যতই নিজের পার্সোনাল গার্লফ্রেন্ড থাকুক যখন একটা অপরিচিত মেয়ে আমার ব্লগে এসে গদগদ হয়ে বলে ভাইয়া আপনার গল্প আমার খুব ভাল লাগে মনের ভিতর তখন একটু আকুপাকু সৃষ্টি হয় । :#> :#> তার উপর মেয়ের নাম যদি হয় নিশি ! :#> :#>
ব্লগে যারা আমার গল্প পড়ে তারা খুব ভাল করেই জানে যে নিশি নামের উপর আমার আলাদা একটা টান আছে । আর সেই নিশি নামের কেউ যদি এসে আমার ব্লগে কমান্ট করে যে ভাইয়া আপনার গল্প আমার খুব খুব ভাল লাগে তখন মনের ভিতর একটা আলাদা কিছু জেগেই যায় ।
যদিও জাগা উচিত্ না ।
টিয়া যদি জানতে পারে তাহলে আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে ।
যাই হোক প্রতিদিন সামুতে এসেই দেখি বিশ তিরিশটা অদেখা মন্তব্য সব ঐ একই মেয়ের । নিশি আমার আগের গল্প গুলা পড়ছে আর মন্তব্য করছে । আর মন্তব্যে যেন মধু মাখানো ! চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে !
আর আমি বাটি পেতে সেই মধু তুলে রাখছি !
আহা ! আহা ! জীবন নেহাত্ মন্দ নয় !!
সামু ছাড়াও আমার একটা ফেসবুক পেইজ আছে । সামুতে যে গল্প গুলো পোষ্ট করি ঐ জায়গাও করি । একদিন দেখলাম নিশি সেই জায়গাতেও মেসেজ দিয়েছে । মেসেজটা এই রকম
"যাক আপনাকে ফেসবুকেও পাওয়া গেল । সামুতে তো ঠিক প্রাইভেটলী কিছু বলাও যায় না । এখানে ইনবক্সে আপনার সাথে অনেক কিছু শেয়ার করা যাবে ।
আহা !
জুকার্বাক কে আসলেই একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা হল । ব্যাটা একটা কামের কাম করেছে ! অপরিচিত মানুষকে পরিচিত করার ব্যাবস্থা করছে !
কয়েক দিনের ভিতরেই নিশি আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে । তারপর এফবি ফেন্ডলিষ্ট থেকে মোবাইলের কন্ট্যাক্ত লিষ্টে ও যুক্ত হতে খুব বেশি সময় লাগল না !!
আগে তো অন্য নাম দিয়েও গল্প লিখতাম এখন নিশি নাম ছাড়া আর কোন নাম দিয়ে গল্প লিখি না । এমন কি অগের অন্য নাম গুলো এডিট করে নিশি করে দিয়েছি । নিশি তাতে আরো খুশি ।
আমি মনে মনে বলি জীবন আসলেই নেহাত্ মন্দ না ।
কিন্তু জীবন যে কত মন্দ তা টের পেলাম কয়েক দিন পরেই । ঘরে শুয়েছিলাম । এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল । বাসায় কেউ না থাকায় আমাকেই উঠতে হল । দরজা খুলে দেখি । লম্বা আর চিকন মত একটা ছেলে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ভাই আপনি সামুর ব্লগার অপু তানভীর না ?
বাহ !! আমি তাহলে এতো বিখ্যাত হয়ে গেছি !! মানুষ জন আমার বাড়িতে পর্যন্ত চলে আসছে !!
তার পরেও যেন আমার মনের ভিতর একটু সন্দহ দেখা দিল । এতো বিখ্যাত তো আমি হয় নি !আর আমার কাছে তো কেউ কাছে টাকাও পায় না যে আমাকে খুজে বের করে ফেলবে !!
লম্বা মত ছেলেটা বলল
-আমি আপনার গল্পের খুব ভক্ত !
আমার সন্দেহ নিমিষেই দুর হয়ে গেল ! একটা বিগলিত হাসি দিয়ে বললাম
-হ্যা হ্যা আমি অপু তানভীর ! বলেন কি ব্যাপার !
