somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমান্তরাল ভবিষ্যৎ

১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাহীন খুব মনোযোগ দিয়ে তার অদ্ভুত চশমাটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। চশমার হাতের সাথে থাকা সূক্ষ্ণ সংযোগ দেয়া তার গুলি বার বার চেক করছে যেন ভুল করেও কোন ভুল না থাকে। তারপর সেটা হাত থেকে রেখে নিজের তৈরি ছোট্ট সার্কিটটা চেক করতে বসলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখে যখন সবই ঠিক আছে এমন মনে হল তখন কম্পিউটার স্ক্রিনে নিজের প্রোগ্রামটার দিকে নজর বোলানো শুরু করলো। এত বিশাল প্রোগ্রাম এটার উপরই সব কিছু নির্ভর করছে। যদি ছোট থেকে ছোট একটা ভুলও থাকে তবে তার এতদিনের চেষ্টা আর শ্রম সব বৃথা যাবে। যদিও সিমুলেশন আর ফ্লো গুলি বলে ভুল হবার কোন সম্ভাবনা নেই। তবুও সে কোন রিস্ক নিতে চায় না। হাতে মাত্র ১ দিন সময় বাকি আছে। ১ দিন পর সে যদি এই প্রোজেক্ট নিয়ে কোন আশাজনক কিছু দেখাতে না পারে তবে তাকে বরাদ্দ দেয়া সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। আর এমন একটা সময়ে এসে এই কথা ভাবতেই পারে না সাহীন।

টানা সাড়ে ৪ ঘণ্টা ধরে প্রোগ্রামটা চেক করার পর চেয়ার ছেড়ে উঠলো সে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোথাও ভুল চোখে পড়েনি। সব কিছুই ঠিক আছে। এখন একটু ভার্চুয়ালাইজেশন করলেই বুঝতে পারবে সেটা আসলে ঠিক কতটুকু ঠিক আছে। আর কোন ভুল থাকলে সেটা কোথায় বের করে আজকে দিনের মধ্যেই ঠিক করতে হবে। তবে যা দেখেছে তাতে এমন কোন সম্ভাবনা তার নজরে আসছে না। ডেস্কের উপর রাখা চশমাটার দিকে আবার তাকাল। সত্যিই কি পারবে তার কল্পনা বাস্তবে এই চশমা দেখাতে? নিজেকেই নিজে প্রশ্নটা ছুড়ে দিল সাহীন। উত্তরটা যদি “না” হয়….

নাহ, অনেক বেশি প্রেশার পড়ে যাচ্ছে। এভাবে নিজের উপর এত প্রেশার দেয়া ঠিক হবে না এই মুহূর্তে। এখন যতটা সম্ভব ফ্রেশ থাকতে হবে। যতে সমস্যা কিছু থাকা মাত্রই তার সমাধান করতে পারে। নিজেকে রিফ্রেশ করার জন্যে কফি খেতে ছুটল সে। কফির মগ হাতে নিয়ে জানালার সামনে এসে দাঁড়াল। স্ক্রিন ভিউ টা পরিবর্তন করে উঁচু রুফটপ সিলেক্ট করলো। তার প্রায় সাথে সাথেই রুমটা পরিবর্তন হতে শুরু করলো এবং মিনিট খানিকের কম সময়ের ভেতর সেটা একটা বাড়ির ছাদে রূপ নিলো।

এই ঘরটার সবই ভার্চুয়াল। নিজের ইচ্ছে মত পরিবেশ, স্থান পরিবর্তন করা যায়। এটা করতে তার বছর কয়েক খাটতে হয়েছে। সাধারণ ভাবে শুধু ইমেজ আর ভিডিও রেকর্ড করে সে এটা তৈরি করেনি। এটার কোডিং আর হার্ডওয়্যার কম্বিনেশন করতে ভালোই মাথা খাটাতে হয়েছে। ব্যবস্থাটা এমন করেছে যে যখন যেই পরিবেশ সিলেক্ট করবে তখন সেই ধরণের পরিবেশের তাপমাত্রা, সত্যিকারের রেন্ডম শব্দ, আর প্রাকৃতিক ভাবে যেমন একটা অনুভূতি পাওয়া সম্ভব তার সবই করার চেষ্টা করেছে। আর এই প্রোজেক্ট তার সফল প্রজেক্টের একটা।

