-আটশ চল্লিশ টাকা !!!
বুকের মধ্যে আবার ধক করে উঠল । হার্ট মোটামুটি সবল আমার । তা না হলে ছোটখাটো একটা হার্ট এটার্ক হয়ে যেত !
আমি দোকানদারকে আবার বললাম
-ভাই কত ?
-আটশ চল্লিশ টাকা ।
-এইটুকু একটা খেলনার দাম আটশ চল্লিশ টাকা ?
নীদি বলল
-ভাইয়া দাও না কিনে ।
আমি মুখে যথা সম্ভব হাসি বজায় রেখে বললাম
-এইতো আপু । এখনই দিবো ।
দোকানদার আবার বললাম
-ভাই একটু কমটম রাখা যায় না ?
-না ভাই একদাম ।
দোকানদার বেটাও ফাজিল । সুযোগ পেয়েছে ! তা না হলে এইটুকু একটা খেলা পুতুলের দাম আটশ চল্লিশ টাকা হয় কখনও !
আমি নাদিয়ার দিকে সাহায্যের দৃষ্টিতে তাকালাম । মনের মধ্যে ক্ষীন আশা ও হয়তো নীদিকে ধমক দিবে । বলবে এতো দাম দিয়ে কিনতে হবে না ।
আথবা আমাকে নিষেধ করবে কিনে দিতে ।
কিন্তু কোথায় ? নাদিয়া কেক খাওয়ায় ব্যস্ত । আমার দিকে তাকানোর তার সময় কোথায় ?
এই চিপার দোকানেও এতো বড় বিপদ লুকিয়ে আছে কে জানতো ? আসলে আসাটাই ভুল হয়েছে ।
দুপুর বেলা শান্তি মত ঘুমাচ্ছিলাম এমন সময় নাদিয়ার ফোন ।
-সোনাপাখি কি কর ?
বুকের মধ্যে আবার কেমন যেন করে উঠল । গতমাসের প্রথম দিকে সবে মাত্র টিউশনীর টাকা টা পেয়েছি । ঐ দিনই নাদিয়া ফোন দিলো । সোনাপাখি টোনাপাখি বলে আমাকে গলিয়ে ফেলে বলল ওর কেএফসির বার্গার খেতে খুব খুব ইচ্ছা করছে । ওর ইচ্ছা পুরন করতে গিয়ে আমার পকেট প্রায় ফাকা হয়ে গেল ।
কালকেই টিউশনীর টাকা পেয়েছি । আজই আবার সোনাপাখি ?? আমি ভয়ে ভয়ে বলল
-কি ব্যাপার এই অবেলায় ফোন ?
-কেন আমি আমার জানু পাখিকে ফোন দিতে পারি না ?
-না পারবে না কেন ? অবশ্যই পারো । তুমি ছাড়া আর কে বা আছে ?
তারপরই নাদিয়া ইনিয়েবিনিয়ে কথা শুরু হল । অনেক কথা বলার পর তার আসল কথাটা বলল যার সারমর্ম হল ওদের পাড়ায় একটা সুন্দর পিজ্জার দোকান হয়েছে । খুব সুন্দর নাকি পিজ্জা বানায় । ওকে এখন ঐ পিজ্জা খাওয়াতে হবে ।
-জান খাওয়াবা না ?
-আরে খাওয়াবো না মানে ? আমার জান পাখি সমান্য একটা পিজ্জা খেতে চেয়েছে আমি খাওয়াবো না । অবশ্যই খাওয়াবো । তা ইয়ে পিজ্জার প্রাইস কেমন ? বোঝই তো টাকা পয়সা নিয়ে আসতে হবে না ।
-জান দাম একদম বেশি না । আমাদের দুজনের জন্য মিডিয়াম সাইজের একটা নিলেই চলবে । এই মনে কর ৫২০ টাকা । ড্রিংস মনে কর ১০০ । এই ভ্যাট ট্যাট নিয়ে হাজার খানেক আনলেই চলবে । অত লাগবেও না । বলো সোনাপাখি এটা কি খুব বেশি ?
