-স্যার আপনি প্যান্ট এই ভাবে গুটিয়ে করে পরেছেন কেন ?
-বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল তো !
-তাই বলে এই ভাবে পরবেন ? আপনাকে কেমন ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগছে ?
সুমন মিহিনের কথা ঠিক বুঝতে পারলো না । ইদানিং প্রায়ই এই কথাটা তাকে শুনতে হচ্ছে ! ঠিক কারন বুঝতে পারছে না ! বিশেষ করে মেয়েদের কাছ থেকে । নিশি তো প্রায় প্রতিদিই সুমন কে ক্ষ্যাত বলে !
এই তুই এটা করলি কেন ? তুই আসলেই একটা ক্ষ্যাত !
এই তুই ওখানে ওভাবে দাড়িয়ে ছিলি কেন ? তুই আসলেই একটা ক্ষ্যাত !
ঠিক কি কারনে ওকে এই সব কথা শুনতে হয় সুমন ঠিক মত বুঝতে পারে না !
-স্যার আপনি রাগ করলেন ?
-কেন ? রাগ করবো কেন ?
-না এই যে আপনাকে ক্ষ্যাত বললাম !
-না ঠিক আছে । আমার শুনে অভ্যাস আছে !
মিহিন চট করে হেসে বলল
-শুনে অভ্যাস আছে ? নিশি আপু আপনাকে তাকে বুঝি ?
সুমন অবাক হল ! নিশি যে ওকে ক্ষ্যাত বলে ডাকে এটা তো কোন ও মিহিনকে বলে নাই ! তাহলে এই মেয়েটা কিভাবে জানলো !
সুমন বলল
-তুমি কেমন করে জানো ?
-সে আপনার গার্লফ্রেন্ড না ! সে আপনাকে বলতেই পারে !
-গার্লফ্রেন্ডরা বুঝি তাদের বয়ফ্রেন্ড কে ক্ষ্যাত বলে ডাকতে পারে ?
-শুধু কি ক্ষ্যাত ! আরো কত কিছু ডাকে ?
সুমন কিছুক্ষন অবাক হয়ে মিহিনের দিকে তাকিয়ে রইলো । মনে মনে ভালছে এই পিচ্চি মেয়েটা এতো কিছু কিভাবে জানে ? ও তো কিছুই জানে না ! মিহিনের কি বয়ফ্রেন্ড আছে ?
সুমন বলল
-তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে ?
-কেন ?
-এতো কিছু জানো কিভাবে ?
-স্যার আপনিও না ? নিশি আপু ঠিকই বলে !
সুমন হাসলো ! বলল
-নিশি ঠিক বলে না। ওর মুখে যা আসে ও তাই বলে । আর নিশি আমার গার্লফ্রেন্ড না ! কেবল ফ্রেন্ড ! একই ক্লাসে পড়ি !
-তাই !
মিহিন কেবল একটু হাসে ! আর কিছু বলে না ।
মিহিন খুব ভাল করেই জানে নিশি সুমনের গার্লফ্রেন্ড না ! সুমন অবশ্য নিজে কখনও নিশির কথা খুব একটা বলে না । মিহিন নিজেই জানতে চায় ! খুচিয়ে খুচিয়ে কথা বের করে ।
প্রথম যে দিন মিহিন সুমনের কাছে জানতে চাইলো সুমন কেবল অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো মিহিনের দিকে । আসলে তার ছাত্রী যে ওকে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারে এটা ওর ধারনার বাইরে ছিল !
সুমন কেবল অবাক হয়ে জানতে চাইলো
-এই কথা কেন জানতে চাইছো ?
মিহিন বলল
-না ! মানে ! এখন তো সবার একটা করে গার্লফ্রেন্ড থাকে তাই বললাম আর কি ?
-না ! আমার এরকম কেউ নাই !
-কোন মেয়ের সাথে কথা বলেন না ?
-কেন বলব না ? তোমার সাথে বলছি না ?
-নাহ আপনাকে নিয়ে আর পারা গেল না ! আমি বলছি আপনার ক্লাসের বা জুনিয়র কেউ নাই !
-হুম আছে ! এই রকম অনেকই আছে !
-কে ?
সুমনের সবার আগে নিশির কথাই মনে এল !
তাই নিশির নাম নিল !
অবশ্য নিশির নামই নেওয়ার স্বাভাবিক ছিল ! সুমনের কাছের বন্ধু বলতে এই নিশির নাম সবার আগেইআসে ! আর তাছাড়া সুমন এই এতো বড় বাড়িতে টিউশনিটা পেয়েছেই নিশির কারনেই ! নিশির এক বান্ধবী হল মিহিনের ছোট খালা ! মিহিনের ছোট খালা আর নিশিই এখানে টিউশনীটা ঠিক করে দিয়েছে !
-স্যার কালকে পড়বো না !
-কেন ?
-এমনি স্যার । কালকে বৃষ্টিতে ভিজবো ?
