কিন্তু ঐ যে বললাম প্রায় সব কিছু !!
এমন কিছু আছে যার জন্য ঘুম কে ত্যাগ করতে হয় ! ঠিক সেই রকম একটা কারনের জন্য আমি এখন শীতের ভিতর এই সকাল বেলা মনির স্যারের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি ।
আচ্ছা এর কোন মানে হয় ?
মনির স্যার পড়ান শুরু করে সকাল সাতটার সময় আর আমাকে হাজির হতে হয় ছয়টারও আগে ! ইভার একই কথা সকাল বেলা তার নাকি আমার সাথে কথা না বললে ভালই লাগে না ।
কি আর করবো গার্লফ্রেন্ড বলে কথা ! সে দেখা করতে চেয়েছে না দেখা করলে কি হয় ? আর অবশ্য একটা কারনও আছে পুরো দিনের ভিতর আমাদের খুব একটা দেখাও হয় না । আমি আর ইভা কেবল এই মনির স্যারের কাছেই এক সাথে পড়ি তার মানে এটাই আমাদের এক মাত্র ডেটিং স্পট !
আমি আবার সময় দেখলাম ! ছাড়ে ছয়টা বেজে গেছে । অন্য দিন তো ইভা এতো দেরী করে না ! তাহলে আজ কেন ?
আজ কি তাহলে আসবে না ?
কাল তো কিছুই বলল না ? শরীর খারাপ করলো নাতো আবার ??
একটু যেন চিন্তিত হলাম । এমন উপায় নাই আমি ওদের বাড়ি গিয়ে খোজ নিয়ে আসবো ! যদিও ওদের বাসা মনির স্যারের বাড়ির কাছেই !
কিন্তু মেয়েটা আসছে না কেন ??
আমি টেনশন নিয়ে অপেক্ষা করছি এমন সময় দেখলাম মায়া আসছে ।
যাহ !!
গেল আজকের কথা বলা !!
মায়া আমাদের ক্লাসেই পড়ে । একটু জটিল টাইপের মেয়ে ! ও যদি দেখে আমি আর ইভা এক সাথে দাড়িয়ে কথা বলছি তাহলে আজকের ভিতরেই এই খবর সারা এলাকায় সম্প্রচার হয়ে যাবে !!
আমি গেট থেকে একটু সরে দাড়ালাম । মায়াকে ভিতরে ঢুকতে দিবো ! কিন্তু মায়া ভিতরে না গিয়ে আমার সামনেই দাড়িয়ে পড়লো । খুব দরকার না পড়লে আমি মায়ার সাথে কথা বলি না । মায়াও ঠিক একই । আমাকে খানিকটা এড়িয়েই চলে ! কারন অবশ্য আছে ।
আমাদের ক্লাস টিচার ওসমান গননি স্যার আবার খুব কড়া টাইপের মানুষ । খুবই ডিসিপ্লিন মেনে চলে । তার নির্দেশ ছিল কেউ ক্লাস পিরিয়ডে বাইরে থাকবে না ।
একবার কি হয়েছে মায়া সহ আরো কয়েকটা ছেলে মেয়ে বাইরে গিয়েছে । এই দৃশ্য স্যার দেখেছে । পরদিন ক্লাসে এসেই প্রথমেই বললেন
কালকে কারা বাইরে ছিল !
বেশ কয়েকজনা দাড়িয়ে পড়লো । কারন আমাদের স্যার একটু অন্য রকমও ছিল । নিজের দোষ যদি নিজেই স্বীকার করে নিতাম তাহলে স্যার খুব বেশি কিছু বলতেন না । এটা আমরা সবাই জানতাম ।
সবাই দাড়ালেও মায়া দাড়ায় নি ! এইটা আমি আর আমার এক বন্ধু খ্যাল করলাম । আমরা কি করলাম একটা চিরকুট লিখে স্যারের কাছে দিলাম । এমনিতেই স্যারের সাথে আমার সম্পর্ক খুবই ভাল ছিল । স্যার আমাকে খুবই ভালবাসতেন ! এখন আমার এই চিরকুট দেখে স্যার মায়াকে যে পানিশমেন্ট দিলেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । তারপর থেকেই মেয়েদের সবার সাথে আমাদের ছেলেদের একটা ঠান্ডা যুদ্ধ চলতে ছিল । এসব কথা অবশ্য ইভা আমাকে বলেছিল ! আমরা সবাই তাই খুব সাবধান ছিলাম । কিন্তু আজকে আবার কি হল ?
-এই তোর সাথে কিছু কথা ছিল !
আমি মায়ার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম ও আসলে কি বলতে চাইছিল । আমি বললাম
-বল !!
-দেখ আমি যা বলব তুই হাসবি না ! আর সিরিয়াসলী জবাব দিবি !
সিরিয়াসলি ??
আমি একটু চিন্তিত হলাম । সিরিয়াসলি আবার ইভার কথা জানতে চাইবে না তো ? যদি বলে ইভার সাথে কি তোর রিলেশন আছে আমি মুখের উপর না বলটে পারবো না ! আসলে মানুষের চোখের সাথে চোখ রেখে মিথ্যা কথা বলা আমার পক্ষ খানিকটা কষ্ট কর !
আমি বললাম
-বল কি বলবি !!
মায়া আবার বলল
-বল হাসবি না তো ?
-আরে বলবি তো !
মায়া কি যেন ভাবলো !! তারপর বলল
-জেবু কে তোর কেমন লাগে ?
জেবু????


আমার মনে হল আমি যেন একটু ভুল শুনলাম !
জেবু !!
জেবু !!
আমি বললাম
-কেমন লাগবে আবার ? ভাল আমরা এক সাথে তো পড়ি !
আমি খানিকটা হাসার চেষ্টা করলাম ।
মায়া বলল
-দেখ হাসবি না ! সত্যি করে বল ! তুই ঠিকই বুঝতে পারছিস যে আমি কি বলতে চাইছি !!
আমি একটু অপ্রস্তুত হই !! আসলে আমি ঠিকই বঝতে পারছি যে মায়া কি বলতে চাচ্ছে ! ও বলতে চাইছে জেবু আমাকে পছন্দ করে !!
জেবু !!
জেবু !!
আমার আসলেই কথাটা ঠিক মত হজম হচ্ছে না । আমাকে যদি কোন নায়িকা এসে বলে যে আমি তোমাকে পছন্দ করি তাহলেও আমি খুব একটা অবাক হতাম না । কিন্তু তাই বলে জেবু !
জেবু হচ্ছে আমাদের ক্লাস টিচারের মেয়ে !!
ক্লাস টিচারের মেয়ে ! একটু নেতা গোছের ভাব আছে । আসলে আমাদের ক্লাসে সবাই জেবুকে একটু সমীহ করে চলে । আমিও এর ব্যতীক্রম নই ! জেবু সব সময় খুব গম্ভীর হয়ে থাকতো !
আমরাও জেবুকে পারতো পক্ষে এড়িয়েই চলতাম ।
ক্লাসে আমি মোটামুটি জনপ্রিয় একজন মানুষ ! ক্লাসে প্রায় ৪৪ জন মেয়ে আছে । তাদের ৪০ জনেরই আমাকে প্রোপজ করলে আমি খুব একটা অবাক হতাম না । কিন্তু তাই বলে জেবু ??
-কি হল বলছিস না ?
-দেখ আমি আসলে.................




আমার কথা লম্বা হল !! আমি ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । আমি কি করবো এই ভাবছি ?? কি বলবো এই ভাবছি এমন সময় বন্ধু সবুর এসে হাজির হল ! মায়া আর দাড়ালো না । কেবল যাওয়ার সময় বলে গেল যে জলদি জানিয়ে দেই যেন !
আমি সবুর কে মন থেকেই ধন্যবাদ দিলাম ।
তারপর ওকে সব কথা বলতেই সবুর হাসতে হাসতে কাইত হয়ে গেল ।




মনির স্যার যখন পড়াতে শুরু করলো তখনও আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম জেবুর দৃষ্টি কে ! আমি খুব একটা জেবুর তাকাতাম না । সব সময় ইভার দিকেই চোখ ছিল তো তাই অন্য কাউকে দেখার সময় কোথায় ?
আজ অবাক হয়ে দেখলাম জেবুর দৃষ্টিতে অন্য কিছু ছিল ।
স্কুলে ইভার সাথে একটু কথা বলার সুযোগ পেলাম । দেখি ও হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমাকে বলল
-তো কি জবাব দিবা ?
-মানে ?
আমার মনে হল যে ইভা খুব ভাল করেই জানে সকাল বেলা কি হয়েছে !
আমি বললাম
-তুমি জানতে ?
-হুম !
-আমাকে আগে বলবা না ! শক টা একটু কম খেতাম ।
ইভা বলল
-জেবু প্রথমে আমাকেই বলেছিল যে তোমাকে বলতে !!!
এই কথা বলতে বলতে ইভা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরলো !!
আসলে জেবু তখনও জানে না যে ইভার সাথে আমার একটা রিলেসন রয়েছে । এখন আমার প্রেমিকাকেই দিয়েই যদি আমাকে কেউ প্রোপোজ পাঠায় তাহলে জিনিসটা কেমন হয় !!
এরকম একটা ঘটনা ঘটছিল আমার জীবনে । আসলেই এমন একটা গম্ভীর মেয়ে যা আমি কোন দিন ভাবতেই পারি নাই সেই মেয়ে আমাকে প্রোপোজ করেছিল । যদিও তখন আমার ইভার সাথে রিলেশন ছিল তবুও এটাই ছিল জীবনের পাওয়া প্রথম ভালবাসার প্রোপোজাল !!
আরো অবশ্য আছে ! তবে সেটা অন্য কোন গল্প !!