নিশি বেশ কয়েকদিন পরে ফোন দিয়েছে ।
যাহ ! সকালবেলা ঘুমানোর দিন বুঝি শেষ হল ।
-হ্যালো ।
-এখনও ঘুমাচ্ছ ?
আহা কি মিষ্টি ডাক । কতদিন এই মধুর ডাক শুনি না । আগে নিশি সকাল বেলা ফোন দিয়েই খানিকটা আদেশের মত করে বলত
-এই এখনও ঘুমাচ্ছ কেন ? এখনই উঠ ।
আমি বাধ্য ছেলের মত উঠে পড়তাম । নিশি বলত
-ছোলা ভেজানো আছে ?
-হুম আছে ।
-ডিম সিদ্ধ দাও । আর বুয়া এসছে ?
-না এখনও আসে নি ।
-আচ্ছা ঠিক আছে । এগুলো খেয়ে বের হও । আমি যেন আধা ঘন্টার ভিতরে তোমাকে মাঠে দেখি ।
-আচ্ছা ।
এই ছিল আমার প্রতিদিন কার সকালের দৃশ্য । মাঝে মাঝে বড় মেজাজ গরম হত কিন্তু নিশিকে বলার কিছু নাই । ওর সাথে রিলেশনের প্রথম কন্ডিশন ছিল যে আমাকে ভাল ক্রিকেটার হতে হবে । ঠিক সাকিব আল হাসানের মত ।
প্রথম প্রথম আমি ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিলেও পরে বুঝলাম সে ব্যাপার টা নিয়ে সিরিয়াস । আসলে নিশি সাকিব আল হাসানের খুব বড় ফ্যান । মনে মনে সে নিজেকে তার গার্লফ্রেন্ড মনে করে । কিন্তু বাস্তবে তো আর সেটা সম্ভব না । তাই তার এমন কাউকে দরকার ছিল যে কিনা সাকিব আল হাসানের মত খানিকটা হয় ।
ছোট বেলা থেকেই আমি মোটামুটি ভাল ক্রিকেট খেলি । পাড়ার ম্যাচে আর কি ! সিরিয়াস কিছু না ! ইউনিভার্সিটিতে যখন ইন্টারডিপার্টমেন্ট খেলা হত আমি সব সময় আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে খেলি । সত্যি বলতে কি ভাল খেলি । এইটাই ছিল নিশির সাথে রিলেশনের প্রথম ধাপ ।
আমি চোখ মেলতে মেলতে বললাম বললাম
-বল ।
নিশি কিছুক্ষন কোন কথা না বলে চুপ করে রইল । এতো দিন আমি নিশির ভয়ে ভয়ে থাকতাম কিন্তু এখন দিন পল্টাইছে । আমি খানিকটা গলা খায়ের দিয়ে বললাম
-কথা বলবা না ফোন রেখে দিবো ?
-তুমি এমন করে কেন কথা বলছ ? একটু ভাল করে কথা বল !
-দেখো আমি এখন ঘুমাচ্ছি । পরে কথা বলি ।
-শুনোওওও না ? আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি তাই না ?
কষ্ট ?
তুই আমার জীবনটা ভাজা ভাজা করে ফেলেছিস আর বলিশ কষ্ট দিছি তাই না ? ফজিল মেয়ে !
এই লাইনটা বলার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু বলতে পারলাম না !
আমি গলাটা যথা সম্ভব নরম রাখার চেষ্টা করলাম ! বললাম
-এই সব কথা এখন বলার মানে কি ? কি বলবা বলে ফেল !
-আমার সাথে একটু দেখা করবা ?
-কখন ?
-তোমার যখন ইচ্ছা ?
আমি আবার মনে মনে একটু হাসলাম ! তোমার যখন ইচ্ছা ! হিহিহহিহি !!
উট দেখি একেবারে পাহারের নিচে চলে এসেছে ! নিশি আগে দেখা করতে চাইলে কেবল সময় আর জায়গার নাম বলতো ! আমাকে যেকোন মূল্যেই সেখানে হাজির হতে হত ! কিন্তু আজকে কি মধুর ভাবেই না বলল তোমার যেখানে ইচ্ছা !!
সত্যি বলতে কি নিশি আমার সাথে রিলেশন করেছিল কারন ও ক্রিকেট খুব পছন্দ করতো । ক্রিকেট না তো সাকিব আল হাসানকে ! সাকিবের জন্য যে একেবারে জান প্রান দিয়ে দিতে পারে এমন একটা অবস্থা !