-ভাইয়া, আপনার সাথে কয়টা কথা ছিল । যদি একটু আসতেন !
-কোথায় ? এই ভাইয়া সামনেই ! একটু যদি আসতেন ! কেবল আমিই না আমার কিছু বন্ধু বান্ধবও আপনার লেখা পড়ে ! তারাও এসেছে !
আমি আসলেই নিজেকে বড় বিখ্যাত মনে করলাম । গর্বে একেবারে আমার বুক উচু হয়ে গেল । কিন্তু টের পেলাম একটু পরেই ।
আমাকে এমন এক চিপার ভিতর নিয়ে গেল ঠিক বুঝলাম না ।
তারপর আমাকে সেই লম্বা মত ছেলেটাই বলল
-বল আর কোন দিন গল্প লিখবি ?
-কেন ভাই ! এই না বললেন আপনে আমার গল্প পড়েন ! আবার বলছেন আর কোন দিন গল্প লিখবি কিনা ?
ছেলেটা আমার দিকে তেড়ে এসেই বলল
-পড়ি বলেই তো বলছি ! আর কোন দিন লিখবি কি না বল ! তোর কারনে আমাদের বসের ব্রেক আপ হয়ে যাচ্ছে !
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । আমি আবার কি করলাম ?
আমার কারনে আবার কি হল ?
তবুও একটু মনে করার চেষ্টা করলাম । বলা তো যায় না !
নাহ !!
এমন কোন মেয়েই তো নাই !!
আমি বললাম
-ভাই ! আমি তো কিছু করি নাই !!
-আবার....।
-শিপলু থাম !
ছেলেটা মারতে আসছিল ! এক জনের আওয়াজ পেয়ে থেমে গেল । আমি এবার সত্যি একটু ভয় পেলাম । কারন যে ছেলেটা এগিয়ে এসছে তাকে আমি খুব ভাল করেই চিনি !
এই ছেলেটার নাম ল্যাংড়া মাসুদ !!
এলাকার বড় মাস্তান ।
মানুষ জন কে ধরে ঠ্যাং ভেঙ্গে দেয় ! তাই নাম হয়েছে ল্যাংড়া মাসুদ !
ল্যাংড়া মাসুদ আমার দিকে এসে বলল
-নিশিতা কে চিনো ?
-কোন নিশিতা ভাই ! আমি কোন নিশিতাকে চিনি না !
ল্যাংড়া মাসুদ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! তারপর বলল
-কেবল তোর গল্প পড়ে আমার নিশিতা সারা দিন কেবল তোর নাম নেয় ! আমি কিছু করলে বলে অপু তানভীর তার গার্লফ্রেন্ড কে এভাবে ভালবাসে ওভাবে ভালবাসে ! এভাবে রাগ ভাঙ্গায় ! আমাকে সে আর ভাল বাসে না । সব দোষ তোর !! তোকে আমি .....
শিপলু বলল
-ভাই আপনি মাথা গরম কইরেন না !!
এবার যেন ল্যাংড়া মাসুদ আরো ক্ষেপে উঠলো !
-কি আমি মাথা গরম করুম না । এই ফাজিলটা সব ল্যাকা ল্যাকা গল্প লেখে আর আমাকে সেই ল্যাকামো গুলো করতে হয় ! সেদিন কি এক গল্প লিখেছে একটা ছাগল নাকি তার প্রেমিকার জন্য নাকি ১০০ বার আবাহনী চক্কর মেরেছে ! এই গল্প পড়ে নিশিতা আমাকে বলল যে আমি ১০০ চক্কর মারতে পারবো নাকি !! এখ তুই বল এই বেটা যদি কাল গল্প লেখা ১০ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়েছে আমাকেও কাল দশ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ মারতে হবে ! শোন শিপলু !এমন একটা ব্যাবস্থা কর যেন কাল থেকে আর গল্প না লিখতে পারে !!
-ভাই আপনি চিন্তা কইরেন না ! আমি দেখতেছি ! একটা ঠ্যাং ভেঙ্গে দেই ! তখন অপু তানভীর কে সবাই ল্যাংড়া তানভীর ডাকবে !!