এখন যেমন বাড়ির রুফটপে কফি মগ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে সে। বাতাসে টি সার্টের উপরে পড়া জামাটা উড়ছে, নিজে গাড়ি আসা যাওয়ার শব্দ। সূর্যের আলোর কারণে চোখ সরু করে দেখতে হচ্ছে। সামনের বিল্ডিংটা এই বিল্ডিং থেকে কিছুটা ছোট। প্রায় প্রতিটা জানালাতেই ব্লু সেডেড গ্লাস। যে কয়েকটা পরিবেশ সাহীনের ভালো লাগে তার মধ্যে এইটা একটা। মাঝে মাঝে মাথার উপরে আকাশযানের আওয়াজ ও পাওয়া যায় এই রুফটপে।

কফিটা দ্রুত শেষ করে আবার গেল তার ল্যাব রুমে। এখন ভার্চুয়ালাইজেশনের পালা। প্রোগ্রামটা কম্পাইল করতে দিয়ে সে সার্কিটের লোড গুলি পুনরায় দেখে নিতে থাকলো। প্রায় ২০ মিনিট পর প্রোগ্রাম ভার্চুয়ালাইজেশনের জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেল। ৪ বছরের টানা পরিশ্রম এর ফলাফল তার জন্যে একরকম প্রস্তুত প্রায়। লোভটা আর সংবরণ করতে পারলো না। ইনিশিয়াল বেশ অনেকগুলি সময়ের সিকোয়েন্স সিলেক্ট করে সে চশমাটা নিজেই পড়ে বসলো চেয়ারটাতে।

কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। ৬… ৫… ৪… ৩…. ২…. ১…. ০……….




————————— সিকোয়েন্স ১ —————————

গ্রীষ্মের এক দুপুর। একটা ছেলে বাড়ির পেছনে দরজার সিঁড়িতে বসে আছে। সামনে অল্প একটু জায়গা তাও আবার লোহার কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। রোদ আছে ঠিকই, কিন্তু কেমন জানি কড়া করে চোখে লাগছে না। আকাশের দিকে তাকাল, মেঘ নেই গরমও অনেক। ছেলেটা বাড়ির ভেতরে চলে গেল। সাহীনও ছেলেটাকে অনুসরণ করে বাড়ির ভেতরে গেল। ছেলেটা কিন্তু সাহীন কে দেখতে পারছে না। সে গিয়ে থামলে কিচেনে, সেখানে ছেলেটার মা ব্যস্ত হাতে রান্না সারছেন। ছেলেটাকে দেখেই জিজ্ঞাস করলেন-
- কিছু খাবি? কমলার জুস করে দিবো?
- না, তুমি দ্রুত রান্না কর। আমার একা একা ভালো লাগছে না।
- এই তো আর একটু। আমার রান্না প্রায় হয়ে এসেছে। তুমি আর একটু অপেক্ষা কর। তারপর আমি আসছি তোমার সাথে খেলতে।
- এখন তাহলে আমি কি করবো?
- তুমি এখন টিভি দেখতে পারো। কার্টুন চ্যানেল, কিংবা ডিসকভারি দেখতে পারো।
- কিন্তু এখন সব বোরিং জিনিষ দেখাবে, আমার ভালো লাগবে না।
- আচ্ছা, তাহলে তোমার রঙ পেন্সিল গুলি দিয়ে আঁকতে চেষ্টা কর। আমি এসেই দেখছি তুমি কি আঁকলে।
- হুহ।
- আমার লক্ষ্মী ছেলেটা! রাগ করে না। যাও আমি দ্রুতই আসছি…….

