ক্লান্ত ছিলাম। ঘুমোনোর আগে গাইড মামুন ভাই সবাইকে ডেকে বললেন আপনারাই আমার ১১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত এখানে পৌছালেন। শুনে বেশ ভালোই লাগলো।



রাত ৩ টা পার হতেই শীতের তীব্রতা অনুভব করতে লাগলাম। কোনমতো ভোরের আলো দেখতেই বাইরে এসে একটা পরিবারের সাথে আগুন তাপতে লাগলাম। সকাল ৮ টায় সবাই নাস্তা করে ( নাস্তা ১০০ টাকা) লোকাল গাইড নিয়ে বেরিয়ে পরলাম আমিয়াকুম, ভেলাকুম,সাতভাই কুমের উদ্দেশ্যে। যেতে নাকি সময় লাগবে ২.৫ ঘন্টা। আবার পাহার বেয়ে ওঠা শুরু। কি যে প্যরা লাগছিলো। গাইড ছোট ছোট বাঁশ কেটে দিলেন সবাইকে। অবশ্যই বাঁশ নিবেন। বাঁশের লাঠি ছাড়া ওদিকে যাওয়া অনেক রিস্ক৷
হাটতে হাটতে দেখা পেলুম দেবতা পাহাড়ের। নাম তার দেবতা পাহাড় কেন তা দেখেই বুঝতে সময় লাগলোনা।
খাড়া একটা পাহাড়। সেটা বেয়ে নামতে ভেবেই কলিজা কাপছিলো৷ আবার যখন মনে হলো উঠতে হবে তখন আব্বু আম্মুর কথা মনে হচ্ছিলো। কারণ আমি তাদের একমাত্র ছেলে । কিন্তু ওটা নামলেই কিছু দূরেই আমিয়াখুম,ভেলাকুম,সাতভাইকুম। তাদের গর্জনও কানে আসতেছে। ঠিক করলাম চলে যেহেতু এসেছি দেখেই ছাড়বো। অবশেষে নামতে সক্ষম হলাম। কিছুক্ষন হাটার পরেই রাজকন্যাদের দেখা পেলাম। ভাই.....বলে বোঝাতে পারবোনা তারা কতটা রূপবতী। ভেলাকুমে যেতে হয় ভেলায় করে। এক ভেলা ভাড়া ৩০০। ১০ জনের জন্য। পানি পুরাই সবুজ রঙের। আসার সময় সেখানে কিছুলোক মাছ মারছিলো তাদের কাছ থেকে ১.৫ কেজি মাছ কিনলাম ২৫০ দিতে। রাতে বার.বি.কিউ এর জন্য। রূপবতীদের রুপ দেখে ফিরতে শুরু করলাম। আবার সেই দেবতা পাহাড়। এবার উঠতে হবে। কলিযায় পানি উঠছে। একটু উঠার পরেই নিচে একবার তাকানোর পরে আর সাহস পাইনা উঠার। আব্বু আম্মু আর আরেকজনের কথা খুব বেশি মনে পরতে শুরু হলো। মনে হচ্ছিলো। অনেক কষ্টে পাহাড় বেয়ে উঠার পর চিত হয়ে শুয়ে রইলাম অনেক্ষন। গ্রামে যেতে সময় লাগলো ১.৫ ঘন্টা।
গিয়েই গোসল করে নিলাম। তাদের পানি সব জমানো ঝরনার পানি৷ অনেক ঠান্ডা। গোসল করেই খেয়ে নিলাম সবাই। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে জম্পেশ আড্ডা দিলাম মাচাং এর বারান্দার কম্বল মুরি দিয়ে। সে এক অন্যরকম অনুভুতি ভাই। বলে বোঝাতে পারবোনা। ৮.৩০ এ বার.বি.কিউ পার্টি শুরু হয়ে গেলো। খাওয়া দাওয়া গান নাচ মজ মাস্তি। ১২ টার দিকে সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন সকালে উঠে খেয়েই ৯ টায় বেড়িয়ে পরলাম নাফাখুমের উদ্দেশ্য। নাফাখুম দেখে রেমাক্রি যাবো। রেমাক্রিতে গোসল করে মামুন ভাইর ( গাইড) রিসোর্টে লাঞ্চ করে থানচির উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। ৩.৫ ঘন্টা হাটার পর দেখা হলো নাফাখুম ভাইর সাথে। তার রুপ ভয়ংকর সুন্দর। তার সাথে কিছুটা সময় কাটিয়েই আবার হাটা শুরু করলাম রেমাক্রির উদ্দেশ্যে। ১.৫ ঘন্টা হাটার পর রেমাক্রির দেখা। বেগ রেখেই ঝাপায় পরলাম তার বুকে। গোসল করেই উঠলাম রিসোর্টে। খেয়ে নৌকায় চেপে বসলাম। যাত্রা শুরু হলো থানচির উদ্দেশ্যে। ২ ঘন্টার যাত্রাটাই ছিলো পুড়া ট্যুরের বেস্ট সময়। মাঝপথে দেখা হলো রাজা পাথর, রাণী পাথরের। আল্লাহর সৃষ্টি যে কতটা সুন্দর এবং অসাধারণ না দেখলে বুঝবেননা। পৌছে গেলাম থানচি।
অবিশ্যই ৪ টার মধ্যে থানচি থাকার চেষ্টা করবেন। কারণ ৬ টার পর ডিম পাহাড়ে বিজিবি আর অনুমতি দেয়না আলিকদম যাওয়ার। কারণাটা অনেক ভয়ানক। শান্তিবাহিনীর হামলা। আসার সময়ও ওই দুইভাবেই আসতে পারবেন।