আমি আমার পার দিকে খানিকটা করুন চোখে তাকালাম !
কোন পাটা ভাঙ্গবে কে জানে ??
সত্যি যদি ভেঙ্গে দেয় তাহলে তো নামটা ল্যাংড়া তানভীর হয়ে যাবে !!
-আরে বেয়াকুবের দল ঠ্যাং ভাঙ্গলে আমার কি লাভ হবে ! ও তো লিখবে হাত দিয়ে !! ওর হাত ভাঙ্গ !!
শিপলু এগিয়ে এল !!
আমি বললমা
-ভাই একটা কথা বলবো !! মাত্র একটা !!
-কি !
-আপনি বললেন যে নিশিতা আমার গল্প পছন্দ করে ! তার মানে আমি তার পছন্দের লেখক !এখন যদি সে জানতে পারে যে আপনি আমার হাত ... মানে বুঝতেই তো পারছেন !! তাহলে কিন্তু সে আর কোনদিন আপনার সাথে কথাই বলবে না !
ল্যাংড়া মাসুদ যেন গভীর চিন্তায় পড়ে গেল । আমার মনে হল এবার মনে হয় আমার হাত বা পা মনে হয় বেঁচে গেল !!
-ঐ শিপলু থাম !
-কিন্তু ভাই !!
-ব্যাটা ঠিক বলছে !!
আমি এই সময় আমার আসল অস্ত্র ছাড়লাম । যদি ঠিক মত লাগে তাহলে তো কেল্লা ফতে ! বললাম
-ভাই নিশি ভাবী আপনারে খুব দৌড়ের উপর রাখে তাই না ?
আমার কথায় যেন কাজ হল । ল্যাংড়া মাসুদের মুখটা কেমন করুন হয়ে গেল ! আমার দিকে খানিকক্ষন তাকিয়ে থেকে ওর লোক জন কে চলে যেতে বলল ! তারপর আমাকে কাছে টেনে বলল
-তুমি কিভাবে বুঝলা ?
যাক তুই থেকে তুমিতে এসেছে ! বললাম
-আসলে ভাই যে প্রেমিক গুলো তার প্রেমিকাকে সত্যি খুব ভাল বাসে সেই প্রেমিকা গুলো জ্বালায় !
আমার কথায় ল্যাংড়া মাসুদ মুখটা আরো একটু করুন হয়ে গেল । বলল
-আর বইলো না ভাই ! কি যে করবো এই মেয়ে নিয়ে ! কিছু বলতেও পারি না ! পুরা মুহাম্মাদ পুর আমার ভয়ে কাপে আর এই টুকু পিচ্চি মেয়ের সাথে আমি পারি না !
-আপনি যদি বলেন আমি সাহায্য করতে পারি !!
-কিভাবে ?
আমি একটু মুচকি হাসলাম ! তারপর বললমা
-ভাই আমি আর কিছু না বুঝি মেয়েদের সাইকোলজি খুব ভাল করেই বুঝি !! শুনেন আজ থেকে আপনি নিশির প্রতি একটা ড্যাম কেয়ার ভাব দেখাবেন ! দেখবেন ঠিক হয়ে গেছে !
-সত্যি ?
-হ্যা !! মেয়েরা যখন জানতে পারে যে একটা ছেলে তাকে সত্যি ভালবাসে তাকে ছেড়ে যাবে না তখন মেয়েরা ঐ ছেলের প্রতি খানিকটা উদাশিন হয়ে যায় ! কারন টারা জানে এই ছেলে তাকে ছেড়ে যাবে না । কিন্তু যখন দেখে ছেলেটা আর পাত্তা দিচ্ছে না তখন প্রথমে খুব রাগ করে । সেই রাগ করবে ! টার পর অভিমান । শেষে নিজেই ফিরে আসবে !!
-সত্যি তো ?? যদি না হয় তাহলে কিন্তু অপু তানভীর কিন্তু সত্যি ল্যাংড়া তানভীর হয়ে যাবে !
যদিও বুক একটু কাঁপছিল তববুও বললাম
-১০০% নিশ্চিত থাকেন !
