-তুই কোথায় ?
-বাসায় যাচ্ছি ?
-এখনও বাসায় যাচ্ছিস ? সেই কখন বাটা সিগনাল থেকে রওনা দিয়েছিস এখনও বাসায় পৌছাস নি ?
-নিশি এখন কথা বলতে ভাল লাগছে না !
আমি ফোনটা কেটে দিলাম । আসলেই এখন কারো সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না ।
কারো সাথে না !!
পুরো পৃথিবীটা কেমন যেন অপরিচিত মনে হচ্ছে ! চরিপাশে এতো মানুষ তবুও কেন জানি নিজেকে বড় একা লাগছে !!
সংকর বাস্ট্যান্ডের কাছে এসে নিশি আবার ফোন দিল ।
-বাসায় পৌছেছিস ?
-না !
-অপু প্লিজ বল কি হয়েছে ? এতোক্ষন তো লাগার কথা না !
-দেখ নিশি রাস্তায় অনেক জ্যাম ! যেতে আরো সময় লাগবে !
-মিথ্যা কথা ! আমি রিপনের কাছে খোজ নিয়েছি । তুই ওর সাথে যাস নাই । রিপন বাসায় পৌছে গেছে তুই কি করছিস ??
-তুই আমার কথা এতো ভাবছিস কেন ?
-তুই জানিস আমি কেন ভাবছি ?
-আমাকে নিয়ে ভাবার লোক আছে । আমি তোকে আগেই বলেছি । এতো না ভাবলেও চলবে !
-আমার জানা আছে সে তোকে নিয়ে কত টুকু ভাবে !!
অন্য সময় হলে নিশিকে একটা জোরে ধমক দিতাম । আজ কেন জানি দিলাম না ।
-নিশি বাসায় গিয়ে ফোন দিবো ! এখন রাখি !
আমি আবার ফোন রেখে দেই !!
আমার কিছুই ভাল লাগে না । সব কিছু কেমন একটা বিবর্ণ লাগে ! সবাই কত ব্যস্ত ! কেবল যেন আমারই কোন কাজ নেই !!
গ্রাফিক্স আর্টস কলেজের কাছে এসে বসে পড়লাম ফুটপাতের উপর ! পা দুটো বড় ব্যাথা করছে ।
যাক একটা কাজ তো হয়েছে । শরীর বড় ক্লান্ত এখন । রাতে খেয়েই ঘুম দেওয়া যাবে । গুম চলেও আসবে তাড়াতাড়ি । তা না হলে হয়তো আজকে সারা রাত ঘুমই আসতই না !!
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে !
আশ্চার্য !!
কেন পানি পড়ছে !!
ছিঃ ছিঃ মানুষ জন দেখলে কি ভাববে ??
এতো বড় মানুষকে কাঁদতে দেখলে মানুষ হাসবে !! আমি জলদি নিজের চোখের পানি মুছে নেই !!
আবার নিশির ফোন !
-অপু বাসায় পৌছেছিস?
-না ! ফুটপাতের উপর বসে আছি !
-কেন ?
-নিশি ! তুই বড় বিরক্ত করিস !! আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই বসে আছিস !
-তোর কন্ঠস্বর এমন শোনাচ্ছে কেন ? টিয়া কিছু বলেছে ? টিয়ার সাথে কিছু হয়েছে ?
আমি চুপ করে থাকি ! কিছু বলি না !
নিশি খুব ভাল করেই জানে আমার কেবল একটা কারন ছাড়া আমার খারাপ থাকার কোন কারন নাই !
টিয়া !!
আমি নিশিকে বললাম
-আমি বাটা সিগনাল থেকে এখানে হেটে এসেছি !!
নিশি তীক্ষ স্বরে বলল
-কেন ? হেটে এসেছিস ?
-জানি না !
-অপু সত্যি করে বল !!