এরপর দ্রুতই সময় টানতে শুরু করলো। যেন ক্যাসেট প্লেয়ারের ভিডিও কেউ ফার্স্ট ফরওয়ার্ড করে দিয়েছে অনেক বেশি স্পিড দিয়ে। দ্রুত অস্পষ্ট আর ঘোলা ভাবে সব এগিয়ে চলছে। তারপর একটা সময় থামল। একটা বড় হলঘর সেখানে অনেক ছবি প্রদর্শনীর জন্যে দেয়ালে দেয়ালে রাখা। অদ্ভুত পোশাকের বেশ অনেক মানুষ আছে ঘরটা জুড়ে। ছবিগুলির প্রায় প্রতিটাই ভার্চুয়াল থ্রিডি। ছবির সামনে দাড়িয়ে কেউ অবাক হয়ে, কেউ গম্ভীর হয়ে, কেউ বা আবার তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখছে।

এর মাঝেই একটা ছবি একটু ভিন্ন রকমের। কয়েকজন সেখানে দাড়িয়ে দেখছে ছবিটা। এই ছবিটা থ্রিডিতে নয় বরং পুরাতন দিনের মতই পেইন্টিং পেপারের উপর আঁকা। একটা মহিলার হাসি খুশি ছবি। সেই ছোট্ট ছেলেটির মা’য়ের ছবি। ছবির এক কোনায় ছেলেটার নামও স্বাক্ষর করা রয়েছে। তার মানে ছবিটা সেই ছেলেরই আঁকা। এইবার একটু গুরুত্ব নিয়ে এই এক্সিবিশনের আর্টিস্ট কে জানতে গেল সে।

হল রুমের সামনে একটা বোর্ডে লেখা রয়েছে ” বিখ্যাত চিত্রকার স্যর সাহীনের চিত্রকর্ম ” বাইরে তাকাতেই বুঝতে পারলো এটা কোন সাধারণ প্রদর্শনী নয়। এটা একটা আর্ট মিউজিয়াম, কিন্তু অনেক বেশি আধুনিক একটা মিউজিয়াম। আর এই ঘরে সেই ছোট্ট ছেলেটার অর্থাৎ তার নিজের আঁকা সব ছবি রয়েছে। বোর্ডের নিচে আরও একটা জিনিষ লেখা রয়েছে।

সেখানে লেখা ১৯৮৯-২০৬৩। সাথে সাথে বর্তমান দেখানো সময়টার জানতে চাইল সাহীন। উত্তরে আসলো এটা বাস্তব সময় থেকে ২০০০ বছর সামনে রয়েছে। অর্থাৎ ৪০৪৬ খৃষ্টাব্দ।

এরপর চারপাশ দ্রুতই ধোয়াটে হাওয়া শুরু করলো। আবার কাউন্টডাউন শুরু হল। ৬… ৫… ৪… ৩…. ২…. ১…. ০……….