ঐ দিন রাতেই ল্যাংড়া মাসুদ ফোন দিল । ফোন দিয়ে সে কি ঝারি !! তারপর বলল
-তোর কারনে নিশিতার সাথে আজ ঝগড়া হয়েছে । বলেছে সে আর আমাকে ফোন দিবে না ! যদি ও আর ফোন না দেয় তাহলে তো কিন্তু খবর আছে !!
-না ভাই !! আপনি চিন্তা করবেন না !! এক দুদিনের ভিতর ঠিক হয়ে যাবে !
আমি তো পড়লাম চিন্তায় !! হায় হায় করলাম কি !! যদি ঠিক না হয় ?? এখন ??
নাহ !! কাল সকালেই এলাকা ছেড়ে পালতে হবে !!!
এখানে আর থেকে যাবে না !! মিরপুরে শীষের মেসে উঠতে হবে কিছুদিন !!
সকাল বেলা আবার ঘুম ভাঙ্গলো কলিং বেলের আওয়াজে !! খুলে দেখি শিপলু !! বলল সঙ্গে যেতে !
আমি মনে মনে বললাম আজ আমার খবর আছে !!
আমার এতো স্বাধের ঠ্যাং !!!
শিপলু আমাকে চিপার ভিতর না নিয়ে গিয়ে হোটেল ক্যাফে বাগদাদে নিয়ে এল । কিরে ভাই খাইয়ে দাইয়ে ঠ্যাং ভাঙ্গে নাকি ?
দেখলাম ল্যাংড়া মাসুদ এসির ভিতর বসে আছে । আমার জন্য নান আর খাসির ঠ্যাং অর্দার দিলো !
হায়রে নিয়তি খাশির ঠ্যাং খাইয়ে এরা আমাকে ল্যাংড়া তানভীর বানাবে !!
খেত খেতেই ল্যাংড়া মাসুদ বলল
-তানভীর ভাই আমিতো আপনার ভক্ত হয়ে গেলাম !
-মানে ?
আরে কাজ হয়েছে তো !
-তাই নাকি !!
-হুম ! প্রথমে খুব রাগ করলো । কিন্তু রাতে আপনার সাথে কথা বলার পর পরই ফোন দিল ! তারপরসে কি কান্না !! আর কি নরম আওয়াজ !! বলল যে আর কোন দিন সে আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করবে না । আমি যা বলবো তাই শুনবে !! সব হয়েছে আপনার জন্য !! হাহাহাহা
আমার জান থেকে পাথর নেমে গেল !! ভাগ্য ভাল যে এবারের মত আমার নাম ল্যাংড়া তানভীর হল না !!
আপনারা ভাবছেন নিশি গেল কই ?? অনেকে মনে করছেন যে আমার ব্লগের নিশি আর ল্যাংড়া মাসুদের নিশিতা একই !!
জি না !!
এক না !!
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম । সে তো চিনেই না !!
সে এখন আমার লোকাল গার্লফ্রেন্ড !!
ল্যাংড়া মাসুদের গার্লফ্রেন্ড নিশি এবং আমার বিপদজনক প্রেমের থিওরি !!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৬৪টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
আমাদের ট্যাক্স এর টাকা খরচ করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তারা কি আমাদের সেবা দিতে পারছে?
আমার আব্বুর চাকরির সুবাধে বিভিন্ন জেলায় ঘুরা লাগে। তাই কমলাপুর ট্রেন স্টেশনও বহুবার গিয়েছি। আমরা গুলিস্থান থেকে ঢাকা টু দাউদকান্দি বাসে চরে ভবেরচর যাই। এখন কথা হচ্ছে কমলাপুর এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই জঞ্জাল স্বাধীনতার পর থেকেই, শুধু এক যুগের নয়....
এক, মানুষের মেন্টালিটি পরিবর্তন না হলে কোনও সরকার কিছু করে দিতে পারবে না।
দুই, কোন কারনে উপরের এক নাম্বার মন্তব্যটি করলাম?
স্বৈরাচার পতনের পর কি কি পরিবর্তন হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়
মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ্ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম
নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়
এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন