somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার গার্লফ্রেন্ড নিহিন আর আমি এবং একটা রাতের গল্প (শেষ খন্ড)

১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমটুকু

ঠিক এই সময়ই মা দরজা ধাক্কা দিল । দরজা খুলে দিলাম । মা বলল
-বসার ঘরে আর ।
মায়ের পিছন পিছন বসার ঘরে গিয়ে বেশ অবাক হলাম । বাড়িওয়ালা চাচা এসেছে । হাথে পাড়ার মসজিদের ঈমামও এসেছে ।
-কি ব্যাপার ?
মা বলল
-ছাদে তুই কার সাথে ছিলি বল । সত্যি করে বল ।
মার কণ্ঠে এমন কিছু ছিল যে আমি মিথ্যা কথা বলতে পারলাম না ।
মোটামুটি সবকিছুই বলে দিলাম । এরপর আমাদের বাড়িয়ালা যা বলল তা আমার বিশ্বাস হল না । বিশ্বাস হবার কোন কারন নাই ।
বাড়িয়ালা চাচা কথা অনুযায়ী তার বাড়িতে নিহিন নামে কেউ থাকে না । তবে কিছু দিন আগে থাকতো । পাঁচতলার বাম পাশের ফ্লাটে ওরা থাকতো বাবা মার সাথে ।
কিন্তুএকদিন মায়ের বকা খেয়ে রাগ করে মেয়েটা আত্মহত্যা করে । তারপর থেকে ওখানে আর কেউ থাকে না ।
আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম ।
কি বলছে এরা এসব ? এ হতেই পারে না । হুজুর বলল যে খারাপ জিনের আসর পরেছে আমার উপর । তিনি নিহিনের দেওয়া ব্রেসলেট টা ফেলে দিলেন তার বদলে একটা তাবিজ বেঁধে দিলেন ।
-এটা থাকলে আর কোন সমস্যা নাই । দুষ্ট জিন কিছুতেই আমার কাছে আসতে পারবে না ।
আমি খানিকটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম মনে হল । সবাই চলে গেলে নিজের রুমে ফিরে এলাম । কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছিল না ।
যে যাই বলুক আমি তো নিহিনকে ভালবাসি । আর ও আমাকে ভালবাসে । ওর কথা গুলো আমার কানে বাঁচতে লাগল ।
“আমি সত্যি তোমাকে ভালবেসেছি । আমি কখনও তোমার কোন ক্ষতি করবো না” ।
সত্যিই তাই । নিহিন আমার কোন ক্ষতি করতে পারে না ।
বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে গেলেও আমার গুম আসছে না কিছুতেই । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় তিনটা বাজে । এমন সময় ধুপ করে কারেন্ট টা চলে গেল । ফ্যান চলার আওয়াজটা বন্ধ হতেই চারিদিকটা কেমন জানি নিস্তদ্ধ হয়ে গেল ।
চারিদিকটা কেমন জানি একটু বেশিই নিরব মনে হল । ঠিক তখনই আমি কেমন জানি একটা ক্ষীন কান্নার আওয়াজ পেলাম । কান্নার আওয়াজটা আস্তে আসতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
একটা সময় এসে আমার মনে হল কান্নার আওয়াজটা আমার খুব পরিচিত । আরে এটা নিহিনের আওয়াজ ।
আজ ফোনেও ঠিক এই ভাবেই ও কাঁদছিল । জিনিসটা বোঝার পর আমার মনের মধ্যে কেমন জানি অস্থিরতার সৃষ্টি হল ।
নিহিন কাঁদছে ।
ওর কাছে আমাকে যেতেই হবে । কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল ও তো মানুষ না ।
যদি কিছু হয় ?
কি হবে ?
ও যাই হোক ও আমাকে ভালবাসে । ও কখনই আমার ক্ষতি করবে না ।
ওর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । হাতরে মোবাইলটা খুজে ওটার আলো জ্বেলে টিপ টিপ পায়ে ছাদের দিকে রওনা দিলাম । যদিও ভয় করছিল ।
একজন অশরীরির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি । ভয়তো পাবার ই কথা । সিড়ি গুনে গুনে যখন উপরে উঠছিলাম প্রতিটা পদক্ষেকের সাথে সাথে যেন আমার ভয়টা আরো বাড়তে লাগল ।
যখন সিড়ি ঘরের দরজা খুলতে যাবো তখন একটা কথা মনে হল । আগে তো নিহিনের কথাটা আমি জানতাম না , তাই ও হয়তো কিছু বলে নি কিন্তু এখন তো জানি ।
ও তো মানুষ না ।
অশরীরি । আত্মা । পেত্নী ।
পেত্নী………… ??
নিজের কাছেই কেমন জানি লাগল । একটা পেত্নী আমার গার্লফ্রেন্ড !
এতো ভয়ের মধ্যেও আমার হাসি পেয়ে গেল ।
মানুষ ডেটিং করতে কোন পার্কে অথবা রেস্টুরেন্ট যায় ।
আমি কোথায় যাবো ? তেতুল বা তাল গাছের তলে ? সবচেয়ে ভাল হবে শ্বশান ।
ও ফাইন !
মানুষ জিজ্ঞেস করবে কি রে কই যাচ্ছিস ?
আমি কি বলব ?
আমি বলবো শ্বাশানে যাচ্ছি গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটিং করতে !
চমৎকার হবে !
