somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমির একমুঠো বিকেল

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রফিকের ফোন বাজছে বালিশের নিচে। রফিক অভ্যাস মতো বালিশের নিচে হাত দিয়ে এলার্ম বন্ধ করলো। মিনিট দুয়েক পর আবার ফোন বাজছে রফিক ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো,



অবাক কান্ড এটা এলার্ম না, ফোনে কেউ কল দিয়েছে। তার কাছে তো ফোন করার কেউ নেই!

অপরচিত নম্বরের কল রিসিভ করলো রফিক। ও পাশ থেকে মেয়ে কন্ঠ শান্ত ভংগিতে বললা, "কেমন আছো রূপম।"

রফিক বিরক্ত ভংগিতে বললো, শোনো লাবন্য তোমাকে না কতবার বলেছি আমাকে রূপম বলবে না; আমার নাম রফিক।

- আমিও তো তোমাকে বলেছি আমাকে লাবন্য ডাকবে না। আমি "হিমি"

রফিক আর বিতর্কে না গিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো, বল.... হিমি।

- তুমি কি নীল পাঞ্জাবি পড়ে একটু নিউ মার্কেট আসতে পারবে? তোমাকে নিয়ে শপিং করবো।

-কি সব বলছো তুমি লাবন্য, সরি হিমি? একে তো আমার নীল পাঞ্জাবি নাই তার ওপর তুমি শপিং করবে? আমি কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি।

লাবন্য হিমুদের মত হাসি ফোন কেটে দিলো।

রফিক ১০ মিনিটের মধ্য বেরিয়ে পড়লো। তার গায়ে সাদা একটা টি শার্ট। রফিকের আবার প্রত্যেক ছোট ছোট কাজের পেছনেও যুক্তিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এই প্রচন্ড রোদ আর গরমে সাদা পড়াটাই যুক্তি যুক্ত।

রফিক রিক্সায় যাচ্ছে আর ভাবছে, তার মত বাস্তব বাদী সাধারণ একটা ছেলের সাথে কিভাবে লাবন্যের মত খাম খেয়ালী একটা মেয়ের যোগাযোগ হলো! আচার-অভ্যাসে তারা দুই জগতের বাসিন্দা।

রফিক এই মেয়ে টিকে বোঝার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। শুধু এই টুকু বুঝতে পারে যে, লাবন্যের মাথায় "হিমু" -র ভূত চেপেছে। যদিও রফিক "হিমু" সম্পর্কে কম জানে না। জানতে অবশ্য হয়েছে এই লাবন্যের পাগলামির জন্যই।

যদিও গল্প, উপন্যাস পড়া রফিকের কাছে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই না, তবুও তাকে হুমায়ূন আহমেদের "হিমু" সিরিজের সব গুলো বই পড়তে হয়েছে। তবুও সে লাবন্যের গতিবিধির প্রায় কিছুই বুঝতে পারে না।
শুধু এ টুকু বুঝতে পেরেছে যে, লাবন্য কেন নিজের নাম পাল্টে "হিমি" রেখেছে এবং কেন সে রফিক কে রূপম ডাকে।

প্রথমে অবশ্য লাবন্য রফিক কে "রূপা" বলে ডাকতো। সেটা খারাপ শোনায় বলে "রূপা" -র পরিবর্তীত হয়েছে "রূপম" এ।

সে আর এক পাগলামী। এই নাম পরিবর্তনর জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিলো। লাবন্য নিজ হাতে সেই বিজ্ঞাপন লিখেছিলো। বিজ্ঞাপন টা ছিলো এই রকম,

ভোট দাতা আবশ্যক:
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি নাম পরিবর্তনে ইচ্ছুক। তার নতুন নামের জন্য নিম্নক্ত তিনটি নাম মনোনীত করা হয়েছে,
১. রূপম
২.রূপম
৩. রূপম
এই তিনটি নামের মধ্য কোনটি উপযুক্ত তা যুক্তি সহ একটি প্রস্তাব পত্রে লিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ নিমক্ত ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হবে। সেরা প্রস্তাব দাতাকে ৫০ হাজার টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে।
বিঃদ্রঃ নাম পরিবর্তনে অভিজ্ঞ ব্যাক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এই বিজ্ঞাপন টি কত ঝামেলা করে তৃতীয় আলো পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিলো। পত্রিকার লোকেরা বিজ্ঞাপন এই নেবে না। রফিক অনেক কষ্ট করে তাদের বোঝালো এই বিজ্ঞাপনে তাদের বিজ্ঞাপন নীতিমালার বহির্ভুক্ত কিছু নেই।

কিন্তু, তবুও পত্রিকা অফিসের লোকজনের এক কথা, এই বিজ্ঞাপন নেওয়া যাবে না। রফিক বিজ্ঞাপন টি ছাপাতে ব্যর্থ হলে, লাবন্য কাকে কাকে জানি টাকা খাইয়ে বিজ্ঞাপন টি ছাপানোর ব্যাবস্থা করেছিলো।

রফিক তো অবাক হয়ে বললো, সরকারী অফিসে এই ব্যাবস্থা চলে জানতাম। কিন্তু এখানে চললো কিভাবে?

লাবন্য হেসে বললো, এসব কাজ শুধু টাকা দিয়ে হয় না, সাথে একটু হিমি গিরি দেখাতে হয়। টাকা না দিলেও অবশ্য কাজ হতো কিন্তু এ দেশে টাকা ছাড়া কেউ কারো জন্য কিছু করবে ব্যাপার টা ভালো দেখায় না। তাই তাকে চা নাস্তার খরচ দিলাম এই আর কি।

বিজ্ঞাপনে দেওয়া তারিখে লাবন্যদের বাসার সামনে দু তিনশ লোকের লাইন লেগে গেলো। লাবন্যের মা বললো,

- কিরে হিমি এতো লোক কিসের।

- মা এরা লটারি ড্র এর ফলাফল জানতে এসেছে।

- কিসের লটারি?

- রফিক তার নাম পরিবর্তন করে রূপম রেখেছে, সেই উপলক্ষে লটারিতে একটা পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

- রফিক? কক্ষোনো না। তার মত শান্ত ভদ্র ছেলে এই কাজ করতেই পারে না। নিশ্চই তুই জোড় করে তার নাম পালটে দিচ্ছিস।

-হ্যা তবে তার সম্মতি ক্রমে।

যথা সময়ে ইন্টার্ভিউ শুরু হলো। লাবন্য রফিক কে বসিয়ে রেখে বললো, এই ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্মকর্তা দুজন। তুমি শুধু এপ্লিকেন্ট দের দিকে ড্যাব ড্যাব করে এক দৃষ্টিতে তাকিতে থাকবে। প্রশ্ন যা করার আমি করবো। প্রশ্ন করার জন্য আরো এক জন থাকলে অবশ্য সুবিধা হতো। চাকুরির ইন্টার্ভিউ তে সাধারণত প্রশ্ন করার জন্য দু-তিন জন থাকে। আর ড্যাব ড্যাবে দৃষ্টিতে সারাক্ষন তাকিয়ে থাকার জন্য দু জন থকে। আচ্ছা রমিজ মিয়াকে প্রশ্ন কর্তা হিসেবে রাখলে কেমন হয়?"

এই রমিজ মিয়া হলো লাবন্য দের বাড়ির দাড়োয়ান। প্রচন্ড কথা বলে এই লোক। কথা ছাড়া ১ মিনিট ও চুপ থাকতে পারেনা। যখন আশে পাশে কেউ থাকে না তখন সে বেড়াল, মুরগি যা পায় তার সাথেই কথার আড্ডা জমায়।

যথা সময়ে ইন্টারভিউ বোর্ড বসলো, তিনটে চেয়ারের মাঝে বসেছে রফিক, তার কাজ প্রার্থীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা। এজন্য বেচারার ইয়া ভারি লেন্সের চশমা টা খুলে নেওয়া হয়েছে। যদিও সে চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না তবুও লাবন্যের কড়া আদেশ দেখতে পাক আর না পাক তাকে তাকিয়ে থাকতেই হবে।

ডান পাশের চেয়ারে লাবন্য, আর বাম পাশের চেয়ারে রমিজ মিয়া। যদিও ডিউটির সময় রমিজ মিয়া দাড়োয়ানের পোষাক পরে থাকে তবুও এখন তাকে লুংগি ফতুয়া পড়ে চেয়ারে বসানো হয়েছে। কারণ রমিজ মিয়া লুংগি পড়ে আরাম পায়। আর লাবন্য বলেছে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে শারিরিক আরাম জরুরি জিনিস।

কিন্তু হিমু-হিমি রা শারিরিক আরাম খোজে না কারণ তাদের কোনো কাজই বুদ্ধিবৃত্তিক নয়; পুরোটাই আধ্যাত্মিক।

চেয়ারে অধিষ্ঠিত তিন জনের সামনে বিরাট এক টেবিল। টেবিলে সব প্রার্থীদের আবেদন পত্র।

যথা সময়ে ইন্টার্ভিউ শুরু হলো। ডাকা হলো প্রথম প্রার্থী আব্দুস সালাম কে;

[আপনারা যদি আগ্রহী হন তবে চলবে.....
না হলে নাই]


এই দুঃসাহসের জন্য আমি হুমায়ূন আহমেদ ও হুমায়ূন ভক্তদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×