somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ময়নামতি ডিপার্টমেন্ট ট্যুর ২০১৩ এবং আমার সম্ভাব্য প্রেমের গল্প ! (ছবিসহ)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-মুখ লাগালে কেন ?
আমি বোতলের পানি ঠিক মত খেতেও পারলাম না । নিশির কথা শুনে মাঝ পথেই পানি আটকে গেল । কোন মতে পানিটা গলা দিয়ে নামিয়ে বললাম
-কি ? কি বললে ঠিক বুঝলাম না !
নিশি বলল
-তুমি বোতলে মুখ লাগালে কেন ? এখন আমি পানি খাবো কিভাবে ?
আমি নিশির কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম । আরে কি বলে এই মেয়ে ? মুখ লাগিয়েছি তো কি হয়েছে ? আমি বললাম
-চলন্ত বাসে তো উপর থেকে পানি খাওয়া সম্ভব না ।
নিশি আমাকে আর কিছু বলল না । খানিকটা বিরক্ত মুখেই নাস্তা খেতে লাগল । আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল । এই মেয়েটাকে আমি এতো পছন্দ করি আর এই মেয়েটাই আমার সাথে এমন আচরন করল ?
আমি বললাম
-আচ্ছা সরি । এবার থেকে তুমি আগে পানি খেও । নাও এবারের মত পানি খাও ।
-না । আমি পানি খাবো না । কারো এতো পানি আমি খেতে পারি না ।
কেন জানি একটু রাগ হল । আমি নিশিকে বললাম
-পানি খাবে না ?
-না ।
-আচ্ছা এই বোতলের পানি আমি রেখে দিলাম । তুমি যদি এই বোতলের পানি না খাও মনে রেখো পুরো ট্যুরে আমি এক ফোটা পানি খাবো না ।
আমি কথাটা বেশ জোরেই বললাম । ওর আশে পাশের বান্ধবীরাও ছিল ওরাও কথাটা শুনেছে । কেউ কেউ দেখলাম মুখ টিপে হাসছে । তবে কেউ কিছু বলল না ।
আমি মন খারাপ নিয়ে বসে রইলাম ।

কুমিল্লা ট্যুরে আমি যাচ্ছি এই মেয়েটার জন্য । আর এই মেয়েটাই আমার সাথে এমন আচরন করলো ??
সামান্য একটু পানি !!

নিশিকে পছন্দ এই কথাটা ডিপার্টমেন্টের সবাই খুব ভাল করে জানে । এমন কি নিশি নিজেও কথাটা জানে । ট্যুরের যখন আয়োজন করা হল আমার খানিকটা আগ্রহ খানিকটা কম ছিল । আর আমার শরীরটাও খুব বেশি ভাল ছিল না । কিন্তু আসতে হল । আসার প্রধান কারন ছিল নিশি । বন্ধুরা এমন আশ্বাস দিল যে যাওয়া এবং আসার সময় নিশি যেন আমার পাশে বসতে পারে এই ব্যবস্থা তারা করবে । পুরোটা সময় নিশি আমার পাশে বসে থাকবে এইটাই আমার জন্য যথেষ্ঠ ছিল ।
সত্যি সত্যি নিশি আমার পাশেই বসেছিল । কিন্তু ঝামেলা বাধলো সকালের নাস্তা খাওয়া আর পানি নিয়ে । প্রতেক ডাবল সিট বাবদ এক টা পানির বোতল বরাদ্দ ছিল । আমার আর নিশির জন্যও ছিল একটা । সেই খানেই বাধলো !
বাসের ভিতর একটু পরেই গান শুরু হল । সবাই নাচানাচি করছে । নিশিও দেখলাম সবার সাথে আনন্দ করছে ।
নাস্তা খাওয়ার সময় লিলির কাছ থেকে পানি খেয়েছে কিন্তু আমার কাছ থেকে নেয় নি । মনটা খারাপই হয়ে রইলো । আমি পানি খাইনি এটা ওর কাছে যেন কোন ব্যাপারই না ।
অবশ্য কেন ব্যাপার হবে ?
আমি ওকে পছন্দ করি । ও তো আর করে না !! তাই বলে ??
থাক কি হবে এসব ভেবে !!

প্রায় দুই ঘন্টার পর আমরা কুমিল্লায় পৌছালাম ! আমাদের প্রথম গন্তব্য হল ওয়ার সিমেট্রি !


বাস পৌছানোর পরপরই সবাই নেমে পরলো ! যে যার মত ছবি তুলতে লাগলো !



আমি কিছুক্ষন বাসের ভিতর বসে থেকে নেমে এলাম ।


ঠান্ডার প্রকোপটা কেন জানি বেড়েছে । বার বার কাশি আসতেছে । আর গলা ব্যাথাটাও যেন বেশি !!

এখানে আমাদের আরেক দফা নাস্তার কথা আছে । আমি ভাবলাম কিছু খাবো না ! কারন খেলেই সমস্যা ! খাইলেও পানি খেতে হবে ! আর আমি তো পানি খেতে পারছি না ঐ মেয়েটার জন্য !! কিন্তু সে টো ঠিকই খাবে ! আমার কথা ভাববেও না একবার ।
সত্যি সত্যি আমার গলার বেধে গেল নাস্তা খাওয়ার সময় । এমনিতেও তো কাশি ছিল আরো যেন বেড়ে গেল ।
খুব জোড়ে কাশতে লাগলাম । বন্ধু সুমন পানি নিয়ে এগিয়ে আসলেও আম পানি নিলাম না !
পিছনের দিকে চলে এলাম ।


অনেক ক্ষন পর শান্ত হলাম ।
সুমনকে যখন ফিরিয়ে দিলাম তখন মোটামুটি সবার চোখই আমার দিকে ছিল । নিশিরও তাকিয়ে ছিল । থাকুক !!
ও তো মজা করেই খাচ্ছিল !!
খাবেই তো !!
আমি কেউ বা হই !!
বন্ধুরা সবাই মিলে ছবি তুলছিল । আমি ওদের সাবর ছবি তুলে দিলাম । সবার গ্রুপ ছবিও তুললাম একটা !


কয়েকজন মিলে একটু ভাব নিয়েও ছবি তুলল ।



আমি সবার দিকেই লক্ষ্য রাখছিলাম । কিন্তু চোখ ছিল নিশির দিকে ! ওর চোখে এবার কেমন যেন একটা আভা দেখলাম । এতো ক্ষন যে আনন্দ ছিল সেটা কেমন যেন একটু মলিন হয়ে গেছিল । আমার দিকে তাকাতে লাগলো বার বার !

ঘোরাঘুরি শেষে আমরা এবার রওনা দিলাম ময়নামতির দিকে । বাসের ভিতরে নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি এরকম করলে কেন ?
-কি রকম ?
-পানি খেলে না কেন ?
-তুমি খুবভাল করেই জানো কেন খাই নি ?
নিশি আমার কথার আর কোন উত্তর দিলো না ।

ময়নামতিতে গিয়েও আমরা যে যার মত ঘুরতে লাগলাম ।


সবাই ছবি তুলতে লাগলাম ।

সবাই যে দিকেই যাক না কেন আমি নিশির আসে পাশেই আছি ! ও যে খানে যাচ্ছে সেখানে যাচ্ছি !
দুরে দেখলাম বন্ধু হুমায়ুন একা একা হেটে যাচ্ছে ।


আমি একটু বসলাম । একটু আগেও শীত লাগছিল কিন্তু এখন বাইরে যান আগুন জ্বলছে !! শীত কালে রোদের এতো তেজ হতে পারে আমার জানা ছিল না ।

সবাই একটু হা হুতাশ করতে লাগলো কিন্তু আমার অবস্থা তো খারাপ হয়ে গেল । আমি তো পানি খেতে পারছি না ।
আচ্ছা পানির বোতল তো পকেটেই আছে এক ঢোক খেয়ে নিবো নাকি ?
কেউ দেখবে না মনে হচ্ছে !!
কিন্তু মন সায় দিল না ।
ময়না মনতির উপরে উঠে তো অবস্থা আরো কাহিল !!
চারিদিকের চোখ বুলাতে লাগলাম ! ছায়া কোথায় আছে দেখার জন্য ! কিন্তু ছায়ার নাম নিশানাও আমি দেখতে পেলমা না !

দেখলাম ময়নামতিতে খননের কাজ চলতেছে ।

আরো চারি পাশে দেখতে লাগলাম । কিন্তু মনের এবং শরীরের ভিতর ভাল লাগছিল না । নিশি কেও দেখলাম আমাকে লক্ষ্য করছে । আমি ময়নামতি বিহারের একদম উপরে দাড়িয়ে সাবইকে দেখতে লাগলাম তখনই দেখলাম নিশি যেন কার সাথে কথা বলছে ফোনে ।

খুব ইচ্ছা থাকা সত্তেও ওর কাছে গেলাম না । নিশিই আসবে আমার কাছে । আসতে হবে !
আসলে আমি ভয় পাচ্ছিলাম দুপুরের খাবার নিয়ে ! ঐ সময়ে পানি না খেয়ে আমি কিভাবে থাকবো কে জানে !!

আমাদের খাওয়ার ব্যাবস্থা যেখানে হয়েছে সেটা বিহার থেকে একটু দুরে । খাওয়ার সময় হলেই আমরা সবাই সে দিকে হাটতে লাগলাম । আমি একটু পিছিয়ে পড়েছিলাম । সবার পিছনেই হাটছিলাম । একে তো বাইরে খুব গরম তার উপর পানি পিপাসা লেগেছে খুব । পকেটে পানির বোতল আছে কিন্তু আমি খেতে পারছি না কিছুতেই ।

স্পটে ঢুকতে যাবো ঠিক একই সময়ে কেউ আমাকে পিছন থেকে আমার হাত ধরলো । তাকিয়ে দেখি নিশি !
-এদিকে এসো !!
এই বলেই ও হাটা দিল । আমি হাটতে লাগলাম ওর পেছন পেছন ! কিছু দুরেই একটা ছোটা পাহার আছে ! নিশি ওখানে থামলো ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-প্লিজ খাওয়ার সময় আর কোন সিন ক্রিয়েট কর না !
-মানে কি ?
-মানে তুমি পানি খাচ্ছ না কেন ?
যাক !! নিশি তাহলে আমার দিকে একটু লক্ষ্য করেছে !!
আমি বললাম না কিছু !
নিশি আবার বলল
-চুপ করে আছো কেন ? পানি খাবে তো ?
-না !
-প্লিজ অপু !! এমন ছেলে মানুষী করে না ! আর সবাই কি মনে করবে ?
আমি তবুও কোন কথা বললাম না । চুপ করেই রইলাম, কোন কথা বললাম না ।
নিশিও কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ! তারপর বলল
-তুমি এতো জেদি ! আচ্ছা বোতল দাও !
আমি নিশির দিকে তাকালাম । তারপর আমার পকেট থেকে পানির বোতলটা বের করে দিলাম । নিশি এবার আমার সামনেই পানি খেল ।
বোতল ফিরিয়ে দিতে দিতে বলল
-খুশিতো এবার ? এবার অন্তত পানি খাও !
আমি বললাম
-তুমি ঠোট লাগিয়ে খাও !
নিশি তাই করলো !!

যখন বোতলে চুমুক দিলাম আসলেই মনে হচ্ছিল যেন আমি অমৃত সুধা খাচ্ছি !! আহ !! আহা !!



আমার কথা: যদিও এটা গল্পই তবুও ছবি গুলো সত্য ! দুদিন আগে ময়নামতিতে গেছিলাম। সেখানকার ছবি গুলো নিয়েই এই গল্প !!
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×