-ই মেয়ে ! এদিকে এস ।
সকাল বেলা শুয়ে ছিলাম । শরীর খারাপ বলে মা বিছানা থেকে একদম উঠতে মানা করেছে । আর মায়ের হুকুম অমান্য করা সাধ্য কার আছে !! তাই শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলাম । ঠিক এমন সময় মার গলা শুনতে পেলাম ।
মা কাকে যেন ধমক দিয়ে কথা বলছে । আমার মার এই কঠিন কন্ঠস্বর আমাদের পরিবারের সবাই খুব ভয় পায় । এমন কি বাবাও চুপ করে থাকে ।
বাবা মার এই কঠিন কন্ঠস্বর শুনলে বলে
-তোমাকে দেখলে আমার কেবল আমার হেডমিস্ট্রেসের কথা মনে পড়ে !!
সত্যি কথা বলতে গেলে আমাদের স্কুলের হেড স্যারের গলাও এতো চড়া না ।
আমার মা যদি হেড মিস্ট্রেস হত তাহলে আমাদের স্কুলের ছেলে মেয়ে দের খবরই ছিল । আল্লাহই জানে আজ কার খবর আছে !
কাকে বকছে কে জানে !
-এই মেয়ে তোমাকে না এদিকে আসতে বললাম ! কানে শোনো না ?
আমি ঐ মেয়েটার জন্য দোয়া করলাম । হে খোদা মেয়েটাকে রক্ষা কর ।
মা উঠানে দাড়িয়ে কথা বলছে আমি এখান থেকে শুনতে পাচ্ছি ।
-কি হল ? এখানে ঘোরাঘুরি করছ কেন ? সেই কখন থেকে দেখছি !
কোন কথা নাই । মেয়েটা নিশ্চই ভয়ে কুকরে গেছে । ভয়ে কথা বলতে পারছে না ।
একবার একটা টোকাই মেয়ে আমাদের বাসার মধ্যে ঢুকে পরেছিল । মা ঐ বেচারীকে এমন ধমক দেওয়া দিয়েছিল যে ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না । দিপু বলছিল
-ভাইয়া তুমি যদি দেখতে বেচারী আর একটু হলেই অজ্ঞান হয়ে যেত মার ধমক শুনে ।
-কি নাম তোমার ?
খানিক নিরবতা । মা আবার বলল
-কি বললে জোড়ে বল ?
আমি মনে মনে হাসলাম । মার কথার সামনে সবার গলার ভয়েজ ই নেমে যায় ।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় নীলু যদি মার সামনে এসে পড়ে নীলুর তো খবরই আছে । নীলুর কণ্ঠস্বর এমনিতেও একটু নীচু ।
ও যখন কথা বলে আমি এমনিতেই শুনতেই পাই না ঠিক মত আর যদি মার গলার ভয়েজ যদি ও শোনে ওর মুখ দিয়ে তো আওয়াজই বের হবে না ।
-কি নাম বললে ? কি ? নীলু ? ভাল নাম বল ?
-নাদিয়া তাবাস্সুম ।
এবার আমার বুকটা ধক করে উঠল । কারন কন্ঠটা নীলুর । আমি ভয়ে ভয়ে জানলা দিয়ে মাথা তুলে তাকালাম । যা দেখলাম তার জন্য আমি তৈরি ছিলাম না কিছুতেই ।
নীলু মার সামনে দাড়িয়ে আছে ।
ও এখানে কি করছে ? মা যদি টের পায় তাহলে আমাকে আস্তো চিবিয়ে খাবে । এই মেয়েটা কি আমাকে ডুবাবে দেখছি !
-তুমি কে ?
নীলু নিচু স্বরে বলল
-আমি নীলু ।
-আরে নীলুতো বুঝলাম । এখানে কি ?
-আসলে আন্টি আমি অপুর সাথে পড়ি । শুনলাম ওর শরীর খারাপ । তাই ওকে দেখতে এসেছি ।
-তা দেখতে এসেছো ভাল কথা । এদিক ওদিক ঘোরাফেরা কেন করছো ?
-আসলে আন্টি ....
নীলুর চেহারা কেমন একটা হতাশ ভাব ফুটে উঠল । কি বলবে ভেবে পেল ।
তবে দেখলাম মা আর কিছু জিজ্ঞেস করল না । বলল
-ঐ যে সামনের ঘরটাতে ও আছে । যাও ।
আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । একটু পরেই দরজায় নীলুকে দেখতে পেলাম ।
চট করেই আমার মনটা ভাল হয়ে গেল । আসলে নীলুর চেহারায় এমন কিছু একটা আছে আমার মনে কেমন একটা শান্তির ভাব চলে আসে । ওর কোমল চেহারাটা আমাকে খুব আনন্দ দেয় । কিন্তু আজ ওর চেহারা টা কেমন মলিন মনে হল ।
ও ঘরে ঢুকতেই বললাম
-তুমি এখানে কেন ? তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে ! মা টের পেলে উপায় ?
নীলু মলিন কণ্ঠে বলল
-তোমাকে খুব দেখতে আচ্ছা করছিল ?
-তাই বলে এখানে চলে আসবে ? আমাকে ডুবাবে নাকি ?
নীলু খুব আসতে আসতে বলল
-একটু আগে তোমার মা বকল , এখন তুমিও বকবে ?
আমার কথা আটকে গেল । সত্যিই তো !!বেচারী আমাকে দেখতে এসেছে আর আমি কিনা চিৎকার চেচামিচি করছি ।
-আচ্ছা সরি । ঐ সোফাটায় বস ।
নীলু সোফাটায় বসলো না । একদম আমার বিছানায় এসে বসল । বলল
-তোমাকে কত দিন দেখি না !
-কোথায় কয়দিন ? তিন দিন মাত্র স্কুলে যাই নি ।
-তিন দিনের মানে বোঝ তুমি ? তোমাকে না দেখে কিভাবে থাকি ?
আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকি নীলুর দিকে ।
এই মেয়েটা এতো ভাল কেন ? এতো ভালবাসে কেন আমাকে ? আমি বললাম
-তুমি একটু দুরে গিয়ে বস । মা চলে আসবে ।
-আসুক ।
-আসুক মানে ? মা যদি এভাবে দেখে আমাকে আসতো রাখবে ? চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে ?
-আচ্ছা ঠিক আছে ।
এই বলে নীলু আমার কপালে একটা কিস করল ।
তারপর সোফায় গিয়ে বসল ।
-তুমি এটা কি করলে ?
নীলু হাসল ।
-কেন ভাল লাগে নি ।
-না ভাল লাগবে না কেন ? কিন্তু যদি মা চলে আসতো ?
-আসলে আসতো !
-দাড়াও যখন পারমানেন্টলি এ বাড়িতে আসবে না তখন দেখবে মজা ! তখন বুঝবে আমার মা কি চিজ !!
নীলু কেবল হাসল । কিছু বলল না ।
গল্পটা এখানে আছে
আমার গার্লফ্রেন্ড আর একটু হলেই আমাকে ডোবাতো!!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।