আমি জানি এই রকম বেশ কিছু মেয়েই দেশে আছে যারা সত্যি সত্যি নিজেকে সাকিবের গার্লফ্রেন্ড মনে করে !
তাও তো সহ্য করা যায় ! আমার এ ছাত্রী আছে সে কিনা নিজেকে ভারুন ধামান জিএফ মনে করে !
প্রশ্ন জাগতে পারে ভারুন ধামান আবার কে ?
আমি কিভাবে বলবো ?
তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন !
যতসব আজগুবি মস্তিস্কের বেকুব !!
যদিও নিশিও সেই ক্যাটাগরির ভিতরেই পরে কিন্তু এই দিক দিয়ে ভাল যে সে দেশের ছেলে কে পছন্দ করে !
নিশি আসলেই সাকিবকে খুব পছন্দ করে ! আর যাই হোক সাকিবের নামে যদি কেউ কিছু বলেছে তবে তার রক্ষা নাই !
এমন একটা ভুল আমি করেছিলাম আমাদের রিলেশনের প্রথম দিকে ! একদিন নিশি সাকিবের কথা কি যেন বলছিল আমার মনটা ছিল অন্য দিকে ! তারপর নিশি আমাকে সাকিবের ব্যাপারে কি যেন জনাতে চাইল !
আমি কেবল বলেছি যে আচ্ছা জগতে সাকিব ছাড়া কি আর কোন আলোচনা নাই ?
আর কোথায় যাবা !!!
আমাকে সে কি ঝাড়ি মারা মারলো ! সব শেষে যা বলল তার সারমর্ম হল যে আর কোন দিন যদি আমি সাকিব কে নিয়ে উল্টা পাল্টা কিছু বলি তাহলে আমার সাথে সে রিলেশন রাখবে না !
সেই সময় খুব রাগ হলেও কিছু বললাম না ! কারন মেয়েটা তখন আমি খুবই পছন্দ করতে শুরু করেছি !
সাকিবকে কে না পছন্দ করে । কিন্তু নিজের গার্লফ্রেন্ড যখন নিজের সামনেই অন্য একটা ছেলের প্রসংসা করে তখন এমনিতেই গা জ্বলতে শুরু করে ! আমি তবুও চুপচাপ সহ্য করি ! গায়ে পানি দিয়ে গা জ্বালা সহ্য করি ! নিশি যথা রীতি আমার সাথে এসে সাকিবের গল্প করে ! আমি রাগে কিটমিট করি !
যখন সাকিব বাংলাদেশে খেলা হয় আল্লাহর কাছে দোয়া করি সাকিব বাদে সবাই যেন সেঞ্চুরী করে ! সাকিব যেন আন্ড মারে ! কিন্তু শকুনের দোয়ার গরু মরে না । সাকিব আপন যোগ্যতায় খেলে যায় ! আর নিশির গল্পের খই ফুটতে থাকে ! আর আসতে আসতে আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গতে থাকে !
একদিন টা ভেঙ্গেই যায় ! শুরুটা অবশ্য নিশিই করে ! আমি সবে মাত্র প্রেক্টিস শেষ করেছি ! দেখি নিশি এসে হাজির মাঠে ! মনটা একটু খুশিই হল । নিশি প্রায় দিনেই এমনটা করে । বিশেষ করে ছুটির দিন গুলো তে !
আজ দেখলাম ওর মুখ টা বেশ হাসি খুশি !
তারমানে সাকিবের কোন খবর আছে নিশ্চই !
আমি মাঠের এক কোনায় বসলাম ! নিশি আমার কাছে এসে বলল
-তোমার কোন উকিল চেনা জানা আছে ?
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ও কি বলতে চাইছে ! খেলার মাঝ আবার উকিল কেন ?
আমি বললাম
-কেন এই কথা কেন বলতেছ ?
-না মানে কোর্ট থেকে না কিভাবে নাম চেঞ্জ করতে হয় জানো ?
-নাম ? জানি না ঠিক ! তবে খোজ নেওয়া যাবে !
নিশি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে ! তুমি খোজ নাও ! তারপর আমরা দুজন একসাথে গিয়ে তোমার নামটা চেঞ্জ করে নিয়ে আসবো !
আমি প্রথমে মনে হল ভুল শুনলাম ! আমি কোন মতে বললাম
-আমার নাম ?
-হুম ! তোমার নামের শেষে তো এখন আছে রহমান ! আমরা রহমান নামটা বদলে রাখবো আল হাসান ! আর বাদ বাকী সব কিছু ঠিক থাকবে !
