ট্রাফিক পুলিশের শাহবাগ থানার হেড আব্দুল আজগর আলী বিরক্ত হয়ে রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে আছে । বেশ কড়া রোদ পড়ছে । অন্য সময় হলে হয়তো তিনি এখানে আসতেনও না ।
কিন্তু আজ এখানে আসতে বাধ্য হয়েছেন । আজ জনৈক মন্ত্রী সাহেবের কোন অতিধি আসবে এই রাস্তা দিয়ে । উপর থেকে কড়া নির্দেশ এসেছে যেন শেরাটন থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত রাস্তা যেন সম্পুর্ন ফাঁকা রাখতে ।
নিজের এসি রুমের ভিতর আরাম করে বসে ছিলেন ঠিক তখন জনৈক মন্ত্রী সাহেবের পিএস এর ফোন এসে হাজি ।
-আজগর আলী বলছেন ?
-জি ? কে বলছেন
-আমি মন্ত্রীর পিএস ।
আজগর আলী তাড়াতাড়ি উঠে দাড়াল । এই সব পিএস জাতির লোকজন খুব ভয়ংকর টাইপের হয় । মন্ত্রীর পিএস হলে কি হবে এদের তেজ মন্ত্রীদের থেকেও বেশি হয় ।
-জি স্যার বলেন ।
-শুনুন মন দিয়ে । একটু পরেই মন্ত্রী সাহেবের বড় শালার বড় বউয়ের বান্ধবীর ছোট ননদের দুই মেয়ে ঢাকা মেদিক্যালে যাবে । রাস্তা ক্লিয়ার রাখবা । দে আর ভিইপিস । ঠিক আছে ?
-জি স্যার ।
আজগর আলী তখন থেকে রাস্তার একপাশ পরিস্কার রেখে অন্যান্য সব পাশের গাড়ি বন্ধ করে রেখেছেন । কিন্তু ভিআইপি দের কোথাও দেখা যাচ্ছে না ।
আজগর আলীর মেজাঝ একটু গরম হতে শুরু করেছে কিন্তু কোন কিছুই করার নেই । তারপর ডানপাশে দাড়িয়ে থাকা এম্বুল্যান্সের সাইরেনটা মাথাটা যেন আর গরম করে ফেলছে । আজগর আলী এক হাবিলদার কে ডাক দিলেন ।
-স্যার আপনি রোদের মধ্যে দাড়িয়ে না থেকে ঐ পুলিশ বক্সের ভিতর গিয়ে বসেন ।
আজগর আলী বিরক্ত হয়ে বললেন
-উপদেশ দিতে তোমাকে এখানে ডাকি নি । এম্বুল্যান্সটা এভাবে চিত্কার করছে কেন ? ওটাকে থামতে বল ।
-স্যার ঐ খানে একজন রুগী আছে । হার্ট এটাকের কেস । তাড়াতাড়ি যেতে চাচ্ছে ।
-কি ? চুপচাপ বসে থাকতে বল । কোন ছাড়াছাড়ি নাই । আগে ভিআই পি যাবে তারপর অন্য কেউ ।
-স্যার আমি তাই বললাম । কিন্তু আমার কথা ঠিক শুনতে চাইলো না । আপনি যদি একটু বলেন ।
আজগর আলী শেরাটন হোটেলের দিকে তাকালেন । এখনও কোন গাড়ি এখনও দেখা যাচ্ছে না । কিন্তু যে কোন সময় চলে আসতে পারে ।
আর ঐ ব্যাটা আগে যেতে চাচ্ছে ।
ভিআইপির আগে যেতে চাচ্ছে !
এতো বড় সাহস !
-চলতো দেখি !
জাহানারা বেগম আর একবার ছেলের দিকে তাকালেন । তার ছেলে ট্রাফিক পুলিশের সাথে কথাকাটি করছে । জাহানারা বেগম ঠিক মত বুঝতে পারছেন না কি হচ্ছে ! এম্বুল্যান্সটা কতক্ষন ধরে আটকে রেগেছে ।
একটু ছেড়ে দিলেই তো হয় ! সুমন বলছিল নাকি কোথাকার কোন ভিআইপি আসবে তাই রাস্তা আটকে রেখেছে !
এটা কোন কথা হল ?
ভিআইপি আগে নাকি মানুষের জীবনটা আগে !
জাহানারা বেগমের স্বামী আজিজ আহমেদ সকাল বেলা জগিং করতে গিয়েছিলেন ! বাসায় ফিরেই বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েন ।
ভাগ্য ভাল সুমন বাসাতেই ছিল । তাড়াতড়ি এম্বুল্যান্স ডেকে ঢাক মেডিক্যালের দিকে রওনা দেই । সব ঠিক ছিল কিন্তু এই এই শাহবাগের মোড়েই এসেই আটকে গেলেন !
কোন ভিআইপি আসবে তাই রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে !
এটা কোন কথা হলে পারে !
ভিআইপি কোথায় যাবে না যাবে তার জন্য কি মানুষের জীবন থেমে থাকবে !
-জাহানারা !!
জাহানারা বেগম তার স্বামীর ডাক শুনতে পেলেন বোঝাই যাচ্ছে আজিজ সাহেবের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে !
-আপনি কথা বলবেন না । চুপ করে থাকুন !
হাত পাখা দিয়ে তিনি তার স্বামীকে জোরে বাতাস করতে লাগলেন !
-জাহানারা সুমন কে ডাক ! সুমন কে ডাক !
জাহানারা আবার জানলা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন । সুমন এখনও কথা বলছে !
একটা পেট মোটা মত পুলিশ অফিসার এসেছে । তাকে বোখানোর চেষ্টা করছে !
-কি হল ডাক !!
আজিজ সাহেবের কন্ঠে কি ছিল জাহানারা বেগমের বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল ! তার গলায় যত জোর আছে তত জোর দিয়ে ছেলেকে ডাক দিলেন !
সুমন কিছুতেই পুলিশ ট্রাফিকটা কে বোঝাতে পারছে না ! সবার একই কথা ! কোন ভাবেই যাওয়া যাবে না !
আগে ভিআইপি যাবে তারপর এম্বুল্যান্স যাবে !
সুমন বলল
-আপনারা কি একটু বোঝার চেষ্টা করবেন না ! আমার বাবা কে হাসপাতালে নেওয়া খুব দরকার !
-দেখুন ! আমাদের উপর থেকে নির্দেশ আছে ! রাস্তা ক্লিয়ার রাখতে হবে ! ভিআইপির যেন কোন অসুবিধা না হয় !
সুমন কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারলো না । এমন কথা মানুষ বলে কিভাবে ! একজন মানুষের জীবনের থেকে কোন কিছু বড় হতে পারে না । ভিআইপির সুবিধা হবে কি হবে না এটাই কি বড় হল !
-দেখুন আমাদের কিছু করার নাই ! ঐ যে বড় সাহেব আসছে আপনি ওনার সাথে কথা বলেন ।
সুমন বড় সাহেবের দিকে এগিয়ে গেল । বড় সাহেবের নাম আজগর আলী !
-স্যার আমার বাবার অবস্থা খুব খারাপ ! এখনও হাসপাতালে নিতে হবে ।
আসগর আলী বলল
-দেখুন আমাদের কিছুই করার নাই । উপর থেকে নির্দেশ আছে ! অমান্য হলে আমার চাকরী চলে যাবে !
-আপনি আপনার চাকরী নিয়ে ভাবছেন ! আমার বাবা মারা যাচ্ছে !!
-আপনি সামনে থেকে সরেন ! আর সাইরেনটা বন্ধ করতে বলেন । কানে খুব লাগছে !
সুমন আরো কিছু বলতে গেল ! ঠিক তখনই সুমন তার মানেয় চিৎকার শুনতে পেল ।
সুমন আর কিছু না ভেবে এম্বুল্যান্সের দিকে দৌড়ে গেল !
..............................................।
হয়তো সুমন তার বাবাকে হারিয়ে ছিল । অথবা এমন হতে পারে ভিআইপি চলে যাবার পর তারা হাসপাতালে পৌছায় ! এবং সুস্থ্য হয়ে ফেরৎ আসে । আমি পজেটিভ মানুষতো তাই ভেবেই নিবো এটাই হয়েছে !
এটা একটা কাল্পনিক গল্প । কোন সত্যতা নাই । কিন্তু ছবিটা মনে হয় বাস্তব ! তবে আমি ঠিক সিওর না । ফেসবুক থেকে নেওয়া !
কিন্তু এটা তো সত্য ! আমাদের দেশে যখন ভিআইপি রাস্তা দিয়ে যায় সব কিছু বন্ধ হয়ে যায় ! কেন কে জানে !
আমি সারা জীবন শুনে এসেছি সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই । কিন্তু আমাদের দেশের অনেক কিছুই বদলে যায় ! এটাও হয়তো বদলে গেছে !
কথা গুলো এমনি বললাম । কেবল গল্প পড়েন ! আর কিছু ভাবার দরকার নাই !

আলোচিত ব্লগ
শেয়াল ও মুরগি প্রসঙ্গে
নারীদের মুরগি আর পুরুষদের শেয়ালের সাথে তুলনা করা কোন সমাধান নয়। এটা সত্য যে, শিশু ও নারীরা কিছু ব্যক্তির কাছে সত্যি নিরাপদ নয়। এই যে , এত ধর্ষণ হয়, শিশুরা... ...বাকিটুকু পড়ুন
গদির উপর যদির মা
চাইছি আমি নাও বিদায় চাইছো তুমি থাকতে
আমারতো আর সাধ্য নেই তোমায় ধরে রাখতে।
চালগুলো সব খাওয়া হল চুলোটাই কেবল বাকি
তবুও তোমার টালবাহানা আর কিছুদিন থাকি।
ধারকর্যে চলতে গিয়ে খাচ্ছি হোঁচট... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিনয়াবনত চিত্ত আপনার জীবনকে উর্ধ্বমুখী করবে
বর্তমান প্রজন্মের একটা নিয়মিত অভ্যাস নিজেকে একটু ফোকাস করতে পারা। অথচ এ কাজটা করতে গিয়ে সে নিজেকে প্রতিনিয়ত কলুষিত করছে নিজের অজান্তেই। একটু ভেবে দেখুন। আজকালকার ছেলেদের “বডি ল্যাংগুয়েজ” একটু... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিজে ভুক্তভোগী না হলে অন্যের দুঃখ অনুধাবন করা যায় না
রাজধানীর রামপুরায় একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ফুড আউটলেটে কিছুদিন কাজ করতে হয়েছিল। ঝাড়পোছ থেকে শুরু করে পণ্য বিক্রি, যাকে বলে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ- সব কাজই করতে হতো। যেহেতু অন্য কোনো... ...বাকিটুকু পড়ুন