সিড়ি ঘরে দরজা ঠেলে ছাদে এলাম । পরিচিত ছাদটা কেমন জানি অপরিচিত মনে হল । নিহিনের সাথে কতবার এখানে এসেছি । কিন্তু আজকে পরিস্থিতি ভিন্ন ।
বুকের মধ্যে টিপটিপ করছে । কান্নার আওয়াজটা এখনও পাওয়া যাচ্ছে । ছাদের বাম পাশ থেকে আসছে । বাম দিকটাতে যেতেই আমার বুকটা ধুপ করে উঠল ।
আমি একটা বেঞ্চ এনে রেখেছিলাম নিহিনের সাথে বসে গল্প করার জন্য ।
দেখলাম ঐ বেঞ্চটার উপর কেউ বসে আসে উল্টো দিকে মুখ করে । এখনও কাঁদছে । আমি স্পষ্টই বুঝতে পারছি ওটা নিহিনই ।
কিন্তু মনে মধ্যে কু ডাকতে লাগল । আমি আস্তে আস্তে নিহিনের দিকে এগিয়ে গেলাম । কাঁপা কাঁপা হাতে কাছে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখলাম ।
হঠাৎ করে ভয়টা কেন জানি বেড়ে গেল । এখন নিহিন ফিরে তাকাবে ।
কি দেখবো ?
হয়তো দেখবো কোন ভয়ংকর চেহারা ! অথবা পচা গলা কোন মুখ যেখান থেকে খশে খশে মাংশ পড়ছে । ভুতের গল্প গুলোতে স্বাধারন এরকমই হয় ।
আমি চিৎকার দেবার প্রস্তুতি নিলাম । নিহিন ফিরে তাকাল আমার দিকে । আমার চিৎকার গলার মধ্যেই আটকে গেল ।
নিহিনের চেহারা স্বাভাবিকই আছে । কোন বিকৃতি নাই ।
লেখকরা এমন ভাবে লেখে না !
কিন্তু নিহিনের চেহারা কেমন একটা মলিন ভাব । আর ওর চোখ দুটো কি বিষন্ন ! আর এই আবছা চাঁদের আলো ওর বিষন্নতা কে যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ।
ওর এই বিষন্ন চেহারা দেখে আমার সব ভয় নিমিষের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেল । ভয়ের জায়গায় কষ্ট হতে লাগল ।
নিহিনকে বললাম
-আমি কিন্তু কারো কথা শুনি নি । আমার মন যা বলেছে কেবল তাই শুনেছি ।
নিহিন এবার সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলল । তবে ওর এ কান্নাটা দঃখের না আনন্দর । নিহিন বলল
-জানো মন বলছিল যে তুমি সত্যিটা জানার পরও আমাকে ছেড়ে যাবে না ।
ওর পাশে গিয়ে বসলাম । ও বলল
-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
-বল ।
-আমাকে ভয় লাগছে না ?
আমি হাসলাম । বললাম
-এমন সুন্দর পেত্নীকে কি কেউ ভয় পায় ?
-কি বললা তুমি ? পেত্নী ? তোমার ঘার মটকে দিবো কিন্তু !
-ওহ সরি সরি ! পেত্নী না মহিলা ভুত । অথবা শাকচুন্নী ।
-অপু ভাল হবে না বলে দিচ্ছি । আমি কিন্তু রাগ করে চলে যাবো ।
আমি হাসতে ওর হাতটা ধরলাম । বরাবরের মত ওর হাতটা বেশ ঠান্ডা । কিন্তু আজকে আমার কোন অস্বস্তি লাগল না । ওর হাত ধরে বললাম
তুমি আমার জীবনে সব থেকে সুন্দর পরী । তুমি যাই হও না কেন তোমাকেই ভালবাসি ।
নিহিন খুব খুশি হল ।
-অপু জানো আমি যদি বেঁচে থাকতাম তাহলে বাস্তবেও তোমার সাথে আমার এরকম রিলেশন হত! এই ভাবে তোমার সাথে প্রেম করতাম । লুকিয়ে দেখা করতাম ।
-তোমার কি মনে হচ্ছে এটা অবাস্তব !
নিহিনের মুখটা আবার মলিন হয়ে গেল । ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এটা অবাস্তবই । তুমি আমাকে বাস্তবে দেখছো না । স্বপ্নে দেখছো । আসলে আমিই তোমাকে এই স্বপ্নটা দেখাচ্ছি । জানো অপু এই কয় বছর আমি খুব অশান্তির মধ্যে ছিলাম । কিন্তুর আজকের পর থেকে আমি শান্তিতে থাকবো । তোমার এই ভালবাসাটুকু আমার জন্য খুব দরকার ছিল । তুমি ভাল থেকো কেমন ! আর আমার কথা মনে রেখো ।
এই বলে নিহিন আমার হাতে ঐ ব্রেসলেটা বেঁধে দিল যেটা হুজুর খুলে ফেলেদিয়ে ছিল । আমি ওকে চলে যেতে দেখে বললাম
-কোথায় যাচ্ছ?
নিহিন বলে ডাক দিলাম কিন্তু ও আর ফিরে এল না । আর একবার ডাক দিতে যাবো ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ।
আসলেই চারিদিকে গাঢ় অন্ধকারে ছেয়ে আছে । কারেন্ট চলে গেছে । এতোক্ষন তাহলে সত্যি স্বপ্ন দেখছিলাম ।
কিন্তু এতো বাস্তব মনে হল ।মোবাইলের আলো জ্বালালাম সময় দেখার জন্য ।
কিন্তু মোবাইলের আলো তে যা দেখলাম তা সত্যিই বিশ্বাস হল না । আমার বা হাতে নিহিনের ঐ ব্রেসলেট টা বাধা । যেটা ও আমাকে একটু আগে স্বপ্নের মধ্যে বেঁধে দিয়েছিল ।

সমাপ্ত


(খানিকটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০০
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×