গতকাল এক বন্ধুর মানসিক রোগ সংক্রান্ত একটি লেখা পড়ে আমার একজনের কথা মনে পড়ে গেল। আর তাই কিছু লেখার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
মেয়েটি আমার সাথেই পড়তো। সেই তৃতীয় শ্রেণী থেকে আমরা একসাথে পড়েছি। সময়ের আবর্তে এই মেধাবী মেয়েটি আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজনে পরিণত হয়েছিল। ব্যাপারটা অনেকটা এমন ছিল যে ওর মুখ দেখেই আমি বলে দিতে পারতাম ও আসলে এই মুহূর্তে কি অনূভব করছে। এই কথাগুলো এই কারনে বলছি যে পরে ব্যাখ্যা করতে যেন সুবিধা হয়। নিজেদের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয় গুলো ও আমরা শেয়ার করতাম। কলেজে উঠার পর সেকশন আলাদা হয়ে যাওয়াতে কিভাবে যেন কিছুটা দূরত্ত্ব তৈরী হয়ে গিয়েছিল। যোগাযোগ ও কিছুটা কমে গিয়েছিল। তারপর আমি ঢাকা ছেরে চলে এলে সম্পর্কে আরো কিছুটা ভাটা পড়ে গিয়েছিল। নাহলে ওর জীবনটা হয়ত এভাবে পরিবর্তিত হত না।
বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার কিছুদিন পর আমাদের আরেক বান্ধবীর কাছে জানতে পারলাম ও নাকি মানসিক রোগে আক্রান্ত, এর জন্য ও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষাটা ইচ্ছে করেই দেয়নি। অথচ এর জন্যই ও প্রথম থেকে প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। আমি এমন আশ্চর্য মনে হয় আর কখনও হইনি। পরে ওর কাছ থেকেই জানতে পারলাম ওর নাকি "Schizophrenia" হয়ছে। ডক্টরের পরামর্শ মত ও ওষধ সেবন করছে। মাঝে মাঝে ভাল মনে হয়। কিন্তু ওষধ বন্ধ করলেই মানসিক সমস্যাগুলো প্রকট ভাবে দেখা দেয়। ওর লক্ষণ ও সমস্যা গুলো ছিল অনেকটা এমন----
* ওর কানে সব সময় কিছু আওয়াজ ভেসে আসত। আর সেটা ওর মনে হত
ওর মাথার ভেতরে অনবরত বেজেই চলেছে।
* ওর মনে হত কেউ সব সময় ওর ওপর নজর রাখছে।
* ওর সাথে সবাই ভান করছে।
* ওকে কেউ বিশ্বাস করে না
*ও সারারাত ঘুমাতে পারতনা।
ও বরাবরই অনেক ভাল ছাত্রী। এই জন্যেই কিনা জানি না, ও আমাকে ব্যাখ্যা দিতে থাকে কিভাবে নাকি কিছু মানুষ তরঙ্গের (!!) মাধ্যমে ওর ব্রেইনে কিছু ষড়যন্ত্রমূলক কথা প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে। আর এই পুরো ব্যাপারটা নাকি সূক্ষ্ণ টেকনলজিকাল কিছু ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হচ্ছে। ওরা নাকি ওর ফোন ট্র্যাপ করেছে।ওর পুরো বাসা জুড়ে নাকি সি সি ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন লাগিয়ে দিয়েছে। এমন অদ্ভুত আরো কিছু কথা। আমি ওর কথা শুনে কি প্রতিক্রিয়া দিব বুঝতে পারছিলাম না। সব চাইতে যে বিষয় টা আমাকে অবাক করেছিল তা হল আমার সাথে কথা বলার সময় নাকি সেই প্রথম ওর মাথার ভেতর কিছুক্ষণের জন্য হলেও কোন আওয়াজা ভেসে আসছিল না। হয়ত ওর অবচেতন মন টাও আমকে বিশ্বাস করত।
ওর বাবা-মা এর ধারণা ছিল ওর কলেজের কিছু ফ্রেন্ড এর জন্যই নাকি ওর এই অবস্থা। তাই উনারা ওর সব ফ্রেন্ডদের ওদের বাসায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেন, এমনকি কেউ ফোন করলেও বলা হত ও বাসায় নেই বেড়াতে গেছে। অনেকদিন আমি আমার সেই বান্ধবীটির কোন খোজ জানি না। শুধুই প্রার্থণা, আপনারাও দোয়া করবেন, ও যেখানেই থাকুক ভাল থাকু্ক।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




