somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আম গেল কিন্তু ছালা যায় নি !!!!

১৭ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আটশ চল্লিশ টাকা !!!
বুকের মধ্যে আবার ধক করে উঠল । হার্ট মোটামুটি সবল আমার । তা না হলে ছোটখাটো একটা হার্ট এটার্ক হয়ে যেত !
আমি দোকানদারকে আবার বললাম
-ভাই কত ?
-আটশ চল্লিশ টাকা ।
-এইটুকু একটা খেলনার দাম আটশ চল্লিশ টাকা ?
নীদি বলল
-ভাইয়া দাও না কিনে ।
আমি মুখে যথা সম্ভব হাসি বজায় রেখে বললাম
-এইতো আপু । এখনই দিবো ।
দোকানদার আবার বললাম
-ভাই একটু কমটম রাখা যায় না ?
-না ভাই একদাম ।
দোকানদার বেটাও ফাজিল । সুযোগ পেয়েছে ! তা না হলে এইটুকু একটা খেলা পুতুলের দাম আটশ চল্লিশ টাকা হয় কখনও !
আমি নাদিয়ার দিকে সাহায্যের দৃষ্টিতে তাকালাম । মনের মধ্যে ক্ষীন আশা ও হয়তো নীদিকে ধমক দিবে । বলবে এতো দাম দিয়ে কিনতে হবে না ।
আথবা আমাকে নিষেধ করবে কিনে দিতে ।
কিন্তু কোথায় ? নাদিয়া কেক খাওয়ায় ব্যস্ত । আমার দিকে তাকানোর তার সময় কোথায় ?
এই চিপার দোকানেও এতো বড় বিপদ লুকিয়ে আছে কে জানতো ? আসলে আসাটাই ভুল হয়েছে ।
দুপুর বেলা শান্তি মত ঘুমাচ্ছিলাম এমন সময় নাদিয়ার ফোন ।
-সোনাপাখি কি কর ?
বুকের মধ্যে আবার কেমন যেন করে উঠল । গতমাসের প্রথম দিকে সবে মাত্র টিউশনীর টাকা টা পেয়েছি । ঐ দিনই নাদিয়া ফোন দিলো । সোনাপাখি টোনাপাখি বলে আমাকে গলিয়ে ফেলে বলল ওর কেএফসির বার্গার খেতে খুব খুব ইচ্ছা করছে । ওর ইচ্ছা পুরন করতে গিয়ে আমার পকেট প্রায় ফাকা হয়ে গেল ।
কালকেই টিউশনীর টাকা পেয়েছি । আজই আবার সোনাপাখি ?? আমি ভয়ে ভয়ে বলল
-কি ব্যাপার এই অবেলায় ফোন ?
-কেন আমি আমার জানু পাখিকে ফোন দিতে পারি না ?
-না পারবে না কেন ? অবশ্যই পারো । তুমি ছাড়া আর কে বা আছে ?
তারপরই নাদিয়া ইনিয়েবিনিয়ে কথা শুরু হল । অনেক কথা বলার পর তার আসল কথাটা বলল যার সারমর্ম হল ওদের পাড়ায় একটা সুন্দর পিজ্জার দোকান হয়েছে । খুব সুন্দর নাকি পিজ্জা বানায় । ওকে এখন ঐ পিজ্জা খাওয়াতে হবে ।
-জান খাওয়াবা না ?
-আরে খাওয়াবো না মানে ? আমার জান পাখি সমান্য একটা পিজ্জা খেতে চেয়েছে আমি খাওয়াবো না । অবশ্যই খাওয়াবো । তা ইয়ে পিজ্জার প্রাইস কেমন ? বোঝই তো টাকা পয়সা নিয়ে আসতে হবে না ।
-জান দাম একদম বেশি না । আমাদের দুজনের জন্য মিডিয়াম সাইজের একটা নিলেই চলবে । এই মনে কর ৫২০ টাকা । ড্রিংস মনে কর ১০০ । এই ভ্যাট ট্যাট নিয়ে হাজার খানেক আনলেই চলবে । অত লাগবেও না । বলো সোনাপাখি এটা কি খুব বেশি ?