এমনিতেই তখন আমি পরিশ্রান্ত ছিলাম !
মেজাজটা এমন গরম হল !
আমি কেবল অনুভর করলাম আমার রাগ উঠছে ! কেব বললাম
-দেখ এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে ! তোমার পাগলামীর জন্য আমি আমার বাবা মায়ের দেওয়া নাম বদলাবো না !
-কি পাগলামী ? আমি পাগলামী করছি !
-ঠিকই শুনেছ ! তুমি যা বলছো এটা কেবল বদ্ধ পাগলের প্রলাপ হতে পারে । মানুষ ফ্যান হতে পারে ! কিন্তু তুমি হলে .....। তুমি হলে....
-দেখ ভাল হবে না বলে দিচ্ছি !!
-ভাল না হলে আমার কিছু করার নাই !
-ওকে ঠিক আছে ! তোমার সাথে আজকেই আমার রিলেশন শেষ ! আর কখনও আমাকে ফোন দিবা না !
-আমার নিজেও আর সখ নাই তোমার মত মহিলা পাগলের ......
নিশি চলে গেল ! আমিও আর ওর কাছে যাই নি ! এক মন খারাপ হলেও শান্তিতে ছিলাম ! খেলা ধুলা সব বাদ দিয়ে দিলাম । বেলা করে ঘুমাতাম ! টিভি দেখতাম !
একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যখন নিশির সাথে রিলেশন ছিল কেন জানি সাকিব কে একটুও পছন্দ হত না । কিন্তু এখন সাকিবের খেলা বেশ ভাল লাগতে শুরু করলো !
তারপর সাকবের বিয়ে হলে গেল ! না জানি নিশির মত কত শত তরুনীর হৃদয় ভেঙ্গে গেছে সাকিবের বিয়ে দিন !
নিশি চুপচাপ বসে আছে ! আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম ! একটু দুরত্ব বজায় রেখে ! আজ দেখলাম নিশি নিজেই আমার দিকে এগিয়ে আসলো !
কিছু্ক্ষন দুজনেই চুপ !
আসলে আমি আমার গাম্ভীর্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি ! আমি চাচ্ছি নিশি আগে কথা বলুক !
আমি হঠাৎবলে উঠলাম
-সাকিবের বউটা অনেক সুইট হয়েছে তাই না ?
নিশি আমার দিকে চট করে তাকালো ! ওর মুখে খানিকটা প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ফুটে উথেছে ! আমি আবার বললাম
-শিশিরের চেহারাটা আসলেই অনেক সুন্দর তাই না ? কালকে তুহিন কি বলছিল জানো ?
নিশি কেমন গোমড়া মুখ বলল
-কি ?
-তুহিন বলছিল শিশির কে দেখার পর থেকে নাকি ওর আর ওর গার্লফ্রেন্ড কে ভাল লাগছে না ! ওর একটাই কথা, শিশিরের মত তার এক জন চাই !
যদিও এটা মিথ্যা কথা ! আমি এই কথা বলতেছি নিশিকে রাগানোর জন্য ! ওর একটু বুঝার দরকার যে আমি তখন কেমন ফিল করতাম যখন ও সাকিবের কথা বলত !
আমি আরো কিছুক্ষন সাকিবের বউয়ের কথা বলতে থাকি ! আর নিশি আহত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে ! কিছু বলতে পারে না আবার সহ্যও করতে পারে না !
একসময় আর সহ্য করতে না পেরে নিশি নিজেই বলল
-আচ্ছা তুমি এভাবে আমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছ ? আমি তোমাকে সরি বলতে এলাম আর তুমি আমাকে এভাবে খোচাচ্ছ !
-আচ্ছা ? তাহলে একবার চিন্তা কর আমার কেমন লাগত !
-আমি বুঝতে পারছি তো আমি ভুল করেছি ! এই দেখ কান ধছি ! আর কখনও এমন টা হবে না !!
এই বলে নিশি সত্যই কান ধরলো !
আমি কেবল একটু হাসলাম ! আর মনে মনে বললাম তোমাকে তো আমি জ্বালাবোই !! তুমি আমাকে যেখানে জ্বালিয়েছে ঠিক সেই ভাবেই





এইবার তুমি টের পাবা নিশি মনি !!





(গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক ! গল্পটা লেখা শুরু করেছিলাম যখন সাকিব আল হাসানের বিয়ে হয়েছিল ! অনেক দিন ড্রাফট করা ছিল)
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:০০