————————— সিকোয়েন্স ২ —————————

এবার নিজেকে রাস্তার ধারে একটা গাছের নিজে আবিষ্কার করলো সাহীন। অল্প কিছু মানুষও আছে রাস্তায়। রাস্তাটা তার খুব পরিচিত লাগছে, যদিও ঠিক করে মনে করতে পারছে না। অল্প কিছুক্ষণ বাদেই সেই ছেলেটা আর তার মা’য়ের দেখা পেয়ে গেলো। রাস্তা ধরে এগিয়ে আসছে তারা। যদিও তাকে কেউ দেখতে পারছে না, তবুও সে একটু পেছনে সরে মা-ছেলেকে যাবার রাস্তা করে দিল। মা’য়ের হাত ধরে ছেলেটা হাঁটছে আর বায়না করে চলেছে। আর মা’টাও মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে ছেলের বায়নার কথার তাল মেলাচ্ছে। সাহীন তাদের পিছু নিলো আর কথা শুনতে লাগলো-
- কিন্তু আম্মু তুমি তো বলেছিলে আমি যখন ক্লাস ৪ এ উঠবো তখন তুমি আমাকে গিটার কিনে দিবে।
- হুম বলেছিলাম তো।
- আমি কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষাতেও ভালো করেছি, তাহলে এখন তুমি আমাকে গিটারটা কিনে দিবে না?
- ভালো তুমি ঠিকই করেছো পরীক্ষাতে, কিন্তু গিটারটা কিনে দিবো কিনা তা এখনো বলতে পারছি না।
- আম্মু এইটা কিন্তু ভালো হবে না। আমি কিন্তু তাহলে তোমার কথা আর শুনবো না। সাইকেলটা নিয়ে ঐ রবিনদের সাথে ঘোরাঘুরি করবো।
- হুম, সেটা তো খুব খারাপ কথা। তুমি বাইরে বাইরে সাইকেল চালালে তো আমি বাসায় একলা হয়ে যাবো।
- হ্যাঁ, সেই জন্যেই তো বলছি। আমাকে গিটারটা কিনে দাও। আমি তাহলে বাসায় বসে বসে গিটারটা বাজাতে পারবো তোমাকেও গিটার বাজিয়ে শোনাতে পারবো।
- তাহলে আর সাইকেল নিয়ে রবিনদের সাথে বাইরে যাবে না তো কক্ষনো? প্রমিস করছ??
- হ্যাঁ! হ্যাঁ!! হ্যাঁ!!! ৩ প্রমিস করলাম।
- ঠিক আছে, তাহলে তোমাকে আজকে গিটার কিনে দিবো।
- সত্যিই আম্মু…!!
- হুম, সত্যি।

এভাবে কথা বলতে বলতে মা আর ছেলেটা ছোট শহরের ছোট একটা দোকানে ঢুকল। দোকানটাতে মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট বিক্রি করা হয়। সাহীনও তাদের সাথে দোকানটাতে ঢুকে পড়লো। ছেলেটার চোখ জ্বলজ্বল করছে গিটার গুলির সামনে দাড়িয়ে। আর তার মা দোকান মালিকের সাথে কথা বলছে ছেলেটার জন্যে গিটার কেনার জন্যে। তবে তারা শুধু গিটার কিনেই ক্ষান্ত দিল না, ছেলেটাকে গিটার শেখানোর জন্যে দোকানির দেয়া ঠিকানায় ছেলেকে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দিল। একটা হাওয়াই গিটার পেয়ে ছেলেটার চোখে মুখে সে কি আনন্দ। দেখার মত একটা জিনিষ সেটা।

তারপর আবার চারপাশের খুব দ্রুত পরিবর্তন হওয়া শুরু করলো। দ্রুত অস্পষ্ট আর ঘোলা ভাবে সব এগিয়ে চলতে শুরু করলো। বেশ অনেকটা সময় এভাবে চলে বন্ধ হল। এবার নিজেকে একটা বড় অনুষ্ঠানের মাঝে আবিষ্কার করলো সে। বিচিত্র পোশাকে চারপাশে অনেক মানুষ সামনে একটা স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছে। সেখানে ত্রিমাত্রিক কোন একটা পদ্ধতিতে একটা যুবক গান গাইছে। চমৎকার গান, গানের সুরটাও আকর্ষণীয়। গানটা শেষ হতেই যুবকের অস্তিত্ব মিলিয়ে যায় স্টেজের উপর থেকে। সেখানে আবির্ভাব ঘটে বিচিত্র রংচঙের পোষাকে এক উপস্থাপিকার।

একটা ছোট্ট বর্ণনা দেয় এই গায়ক সম্বন্ধে, তার কাজের সম্বন্ধে। এবং সব শেষে এই জানায় তাদের অনুষ্ঠান এই গুণী শিল্পীর মর্যাদা পূর্ণ কাজের জন্যে সম্মাননা পুরস্কার ঘোষণা করছে। যদিও তিনি বেঁচে নেই তবুও তাদের ইন্ডাস্ট্রি এই মিউজিক লিজেন্ডের সকল কাজ গুলিকে নতুন ভাবে সকলের সামনে উপস্থাপন করবে বলে ঘোষণা দেয়।