বেশি না ? শালী বলে কি ? জানিস হাজার টাকা ইনকাম করতে কত খানি কষ্ট হয় । পুরা মাস টিউশনি করে আমি হাজার তিনেক টাকা পাই । আর তুই এক দিনে হাজার টাকা খরচ করার কথা বলছিস । তোর মনে কি আমার জন্য মায়া দয়া বলে কিছু নাই ? আমার কষ্টের টাকা গুলো খরচ করতে তোর একটুও মায়া লাগে না ?
-কি হল সোনাপাখি কথা বলছো না কেন ?
-হ্যা হ্যা অবশ্যই । এটাতো তেমন কোন ব্যাপারই না । আমি বিকেল বেলাতেই আসছি ।
বিকেল বেলাতে নাদিয়াদের এলাকাতে গেলাম । ঠিক ওদের বাড়ির একটু দুরেই পিজ্জার দোকানটা । নাদিয়াকে সাথে নিয়ে যখন পিজ্জার দোকানের সামনে গেলাম আমার গলার পানি শুকিয়ে গেল । দোকানে শো সা দেখে তো মনে হচ্ছে না যে একহাজার টাকায় হবে । বাড়তি যে পাঁচশ টাকা নিয়ে এসে ছিলাম ওটাও বোধহয় গেল ।
আল্লাহই জানে সামনের দিন গুলো কেমন করে কাটবে । সবে মাত্র মাসের শুরু এখনও দিন পরেই আছে । আমি আল্লাহর নাম নিতে নিতে দোকানের দিকে পা বাড়ালাম । নাদিয়া আমার পাশে । ওকে কত খুশিই না মনে হচ্ছে । খুশিতো লাগবেই অন্যের রক্ত চুশে খেতে তো মজাই লাগবে ।
কাচ ঠেলে দোকানে ঢুকতে যাবো এমন সময় নাদিয়ে আমার হাত ধরে টা ধরে টান দিলো । আমি ঠিক বুঝলাম না । বললাম
-কি হয়েছে ??
নাদিয়া চাপা স্বরে বলল
-ভাইয়া ।
-ভাইয়া !!
আমার বুকটা ধক করে উঠল ।
-কোথায় তোমায় ভাইয়া ?
নাদিয়ার বড় ভাই নীলয় । ঐ লোককে আমি খুব ভয় পাই । একবার আমাকে নাদিয়ার সাথে ঘুরতে দেখে কান ধরে উদবস করিয়ে ছিল । এবার যদি দেখে কি করবে কে জানে !
নাদিয়া দোকানের ভিতরে ইশারা করল । কাচ দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখলাম নিলয় ভাই একটা মেয়ের সাথে হাসি মুখ করে কথা বলছে । নাদিয়া বলল
-চল এখান থেকে । ভাইয়া দেখতে পেলে আমার খবর আছে ।
আহা ! আমার হাজার টাকা বোধহয় বেঁচে গেল !
জীবনে এই প্রথম বার নীলয় ভাইকে বড় আপন মনে হল । মনে মনে বললাম ভাই আপনি আমার যে উপকার করলেন তা আমি কোন দিন শোধ করতে পারবো না ।
গতমাসে যদি নীলয় ভাই কেএফসির সামনে গিয়ে দাড়াত তাহলে আমার কত গুলো টাকা বেঁচে যেত ।
-কই চল । নাদিয়া তাড়া দিল ।
-তাহলে পিজ্জা খাবা না ।
-আরে পিজ্জা খাওয়া জাহান্নামে যাক ভাইয়া যদি তোমার সাথে দেখে না .... তোমাকে তো ধোলাই দেবেই আমার খবর করবে ।
মনের মধ্যে খুব আনন্দ হচ্ছিল । মুখে এমন একটা ভাব করলাম যে নাদিয়াকে পিজ্জা খাওয়াতে না পেরে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে । পিজ্জার দোকানের সামনে থেকে চলে এলাম ।
যদিও আমার মোটেই ইচ্ছা ছিল না তবুও ক্ষীণ কন্ঠে বললাম
-অন্য কোথাও চল ।
-নাহ । আজকে আর কোথাও যাবো না ।
-আরে এটা কোন কথা হল ? অন্য কোথাও চল । সমস্যা কি !