বেশি না ? শালী বলে কি ? জানিস হাজার টাকা ইনকাম করতে কত খানি কষ্ট হয় । পুরা মাস টিউশনি করে আমি হাজার তিনেক টাকা পাই । আর তুই এক দিনে হাজার টাকা খরচ করার কথা বলছিস । তোর মনে কি আমার জন্য মায়া দয়া বলে কিছু নাই ? আমার কষ্টের টাকা গুলো খরচ করতে তোর একটুও মায়া লাগে না ?
-কি হল সোনাপাখি কথা বলছো না কেন ?
-হ্যা হ্যা অবশ্যই । এটাতো তেমন কোন ব্যাপারই না । আমি বিকেল বেলাতেই আসছি ।
বিকেল বেলাতে নাদিয়াদের এলাকাতে গেলাম । ঠিক ওদের বাড়ির একটু দুরেই পিজ্জার দোকানটা । নাদিয়াকে সাথে নিয়ে যখন পিজ্জার দোকানের সামনে গেলাম আমার গলার পানি শুকিয়ে গেল । দোকানে শো সা দেখে তো মনে হচ্ছে না যে একহাজার টাকায় হবে । বাড়তি যে পাঁচশ টাকা নিয়ে এসে ছিলাম ওটাও বোধহয় গেল ।
আল্লাহই জানে সামনের দিন গুলো কেমন করে কাটবে । সবে মাত্র মাসের শুরু এখনও দিন পরেই আছে । আমি আল্লাহর নাম নিতে নিতে দোকানের দিকে পা বাড়ালাম । নাদিয়া আমার পাশে । ওকে কত খুশিই না মনে হচ্ছে । খুশিতো লাগবেই অন্যের রক্ত চুশে খেতে তো মজাই লাগবে ।
কাচ ঠেলে দোকানে ঢুকতে যাবো এমন সময় নাদিয়ে আমার হাত ধরে টা ধরে টান দিলো । আমি ঠিক বুঝলাম না । বললাম
-কি হয়েছে ??
নাদিয়া চাপা স্বরে বলল
-ভাইয়া ।
-ভাইয়া !!
আমার বুকটা ধক করে উঠল ।
-কোথায় তোমায় ভাইয়া ?
নাদিয়ার বড় ভাই নীলয় । ঐ লোককে আমি খুব ভয় পাই । একবার আমাকে নাদিয়ার সাথে ঘুরতে দেখে কান ধরে উদবস করিয়ে ছিল । এবার যদি দেখে কি করবে কে জানে !
নাদিয়া দোকানের ভিতরে ইশারা করল । কাচ দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখলাম নিলয় ভাই একটা মেয়ের সাথে হাসি মুখ করে কথা বলছে । নাদিয়া বলল
-চল এখান থেকে । ভাইয়া দেখতে পেলে আমার খবর আছে ।
আহা ! আমার হাজার টাকা বোধহয় বেঁচে গেল !
জীবনে এই প্রথম বার নীলয় ভাইকে বড় আপন মনে হল । মনে মনে বললাম ভাই আপনি আমার যে উপকার করলেন তা আমি কোন দিন শোধ করতে পারবো না ।
গতমাসে যদি নীলয় ভাই কেএফসির সামনে গিয়ে দাড়াত তাহলে আমার কত গুলো টাকা বেঁচে যেত ।
-কই চল । নাদিয়া তাড়া দিল ।
-তাহলে পিজ্জা খাবা না ।
-আরে পিজ্জা খাওয়া জাহান্নামে যাক ভাইয়া যদি তোমার সাথে দেখে না .... তোমাকে তো ধোলাই দেবেই আমার খবর করবে ।
মনের মধ্যে খুব আনন্দ হচ্ছিল । মুখে এমন একটা ভাব করলাম যে নাদিয়াকে পিজ্জা খাওয়াতে না পেরে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে । পিজ্জার দোকানের সামনে থেকে চলে এলাম ।
যদিও আমার মোটেই ইচ্ছা ছিল না তবুও ক্ষীণ কন্ঠে বললাম
-অন্য কোথাও চল ।
-নাহ । আজকে আর কোথাও যাবো না ।
-আরে এটা কোন কথা হল ? অন্য কোথাও চল । সমস্যা কি !
-নাহ বাসায় বলে এসেছি এখনই আসছি । বেশি দেরি করার উপায় না ।
-বেশি দেরিতো হবে না । একেবারে খালি মুখে গেলে কেমন লাগে বল ?
এমন ভাবে কথা গুলো বললাম যেন ও যে না খেয়ে যাচ্ছে এতে আমার খুব খারাপ লাগছে ।
-আচ্ছা সোনা তোমার যখন এতো খারাপ লাগছে আসো এই সামনের দোকান থেকে কেক খাই ।
নিজেকে একটা থাপ্পর দিতে মন চাইল । চলে যাচ্ছিল ভালই হচ্ছিল । এতো সাধাসাধির কি দরকার ছিল ? তবুও ভাগ্য ভাল যে অল্পের উপর দিয়ে যাচ্ছে ।
পেস্ট্রি সপটা নাদিয়াদের বাসায় একদম সামনেই । বসেবসে কেক খাচ্ছিলাম ঠিক এই সময় নীদি এসে হাজির । নীদি নাদিয়ার ছোট বোন । ক্লাস টু না থ্রিতে পড়ে ।
আমি বললাম
-কেক খাও আপু ।
-না কেক খাবো না ।
-কি খাবা ?
ও আমার হাত ধরে দোকানের আরো ভিতরে নিয়ে গেল । তারপর ঐ পুতুলটা কিনে দিতে বলল ।
প্রথমে ভেবেছিলাম অল্প দাম ।
কিন্তু দাম শুনে আমারতো হার্ট এটাকের মত অবস্থা । নীদি আবার বলল
-ভাইয়া কিনে দাও ভাইয়া ।
-আপু এতো দাম দিয়ে জিনিস কিনতে হয় না । আর এই পুতুলটা ভাল না ।
-না এটা ভাল ।
-ভাল না আপু । তুমি অন্য কিছু নাও ।
আমি পুতুলটা দোকানদারকে ফেরত্ দিলাম । নীদিকে বললাম
-আপু তুমি অন্য কিছু নিবে ?
পিচ্চিটা জোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠল । বলল
-তুমি ভাল না । তুমি পচা । আম্মুকে সব বলে দেবো ।
এই বলে দৌড়ে চলে গেল । আমি ওকে ঠ্যাকানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না । নাদিয়া আমার কাছে এসে বলল
-তুমি এমন করলে কেন ?
-কেমন করলাম ?
-নীদিকে খেলনাটা কিনে দিলে কি হত ?
আমি কোন মতে বললাম
-এই টুকু পুতুলের দাম এতো হয় নাকি ! এখানে বেশি চাচ্ছে ।
-দাম ! আমার বোনের খুশির চেয়ে তোমার কাছে দামটাই বেশি হল ।
-না মানে ?
-থাকো তুমি তোমার টাকা নিয়ে । সামান্য কয়টা টাকার জন্য যে আমার বোনকে কষ্ট দিতে পারে সে আমাকেও কষ্ট দিতে পারে । তুমি আর কখনও আমার কাছে ফোন দিবা না । তোমার সাথে আমার সব রিলেশন শেষ ।
এই বলে আধ খাওয়া কেকের প্লেট টা আমার হাতে দিয়ে হনহন করে চলে গেল । আমি বোকার মত দাড়িয়ে রইলাম ।
একটু পর দোকানদার এসে বলল
-মামা কেকের বিলটা !
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×