এবার সাহীন জিজ্ঞাস করার আগেই সিস্টেম জানায় সে এখন তার বর্তমান সময় থেকে ১০০০ বছর এগিয়ে এসেছে। আবারও চারপাশ ঘোলা হওয়া শুরু করে। ভোতা একটা আওয়াজ মস্তিষ্কে খুব চাপ দিতে থাকে। আর নতুন করে আবার কাউন্টডাউন শুরু হয়। ৬… ৫… ৪… ৩…. ২…. ১…. ০……….




————————— সিকোয়েন্স ৩ —————————

ভোতা শব্দটা কমে গিয়ে ধীরে ধীরে আলো আসতে শুরু করে তার চারপাশে। একটা বেডরুমে আবিষ্কার করে এবার নিজেকে। রুমটা তার পরিচিত, শুধু পরিচিত নয় এটা তার রুম। ছেলেবেলা থেকে কলেজে উঠার আগ পর্যন্ত সে এই রুমটাতেই কাটিয়েছে। লম্বা টান দিয়ে রুমের ঘ্রাণ নেবার চেষ্টা করলো। আহ, সেই পুরাতন একটা আমেজ রুমটাতে এখনো পাচ্ছে সে।

রুমটার এক পাশে বিছানা আর তার পাশেই একটা টেবিল। সেই ছোট্ট ছেলেটা, মানে সেই ছোট্ট সে নিজেই টেবিলে বসে খাতায় কিছু একটা লিখে চলেছে। পেছন থেকে সাহীন ছেলেটার কাছে গেল। শরীরটা বাকিয়ে তার পেছন থেকে খাতার লেখা গুলি দেখার চেষ্টা করলো। যদিও এইভাবে দেখার কোন প্রয়োজন ছিল না, কারণ তাকে কেউ দেখতে পারে না। ইচ্ছে করলে পাশে বসেই ছেলেটার লেখা খুব ভালো করেই দেখতে পারে সে। কিন্তু তবুও এভাবেই দেখল। ছেলেটা খাতায় সংখ্যার পর সংখ্যা বসিয়েই চলেছে। একটা লাইনের পর আরেকটা লাইন। জটিল একটা ইকুয়েশন সমাধানের চেষ্টা করছে।

পেছনে দাড়িয়েই দেখতে থাকে সে। প্রায় নির্ভুল ভাবে ইকুয়েশনটার সমাধানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ছেলেটি। মিনিট ২০ এক পর ছেলেটার মুখের দুশ্চিন্তার ছাপ মুছে গিয়ে একটা আনন্দ মাখা চেহারা ভেসে উঠলো। জটিল ইকুয়েশনটা সে সমাধান করে ফেলেছে। সাহীনও দেখল তার সমাধানটা। একেবারেই নির্ভুল ভাবে সমাধান করেছে সে। ছেলেটা খাতা হাতে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সাহীনও তার পিছু পিছু গেলো।

ড্রয়িং রুমে তার মা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার চালিয়ে রুমটা পরিষ্কার করছিলেন। ছেলের ডাকে মেশিনটা বন্ধ করে তার কথা শুনতে লাগলেন-
- আম্মু আমি করে ফেলেছি। সায়েন্স ফেয়ারে যেই ইকুয়েশনটা সমাধানের কুইজ ছিল সেটা আমি সমাধান করে ফেলেছি!
- সত্যিই, দেখি দেখি।

ছেলেটা তার হাতের খাতাটা মা’য়ের দিকে বাড়িয়ে দেয়। মা খাতার দিকে চোখ বুলিয়ে বলে-
- আমি তো এই গুলি বুঝি না। কিন্তু তুমি যখন বলছ তখন সত্যিই সমাধান হয়ে গেছে।
- হ্যাঁ আম্মু। সত্যি সত্যিই হয়েছে।
- আচ্ছা, বিকেলে তোমার কালাম আঙ্কেলের কাছে গিয়ে দেখে নিয়ে আসবো।
- আম্মু বিকেল হতে তো অনেক দেরি, তুমি এখুনি একটু চল না আঙ্কেলের কাছে। তিনি দেখলেই বুঝতে পারবে। চল না! চল! প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ!
- আরে এখন কত কাজ পড়ে আছে। বললাম তো বিকেলে যাবো। আর এই দুপুর বেলাতে গিয়ে বিরক্ত করার চেয়ে বিকেলে গেলেই ভালো হবে।
- বিকেলে কখন যাবো!! বিকেল তো প্রায় হয়েই এসেছে দ্রুত তোমার কাজ শেষ কর না আম্মু।
- হ্যাঁ, দ্রুতই শেষ করছি। তুমি আবার ভালো করে মিলিয়ে দেখো সব। যতে ভুল থাকলে এখুনি তা ঠিক করা যায়।
- কোন ভুল নেই আম্মু। আমি বার বার করে চেক করে তারপর করেছি সমাধান টা।
- ঠিক আছে। তারপরও আরেকবার দেখতে সমস্যা কোথায়? তুমি দেখো আমি কাজটা শেষ করি।

আবার চারপাশের খুব দ্রুত পরিবর্তন হওয়া শুরু করলো। দ্রুত অস্পষ্ট আর ঘোলা ভাবে সব এগিয়ে চলতে শুরু করে। এর পর ঘোলা করে আলো ফুটতে শুরু করে। আলোটা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতম হচ্ছে। এবার নিজেকে একটা ছোট্ট রুমে আবিষ্কার করে আবার। সেই ছোট্ট রুমে বেশ কিছু লোক বসে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসেছে। কয়েকজনের মুখে শঙ্কা আর উদ্বেগ থাকলেও মেজর টাইপের দুইজনের মুখে একটা উজ্জ্বল হিংস্রতা দেখা দিচ্ছে। কোন একটা বিষয় নিয়ে তারা এক মত হতে পারছে না। কিন্তু দুইজন মেজরের খুব জোড় দিয়ে তাদের পরিকল্পনা বোঝাচ্ছে।