আমি চুপ করেই থাকি ! আসলেই আজকে আমি ইচ্ছে করেই হেটে এসেছি । কারন অবশ্য একটা আছে !!
রাতে ঘুমানোর জন্য ! তা না হলে আজকে রাতে হয়তো মার ঘুমই আসতো না । শরীর ক্লান্ত থাকলে ঘুমানোর একটা সম্ভাবনা থাকে !!
নিশি আবার বলল
-তুই কোথায় এখন ?
-আমি গ্রাফিক্স আর্টস কলেজের সামনে বসে আছি !
-তুই থাক ওখানে ! আমি আসছি !! যাবি না কিন্তু !!
আমি ওকে মানা করতে গিয়েও করলাম না । মানা করে লাভও নাই ! নিশি লালমাটিয়েতেই থাকে !
টিয়ার ফোন এসেছিল ঘন্টা খানেক আগে ! ও রফোন সব সময়ই মনের ভিতর আনন্দ জাগায় ! কিন্তু প্রত্যেকবার যখন কথা বলে ফোনটা রাখি তখন মনের ভিতর কেমন একটা বিষাদের ছায়া এসে ভর করে । বড় একা আর আশাহত মনে হয় !!
কদিন ধরে এই অনুভুতিটা আরো বেশি করে জানান দিচ্ছিল ! আজকে তাই টিয়াকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম !
টিয়া কিছুই বলল না ।
আমি বললাম
-কাল তুমি আমাকে আই লাভ ইউ বল নি ! কেন বলতো তো ?
-আমার এসব বলতে ভাল লাগে না !
-মানে ?
আমি খনিকটা শক খেলাম টিয়ার কথায় !
-মানে ! আমার এই সব ভাল লাগে না !
আমার মনটা খারাপ হয়েই রইলো ! আমি জানি এর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না । জিজ্ঞেস করলেই মন আরো খারাপ হবে !!
আগেও আমি এমন টা অনেক করেছি সম্ভাব্য উত্তর জেনেও আর কিছু জানতে চাই নি কেবলই মন খারাপ হবে এই ভেবে !!
কিন্তু আজকে কি হল জিজ্ঞেস করেই ফেললাম
-আমার সাথে কথা বলতেও কি ভাল লাগে না ?
কিছুক্ষন নিরবতা !
-না !
-তাহলে বল কেন ? মনে রুপর জোর পড়ে এমন কাজ করা ঠিক না !
এই কথাটা বলেই বলেই মনে হল কি বললাম কিন্তু তারপরে টিয়া যা বলল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না !
টিয়া বলল
-ঠিক আছে আমি বেঁচে গেলাম । কাল থেকে আর ফোন দেব না !
আমার মন খারাপ হওয়ার কথা কিন্তু আমি কেবল অবাক হলাম । এই মেয়েটা এমন কথাটা এতো সহজে কিভাবে বলল ?
কিভাবে ?
আমি জানি ও আর আমাকে আর ফোন দিবে না !!
আর আমি ওর কন্ঠস্বর শুনতে পাবো না !
আই লাভ ইউ বলতে পারবো না !
শুনতেও পারবো না !!
ফোন রাখার সময় আমি কেন জানি বললাম
আই লাভ ইউ !!
জানি এর উত্তর আসবে না । তবুও কানের কাছেই ধরেই রইলাম ফোন টা । খানিক ক্ষন পরে ফোনের লাইন কেটে গেল !! আমি তবুও ফোনটা কান থেকে নামাই নি !!
মন খারাপ টা শুরু হল আড়ো কিছুক্ষন পর থেকে !! তখন থেকেই কেবলই হাটছি !! কেবলই হাটছি !!
নিশির এসে পৌছালো কিছুক্ষনের ভিতরেই ! আমার পাশে বসতে বসতে বলল
-কি হয়েছে বলবি আমাকে ?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিশি কেমন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-একটা কথার জবাব দিবি ?
-বল !!
-তুই আমার কথা এতো ভাবিস কেন বল তো ?
-জানি না !
-আমি জানি !
-কি ? বল !
-থাক শুনতে হবে না !
নিশি আর কিছু বলল না । কেবল আমার দিকে আমার দিকে সরে এল ।
আসলেই কারন টা মনে হয় আমি জানি ! জগতে আল্লাহ কারো উপর কোন অনাচার করে না । তুমি যদি কাউকে খুব ভালবাসা দাও তাহলে সেই ভালবাসা তোমার কাছে ফিরে আসবে ! কোন না কোন দিক দিয়ে আসবেই ! তেমনি কাউকে কষ্ট দিলে সেই কষ্টও কোন না কোন দিক দিয়ে ফিরে আসবে !!
দুজন চুপচাপ বসে থাকি ফুটপাতের উপর ! সামনে দিয়ে কত গাড়ি আর রিক্সা চলে যাচ্ছে । কেউ কেউ আবার আমাদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে !
নিশ্চই ভাবছে আমরা কাপল !! হঠাৎ নিশি বলল
-অপু !! এবার থেকে যখন তোর মন খারাপ হবে তখন আমাকে বলবি কেমন ?
-কেন ? তুই তো এমনিই টের পেয়ে যাস ! বলার কি দরকার !!
-এমন পাগলামো কেন করিস বলতো ? এতো দুর হাটার দরকার ছিল কোন ? একবার কি করলি সেই বনশ্রী থেকে এসেছিলি ! তারপর পায়ে সে কি ব্যাথা !!
আমি বললাম
-আসলে যখন এমন টা হয় তখন মাথায় আর কিছু থাকে না !! আর এ হাটা হাটি করলে রাতে ঘুম আসে খুব ! তা না হলে রাতে খুব কষ্ট হয় ! নির্ঘুম কাটাতে হয় !
নিশি এবার আমার হাত ধরলো ! তারপর আমার হাত টা ওর দুই হাত দিয়ে ধরে ওর গালে আলতো করে ছোয়ালো !!
আমি ওর নরম গালের স্পর্শ পেলাম । নিশি বলল
-আমার একটা কথা রাখবি ?
-কি ?
-আজকে আমাদের বাসায় চল ! দুজন এক সাথে গল্প করতে করতে কাটিয়ে দেব ! আর মুভি দেখবো ! যাবি ??
-তোর বাসায় কিছু বলবে না !!
-কারো সময় কোথায় দেখায় ? সবাই বিজি ! দেখ আম জানি রাতে তোর ঘুম আসবে না । তুই জেগে আছিস জেনে নিজেরও জেগে থাকবো ! এর থেকে দুজন একসাথে জেগে থাকি ! যাবি !!!
কি মনে হল বললাম
-চল !!
-সত্যি !!
আসলেই নির্ঘুম রাত গুলো বড় কষ্টের আর দীর্ঘ হয় ! একজন যদি সঙ্গী থাকে ক্ষতি কি !!
মনটা আজ বড় খারাপ । কদিন থেকেই খারাপ ! তবে আজ যেন একটু বেশি !! আজকে আমি সত্যি সত্যি বাটা সিগনাম থেকে মুহাম্মাদ পুরে হেটে হেটে এসেছি ! কত মানুষ দেখলাম কিন্তু আমার মনের কথা গুলো শোনার একটা মানুষও নাই ! এতো মানুষের ভিড়ে আসলেই নিজেকে বড় একা লাগলো । বড় বেশি একা !!
একজন নিশি যদি থাকতো এখন ? আসলে কাল্পনার নিশিরা যত মায়াময় হয় বাস্তবের টিয়ারা তত বেশি নির্মম হয় ! কত সহজে বলে দিতে পারে আর ........
নিশি আর টিয়া অথবা কল্পনা আর নির্মম বাস্তবের গল্প !
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।