somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনীনদিতার একটি দিন !

১২ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালবেলাতেই এমন একটা বিশ্রী কান্ড ঘটে যাবে অনীনদিতা ভাবতেই পারি নি । মেজাজটা একটু খারাপই হল বেটা ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের উপর ।
বেটা নিজেকে ভাবে কি ?
ম্যানেজার হয়েছে বলেই কা যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে !
একটু খানি দেরি হয়েছে বলে বেটা কত গুলো কথা শুনিয়ে গেল !
আরে আগে শুনবিতো দেরিটা কেন হয়েছে । তা না প্যাকপ্যাক প্যাক ।
অনীনদিতা মনে মনে আরো কয় কথা শুনিয়ে দিত ব্যাটা কে কিন্তু মোবাইলের ম্যাসেজ টোনটা বেজে উঠল ।
অনীনদিতা মনটা চট করে ভাল হয়ে গেল । যদিও এখনও ও সিওর না যে মেসেজটা কে পাঠিয়েছে তবুও মন বলছে কাঙ্খিত মেসেজটাই এসেছে । ইনবক্স খুলে মনটা আরো একটু খুশি হয়ে উঠল ।
ফাজিল ছোটরাটা ই পাঠিয়েছে । অনীনদিতা ম্যাসেজ ওপেন করল ।
:কি খবর ?
কি খবর !!
আর কোন কথা কি নাই ?
প্রতিদিন একই লাইন দিয়ে কথা শুরু করে । অনীনদিতা মনে মনে বলে আমি নিউজ চ্যানেল নাকি যে তোমাকে প্রতিদিন খবর পড়ে শোনাবো ।
আপনাদের এখন শোনাবো শিরোনাম তারপর বিস্তারিত ।
অনীনদিতা মেসেজের রিপ্লে লিখে পাঠাল
:খবর জানতে হলে এটিএন নিউজ ওপেন করুন । আমি কোন খবর টবর জানি নি ।
কিছুক্ষনের ভিতর রিপ্লে এসে হাজি ! একগাদা স্মাইলি ।
:) :) :) :) :) :) :) :) :) :) :) :)
শেষে লেখা মেজাজ
:কেন খারাপ ?
অনীনদিতা লিখলো
:ঝাড়ি খেয়েছি !
:একা একটাই খেলে ? একটু বললেও না ?
:ইয়ার্কি মেরো না তো ! মেজাজ এমনিতেই খারাপ । দিনটা ভাল ভাবে শুরু হল না ।
পরের মেসেজে রিপ্লে আসলো
:চিন্তা করনা দিনটা ভালভাবে শুরু না হলেও শেষটা সুন্দর ।:)
তারপর একটা স্মাইলি ।
অনীনদিতার মনটা আরো বেশি ভাল হয়ে গেল ।
অনীনদিতার কেন জানি মনে হল ছেলেটা নিশ্চই ঠিক বলছে ! কিন্তু কিভাবে ? যাক সে বিষয়ে এখন চিন্তা না করলেও চলবে । অনীনদিতা লিখে পাঠাল
:আচ্ছা আমাদের দেখা হবে কবে ?
:কোন দিনও না । :(
সাথে একটা মন খারাপের স্মাইলি ।
:কেন ?
:কারন আমাকে দেখার পর তোমার আর আমাকে ভাল লাগবে না । আমি অতি সাধারন একটা ছেলে ।
অনীনদিতা একটু রাগ হল ছেলেটার উপর ।
X(( X(( X(( X(( X((
রাগের ইমো পাঠাল কিছু ।
:কি হল ?
অনীনদিতা লিখল
:আমি কিন্তু তোমাকে না দেখেই তোমার লেখা পছন্দ করেছি ।
:হু । বুঝলাম ।
:):):)
আরো কিছুক্ষন এসএমএস চ্যাটিং চালিয়ে যাবার ইচ্ছা ছিল কিন্তু ফাজিল ম্যানেজার এতোগুলো ফাইল দিয়ে পাঠাল । সব গুলো চেক করতে হবে ।
অনীনদিতার মেজাজটা আবার খারাপ হল । ব্যাটা ইচ্ছা করে এই গুলা ওর কাছে পাঠিয়েছে ।
আরে ব্যাটা একটু দেরি না হয়েছে অন্য কিছু তো না ! অনীনদিতার মন একটু খারাপ । ব্যাংকের ফাইল তো একটু মনযোগ সহকারে দেখতে হয় তা হলে ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে । আর ভুল হলে তো ম্যানেজার বেটা আবার বকাবকি করবে ।
অনীনদিতা এসএমএস লিখে পাঠাল
:খুব কাজের চাপ । :(
:ও ! এখন কি আর মেসেজ পাঠাবো না ? :(:(
মন খারাপের ইমো । ও দিক থেকেও মন খারাপের ইমো ।
নাহ ! দিনটা যেমন বাজে ভাবে শুরু হয়েছছিল , দিনটা যাচ্ছেও খারাপ ভাবে ।

ইদানিং অনীনদিতার কি যে হয়েছে মনে হয় যেন সারাটা দিন ছেলেটার সাথে কথা বলতে মত চায় । কয়দিন আগেও ছেলেটাকে চিনতো না ছেলেটাকর কিন্তু এখন এমন একটা ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে যে ছেলেটাকে এসএমএস না পাঠালে ভালই লাগে না ।
কখন কি করছে কি করবে মন ভাল কিনা আবার ওর মান ভাল কিনা সব কিছু বলতে ইচ্ছা করে ! ওর কাছ থেকেও শুনতে ইচ্ছা করে !
কথাও বলতে ইচ্ছা করে খুব কিন্তু ফাজিল ছেলেটা ফোন রিসিভ করে না ।
অনীনদিতা অনেক বার কারনটা জানতে চেয়েছে । কিন্তু ছেলেটা স্পষ্ট করে কিছুই বলে নি । কেবল বলেছে যে সময় আসুক ! তারপর !!
কবে সময় আসবে !
খুব রাগ হয় ছেলেটার উপর কিন্তু কিছু বলতে পারে না ।

হাতের কাজ গুল শেষ করতে করতে প্রায় দুপুর হয়ে গেল । একটু পরেই লাঞ্চের ব্রেক । যাক একটু সময় পাওয়া গেল । এখন একটু খোজ নেওয়া যাক !
আচ্ছা ছেলেটা কি করছে ?
ওর কথা কি ভাবছে ?
অনীনদিতা নিখে পাঠালো
: এতো কাজের চাপ । তবুও তোমাকে মিস করছি !
অনীনদিতা মেসেজের জন্য বসে রইলো কিন্তু কোন রিপ্লে এল না ।
কি হল ?
এমন তো হয় না !!
ছেলেটা কখনও মেসেজের রিপ্লে দিতে দেরি করে না ,
আবার পাঠালো !
: তোমাকে মিস করছি ! খুববববববব !!!
কোন রিপ্লে নাই !!
অনীনদিতার মনটা এবার সত্যি খারাপ হল ।
ছেলেটা বলেছিল দিনটা ভাল যাবে ! কিন্তু কোথায় যাচ্ছে ভাল !
কোথায় তুমি ??
তোমার কথা খুব মনে পড়ছে !
কেন রিপ্লে দিচ্ছ না ?
অনীনদিটার সত্যি এবার কান্না আসতে লাগলো !
কিন্তু এতো লোকের ভিতর কেঁদে ফেলাটা কি লজ্জার হবে !!

-ম্যাম, আমার একটা নতুন একাউন্ট খোলা দরকার ছিল ।
অনীনদিতার মেজাজটা একটু খারাপ হল !
ও নিজে বাঁচছে না নিজের জ্বালায় আর এই ব্যাটা ব্যাটা এসেছে একাউন্ট খুলতে !
এই একাউন্ট খুলে তুই কি করবি ?
বিজনেস ম্যান হবি ?
তারপর হলমার্ক কেলেঙ্কারী করবি ।
অনীনদিতা ভাল করে তাকালও না সামনে বসা ছেলেটার দিকে ।
মনেমনে বলল
ব্যাটা দুরে গিয়ে মর ।
-ম্যাম ! আমার একাউন্ট টা !
অনীনদিতা মোবাইলটা আর একবার চেক করলো ।
নাহ ! কোন রিপ্লে আসে নি !
ছেলেটা কোথায় গেল !!
অনীনদিতা মোবাইল থেকে মুখ না তুলেই বলল
-দেখুন আমি একাউন্ট খুলি না । আপনি পাশের টেবিলে যান !
-আমি ওখানেই গিয়েছিলাম । উনি খুব বিজি ! আর আপননি তো ফ্রী আসেন । একটু দেখেন না প্লিজ !
এই ব্যাটা আমি ফ্রী তো তোর কি । তুই বলার কে আমি ফ্রী কি না !! কিন্তু কথা গুলো বলতে পারলো না । এরকম কথা বলা যায় না ।
অনীনদিতার পাশের টেবিলের সোমা বলল
-অনি, একটু দেখ না । আমি খুব বিজি !
অনীনদিতা অনিচ্ছা সত্তেও নতুন একাউন্ট খোলার ফর্ম টা নিল ।
-নাম বলুন ! পুরো নাম বলবেন ।
ছেলেটা বলল
-আমার নাম তানভীর । অপু তানভীর !
অনীনদিতার বুকের ভিতর কেমন করে উঠল যেন । অনীনদিতা অনুভ করল যে ওর বুকের বাম পাশটা কেমন করে ফালানো আরাম্ভ শুরু করেছে ।
অনীনদিতা এতোক্ষন সামনে বসা ছেলেটার দিকে ভাল করে তাকাও নি । ও ছিল নিজের ভাবনায় !
কিন্তু এবার তাকালো !
অপুকে এতোদিন কেবল কম্পিউটার স্ক্রীনেই দেখছে । আজকে এই প্রথম বারের মত সামনা সামনি দেখলো !
কেমন একটু হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে !
অনীনদিতার খুব রাগ হল ।
রাগ না অভিমান হল অপুর উপর ।
এমন ভাবে ওকে কষ্ট দিতে পারলো ছেলেটা ?
ওকে কতবার মেসেজ পাঠাল কিন্তু সামনে বসে মজা দেখছিল । এই জন্য একটা মেসেজেরও জবাব দেয় নি !!
ফাজিল ছোকরা !!
আমাকে কষ্ট দিয়ে মজা পাচ্ছ না ?
অনীনদিটা অনুভেব করলো ওর চোখে পানি চলে এসেছে । এই পানি কিছুতেই আটকানো যাবে না !
অনীনদিতা নিজের ডেস্ক ছেড়ে উঠে বাধরুমের দিকে দৌড় দিল ।
যাওয়ার সময় কেবল একটা আওয়াজই ওর কানে এল
-এই কোথায় ........

অনীনদিতা বাধরুমের কল ছেড়ে অনেকক্ষন কাঁদলো । কিন্তু ঠিক কি কারনে কান্না আসছে এই ব্যাপারে ও ঠিক মড় সিওর না ।
অপুর উপর অভিমান হচ্ছে ?
না ! এমন তো হবার খুব একটা কারন নেই !
অপু ওকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে !
অনীনদিতা এর আগে অনেক বার অপুর সাথে দেখা করতে চেয়েছে । কত বার রাগ করেছে কিন্তু অপু করে নি । কিন্তু আজ এই রকম অপ্রত্যাশিত ভাবে অপুকে সামনে দেখে অনীনদিতার অবেক কোন বাধা মানে নি । তাই হয়তো এই কান্না !!

একটু ধীর স্থির হয়ে আবার যখন অনীনদিতা নিজের টেবিলে ফিরে এল তখন অপুকে কোথাও দেখতে পেল না ।
সোমাকে জিজ্ঞেস করলো
-এই ছেলেটা কোথায় গেল রে ?
-তুই ওভাবে চলে গেলি কেন ?
-আহা ! ছেলেটা কোথায় ?
-একাউন্ট খোলা শেষ ! এই তো এলটু আগেই বের হয়ে গেল ।
-কি !

কোথায় গেল তুমি । অনীনদিতা আবার ঝরের গতিতে বাইরে বেড়িয়ে এল । এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলো এটিএম বুথের সামনে অপু দাড়িয়ে আছে !
অনীনদিতা কাছে গিয়ে বলল
-এমন কাজটা না করলে কি হত না ?
অপু কোন কথা না বলে কেবল একটু হাসলো !!
-কথা বল না কেন ?
-কথা বলার জন্য তো সারাজীবন পড়ে আছে । আগে একটু দেখে নেই তোমাকে !
-কেন দেখার জন্য সারা জীবন পড়ে নেই?
অপু কোন কথা না বলে কেবল তাকিয়েই রইলো অনীনদিতার দিকে !!
কি গভীর চোখেই ছেলেটা তাকিয়ে আছে !!
অনীনদিতার চোখ কেন জানি আবার ভিজে উঠল ।


আমার কথা: আমি খুব সাধারন টাইপের একজন মানুষ । যখন যা ভাল লাগে তাই করি । খুব চেষ্টা করি যে আমার কার্যকলাপে কেউ আনন্দ না পেলেও যেন কষ্ট না পায় । কিন্তু কেউ কেউ এমন কিছু কাজ করে যে মনটা খারাপ হয়ে যায় ! খুব বেশি খারাপ হয়ে যায় ! গল্পটা এমনই একজনের জন্য !
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:১৯
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×