যা অবশ্যই করতে হবেঃ
*জাতীয় পরিচয়পত্রের ৩/৪ টা ফটোকপি সাথে নিবেন।
* শীতের হালকা কাপড় নিবেন।
* ব্যাগ যত পারবেন হালকা করবেন।
* অবশ্যই অবশ্যই থানচি থেকে প্লাস্টিকের জুতো কিনে নিবেন।
* খাবার স্যালাইন, ব্যাথার ট্যাবলেট সাথে রাখবেন

খরচঃ
আমাদের জন প্রতি ৪৫০০ খরচ হয়েছিলো ৯ জন ছিলাম।
ঢাকা টু চকরিয়া ৬০০/৭০০ সঠিক জানা নেই
চকরিয়া টু আলিকদম ৮০
আলিকদম টু থানচি বাইকে ৩০০
গাইড ভাড়া ৫০০০
লোকাল গাইড ৫০০
ভেলা ৩০০
নৌকা ৯০০০
লাইফ জ্যাকেট ৫০ টাকা দিন
থুসিপাড়ায় সকালের খিচুড়ি ১০০ দুপুরের খাবার ১৫০ রাতের খাবার ১৫০ থাকা জন প্রতি ১৫০ প্রতি রাত।

যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলি। দেশের পর্যটন এলাকাগুলো আমাদের সেগুলো রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদেরই। মনে রাখবেন.... একটি প্লাস্টিকের বোতল মাটিকে ৪৫০ বছর দুষিত করে। ট্র্যাকিং পছন্দ করেন?? হাটতে পারেন ভালো??
কিংবা নেটওয়ার্কের একবারে বাইরে গিয়ে অন্যরকম একটা জীবনের স্বাদ পেতে চান?? তাহলে চলে যেতে পারেন এই জায়গাগুলোতে। হ্য আমি নাফাকুম,ভেলাকুম,আমিয়াকুম,সাতভাই কুম,রেমাক্রির কথাই বলছি। আজকের গল্প তাদের নিয়েই।

আগেই বলে রাখি এরকম ট্র্যকিং এ অনেক রিস্ক থাকে। তা ভিডিও এবং নিচের লেখা খেয়াল করলেই বুঝবেন। তাই বুকে যদি সাহস না থাকে,হার্ট যদি দুর্বল হয় তাহলে না যাওয়াই শ্রেয়।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×