somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলকাতায় পালিয়ে যাওয়া মানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা নয়

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কলকাতায় পালিয়ে যাওয়া মানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা নয়

অপূর্ব চৌধুরী


মুক্তিযুদ্ধ’ কে ঘিরে কতগুলো প্রশ্ন বেশ অনেকদিন থেকে ভাবাত । নিজের উদ্যোগে সেগুলো জানার চেষ্টা করে যেমন হয়েছিলাম অবাক- তেমনি হতাশ ।

৭০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৩ মিলিয়ন মানুষ এবং ০.২ মিলিয়ন নারী যুদ্ধে মারা গেছেন । যুদ্ধ শেষের ২৪ দিনের মাথায় এই ঘোষণা এলো- যে নিজেই তখন জানে না দেশে আসলে কি হয়েছিল । সংবাদ সম্মেলনে কানে কানে বলে দেয়া কথাকে ইতিহাসের সত্য হিসাবে দাঁড় করিয়ে কেন শুরু থেকেই এমন কলঙ্কিত করলো ? সংখ্যা বড় কথা নয়, বড় হল ইতিহাসের সত্যতা । সত্য আবেগ দিয়ে লেখা হয় না, আবেগ সত্যকে খুঁজে বের করে । একটি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাস কখনো মিথ্যা, মিথ কিংবা লোকের আবেগের উপর দাঁড়িয়ে রচিত হয় না । ইতিহাস সবাইকে তার কাঠগড়ায় দাঁড় করায় । শেখ মুজিবুর রহমানও ব্যতিক্রম নন, তাকেও ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে । অত্যাচার করে সময়ে এই দাঁড় করানকে ঠেকানো যায়; কিন্তু ইতিহাস- ইতিহাসই, তা ব্যক্তিকেও ক্ষমা করে না ।

৭১’ সালে যুদ্ধ শেষে প্রবাসী সরকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম-পরিচয়-ঠিকানা সহ মুক্তিযোদ্ধা ছিল ৯২ হাজার । ১৯৯১ সালে দাঁড়ালো ১ লক্ষ ৮৪ হাজার । ২০১০ সালে দাঁড়ালো ২ লক্ষ ৬৬ হাজার । গত ৪ বছরে নিশ্চয়ই সংখ্যাটি আরও বেড়েছে । প্রশ্ন হল, প্রতিবছর হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় ভাবে জন্ম দেয়াই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ? কেন এবং কি যুক্তিতে প্রতি বছর এমন কলঙ্কজনক রাষ্ট্রীয় মিথ্যা একটি দেশ দিনের পর দিন বহন করে বেড়াচ্ছে ? কোথায় মুক্ত বুদ্ধির লোক, কোথায় ইতিহাসের সত্যতা বার বার বলবার চেষ্টা করা সেইসব অর্বাচীনগণ ?

৭১’ এ প্রায় এক কোটি হিন্দু- শরণার্থী হয়ে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিল, কিন্তু প্রবাসী সরকারের তালিকায় ৯২ হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে হিন্দু মুক্তিযোদ্ধা মাত্র ১৪০০ ! এক কোটি লোক থেকে এলো মাত্র দেড় হাজার ? অথচ ওই এক কোটি লোকদের থেকেই যুদ্ধে যাবার সুযোগ ছিল বেশি । তাহলে একটি গোষ্ঠীর দেশপ্রেম নিয়ে কি প্রশ্ন করা যায় ?

হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অল্প সংখ্যক বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিক্ষক সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল । এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের চরম বাস্তব সত্য, স্বীকার করি আর নাই করি । গোটা নয় মাস নিয়মিত বেতন তোলা - রেশন তোলায় ব্যস্ত ছিলেন তারা । ১৪ ডিসেম্বর’কে প্রতীকী করে কাদের জন্যে এই শোক ? খুঁজে দেখুনতো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যে বুদ্ধিজীবীদের কথা বলা হয় তাদের ৭১ পূর্ব এবং ৭১ সময়ে কাজ-কথা-বিশ্বাস কি কি ছিল ? আহমদ ছফা’র ভাষায়, বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনলে বাংলাদেশ কখনও স্বাধীন হত না ।

আওয়ামী লীগ তখন একমাত্র দল ছিল । তারা দাবি করেন, তাদের দলের লোকজন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল । ভাল কথা । কিন্তু তারা কখনই বলতে পারে না, তাদের দলের কে - কে - কোথায় - কতজন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল ? মজার হল, যারা তাদের তাঁবেদার হয়ে মাঝে মধ্যে হিসাবের পরিসংখ্যান টি জাতিকে দিতে চায়, তাদের কেউ কেউ পাকিস্তানী কুকুর গুলকে মুরগি সাপ্লাই দিয়েছিল । কলকাতায় পালিয়ে যাওয়া মানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা নয় ।

মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করেছিল অর্ধ শিক্ষিত কৃষক, দিনমজুর, সৈনিক, পুলিশ, তরুণ ছাত্রদের একটি অংশ, যাদের কোনও রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিল না। শোষণের মধ্যে দিয়ে বড় হতে হতে ওরা দেখেছিল ঘর থেকে বের হলেই পাকিস্তানী পাষণ্ডদের হাতে প্রতিদিন অপমানিত হবার চেয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ভালো ৷ তাই আমরা দেখি, জাহানারা ইমামের মেধাবী ছেলে রুমি যুদ্ধে চলে যায়, কিন্তু সমবয়সী তরুণ ছাত্র জাফর ইকবাল যায় শর্ষিনা পীরের আস্তানায় !

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস আর ইতিহাস থাকে না; বরং, পলাতকরা হয়ে যায় সাহসী বরকন্দাজ ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×