-বৃষ্টিতে ভিজলে পড়া যাবে না ? আর তুমি কিভাবে জানো যে কালকে এই সময়েই বৃষ্টি হবে !
-আমি জানি স্যার ! আমি ঠিক ঠিক করে বলে দিতে পারবো কখন বৃষ্টি হবে !
-আচ্ছা ! ভিজো ! আমি কালকে আসবো না ?
-আসবেন ! কামাই দিলে আম্মা খুব রাগ করে ! জানেন তো !
-হুম ! জানি !
-আপনি আসবেন ! আমি আপনাকে বসিয়ে রেখে বৃষ্টিতে ভিজবো ! আর আপনি আমার ঘরে বসে বসে গান গুনবেন ! আমার কাছে বেশ কিছু বৃষ্টির গান আছে !
-আচ্ছা !
-আর একটা কথা বলব স্যার ?
-বল ! আপনি আর কখনও প্যান্ট গুটিয়ে পরবেন না ! ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
মিহিন আরো কিছু বলতে গিয়েও বলল না ! এখন বলবে না ! মিহিনের প্রায়ই একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছা করে ! আসলে একটা কাজ করতে ইচ্ছা করে ! কালকে যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে কাকলেই কাজটা করে ফেলবে । এতো দিন ধরে সে প্লান করে আসতেছে । কিন্তু কালকে হবে কি না মিহিন বুঝতে পারছে না ।
যদিও মিহিনের মন বলছে যে কালকে অবশ্যই বৃষ্টি হবে । সেই বৃষ্টিতেই মিহিন তার স্যার কে নিয়ে ভিজবে । প্রথমে তার স্যার একটু না হু না হু করবে কিন্তু এক পর্যায়ে ঠিক ই রাজি হয়ে যাবে ।
বাড়ির কাজের ছেলেটাকে বলে আগে থেকেই চিলেকোঠার ঘরটাতে ওর গান শোনার বক্সটা ফিট করে রাখবে । ছাদে গিয়ে আর গান ছাড়বে !
"বাদল দিলের প্রথম কদম ফুল ........ করেছি দান.."
মিহিন গানও ঠিক করে রেখেছে ! তারপর বৃষ্টিতে ভিজবে ! মিহিন আরো একটা কাজ করে রেখেছে । কাজের ছেলেটাকে আরো একটা কাজ দিয়েছে । ওদের বাসা থেকে একটু দুরেই একটা বড় কদম ফুলের গাছ আছে । সেখানে এই বর্ষাকালে প্রচুর কদম ফুল ফুটে রয়েছে । মিহিন সেই গাছ থেকে কিছু কদম ফুল এনে রাখতে বলেছে ! কালকে সে তার স্যার কে দিবে !
স্যার নিশ্চই খুব অবাক হবে ! কদম ফুলের গানের সাথে কদম ফুল ! ব্যাপরটা একটু ইন্টারেষ্টিং হবে !
মিহিনের আম্মা যদিও অনেক রাগ করবে তবুও মিহিন কাজটা করবে !
করবেই !
-তুই কোথায় রে ?
-হলে ! কেন ?
-একটু বাইরে আয় তো !
-আরে এখন বৃষ্টি হচ্ছে তো ! কিভাবে আসবো ?
-থাপ্পর দিয়ে দাঁত খুলে ফেলবো ! বৃষ্টির ভিতর সাত সমুদ্র তের নদী পার করে আসতে পারো আর এই পথ আসতে পারো না ? ছাতা নাই ?
-না !
-রুমমেট কাছ থেকে নে ! আর খবরদার যদি ঐ লাল গেঞ্জিটা পরে এসেছিস ?
-তাহলে কি পরে আসবো ?
-তোকে একটা কালো পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলাম না ! ওটা পরে আসবি !
-কিন্তু ওটা তো ইস্ত্রী করে রেখেছিয়েছি !
-শোন বেশি ত্যানা পেঁচাবী না ! যা বলছি কর ! তোকে ৩০ মিনিট সময় দিলাম ! এর ভিতর যদি আমার হলের সামনে না আসিস তাহলে তোর খবর আছে !
৩০ মিনিট লাগে না । নিশি দেখে ঠিক একুশ মিনিটের মাথায় সুমন এসে হাজির হয় হলের গেটে ! কালো পাঞ্জাবীটাই পরে এসেছে । নিশি একটু খুশি হয় ! নিশি তৈরি হয়েই ছিল ! সুমন কে দেখে বেরিয়ে আসে ।
-যাক ! এলি তাহলে !
সুমন তখন নিশিকে অবাক হয়ে দেখছে !
-কি দেখিস ?
-তোকে সুন্দর লাগছে রে ! শাড়িতে আগে কখনও দেখি নি তো তোকে !
-হুম হয়েছে ! এখন তোর মোবাইল টা বের কর ! আর পকেটে কাজ পত্র নেই তো !
-কেন ?
-আহা ! দে না !
সুমন নিশির কোন কাজই বুঝতে পারছে না । যা বলছে তাই করলো ! পকেট থেকে মোবাইল বের করে দিল ! নিশি মোবাইলটা নিয়ে গেটের ভিতরে চলে গেল । ফিরে এল একটু পরেই !