-নাহ বাসায় বলে এসেছি এখনই আসছি । বেশি দেরি করার উপায় না ।
-বেশি দেরিতো হবে না । একেবারে খালি মুখে গেলে কেমন লাগে বল ?
এমন ভাবে কথা গুলো বললাম যেন ও যে না খেয়ে যাচ্ছে এতে আমার খুব খারাপ লাগছে ।
-আচ্ছা সোনা তোমার যখন এতো খারাপ লাগছে আসো এই সামনের দোকান থেকে কেক খাই ।
নিজেকে একটা থাপ্পর দিতে মন চাইল । চলে যাচ্ছিল ভালই হচ্ছিল । এতো সাধাসাধির কি দরকার ছিল ? তবুও ভাগ্য ভাল যে অল্পের উপর দিয়ে যাচ্ছে ।
পেস্ট্রি সপটা নাদিয়াদের বাসায় একদম সামনেই । বসেবসে কেক খাচ্ছিলাম ঠিক এই সময় নীদি এসে হাজির । নীদি নাদিয়ার ছোট বোন । ক্লাস টু না থ্রিতে পড়ে ।
আমি বললাম
-কেক খাও আপু ।
-না কেক খাবো না ।
-কি খাবা ?
ও আমার হাত ধরে দোকানের আরো ভিতরে নিয়ে গেল । তারপর ঐ পুতুলটা কিনে দিতে বলল ।
প্রথমে ভেবেছিলাম অল্প দাম ।
কিন্তু দাম শুনে আমারতো হার্ট এটাকের মত অবস্থা । নীদি আবার বলল
-ভাইয়া কিনে দাও ভাইয়া ।
-আপু এতো দাম দিয়ে জিনিস কিনতে হয় না । আর এই পুতুলটা ভাল না ।
-না এটা ভাল ।
-ভাল না আপু । তুমি অন্য কিছু নাও ।
আমি পুতুলটা দোকানদারকে ফেরত্ দিলাম । নীদিকে বললাম
-আপু তুমি অন্য কিছু নিবে ?
পিচ্চিটা জোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠল । বলল
-তুমি ভাল না । তুমি পচা । আম্মুকে সব বলে দেবো ।
এই বলে দৌড়ে চলে গেল । আমি ওকে ঠ্যাকানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না । নাদিয়া আমার কাছে এসে বলল
-তুমি এমন করলে কেন ?
-কেমন করলাম ?
-নীদিকে খেলনাটা কিনে দিলে কি হত ?
আমি কোন মতে বললাম
-এই টুকু পুতুলের দাম এতো হয় নাকি ! এখানে বেশি চাচ্ছে ।
-দাম ! আমার বোনের খুশির চেয়ে তোমার কাছে দামটাই বেশি হল ।
-না মানে ?
-থাকো তুমি তোমার টাকা নিয়ে । সামান্য কয়টা টাকার জন্য যে আমার বোনকে কষ্ট দিতে পারে সে আমাকেও কষ্ট দিতে পারে । তুমি আর কখনও আমার কাছে ফোন দিবা না । তোমার সাথে আমার সব রিলেশন শেষ ।
এই বলে আধ খাওয়া কেকের প্লেট টা আমার হাতে দিয়ে হনহন করে চলে গেল । আমি বোকার মত দাড়িয়ে রইলাম ।
একটু পর দোকানদার এসে বলল
-মামা কেকের বিলটা !
আলোচিত ব্লগ
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকারের বিয়াইন

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?
কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।
রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।
রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন
দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।