somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তবুও ভালোবাসি তাকে ( পর্ব ০২)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তবুও ভালোবাসি তাকে ( পর্ব ০১)


ইরার কথা শুনে খানিকটা ধাধায় পড়লাম । ও আসলে কি বলতে চাইসে ।
মানে কি ? ও কি চাইছে আমি ওকে প্রতি দিন রিক্সা ঠিক করে দেই । এই মেয়ে গুলো এতো হেয়ালী জানে !
ইরা চলে যাবার সময় ফিরে তাকাল আমার দিকে । তারপর হেসে হাত নাড়ল । আমি এটা আশা করি নি ।
তারপর থেকে এলাকার সব রিক্সা ওয়ালা বলা হল যে ইরাকে যেন রিক্সার জন্য ওয়েট করে থাকতে না হয় ।
কিন্তু আমি নিজে আর আগের মত থাকতে পারলাম না আমার পরীক্ষার জন্য । পড়াশুনা নিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলাম এমন সময় একদিন ইরার কাছ থেকে একটা খবর এল আমার কাছে । সে আমার সাথে দেখা করতে চায় । যত চাপই থাক পড়াশুনার এই আহবান কি উপেক্ষা করায় ক্ষমতা আছে ?
সেদিন সকাল বেলা আমি ওর জন্য ওয়েট করছিলাম । ঠিক সময়ই ও বের হল । এজ ইউজাল একটা রিক্সাওয়ালা ওর সামনে যায় আর রিক্সা করে চলে গেল । আমি কেমন যেন বেয়াক্কল হয়ে গেলাম । কিরে ভাই বলল যে দেখা করবে আর ও আমাকে চেনেই না এমন ভাব করে চলে গেল । আমার মেজাজটা খারাপ হল । আমি পড়াশুনা বাদ দিয়ে তোমার জন্য এখানে ওয়েট করছি আর তুমি এমন করলে ।
আমি ঘুরে চলে যাবো এমন সময় দেখলাম যে রিক্সাওয়ালা ইরাকে নিয়ে গিয়েছিল সে দ্রুত ফিরে আসছে ।
আমার কাছে এসে ব্রেক কষে বলল “ভাইজান আপামনি আপনারে যাইতে কইছে আমার সাথে ।“
“ও কোথায় ?”
“ হেই দাড়াইয়া আছে সামনে !”
আমি রিক্সায় উঠলাম । মোড় পেরিয়েই দেখলাম একটা গাছের আড়ালে রাজকুমরী দাড়িয়ে আছে । রিক্সা থাকতেই ইরা রিক্সায় উঠে বসল ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল “হুড তুলে দেন ।“
আমি তুলে দিলাম । কতক্ষন রিক্সা চলল ।
এক সময় ও বলল “আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন ?”
আমি অবাক হলাম । ‘কেন ? রাগ করবো কেন ?”
“ না আমার মনে হয়েছে যে আপনি বোধহয় আমার উপর রাগ করেছেন ।“
“ না । আমি রাগ করি নি ।“
“ তাহলে আপনি আমাকে এড়িয়ে চলছেন কেন ?”
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ।
“এড়িয়ে চললাম কোথায় ?”
“ তা না হলে গত এক সপ্তাহে আপনি আমার সাথে দেখা করেন নি কেন ? আমার মনে হয়েছে ঐ দিন আপনাকে টাকা দিয়েছি বলে আপনি হয়তো রাগ করেছেন ।“
“ না প্লিজ এমনটা ভেবো না ।“ আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম । “আসলে আমার পরীক্ষা চলছে তো তাই একটু পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত ।“
ও আমার দিকে তাকাল । দেখলাম ওখানে পানি টলমল করছে ।
“সত্যি করে বলেন । আমার হাত ছুয়ে বলেন ।“
বলতে বলতেই ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল ।
আমি ওর হাত ধরেই বললাম “বিশ্বাস কর আমি তোমাকে এড়িয়ে চলছি না । পরীক্ষাটা শেষ হলেই আবার আগের মত হয়ে যাবো ।“
ওর চোখের পানি মুছে দিলাম । কেমন যেন এক অদ্ভুদ ভালা লাগা আমার পুরো মন জুড়ে বয়ে গেল । একটা মেয়ে আমার সব থেকে পছন্দের মেয়েটা কাঁদছে এই ভেবে যে আমি হয়তো তাকে এড়িয়ে চলছি ।
ওয়াও ! আমি যা চাইতাম তা পেয়ে গেছি আর কি চাই ।
আমি হাসি মুখ দেখে ইরা বলল “হাসছেন কেন ?”
আমি বললাম “আমি কেন হাসছি সেটা পরে বলছি । আগে তুমি বল যে আমি যদি তোমাকে এড়িয়েও চলি তাহলে তুমি কাঁদবে কেন ?”
“ বোঝেন না কেন ?”
“ না বুঝি না । বল আমাকে ।“
ও একটু সময় নিল । তারপর বলল “যে দিন জান লাম আপনি আমাকে পছন্দ করেন তখন খুব বিরক্ত হয়ে ছিলাম । একটা জায়গায় আসতে পারলাম না আর পছন্দ করে শুরু হয়ে গেল । সব এলাকার ছেলে গুলোর কি আর কোন কাজ নাই । কিন্তু আসতে আসতে আপনার সম্মন্ধে জানতে শুরু করলাম । এরকম একটা পজিশনে থেকেও আপনার মধ্যে কোন খারাপ গুন নেই । আপনার কোন বাজে অভ্যাস নাই । কোন বাজে ফ্রেন্ডও নাই । আপনি কথনও আপনার বাবার পাওয়ার দেখান না আর আপনি আমাকে যে ভাবে অদৃশ্য প্রোটেকসন দিয়ে গেছে । আমি চাইলেই নিজেকে দুরে রাখতে পারি নি । ঐ দিন আমি কেবল আপনার সাথে কথা বলার জন্যই গেছিলাম । টাকা দেওয়াটা ছিল কেবল উছিলা ।“
আমি হাসলাম ।
“বুঝলাম । এখন বল” ।
“কি বলব?”
“তোমার ফিলিংসগুলো এক কথায় বল।“
“ইস । বলব না । আপনি বলেন” । ও এবার হাসল ।
তারপর থেকে আমাদের রোমান্টিক অধ্যায়ের শুরু । আমরা প্রায় প্রতি দিন দেখা করতাম । একসাথে দেখা করতাম । ঘুরতাম । দিন গুলো কত যে আনন্দে কাটতে লাগল । কিন্তু ভাল সময় এক সময় শেষ হয় । আমার ও হল ।
ঐ দিন আকাশে মেঘ ছিল । সারাদিন টিপ টিপ করে বৃষ্টি হওয়ার কারনে আমাদের দেখা হয়নি । মনটা ছটফট করছিল ওকে দেখার জন্য । তাই গলির আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম । সন্ধ্যার কিছু পড়ে ও বের হয়ে এল ।
“এতো ক্ষনে আসলে?” আমি জানতে চাইলাম ।
“আজ আর উপায় নাই । একটু পর আব্বু আসবে । এখন যাও । কাল দেখা হবে।“
আমি বললাম “না । আজ সারাদিনে দেখা হয়নি । আর একটু থাকো” ।
“ওরে বাবা । আব্বু দেখলে মেরে ফেলবে । প্লিজ যাও । কাল দেখা হবে” ।
বলে ও গলির মধ্যে ঢুকে গেল । কিন্তু আমার মন মানতে চাইলো না । আমি পিছন পিছন গলির মধ্যে ঢুকলাম ।
পিছন থেকে ওকে চেপে ধরলাম ।
“কি করছো ? প্লিজ ছাড়ো । ছাড়ো । কেউ চলে আসবে “।
আমি ওকে এবার ওর দুই হাত ধরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলাম ।
“ওকে ঠিক আছে । চলে যাচ্ছি । কিন্তু একটা কিস করো” ।
… ... ঠিক এমন সময় ইরা একটু চিত্কার দিয়ে উঠল ।
তারপরই বলল “ছাড় ছাড়” । বলে ও নিজেকে ছাড়ানোর ট্রাই করল ।
আমি বুঝলাম না ও এমন করছে কেন?
ঠিক এমন সময়ে আমার জামার পিছনে একটা শক্ত হাত অনুভব করলাম । কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে ধরে টান মাড়ল । কোন কিছু বোঝার আগেই সে আমাকে কষে একটা চড় মারলো । চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে ।
তারপ্র লোকটাকে আমি চিনতে পারলাম । লোকটা ইরার বাবা । ইরার বাবা আমার কলার চেপে ধরে আবার চড় মাড়ল ।
ভেবেছিলাম ঘটনা এখানেই শেষ হবে । কিন্তু এখানে শেষ হল না । ইরার বাবা আমাকে লোকাল থানায় নিয়ে গেল । রিপোর্ট লেখা হল এটেমপ্ট টু রেপ । দারোগা সাহেব আমার বাবাকে চিনতেন । উনি বাবাকে খবর দিলেন । আমি তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমার সাথে কি এসব কি হচ্ছে । তবুও একটু ভরসা ছিল ইরা নিশ্চই সত্যি কথাটা বলবে ।
বাবা সম্মানি লোক ছিলেন তাই কেইস ফাইল হল না । কিন্তু পরদিন সকালে আমার বিচার বসল । গোপনেই বসল আমাদের বাসায় । সবারই মান সম্মানের ভর ছিল । ওর বাবা ছিল । দারোগা ছিল । আমার বড় ভাই আর বাবা ।
আমার মনে তবুও আশা ছিল যে ইরা নিশ্চই আমার সাথে থাকবে । কিন্তু এমনটা হল না । বিচারে যখন ইরাকে ডাকা হল ।
ও বলল “যে আমি ওকে ডিস্টার্ব করতাম । ওকে ফলো করতাম । সেদিন নাকি সত্যি সত্যি ওকে আমি চেপে ধরেছিলাম” ।
আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না । সত্যি কি ইরা এ কথা বলছে । নাকি ও .. হঠাত্ বাবা এসে আমাকে চড় মাড়ল । এতো জোড়ে যে আমি উলতে পড়লাম । তারপর সে কোমরে বেল্ট খুলে সে আমাকে পেটাতে লাগল ।
কিন্তু আমার সে দিকে কোন খ্যাল ছিল না । আমি কেবল ইরাকে দেখছিলাম । ইরা নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল । কথা বলার সময়ও নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল । আমার আর কিছু মনে নেই । তারপর থেকে আমার বাবা আর আমার কথা বলে নি । এমন কি আমার মুখও দেখে নি ।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৩১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×