-চল !
-কোথায় ? এই বৃষ্টির ভিতর কোথায় যাবো ?
-তুই আসলে গাধাই রয়ে গেলি ! এখনও বুঝতে পারছিস না ?
-না ! কি হয়েছে ?
-চলে যেতে যেতে বলছি !
নিশি সুমনের এক ছাতার নিচে চলে এল ! দুজন মিলে তারপর হাটতে হাটতে এগিয়ে চলল !
বাইরে ভালই বৃষ্টি হচ্ছে ! একটা ছাতায় দুজন ঠিক মত কভার করতেছে না !
হঠাৎ নিশি সুমনের হাত থেকে ছাতাটা কেড়ে নিয়ে উড়িয়ে দিল !
-আরে করিস কি ?
সুমন ছাতার নিতে এগিয়ে গেল । ছাতা নিয়ে এসে দেখে নিশি দুই হাত আকাশের দিকে করে বৃষ্টিতে ভিজছে !
-তুই বৃষ্টিতে ভেজার জন্য আমাকে নিয়ে এসেছিস এখানে ?
নিশি কিছু বলল না । কেবল মাথা ঝাকাল !
সুমন একটু হাসলো ! এই মেয়েটাকে আসলেই ঠিক মত বুঝতে পারে না । কখন যে কি চায় !
-কদম ফুল !!
সুমন বলল
-কোথায় ?
-ঐ যে !
নিশি কিছু দুরে কয়েক টা পিচ্চি ছেলের হাতে থোকায় থোকায় কদম ফুলের দিকে ইশারা করল !
-দাড়া !
সুমন নিজেই দৌড় গিয়ে কয়েটা কদম ফুল নিয়ে এল পিচ্চি গুলোর কাছ থেকে ।
-দে !
-দাড়া তোর চুলে গুজে দেই ! দেব ?
নিশি বলল
-চুল তো খোলা ! দেখছি না গাধা ! ফুল কিভাবে দিবি ?
-দাড়া দেখনা !
এই বলে সুমন বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ফুল আটকাতে পারলো না !
-তুই আসলেই গাধাই রয়ে গেলি ! নে বাদ ফুল আটকাতে হবে না ! আয় ! একটু হাটি ! ও যে ঐ খানটাতে চল !
সুমন আর নিশি বৃষ্টির ভিতরে এগিয়ে চলল !
সুমনের মনে কেমন একটা আশ্চার্য অনুভুতি হচ্ছে ! চেনা নিশি কে কেমন অচেনা লাগছে ! এতোদিন এই নিশি কোথাও ছিল ?
-আফা মনি কদম আনছি !
মিহিন তাকিয়ে দেখলো কাজের ছেলেটার হাতে এক থোকা কদম ফুল ! এখনও সেগুলো থেকে পানি ঝড়ছে !
মিহিন বেশ কয়েকবার তার স্যার কে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেছে । রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না !
মিহিন চিলেকোঠায় বসে বৃষ্টি দেখছে ! সাউন্ড বক্সও রেডি ! কিন্তু মিহিনের ভিজতে ইচ্ছা করছে না !
যখন মনে হল আজকে আর সুমন স্যার আসবে না তখন মিহিন কিছুতেই নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না ! চোখে পানি নিয়ে বৃষ্টিতে নেমে পড়লো ! সব কিছু আজ তার অনুকুলে ছিল ! যেমন টা ভেবে রেখেছিল সব কিছুই হয়েছে । কেল যার আসার কথা ছিল সেই আসে নাই !
মিহিনের হাতে কদমফুল গুলো ধরা ! সেখান থেকে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পরছে । পানি পরছে মিহিনের চোখ দিয়েও ! বৃষ্টির পানিতে সেইপানি মিলে মিশে একাকার !!
Click This Link
আলোচিত ব্লগ
জনরাষ্ট্র ভাবনা-১৩
সংবিধানের ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি: (৮)
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি: শুভঙ্করের ফাঁকি: (১)
সংবিধানের প্রস্তাবনায় ও দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে মোট ১৮টি ধারায় মূলনীতিগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়
এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধী চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের মিলিটারীকে ক্ষমতা থেকে দুরে রাখতে!
১৯৭১ সালের জেনারেশন'এর কাছে ইন্দিরা (১৯১৭ - ১৯৮৪ ) ছিলেন ১ জন বিশাল ব্যক্তিত্ব; যু্দ্ধ লেগে যাওয়ার পর, উনি বলেছিলেন যে, বাংগালীরা ভালো ও নীরিহ জাতি, তিনি এই জাতিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - পর্ব ৩
জুলাই ১৮: ছাত্রলীগের হামলা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ১৭ই জুলাই কমপ্লিট শাট ডাউন কর্সুচী ঘোষনা করে বৈষম্যিরোধী ছাত্র সংগঠন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সঠিক ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম ইসরায়েল নামক গজবে আক্রান্ত
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন