somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বন্ধুর বিবাহ পর্ব !!

২৩ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তরু স্যারের পড়ে সবে মাত্র বের হয়েছি ঠিক তখনই সৈকত পেছন থেকে টান দিল ব্যাগ ধরে ।
-আরে কি হল ?
-আর আয় না ।
এক প্রকার টানতে টানতেই একেবারে শেষ কর্ণারে নিয়ে গেল । তূর্য আগে থেকেই ওখানে ছিল । বুঝলাম না আমাদের দুজনের সাথে এমন কি দরকার ! সৈকত বলল
-দোস্ত খুব চাপে আছি !
মেজাজটা খানিকটা গরম হল । খিদে লেগেছে । খেতেই যাচ্ছিলাম । এখন আমাকে টেনে এনে বলছে দোস্ত চাপে আছি । আমি বললাম
-চাপে আছিস তো আমরা কি করবো ? দেখ এই কাজে তোকে আমরা কোনই সাহায্য করতে পারবো না । দেখ সামনের ডান দিকে বাধরুম আছে ওখানে গিয়ে চাপ মুক্ত করে আয় ।
-আরে দুর ঐ চাপ নাকি ?
-তাহলে আবার কি ?
সৈকত কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো । ওর মুখ দেখে সিরিয়াস কিছু মনে হচ্ছে । এতোক্ষন তূর্য কোন কথাই বলে নি । চুপ করে শুনছিল । তূর্য একটু এগিয়ে গিয়ে বলল
-কি সমস্যা ?
-সমস্যাটা বুবলীকে নিয়ে ।
বুবলী সৈকতের গার্লফ্রেন্ড । আমি তো আগেই বুঝেছিলাম সমস্যা ঐ খানেই থাকবে । আসলে নারী যেখানে সেখানেই সমস্যা । আমি বললাম
-বুবলী আবার কি করল ?
-আসলে ...
সৈকত একটু ইতস্তঃ করতে লাগল ।
-আসলে .....? কি ?
-ডিসেম্বরের বার তারিখ আসছে না ?
-হুম ।
-ঐ দিন একটা ইউনিক দিন না ? ১২.১২.১২ ।
তূর্য বলল
-ইউনিক ডেট ! এখানে সমস্যা কিসের ?
আমিও ঠিক বুঝতে পারলাম না ঐ দিন নিয়ে বুবলী আবার কি প্রবলেম করতে পারে !
হ্যা, এক হতে পারে ঐ দিন একসাথে ঘুরতে চাইতে পারে । এটা তো তেমন কোন সমস্যা না । আমি ব্যাগ থেকে পানি বের করে মুখে দিলাম । পানি অর্ধেক ও গিলতে পারি নি সৈকত মিনমিনে গলায় বলল
-ঐ দিন বুবলী আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে !
আমার প্রথমে মনে হল আমি বোধহয় ঠিক শুনছি না । কিন্তু গলার ভিতরকার পানি ততক্ষনে বাইরে বেরিয়ে এসেছে । আমি তূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ হা হয়ে গেছে । তার মানে আমি ভুল শুনিনি । আমরা দুজনেই এবার একসাথে বলে উঠলাম
-কি করতে চাচ্ছে ?
-এই ... ...
আমি আর কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারলাম না । এটা কি সত্যি হতে পারে ? হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে ?
যে পোলা এখনও মায়ের কথা ছাড়া বাথরুমে পর্যন্ত যায় না সেই পোলা কয় বিয়া করবে । তাও গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে ! আন্টি যদি জানতে পারে তাহলে ওকে একেবারে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে !
আমি সৈকতকে বললাম
-পুরো লাইন আবার বল । আস্তে আস্তে বলবি ।
সৈকত বলল
-বুবলী আমাকে বারই ডিসেম্বর বিয়ে করতে চাইছে ।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে তূর্য বলল
-মামা এই কাম তো তোমার একাই করা লাগবো । তোর সাথে সাথে তো আর আমরা বিয়া করতে পারি না । আর শামসের তো জিএফও নাই ও চাইলেও বিয়া করতে পারবো না ।
তূর্য কে ধরে কষে একটা চড় মারার ইচ্ছা খুব কষ্টে দমন করলাম । আগে সৈকতের কথা শুনে নেই তারপর তোরে দেখতাছি । আমি সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললাম
-তো তুই আমাদের কাছে কি চাস ?
-দেখ মোটামুটি সব ব্যবস্থা বুবলী করেই ফেলেছে । শুধু ..
আমি সৈকতকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
-কি ব্যবস্থা করে ফেলেছে ?
-মানে কোথায় বিয়ে হবে ! কে বিয়ে পড়াবে !
আমি খনিকটা কৌতুহল হল । কাজী ঠিক করেছে ! কেমনে !!
আমি বললাম
-কে বিয়ে পড়াবে ?
-ওর বন্ধু আছে ঠিক বন্ধু না কাজিন । মাওলানা টাইপের । ও বিয়ে কিভাবে পড়াতে হয় জানে । ও আমাদের বিয়ে পড়াবে । তারপর মনে কর যে বুবলীর পক্ষ থেকে যে সাক্ষী দরকার সেটাও মেনেজ করেছে । শুধু আমার পক্ষের সাক্ষী ..
তূর্য বলল
-তা মামা তুমি চাও যে তুমি যে গলায় দড়ি পরতেছো তার সাথে সাথে আমরাও ফাঁন্দে পড়ি ।
সৈকত বলল
-আরে এখানে ফাঁদে পড়ার মত কি আছে ? তোরা কেবল যাবি আমার সাথে । আমার বুকে একটু বল দিবি । আর একটু সই করবি ।
আমি বললাম
-সই করবো মানে ? কোথায় সই করবো ?
-আরে বিয়ে করবো , কাবিন নামা থাকবে না ?
তূর্য বলল
-দেখছোস শামস ফান্দে কেমনে ফেলবো !
তারপর সৈকতের দিকে তাকিয়ে বলল
-মনে কর তোর বিয়েতে আমরা সাক্ষী হলাম । সইও করলাম । তারপর এটা জানা জানি হয়ে গেল তখন সব চেয়ে বড় বাঁশটা খাব আমি আর শামস !
সৈকত বলল
-কিভাবে ?
তূর্য বলল
-এটা যখন তো মা জানবে তখন তোর সাথে সাথে আমাদের কেও প্যাঁদানী দিবে । তারপর আমার বাপের কাছে বলবে তখন সেও আমাকে প্যাঁদানী দিবে । তোর বিয়ে তুই যেখানে একবার প্যাঁদানী খাবি আমরা দুজনে সেখানে খাবো দুইবার ।
তাই তো ! যদি জানাজানি হয়ে যায় তাহলে তো সত্যিই খবর আছে !!
প্রথমে সৈকতের মা আমাদের ঝাড়বে । তারপর বলবে আমার আম্মুর কাছে আম্মুও আমাকে ঝাড়বে । এরপর আম্মু বলবে আব্বুর কাছে । তখন আব্বু আবার আমাকে ...
আমি আর ভাবতেই পারলাম না । তূর্য আবার বলল
-তার উপর বুবলীর আব্বা যদি কেইস করে দেয় যে তার নাবালিকা মেয়েকে আমরা ফুসলিয়ে বিয়ে দিয়েছি তাহলে আমাদের চৌদ্দ গুষ্টিশুদ্ধ জেলে ঢুকতে হবে !
সৈকত বলার চেষ্টা করলো
-আরে এটা জানা জানি কিভাবে হবে ?
-না মামা ! এসব কথা চাপা থাকে না কিছুতেই । শামস ! তুই থাকলে থাক । আমি এর ভিতরে নাই । একদমই নাই ।
আমি বললাম
-আমিও নাই । সেই দিন আমার বাপ আমাকে রদ দিয়ে পিটাইছে । আমি খাইতে চাই না ।
সৈকত আমার হাত চেপে ধরে বলল
-দোস্ত তুই আন্তত যাইস না । তোকে বাটনরোজে লাঞ্চ করাব ।
আমার একটু লোভ হল অবশ্য । বুফেতে অনেক দিন খাই না । তবুও বললাম
-যেই রোজেই খাওয়াও মামা কোন লাভ নাই । আর আমি ডায়েটে আছি । জানিস না ?
আমি সৈকতকে রেখে চলে আসলাম ।

সন্ধ্যার সময় তানভীর স্যারের কাছে পড়তেছিলাম আম্মু এসে বলল যে বুবলী ফোন দিয়েছে । আমি হ্যালো বলতেই বুবলী কেমন ফুপিয়ে কেঁদে উঠল ।
-আরে কি সমস্যা ? কি হল ?
কিছুক্ষন কান্না কাটি করার পর বুবলী বলল
-আমি মনে করতাম তুমি সৈকতের সব থেকে ভাল বন্ধু । সেই হিসাবে আমারও ভাল বন্ধু । আর সেই তুমি আমাদের একটু হেল্প করবা না ? বল করবা না ?
আসলে মেয়ে মানুষ যত ঝামেলা উত্‍পাদন কারী প্রানীই হোক না কেন মেয়েদের মুখের উপর না বলাটা খানিকটা কষ্টকর !
বুবলী এতো করে অনুরোধ করতে লাগলো যে আমি আর না করতে পারলাম না কিছুতেই ।
বুবলীর ফোন রাখার সাথে সাথে তূর্যের ফোন এসে হাজির ।
-শালা এতোক্ষন কার সাথে কথা বলছিলি ! কতক্ষন ধরে ফোন দিচ্ছি ।
-আরে বুবলী ফোন দিছিল ।
-তাই নাকি ? আমাকেও তো দিছিল ।
-তোকেও রাজি করিয়ে ফেলেছে ।
তূর্য বলল
-হুম । কি করবো বল ? এমন ভাবে কান্নাকাটি করতে লাগল যে আর মানা করতে পারলাম না ।
-এখন ? এই রকম ডেকে বিপদ আনার কি কোন মানে আছে ?
তূর্য বলল
-কিছু করার নেই রে । কপালে যা থাকবে হবে । শোন তুই এই বিষয়ে ক্লাসের আর কারো সাথে কোন রকম আলোচনা করবি না । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা ।
-আমাদের ভয় কেবল সৈকতের আম্মুকে নিয়ে । যদি আন্টি জানে না পারে তাহলে আর কোন সমস্যাই হবে না । বুঝেছিস ?
-হুম । আচ্ছা রাখ । তূর্য ফোন রেখে দিল ।


অনেক অপেক্ষার পর সেই কাঙ্খিত দিন এসে হাজির হল !
১২/১২/১২
সকাল বেলাতেই সৈকত আমাদের বাড়িতে হাজির । একা ।
ওকে দেখেই বুঝলাম রাতে ওর খুব বেশি ভাল ঘুম আসে নি । না আসাটাই স্বাভাবিক । বিয়ের আগে দিন যে কারোই ঘুম আসে না । তাও আবার গোপনে বিয়ে !
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম
-একা এসছিস ?
-হুম !
-আন্টি কে কি বলেছিস ?
-বলেছি যে তোর বাসায় যাচ্ছি ! সারা দিন তোর সাথে থাকবো !
-তোর মা শুনলো ?
-আরে আজকে একটা স্পেশাল দিন না । মা কে বুঝলাম । আর আম্মু তোর সাথে থাকলে একটু ভরশা পায় !
-হুম বুঝলাম ।
তূর্য এলো আরো ঘন্টা খানেক পর । আমরা বের হলাম আরো কিছুক্ষন পর । আমাদের যেতে হবে বনশ্রীর মধ্যপাড়ায় একটা বাসায় ! ওখানে সব আয়োজন হয়েছে ।
বাসা থেকে বের হয়ে সৈকত বলল
-দোস্ত কিছু নিয়ে যাওয়া দরকার না ?
তূর্য বলল
-কি নিবি ?
-মিষ্টি নেই ! বিয়ের পর মিষ্টি মুখতো করা দরকার ।
আমি বললাম
-চল । মিষ্টি নিয়ে চল । শ্বশুর বাড়ি যখন যাচ্ছ মিষ্টি না নিলে কি হয় ?

আমরা যখন আমাদের গন্তব্যে পৌছেছি তখন প্রায় এগারোটা বেজে গেছে ।
দরজা খুলে দিল বুবলী নিজেই । আমাদের দেখে মিষ্টি করে হাসল । আমি বললাম
-বিয়ে কখন হবে ?
বুবলী আমাকে বলল
-আস্তে । এটা নিলাদের বাসা । আন্টি বাসায় আছে ।
-আচ্ছা আচ্ছা ।
বাসায় আরো সবাই আছে । বাবুলীর আরো দুই বান্ধবী বের হয়ে এল । এদের কে আমি চিনি সবাই আমরা একসাথেই পড়ি । সুমি আর পিংকি ।
প্রথমে আমরা আন্টি মানে সুমির আম্মুর সাথে পরিচিত হলাম । আন্টিকে বোঝানো হল আজ একটা বিশেষ দিন । তাই আমরা সবাই এক সাথে আড্ডা দিতে এসেছি এসেছি ।
বাবুলী আমাদের তিন জনকে একটা রুমের ভিতর রেখে চলে গেল । বলল
-এখানে একটু বস । আমি এখনই আসছি ।
আমি ঘরের এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম । তূর্যও তাই করতে লাগল । কিন্তু সৈকতকে দেখলাম কেমন সোজা হয়ে বসে আছে । কেমন নার্ভাস লাগছে ওকে !এতোক্ষন তো স্বাভাবিকই ছিল ! এখন আবার কি হল ! তূর্য বলল
-কিরে? তোকে এমন লাগছে কেন ?
-দোস্ত যদি আম্মু জেনে যায় ?
আমি সৈকতেয় চেহারায় কেমন একটা ভয়ের চিহ্ন দেখতে পেলাম । আমি কেন জানি নিজের বুকের ভিতরও কেমন একটা কাঁপন অনুভব করলাম । আমার চোখের সামনে আমার আব্বার চেহারা ভেসে উঠল ।
আল্লাহ জানে কপালে !
সৈকত আবার বলল
-দোস্ত আমার এখন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হচ্ছে না । তূর্য তুই ঠিকই বলেছিলি রে । এসব জিনিস একদম চাপা থাকে না ।
তূর্য বিরক্ত হয়ে বলল
-শোন মামা এখন এসব বলে লাভ নাই । বন্দুক থেকে গুলি ছুটে গেছে । ফেরানোর আর কোন উপায় নাই ।
সৈকত আমার হাত চেপে ধরে বলল
-দোস্ত তোর মাথায় তো বুদ্ধি ভাল আছে । কিছু একটা বুদ্ধি বের কর । এমন কিছু কর যেন বিয়ে টা না হয় । আমার এখন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক করছি না । বুবলী আসলে আমাকে এমন ভাবে ধরলো যে আমি কিছুতেই না করতে পারি নি !
আর এখন বার বার আম্মুর চেহারা টা ভেসে উঠছে । যদি জানতে পারে আমারতো খবর ই আছে !!
আমি বললাম
-আমি কিছু জানি না ।
কিন্তু সৈকতের চেহারা দেখে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারলাম না । বললাম
-আচ্ছা । ঠিক আছে । তুই বাধরুমে গিয়ে হাজির হ । যতক্ষন দেরি করা যায় আর কি ! ততক্ষন আমরা কিছু ভাবি !
আমার কথা শুনে সৈকত বলল
-আমি জানি তুই কিছু একটা বের করে ফেলবি । আমি গেলাম ।
সৈকত আর এক মুহুর্তও দাড়াল না । বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল । তূর্য আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি করবি ?
-আমি কি জানি কি করবো ?
-আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয় ?
কেমন হয় আর শোনা গেল না তার আগেই বুবলী দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো । আমাদের দুজনকে দেখে বলল
-সে কই ?
-বাথরুমে !
তূর্য বলল
-ওর মনে লুজমোশন শুরু হয়ে গেছে ।
বুবলী খানিকটা হাসি মুখে বলল
-বিয়ের টেনশনে ? হাহাহা । ওকে তাড়াতাড়ি বের হতে বল । আমার কাজিন চলে এসেছে ।
বুবলী চলে গেল । ও চলে যেতেই আমি তূর্যকে বললাম
-কি যেন বলছিলি ?
তূর্য আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
-ভুলে গেছিরে । মাথায় দুর্দান্ত একটা আইডিয়া এসেছিল ।
তূর্য মুখের ভাব এমন করতে লাগল যেন এখনই সেই দুর্দান্ত আইডিয়া টা মনে পড়ে যাবে । কিন্তু আমি খুব ভাল করেই জানি তা হবে না । যা করার আমাকেই করতে হবে ।
আচ্ছা কি এমন করা যায় যাতে বিয়েটা না হয় ?
কি এমন করা যায় ?
সব কিছু ঠিক থাকতো যদি কাবিন নামাটায় সই না করতে হত ! তাহলে আর কোন সমস্যাই হত না । তূর্য বলল
-আচ্ছা পলিনকে খবর দেই ?
আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম
-পলিনকে খবর দিবি ক্যান ? এমনি আমরা বাঁচি না আমাদের জ্বালায় তার উপর আবার আর একটা ঝামেলা নিয়ে আসতে চাচ্ছিস !
-আরে শুনবি তো ! শোন আমরা পলিনকে ফোন দিয়ে বলব যে সৈকত এখনও তোমাকেই ভালবাসে কিন্তু বুবলী ওকে জোর করে বিয়ে করে ফেলছে । তুমি এসে ওকে বাঁচাও ।
তূর্যের উপর বিরক্তিটা আরো একটু বাড়ল । বললাম
-তোর ফোন পেয়ে পলিন উড়তে উড়তে চলে আসবে ? বাংলা সিনেমা পেয়েছ ? বুদ্ধি দিতে পারলে দিবি না হলে চুপ করে বসে থাকবি । কিছু ভাবতে দে !
তূর্য চুপ করে করে গেল । আমি ভাবতে লাগলাম কি এমন করা যায় ? তূর্য আবার বলল
-আচ্ছা ওর মাকে ফোন দেই ।
-আবার তুই কথা বলছিস ? ওর মাকে ডেকে .......
আরে হ্যা । ওর মাকে ডাকলে কেমন হয় ! গুড আইডিয়া । কেবল একটু বুদ্ধি করে কিছু কথা বলতে পারলেই হল । আমি তূর্য কে বললাম
-ভাল বলেছিস তো ?
-দেখছিস ! বুদ্ধি কিন্তু আমার মাথা থেকেই বের হয়েছে ।
-বুঝলাম । কিন্তু আন্টি কি বলবি বলত ?
-কি বলব ? বলব যে সৈকতকে বুবলী জোর করে বিয়ে করে ফেলছে আপনি ওকে বাঁচান ।
-তাই না ? তুই সারা জীবন বেকুব, বেকুব ই রয়ে গেলি । এই কথা বললে আন্টি হাজারটা প্রশ্ন করবে । প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে জান বের হয়ে যাবে ।
-তাহলে ?
-দে তোর ফোনটা দে ! আমি দেখছি ।
আমি তূর্যের ফোন দিয়ে আন্টি কে ফোন দিলাম । আন্টি রিসিভ করতেই বললাম
-আন্টি আমি শামস !
-কি ব্যাপার শামস ?
আমি লক্ষ্য করলাম আমার বুক কাঁপছে । কথা বলতে গিয়ে দেখলাম আমার গলাও খানিকটা কাঁপছে ।
-জি আন্টি ।
-ফোন দিলে যে ? কোন সমস্যা হয়েছে ?
-আসলে আন্টি ..
আন্টি মনে হয় কিছু আচ করতে পেরেছেন । খানিকটা তীক্ষ কন্ঠে বলল
-সৈকতের কিছু হয়েছে ?
-জি আন্টি । আমরা এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে এসেছিলাম । তারপর থেকে সৈকত কেমন জানি করছে !
-কেমন করছে ?
-আসলে আন্টি আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না । কেবল বলছে আমি আমার আম্মুকে খুব ভালবাসি । আর বারবার বাথরুমে যাচ্ছে । আর কারো কথা শুনছে না ।
-তোমরা কোথায় আছো ?
আমি ঠিকানা বললাম । আন্টি বলল
-আমি এখুনি আসছি ।
আমি খানিকটা প্রশন্ন বোধ করলাম । এখন আর কোন টেনশন নেই । আন্টি চলে আসলে আর কোন সমস্যাই থাকবে না । আমি ফোন রাখতে রাখতেই বুবলী ঘরে ঢুকে পড়ল ।
কিছু শোনে নাই তো ?
-কই তোমার বন্ধু ? এখনও বের হয় নাই ? সব কিছু রেডি ।
এরপর নিজেই বাধরুমের দরজায় ধাক্কা দিতে লাগল । কিন্তু দরজা খোলার কোন নাম নাই । আমি বুবলীকে বললাম
-তুমি যাও আমি ওকে নিয়ে আসছি । আসলে প্রথম বিয়েতো তাই একটু নার্ভাস হয়ে আছে ।
-তাই ? আচ্ছা দশ মিনিট সময় দিলাম । ওকে নিয়ে আসো !
-আচ্ছা ! তুমি যাও । আমি আসছি ।
বুবলী চলে যাওয়ার পরপরই আমি বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিলাম ।
-সৈকত কই ?
কোন সারা শব্দ নাই । আরো কয়েকবার ডাকার পর ওর খোজ পাওয়া গেল ।
-দরজা খোল ।
ভিতর থেকে আওয়াজ এল
-না আমি দরজা খুলবো না ।
-আরে বাবা খোল না । প্রবলেম মোটামুটি সমাধান হয়েছে । তুই দরজা টা একটু খোল তো !
একটু পরেই সৈকত দরজা খুলে দিল । দরজা খুলেই সৈকত বলল
-বুবলী রাজি হয়ে গেছে ?
-আরে না ।
দরজা খুলেই ওর মুখে যে ৬০ পাওয়ারের বাল্বের মত আলো দেখেছিলাম তা যেন ঠুশ করে নিভে গেল ।
-তাহলে ?
-শোন একটা বুদ্ধি বের করেছি । যদি টাইমিং ঠিক থাকে তাহলে তোর বিয়েটা হবে না নিশ্চিত থাকে ।
সৈকত বলল
-আর যদি টাইমিং ঠিক না থাকে ?
পেছন থেকে তূর্য বলে উঠল
-তোর বিয়ে হয়ে যাবে নিশ্চিত থাক ।
সৈকত বলল
-না রে ! আমি বাথরুম থেকে বের হব না ।
এই বলে ও আবার বাথরুমের ভিতর ঢুকতে চাইল । আমি ওর হাত চেপে ধরলাম ।
-এতো টেনশন নিস না তো । আমার উপর ভরশা রাখ ।
কিন্তু সৈকতের চোখ দেখে মনে হল না যে ও খুব বেশি ভরশা করতে পারল আমার কথায় । আমি ওকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এলাম ।

বুবলী আমাদের পাশের রুমটাতে গিয়ে গেল । দেখলাম ওখানে আগে থেকেই সবাই হাজির । বুবলীর দুই বান্ধবী আর একটা মোটামত ছেলে । আমাদের থেকে একটু মনে হয় বড় হবে বয়সে । মাথায় টুপি পরা ।
এই তাহলে বিয়ে পড়াবে ।
আমি মনে মনে হিসাব করলাম । সৈকতদের বাসা এখান থেকে খুব বেশি হলে দশ মিনিটের পথ । আর আন্টিকে ফোন করেছি প্রায় মিনিট দশেক । তার মানে যে কোন সময় আন্টি চলে আসতে পারে !
এখন কেবল অপেক্ষার পালা । আমরা সবাই গোল হয়ে হয়ে বসলাম । সৈকতের দুই পাশে আমি আর তূর্য । আমি সৈকতের করুন মুখটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।
একটু ভরশা দেওয়ার চেষ্টা আর কি !
কিন্তু মনে মনে আমি নিজেও খুব নার্ভাস ফিল করছিলাম । আন্টি সময় মত আসবে তো ?
যদি না আসে ?
তাহলে !
বুবলী ঐ মোটামত ছেলেটাকে বলল শুরু কর ।
আমি আল্লাহ কে ডাকছি ! এই মটকু সত্যি সত্যি বিয়ে পড়িয়ে ফেলে ! আন্টি আপনি কই ?
জলদি আসেন !!
জলদি !!

মোটা ছেলেটা মানে আমাদের কাজি যখন কেবল দোয়া পড়া শুরু করতে যাবে তখনই কলিংবেল বেজে উঠল !
একবার না বেশ কয়েকবার ! ঘন ঘন !
মনে হচ্ছে যেন কেউ অস্থির ভাবে বেল বাজাচ্ছে !
আমার জানে পানি এল । নিশ্চই আন্টি !!
আমরা সবাই সৈকতের আম্মু কে যমের মত ভয় পাই ! সারা জীবন দোয়া করি এই ভদ্র মহিলার সাথে যেন কোন দিন দেখা না হয় !
কিন্তু আজ আন্টির আসা দেখে সত্যি মনটাতে একটা আনন্দের অনুভুতি হল !
সুমি বলল
-কে এল আবার ! তোমরা বস আমি দেখে আছি !
সুমি দৌড়ে চলে গেল ।
ঠিক যেভাবে নিলা দৌড়ে গেল তার চেয়েও দৌড়ে হাজির হল । ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা হয়েছে !
সুমি বলল
-সৈকতের আম্মু চলে এসেছে !
ঘরের ভিতর যেন একটা বোমা ফাটলো !
আমি আর তূর্য তো জানতাম তাই আমরা খুব বেশি অবাক হলাম না । কিন্তু সৈকত ব্যাপারটা জানতো না !
ও আমার দিকে কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ! যেন কিছু বুঝতে পারছে না । তারপর দেখতে দেখতে ফিট হয়ে পড়ে গেল ।
আসলে ওর মন ছিল একটু নার্ভাস ! তার উপর আন্টির আসার খবর ঠিক মত নিতে পারে নি !
বুবলী বলল
-এখন কি হবে ?
আমি বুবলী কে শান্ত হতে বলললাম ।
-তোমরা টেনশন নিয়ো না । তোমরা দুজন পাশের ঘরে যাও ! সুমি থাকুক ! আমি দেখছি ।
বুবলীরা চলে গেল । আমি আর তূর্য মিলে সৈকত কে শুইয়ে দিলাম । তারপর সুমিকে নিয়ে দরজা খুলতে গেলাম ।
দরজা খুলতেই আন্টি আমাকে বলল
-সৈকত কই !
-আসুন আমার সাথে !
আন্টি সৈকতের ঐ অবস্থা দেখে আর এক মুহুর্তও থাকলেন না । সোজা ওকে নিয়ে হাটা দিলেন ! আমরাও পেছন পেছন বেরিয়ে এলাম !

পরদিন সকালে সৈকত আমাকে যেন পারলে চিবিয়ে খায় !
ওর মুখে কেবল একটাই কথা
-শালা তোর জন্য আর একটু হলেই আমি মারা পড়তাম !
আমি একটু মুচকি হেসে বললাম
-পড়িস নাই তো ! আর আমি না থাকলে তো কাল তোর খবরই ছিল ! এখন ক্ষনে তুই জীবিত থেকে বিবাহিত হয়ে যেতিস !
সৈকত একটু মাথা নাড়াল ।
-তা অবশ্য তুই ঠিক ই বলেছিস ! আমার খবরই ছিল ! আসলে বুবলী এমন ভাবে আমাকে বলতে লাগলো আমি ঠিক বুঝতেই পারি নি । নিলাদের বাড়ির যাওয়ার পরই কেমন যেন মনে হচ্ছিল ! আমি যে ভুল করতে যাচ্ছিলাম সেটা বুঝতে পারি ! ভাগ্যিস তোরা ছিলি । তবে আম্মুকে দেখে যে ভয় পেয়েছিলাম ! একবার আমাকে বলতে পারতিস !
আমি বললাম
-ইচ্ছা করেই বলি নি ! তোর একটু শিক্ষা হওয়া দরকার ছিল ! বল আর কোনদিন মেয়েদের কথায় নাচবি ?
সৈকত কান ধরলো !
-আর কোনদিন নাচবো না ! তবে তুই আম্মুকে কিভাবে মেনেজ করলি বলতো ? আম্মু তো আমাকে একটা প্রশ্নও করলো না !
আমি রহস্যময় হাসি দিলাম !


আমার কথা: আমার স্টুডেন্টের সাথে আমার সম্পর্ক খুবই ভাল ! আমার অনেক গল্পের মাঝেই তার নাম আছে ! এমনকি আমার কয়েকটা গল্পের থিম আমি পেয়েছি তার সাথে গল্প করার সময় ! সে মাঝে মাঝে তার বন্ধুদের এমন কিছু অদ্ভুদ আর হাস্যকর গল্প আমার কাছে বলে যে আমি না হেসে পারি না । সেই রকম একটা হাস্যকর গল্প থেকেই এই গল্পের সৃষ্টির !
গল্পের কাহিনী কাল্পনিক হলেও চরিত্রগুলো সব বাস্তব ! আর গল্পের বক্তার চরিত্রে আছে আমার ছাত্র !!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৩
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×