গায়ে দামী কোর্ট পড়া ভদ্রলোক যিনি এত সময় চুপচাপ শুধু শুনছিলেন সকলের কথা সে এবার মুখ খুলল-
- আপনারা বলছেন এই হামলা আমরা চালাতে পারি। কিন্তু কতটুকু সম্ভাবনা রয়েছে এই হামলায় আমাদের জেতার?
- With all respect, sir. আমাদের হিসেব মত যদি সব পরিকল্পনা মাফিক হয় তবে শুধু সম্ভাবনা নয় আমাদের জয় নিশ্চিত।
- এতটা নিশ্চিত ভাবে আপনি কিভাবে বলছেন?
- স্যর, আমরা বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করি নতুন সব টেকনোলজির জন্যে, সেটা আপনিও নিশ্চয় জানেন।
- হ্যাঁ, নতুন সব প্রযুক্তির জন্যে আপনারা অর্থ ব্যয় করেন সেটা জানা রয়েছে। কিন্তু এর সাথে তার কি সম্পর্ক?
- অনেক বড় ধরণের একটা সম্পর্ক রয়েছে স্যর। আপনি একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন গত ৩৬ বছরে আমাদের কোন অভিযান ব্যর্থ হয়নি।
- হ্যাঁ, এটা আমি দেখেছি। আর তাই আপনাদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। কিন্তু এর সাথে ঘটনার সম্পৃক্ততা বলুন।
- স্যর, গত ৪০ বছর আগে এক অদ্ভুত আইডিয়া নিয়ে আসে একটা ছেলে। তার আইডিয়া অনুসারে আমরা বেশ কয়েকটা সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ আমাদের কাজের উপর ভিত্তি করে জানতে পারবো। প্রথম দিকে আমাদের কেউ কেউ তা খুব ঠাট্টা ছলে ভাবে নিলেও তার থিসিস আর কাজের কিছু অংশ আমাকে আকৃষ্ট করে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগ নিয়ে ছেলেটার প্রজেক্ট পেয়ে দিতে সহায়তা করি এবং তাকে ঘড়ি ধরে ৪ বছর সময় দিয়ে দেই। ৪ বছর পর ছেলেটি যা দেখায় তা দেখে শুধু অবাকই হইনি বরং বাহবা দিতে হয়েছে তার মেধার জন্যে। সে সত্যিই তার চিন্তাভাবনাকে কাজে রূপ দিতে পেরেছিল। সে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিল সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ জানার এক অসাধারণ প্রযুক্তি। আর তার কাজের ফলাফল রূপেই আমরা আমাদের প্রতিটা মিশনে নিয়ে কাজ করার পূর্বে বেশ কয়েকবার করে মিশনটার সিমুলেশন চালাই এবং সম্ভাব্য সবক’টি নিকট ভবিষ্যৎ দেখে নেই। আর এই মিশনটা নিয়ে মোট ৫২টি সিমুলেশন করেছি আমরা এবং প্রায় প্রতিটি সিমুলেশনে আমরা আমাদের জয় নিশ্চিত করতে পেরেছি।
- কিন্তু এই মিশন চালালে পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী বিলীন হয়ে যাবে। আর বাকি অর্ধেকের এক চতুর্থাংশ এর প্রভাবে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই অংশটা কিভাবে দেখাচ্ছে আপনাদের সেই প্রযুক্তি?
- হ্যাঁ, আপনার কথা সঠিক। আমরা এই হিসেবটাও মূলত সেই প্রযুক্তির সাহায্যে বের করেছি। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য এই ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমাদের হাতে। হয় আমরা এইটা করবো, আর নয় তারা এটা করবে। আর তাই তারা করার আগে আমরাই হামলাটা চালাতে চাইছি।
- আপনার সেই প্রযুক্তিবিদকে ডাকুন। নতুন করে কোন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে বলুন যাতে আমরা ভিন্ন কোন উপায়ে এর থেকে সমাধান পেতে পারি।
- দুঃখিত স্যর, কিন্তু সেটা সম্ভব না।
- কেন?
- তাকে বেধে দেয়া ৪ বছর সময়ের পর যখন তার সিস্টেমটি আমরা পর্যবেক্ষণ করি তখন সে এই প্রজেক্ট জমা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সাথে সব কাজ নষ্ট করে দেবার জন্যে পাগলের মত ক্ষেপতে থাকে। নিরাপত্তা প্রহরীরা তাকে বাধা দিতে গেলে সে একজনকে মারাত্মক ভাবে ঘায়েল করে। অন্যজন সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাকে শুট করতে বাধ্য হয়। যদিও তাকে থামানোর জন্যেই কাজটা করা হয়েছিল। কিন্তু হসপিটালাইজ করতে করতে সে মারা যায়।
- What! এভাবে খুন করে ফেলেছেন!
- স্যর, খুন নয়। আত্ম-রক্ষার্থেই কাজটা করা হয়েছে। আর তার উপর এই প্রযুক্তিটা সে নষ্ট করতে উদ্ভূত হয়েছিল।

সাহীন অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে মেজরের দিকে চেয়ে থাকে। এই মেজরের হাতেই আর কিছু সময় পর সে তার এতদিনের কষ্টের ফলাফল তুলে দিবে। অথচ তুলে দেবার আগেই সে তার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে গেলো। তাও আবার তার এই কাজ আর মেজরের বদৌলতে।



চার দিক দ্রুতই অন্ধকার হতে শুরু করে।
অন্ধকার! ঘন অন্ধকার……


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×